হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

বাস্তব সঙ্কটের বাস্তব সমাধান করে দেখাল হেযবুত তওহীদ

২০১৯ সালের শেষের দিকে যখন করোনা মহামারী শুরু হলো, তখনই হেযবুত তওহীদ বেশ কিছু কার্যকরী ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। হেযবুত তওহীদের এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম ব্যাপকভাবে কৃষিভিত্তিক প্রকল্পের উদ্যোগ নেন। হেযবুত তওহীদের এমামের সভা-সমাবেশের বক্তব্যগুলো যারা নিয়মিত শোনেন তারা নিশ্চয়ই জানেন- করোনা মহামারীর অনেক আগে থেকেই তিনি একটি অর্থনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কা করে জাতিকে সাবধান করে আসছিলেন। অবশ্য শুধু হেযবুত তওহীদের এমাম নন, খোদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেও একাধিকবার খাদ্যসঙ্কট, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদির কথা বলেছেন।

বিষয়টা এতটাই স্পষ্ট যে, সময়সচেতন ব্যক্তিমাত্রই এই আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন না। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, অর্থনীতিবিদ, এমনকি জাতিসংঘের কর্মকর্তাগণ পর্যন্ত বারবার এ ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হেযবুত তওহীদের এমাম বারংবার মহামারী, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন এবং হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে আসছেন তারা শহুরে কৃত্রিম জীবনযাত্রার উপর নির্ভরশীল না হয়ে যেন গ্রামেই নিজেদের কর্মসংস্থান গড়ে তোলে। বিশেষ করে কৃষিতে মনোযোগ দেওয়ার জন্য তিনি বারবার সদস্যদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, “তোমাদের উৎপাদনযোগ্য এক ইঞ্চি জমিও যেন উৎপাদনের আওতার বাইরে না থাকে। আল্লাহ তোমাদেরকে হাত দিয়েছেন, শক্তি দিয়েছেন, তোমরা নিজ হাতে জমি কর্ষণ করো, মাছ চাষ করো, গবাদি পশুর খামার গড়ে তোলো।”

মাননীয় এমামের এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশব্যাপী অন্তত ২৪টি জেলায় কৃষি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এরপর পুরো করোনা মহামারী, লকডাউন ও অর্থনৈতিক সঙ্কট চলাকালে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা দিনের পর দিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে সেই কৃষিপ্রকল্পগুলোকে সফল করে তুলেছেন। গত এক বছরে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা বহু ধরনের ফল, ফসল, সবজি, মাছ, হাঁস মুরগী ইত্যাদি উৎপাদন করেছেন। তারা এই সত্যকে উদ্ভাসিত করেছেন যে, দেশের বাস্তব সঙ্কট সমাধানের জন্য জনগণের আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো সময় যে কোনো কাজ করা লাগতে পারে, এমনকি পেশাও পরিবর্তন করা লাগতে পারে। কারণ পরিস্থিতি কারো ইচ্ছার অনুসরণ করে না বরং পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে মানুষকে অস্তিত্ব বজায় রাখতে হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে যারা নিজেদের চরিত্রে, দক্ষতায় ও যোগ্যতায় পরিবর্তন আনতে পারে, তারাই কেবল টিকে থাকতে পারে। তাদেরকে নির্ভর করে টিকে থাকে সমাজ। পক্ষান্তরে যারা ভাগ্যের হাতে সবকিছু সমর্পণ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকে, পুরোনো সেকেলে চিন্তায় নিমগ্ন থাকে, বাস্তব সমস্যাকে এড়িয়ে যেতে থাকে, তারা নিজেরাও বিপদগ্রস্ত হয় জাতিকেও বিপদগ্রস্ত করে।

হেযবুত তওহীদ যখন করোনা মহামারী ও সম্ভাব্য খাদ্যসঙ্কট মোকাবেলায় কৃষিকাজে সম্পৃক্ত হয়েছিল, তখন হাতে গোনা অল্প কয়েকজন সদস্য কাজে নেমেছিলেন। তারা আগে থেকেই কৃষিকাজ জানতেন। কিন্তু উদ্যোগ নেয়ার পরে দেখা গেল কৃষক ছাড়াও অন্যান্য পেশাজীবী সদস্যরাও যেমন ছাত্র, শিক্ষক, উকিল, ব্যবসায়ীরাও পরিস্থিতি অনুধাবন করে মাঠে নেমে পড়লেন। কেউ পুরোনো পুকুর খনন করে মাছ চাষের উপযোগী করে তুললেন, কেউ পরিত্যক্ত জমিতে গরুর খামার ও মুরগীর খামার ইত্যাদি গড়ে তুললেন, কেউ পতিত জমিকে কর্ষণ করে ফসল ফলানোর উপযোগী করে তুললেন, আবার কেউ সম্মিলিত কৃষি প্রকল্পে গিয়ে কোদাল কাস্তে হাতে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে লাগলেন। যার যে জ্ঞান ছিল, তিনি সেই জ্ঞান নিয়েই এগিয়ে আসলেন। যার অর্থনৈতিক সমার্থ্য ছিল তিনি বিনিয়োগ করতে লাগলেন। যার জমি ছিল তিনি জমি প্রদান করলেন। যার যন্ত্র-প্রযুক্তি ছিল তিনি সেগুলো দিয়ে সহযোগিতা করলেন। সেই পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ফল যে এত দ্রুত পাওয়া যাবে, তা হয়ত তারা নিজেরাও জানতেন না।

আজ এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর, পুনরায় যখন সরকার লকডাউন দিয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রা যখন থমকে দাঁড়িয়েছে, তখন হেযবুত তওহীদের কর্মীরা তাদের নিজস্ব ক্ষেতে সোনালী ধান সংগ্রহ করতে ব্যস্ত রয়েছেন। কেউ শাক-সবজি সংগ্রহ ও পরিবহনে ব্যস্ত রয়েছেন, কেউ পুকুরে মাছ ধরায় ব্যস্ত রয়েছেন, কেউ গরুর খামারে, হাঁসের খামারে মুরগীর খামারে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন।

যারা কোনোদিন কৃষিকাজে নামেননি, তারাও এখন আত্মপ্রত্যয়ী হয়েছেন যে, তাদেরও সামর্থ্য আছে, শক্তি আছে। যারা কোনোদিন ধান রোপন করেননি, তারা এখন প্রতি বিঘায় ২০/২৫ মন ধান উৎপাদন করছেন। জমিতে দোল খাওয়া সোনালী ধানের শীষগুলো যেন তাদের হৃদয়কেও আনন্দে উদ্বেলিত করে তুলছে। তাদের ঘরে ঘরে এখন ফসলের স্তুপ। তারা নিজেদের চাহিদা তো পূরণ করেছেনই, বরং তাদের উৎপাদিত ফল, ফসল, সবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদি পুরো দেশবাসীকেই উপকৃত করছে। এভাবে হেযবুত তওহীদের সদস্য-সদস্যাদের কর্মসংস্থানেরও দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে।

এই লকডাউনের সময় যখন অনেকে বেকার হয়ে যাচ্ছে, হেযবুত তওহীদের সদস্যরা তখন নিজেদের প্রকল্পগুলোতে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। তারা হতাশ নন, নিরাশ নন। তারা আজ আত্মপ্রত্যয়ী। ত্রাণের গাড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়ার দরকার নেই তাদের। আর এটা কেবল সম্ভব হয়েছে এই কারণে যে, তারা তাদের এমামের কথা উপলব্ধি করেছিলেন, সঙ্কটের গভীরতা বুঝতে পেরেছিলেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন- বসে না থেকে সঙ্কটের মোকাবেলা করবেন। তাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল জাতিগত একটি চেতনা- ‘আমরা একা নই, অসহায় নই। আমাদের একজন এমাম আছেন, আমাদের বহু ভাই বোন আছেন। যদি এমামের আদেশ মেনে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে পারি, তাহলে কোনো সঙ্কটই আমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না।’ এই চেতনার উপর দাঁড়িয়ে থাকা হেযবুত তওহীদের সদস্যদের মনোবল আজ অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

এখানে বলে রাখা দরকার, হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমাম ফেসবুক লাইভে এসে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন পরিত্যক্ত অনাবাদী জমি চেয়েছিলেন সরকারের কাছে এবং সেই জমি আবাদ করার জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘প্রয়োজনে আমাদের বাড়িঘর বন্ধক নিন ঋণের জামানত হিসেবে, তবু জাতির এই সঙ্কটকালে আমাদেরকে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিন।’ সরকার সেই অনুরোধে সাড়া না দিলেও হেযবুত তওহীদ বসে থাকেনি। নিজেদের সামর্থ্যরে ভেতরে যতটা পারা যায় চালিয়ে গেছে। এতে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা অন্তত যে কোনো সঙ্কটে টিকে থাকার মত সফলতা পেয়েছেন। যদি সরকার আন্তরিক হত তাহলে হয়ত আরও বড় পরিসরে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হত।

যাই হোক, সব মিলিয়ে হেযবুত তওহীদ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে, ‘ধর্ম কোনো কল্প-কাহিনীর নাম নয়। ধর্ম হলো বাস্তব সমস্যার বাস্তব সমাধান। যে আদর্শ দিয়ে আল্লাহর রসুল মক্কার তৎকালীন অধঃপতিত সমাজের সমস্ত সঙ্কটের সমাধান করেছিলেন, সেই আদর্শ আজ আমাদের সঙ্কটেরও সমাধান করতে সক্ষম।’

বর্তমানে ইসলাম হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধুমাত্র পরকালীন মুক্তির জন্য দোয়া কালাম, তসবিহ, জিকির ইত্যাদি করে দিনাতিপাত করা, আর পার্থিব মুক্তির জন্য ভিক্ষার থালা নিয়ে অন্যের করুণা তালাশ করা। কিন্তু প্রকৃত ইসলাম তা নয়। প্রকৃত ইসলাম আরবের অজ্ঞ, মূর্খ, বর্বর, অসভ্য, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা, সামরিক ইত্যাদি সকল অঙ্গনে সফলতার চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিল আরবদেরকে। আলহামদুলিল্লাহ! সেই অবস্থারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি হেযবুত তওহীদের মধ্যে।

হেযবুত তওহীদ এই বার্তাটাই মানবজাতিকে দিতে চায় যে, ইসলাম এমন একটা প্রগতিশীল, এমন একটা প্রাণবন্ত, এমন একটা যুক্তিশীল জীবনব্যবস্থা, যেখানে সকল দুনিয়াবী সঙ্কটের সমাধান রয়েছে, পরকালীন সঙ্কটের সমাধানও রয়েছে। তবে সেটা জঙ্গিবাদী ও ধর্মব্যবসায়ীদের চালু করে রাখা মনগড়া বিকৃত ইসলাম নয়, সেটা হলো আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলাম। সেই প্রকৃত ইসলামের ধারক হওয়ায় হেযবুত তওহীদ বরাবরই বিভিন্ন সঙ্কটের সমাধান নিয়ে হাজির হয়েছে যথাসময়ে। যখন জঙ্গিবাদের তাণ্ডব চলে তখন হেযবুত তওহীদ সেটার সমাধান তুলে ধরে। যখন সাম্প্রদায়িকতার বিষ সমাজকে বিষাক্ত করে তোলে, তখন হেযবুত তওহীদ সেটার চিকিৎসা নিয়ে হাজির হয়। যখন রাজনৈতিক হানাহানি ও দাঙ্গা-হাঙ্গামায় লিপ্ত হয় পুরো সমাজ, তখন হেযবুত তওহীদ জাতির ঐক্যের সূত্র মেলে ধরে। এমনকি আজ যখন অর্থনৈতিক সঙ্কট পুরো জাতিকে স্থবির ও আতঙ্কিত করে তুলেছে, চারদিকে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, তখন হেযবুত তওহীদ সেই খাদ্যসঙ্কটেরও বাস্তব সমাধানের নমুনা তুলে ধরছে। আর এখানেই হেযবুত তওহীদের অনন্যতা!

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...