হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলার নারীদের জাগরণ অবশ্যম্ভাবী

মোখলেসুর রহমান সুমন
শত শত বছর ধরে বাংলার নারীদেরকে অন্ধত্বের চাদরে আবৃত করে রাখা হয়েছে। যে ইসলাম এসেছিল নারী জাতির মুক্তির বার্তা নিয়ে, যে ইসলাম অধিকারহারা, সম্মানহারা নারীদের দিয়েছিল অধিকার আর সম্মানের নিশ্চয়তা, সমাজের প্রতিটি কাজে পুরুষের পাশাপাশি অংশগ্রহণের সুযোগ, সেই মহান আদর্শের বিকৃত-বিপরীতমুখী ব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের অবদমিত করে রাখা হয়েছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। আজ বহুকাল পর এসে বাংলার নারীরা জানতে পারছে, ইসলাম তাদেরকে বন্দি করার জন্য আসে নি, ইসলাম এসেছে তাদের মুক্তি দিতে। আজ তারা জানতে পারছে, ধর্ম তাদের গলার ফাঁস নয়, বরং ধর্ম তাদের রক্ষাকবচ। এই প্রথম ধর্মের নামে যে অধর্ম নারীর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার প্রতিবাদ করা হচ্ছে ধর্মের সঠিক আদর্শ দিয়ে। আর জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মব্যবসাসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে ধর্মের সেই প্রকৃত অনাবিল রূপটি মানুষের সামনে তুলে ধরছে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ। আলোচনা সভা, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক, র‌্যালিসহ প্রতিটি অনুষ্ঠানে পুরুষের পাশাপাশি থাকছে নারীদের সমান অংশগ্রহণ। আর এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা টাঙ্গাইলের প্রখ্যাত পন্নী জমিদার পরিবারের সন্তান এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর কন্যা রুফায়দাহ পন্নী।
বাংলার নারীরা আজ দিশেহারা। একদিকে ধর্মের নামে চলছে অধর্ম যা তাদেরকে কিছুতেই উন্মুক্ত পৃথিবীতে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে দেবে না। পরহেজগার নারীর যে ছবি আমাদের সামনে শত শত বছর ধরে তুলে ধরা হয়েছে সেখানে নারীদেরকে পর্দার অন্তরালে বন্দি না হয়ে উপায় নেই। তাদেরকে শেখানো হয়েছে, তারা থাকবে ঘরে, বাইরের পৃথিবীটা তাদের জন্য নয়। এভাবে অর্ধেক জনগোষ্ঠীর গৃহবন্দী হয়ে গেছে ফতোয়ার চোখরাঙানিতে।
অন্যদিকে সভ্যতার মুখোশধারী এক দানবীয় শক্তি মিছে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নারীদেরকে বানিয়েছে পণ্য। আজ থেকে কয়েকশ বছর আগে যখন এই মুসলিমরা ইউরোপিয়ানদের দাসে পরিণত হলো তারা একটা পর্যায়ে নারীদের স্বাধীনতার কথা বলে তাদেরকে ঐ গৃহবন্দী অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করল। তারা এই জাতির নারীদের সামনে একটি বস্তুবাদী জীবনব্যবস্থা উপস্থাপন করল। অন্তঃপুরে বন্দিনী নারীরা জীবনের একটি উদ্দেশ্য খুঁজে পেল, তাদেরকে বোঝানো হলো এই জীবনটাই সব, একে উপভোগ কর। ভোগবাদী এ জীবনদর্শন তাদের সামনে শ্লীলতা, অশ্লীলতা বলে কোনো মানদণ্ড তুলে ধরল না। চরম বস্তুবাদী এই জীবনদর্শনের সংস্পর্শে এসে এদেশের নারীরাও তার দ্বারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হলো। পশ্চিমারা তাদের পণ্য বাজারজাত করার জন্য বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নিল। তারা বিরাট বিরাট করপোরেশন গড়ে তুলল। এখানে তারা নারীকে ব্যবসার অবলম্বন হিসাবে নিলো। সভ্যতার নামে, আধুনিকতার নামে নারীকে পণ্যে পরিণত করা হলো।
একদিকে ধর্মান্ধতার বিষাক্ত সাপের বিষ নিঃশ্বাস, অন্যদিকে মুক্তির নামে আত্মাহীন ভোগবাদী জড় সভ্যতার আগ্রাসন। মুক্তি মেলে নি বাংলার নারীদের, মেলেনি তাদের সম্মান আর অধিকার। এই প্রথম বাংলার নারীরা জানতে পারছে ধর্ম আর অধর্মের তফাৎ, জানতে পারছে তাদের অধিকারের প্রকৃত স্বরূপ। তারা জানতে পারছে, আল্লাহর রসুল তাদের অধিকারকে খর্ব করতে আসেন নি, বরং তিনি এসেছেন তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। আল্লাহর রসুল জাহেলি যুগের নারীদেরকে শালীন পোশাক পরিয়ে দিলেন। নারীরা সম্মানিতা হলো, শ্রদ্ধার পাত্রী হলো। অতঃপর তিনি তাদেরকে গৃহকোণ থেকে বের করে আনলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করলেন। নারী প্রগতির এক বিস্ময়কর অধ্যায় তিনি রচনা করলেন। নারীদেরকে তিনি বাজার ব্যবস্থাপনার কাজে লাগিয়ে দিলেন। তলোয়ার নিয়ে মেয়েরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে দেখতো কেউ দ্রব্যে ভেজাল দেয় কিনা। হাসপাতালে মেয়েরা, মসজিদে মেয়েরা, জুম্মার নামাজে মেয়েরা, হজ্বের ময়দানে মেয়েরা, জেহাদের মাঠে মেয়েরা, আহতদের সেবায় মেয়েরা, নিহতদের দাফনে মেয়েরা, কোথায় নেই তারা? সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের অবজ্ঞাত অবহেলিত উপেক্ষিত অত্যাচারিত নারীরা বোমার মত বিস্ফোরিত হয়ে গেল। যুদ্ধের মাঠে তারা শত্রুপক্ষের বাহিনীর মধ্যে তাণ্ডব ঘটিয়ে দিলেন। পুরুষরা যেখানে পেরে উঠে নি, সেখানে পর্যন্ত মেয়েরা অসম সাহসিকতার সাথে সম্মুখ যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনলেন। ওহুদের মাঠে রসুল যখন কাফেরদের তীরে জর্জরিত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, অনেক সাহাবী যখন শহীদ হয়ে যান তখন উম্মে আম্মারা তলোয়ার হাতে এমনভাবে রসুলের চারপাশে লড়াই চালিয়েছেন যে, রসুল বলেছেন সেদিন যেদিকেই তাকাই শুধু উম্মে আম্মরাকেই দেখেছি। ডানে উম্মে আম্মারা- বামে উম্মে আম্মারা। খাওলা বিনতে আজওয়ার দুর্ধর্ষ রোমান সৈন্যদেরকে পরাজিত করে আপন ভাইকে মুক্ত করে নিয়ে এসেছেন। এ এক পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জেগে উঠার গল্প, যে গল্প লুকিয়ে রাখা হয়েছিল এতদিন। আজ প্রথম তারা জানতে পারছে তাদের সত্যিকার ইতিহাস।
বাংলার প্রতিটি জনপদে নারীদের কাছে আজ তুলে ধরা হচ্ছে রসুলের সেই প্রকৃত আদর্শ, উম্মতে মোহাম্মদীর সঠিক ইতিহাস। তারা জানতে পারছে ধর্ম তাদের চার দেয়ালে বন্দি করতে আসে নি, এসেছে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে পুরুষের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি কাজে ভূমিকা রাখার অবারিত সুযোগ নিয়ে। তারা জানতে পারছে, দেশকে নিয়ে যখন ষড়যন্ত্র হয়, মাটি যখন আক্রান্ত হয় তখন সেই মাটিকে রক্ষা করার পবিত্র দায়িত্ব কেবল পুরুষের নয়, নারীদেরও। কারণ জাতি যদি আক্রান্ত হয় তাহলে নারীদেরকেই সবচেয়ে বেশি লাঞ্চিত হতে হয়। আজ জঙ্গিবাদের কালো থাবা আর সাম্রাজ্যবাদীদের ভয়াল আগ্রাসনে টাল-মাটাল গোটা বিশ্ব। এই বাংলার মাটিকে নিয়েও চলছে গভীর ষড়যন্ত্র। আমরা বিশ্বাস করি, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এ দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ যদি যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়, এই মাটিকে রক্ষার শপথ নিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে এখানে সাম্রাজ্যবাদীদের কোনো চক্রান্তই সফল হবে না। আর আজ একদল নিঃস্বার্থ মানুষ, একদল মহিয়সী নারী যেভাবে অগ্রগামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, আমরা বিশ্বাস করি তাদের এই প্রচেষ্টা বৃথা যাবে না। ফতোয়ার চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে এ দেশের নারীরা এগিয়ে আসবে তাদের পবিত্র মাটি রক্ষার সংগ্রামে। তারা বুঝে নেবে তাদের অধিকার, সেই সাথে বুঝে নেবে তাদের দায়িত্ব।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...