হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ইসলাম লেবাসে সীমাবদ্ধ নয়।

আইমান বিন মসীহ

ইসলাম মানবজীবনের ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেবল লেবাসে সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন-ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থা সমগ্র মানবজীবনে প্রতিষ্ঠিত হলে সমগ্র দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, যার ১৪০০ বছর আগে রসুল (সা.) দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।
রসুল (সা.) ও সাহাবিদের জীবনের লক্ষ্য এই পৃথিবীতে শান্তি তথা আল্লাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থা মানবজীবনে সকল পর্যায় তথা ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ইত্যাদি পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করা। যা রসুলল্লাহর তাঁর সারাজীবন ধরে সংগ্রাম করে এবং সর্বস্ব কোরবান করে, সাহাবিরা তাদের জীবন-সম্পদ সর্বস্ব কোরবান করে আরবে প্রতিষ্ঠা করে গেলেন। রসুলাল্লাহর চলে যাওয়ার পর সাহাবিরা পেটে পাথর বেঁধে সংগ্রাম করে, নিজেদের জীবন-সম্পদ কোরবান করে অর্ধ দুনিয়ায় সেটা প্রতিষ্ঠা করে গেলেন।
এরপর এক পর্যায়ে ইসলাম বিকৃতি শুরু হলো। শুরু হলো, ইসলামের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণ। যে আমলগুলো করতে বেশি কোরবানি লাগে, রক্ত দিতে হয়, ঘাম ঝরাতে হয় সেগুলোকে নিয়ে আলোচনা না করে সহজ সহজ আমলগুলোর ফজিলত বর্ণনা করা শুরম্ন হলো। এসব আমলের মধ্যে লেবাসকে খুব গুরম্নত্ব দেওয়া হলো। লেবাস দেখেই ধার্মিকতা-অধার্মিকতা, দরবেশ আর ফাসেক চেনার চেষ্টা শুরু হলো। বর্তমানে যে ব্যক্তি বা যারা আরবীয় লেবাস তথা লম্বা জোব্বা টুপি পরিধান করেন, বড় বড় দাড়ি রাখেন তিনি বা তারাই সমাজের মানুষের কাছে ইসলামের কথা বলতে পারবেন। মনে করা হয় তারাই রসুল (সা.) এর সুন্নতের অধিকারী, তারাই খাঁটি মুসলমান।
রসুল (সা.) ও সাহাবিদের মাতৃভূমি আরব হওয়ায় তারা আরবীয় সংস্কৃতি পালন করতেন। আরবীয় সংস্কৃতি অনুসারে পুরুষ সকলে লম্বা জোব্বা টুপি পরিধান করতেন। আর রসুল একজন পুরম্নষ ছিলেন। প্রকৃতিগতভাবেই তাঁর দাড়ি উঠেছিল। নিজের দাড়িগুলো তিনি কেটেছেটে সুন্দর করে রাখতেন। প্রমাণ হাদিসেই আছে যে তাঁর সাথে সবসময় তিনি চারটি জিনিস রাখতেন – চিরুনি, কাঁচি, খুশবু এবং মেসওয়াক। তিনি স্মার্ট ছিলেন, পরিষ্কার ছিলেন, তিনি সবসময় পরিপাটি হয়ে থাকতেন। তিনি যাদের নিয়ে এই দুনিয়ায় সত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য ছড়িয়ে পড়ল, তারাও রসুলের মতোই পোশাক পরিধান করতেন। তারা যখন সত্যদীন আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে সর্বস্ব কোরবান করে বেরিয়ে পড়লেন তখন তাদের পরিধানে আরবীয় লেবাস ছিল, কিন্তু তাদের কাছে লেবাসসাই বড় বিষয় ছিল না। তাদের জীবনের লক্ষ্য ছিল আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে মানবজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
আজকে মানবজীবনে আলস্নাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থার জায়গায় মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ ইত্যাদি ব্যবস্থার বিধি-বিধান পালন করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহর দেওয়া জীবন-ব্যবস্থা তথা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করাই ছিল রসুল ও তার সাহাবিদের জীবনের লক্ষ্য।
কিন্তু আমাদের আজকে সেদিকে কোনো মাথা ব্যাথা নেই। রসুল (সা.) এর জীবনের লক্ষ্য কী ছিল? সাহাবিদের জীবনের লক্ষ্য কী ছিল? সে বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমরা ব্যস্ত তাঁর লেবাস নিয়ে। লম্বা জোব্বা-টুপি পরিধান করা, বড় বড় দাঁড়ি রাখা, রসুল যেভাবে খেতেন সেভাবে খাওয়া, রসুল খাওয়ার পর মিষ্টি মুখ করতেন সেজন্য খাওয়ার পর মিষ্টি মুখ করা ইত্যাদিকেই আমরা রসুলাল্লাহর সুন্নাহ হিসেবে মনে করছি। লেবাস রসুল (সা.) এর জীবনের মুখ্য বিষয় ছিল না, তাঁর এর জীবনের লক্ষ্য ছিল আল্লার জীবন-ব্যবস্থা তথা ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা। তাই লেবাস রসুল (সা.) এর প্রকৃত সুন্নাহ নয়। রসুল (সা.) এর প্রকৃত সুন্নাহ মানবজীবনের সকল পর্যায়ে আল্লাহর প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা তথা ইসলামের নীতিসমূহকে পালন করা।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...