হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

হেযবুত তওহীদ যা বলতে চায়

মোহাম্মদ আসাদ আলী
সমগ্র মানবজাতি মূলত একজাতি, একই স্রষ্টার সৃষ্টি, একই বাবা-মা আদম হাওয়ার সন্তান। সেই সূত্রে তারা সবাই ভাই বোন। তাছাড়া মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি (খলিফা), তার ভেতরে আল্লাহর রূহ রয়েছে। সমস্ত সৃষ্টি প্রতিনিয়ত এই বনি আদমকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ আল্লাহর খলিফা পুরো মানবজাতি আজকে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, যুদ্ধ, রক্তপাতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। সরলের উপর ধূর্তের প্রতারণা, দরিদ্রের উপর ধনীর বঞ্চনা, শাসিতের উপর শাসকের অবিচার, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারে পূর্ণ হয়ে আছে পৃথিবী। এই অবস্থা কেন হলো মানবজাতির? এমন তো হবার কথা ছিল না।
মানুষ যেন দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তি-সুবিচারের মধ্যে থাকতে পারে এবং পরকালে জান্নাতে যেতে পারে সেজন্য আল্লাহ যুগে যুগে নবী-রসুলদের মাধ্যমে হেদায়াহ, সঠিক পথনির্দেশ অর্থাৎ তওহীদ পাঠিয়েছেন। এই নবী-রসুলগণ আসার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ এলেন আখেরী নবী মোহাম্মদ (সা.) সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হয়ে। তিনি প্রথমেই তওহীদের ভিত্তিতে আরবজাতিকে ঐক্যবদ্ধ করলেন। ফলে শত্রু ভাই হয়ে গেল, হানাহানি দূর হয়ে শান্তি আসলো, অনৈক্য-সংঘাত দূর হয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলো। বাহ্যিক ও আত্মিক উভয়দিকেই মানুষের অকল্পনীয় পরিবর্তন আসলো। কিন্তু বিশ্বনবী তো কেবল আরবের জন্য আসেন নি, এসেছেন সমস্ত মানবজাতির দুঃখ-দুর্দশা ঘুঁচানোর জন্য। সেই দায়িত্ব বর্তালো তাঁর হাতে গড়া উম্মাহর উপর যখন আল্লাহর রসুল ইন্তেকাল করলেন। আল্লাহর রসুল চলে যাওয়ার পর সেই উম্মাহ একদেহ একপ্রাণ হয়ে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য জীবনের সর্বস্ব কোরবান করে সংগ্রাম চালিয়ে গেল। ফলে ৬০/৭০ বছরের মধ্যে অর্ধপৃথিবীতে অচিন্তনীয় শান্তি, সুবিচার, মানবাধিকার ও সাম্য প্রতিষ্ঠা হলো। কিন্তু তারপর ঘটল মহাদুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।
জাতি ভুলে গেল তাদেরকে কেন গঠন করা হয়েছে। তাদের শাসকরা/সুলতানরা ভোগ-বিলাসিতার সঙ্গে রাজত্ব করতে লাগল, আর পণ্ডিত আলেমরা দ্বীনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে সহজ-সরল সেরাতুল মোস্তাকীমকে জটিল দুর্বোধ্য করে ফেললেন। অন্যদিকে বিকৃত সুফীবাদ জাতির লক্ষ্যের বিপরীতে নানা ধরনের তরিকা উদ্ভাবন করে বহির্মুখী জাতিকে অন্তর্মুখী করে ফেলল। এই সব ব্যাখ্যা-উপব্যাখ্যা, ফেরকা-মাজহাব, তরিকা-উপতরিকায় বিভক্ত হয়ে অপ্রতিরোধ্য জাতি হয়ে পড়ল দুর্বল, শক্তিহীন। এক সময় শত্রুর কাছে পরাজিত হলো, নির্যাতিত হলো, কিন্তু তবুও তারা সবাই মিলে তওহীদে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একজাতি হতে পারলনা, সংগ্রাম শুরু করল না। ফলে আল্লাহর চূড়ান্ত শাস্তি হিসেবে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পদানত দাসে পরিণত হলো। তাদের প্রভু আর আল্লাহ রইলেন না, প্রভুর আসনে বসল ইউরোপীয়ানরা। তারা ষড়যন্ত্রমূলক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে একদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষা চালু করে একদিকে আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামের বদলে তাদের নিজেদের স্বার্থরক্ষাকারী ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে তর্ক-বাহাসসর্বস্ব একটি বিকৃত ইসলাম শিক্ষা দিয়ে ধর্মব্যবসায়ী পরজীবী শ্রেণি তৈরি করল, অন্যদিকে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্বন্ধে হীনম্মন্যতায় আপ্লুত চরম বস্তুবাদী ভোগবাদী একটি পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণকারী শ্রেণি তৈরি করতে লাগল।
সেই থেকে জাতি আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে নি। আজ একদিকে সাম্রাজ্যবাদী অস্ত্রব্যবসায়ী পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলি জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদী ইস্যু সৃষ্টি করে দিয়ে একে একে মুসলিমদের ভূখণ্ডগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে, লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করছে, উদ্বাস্তু করছে। অন্যদিকে এই জাতি নিজেরা নিজেরাও শিয়া-সুন্নি ইত্যাদি ফেরকাবাজী ও দলাদলি করে একে অপরের সাথে যুদ্ধ ও রক্তপাতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। এই অবস্থায় জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য একমাত্র করণীয় কী সেটাই তুলে ধরেছেন এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি বলেছেন, ‘যদি এই জাতি সমস্ত বাদ-মতবাদ, দল-উপদল, ফেরকা-মাজহাব ইত্যাদি ভুলে পুনরায় তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে এবং আল্লাহকে একমাত্র হুকুমদাতা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়, তবে তারা হবে মো’মেন, তাদের আর কোনো ভয় থাকবে না কারণ মো’মেনদের উদ্ধার করা আল্লাহর দয়িত্ব হয়ে যায় (সুরা রূম: ৪৭)’। হেযবুত তওহীদ সেই লক্ষ্যেই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ এক ভয়াবহ সঙ্কট হয়ে দেখা দিয়েছে। এই ইস্যুতে একটার পর একটা মুসলিমপ্রধান দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়েও চলছে গভীর ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি যেন সাম্রাজ্যবাদীরা ও ধর্মব্যবসায়ীরা এখানে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাতে না পারে। আমরা ইতিহাসে পাই, রসুল (স.) মদিনায় বসবাসরত মো’মেন, ইহুদি, পৌত্তলিকসহ প্রতিটি ধর্ম-বর্ণ ও গোত্রের মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মদিনা রক্ষা করেছিলেন। ভূখণ্ডকে রক্ষা করতে তারা পেটে পাথর বেঁধেছিলেন, না খেয়ে ছিলেন, জীবন ও সম্পদের বাজি রেখেছিলেন। আমরা এ দেশের আলো বাতাস গায়ে মেখে বড় হয়েছি, এই জমির ফল-ফসলে পুষ্ট হয়েছি। এই মাটিতেই মিশে আছে আমাদের পূর্বপুরুষদের অস্থিমজ্জা। কাজেই মদীনার মতই বুক আগলে এই মাটিকে রক্ষা করা আমাদের নাগরিক ও সামাজিক দায়িত্ব; ঈমানী কর্তব্য। সরকার শক্তি প্রয়োগ করে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দূর করার চেষ্টা করছে, সাম্প্রদায়িকতা দমনের চেষ্টা করছে। এভাবে সফলতা আসবে না, এভাবেই ইরাক-সিরিয়া ধ্বংস হয়েছে। শক্তি অবশ্যই লাগবে, কিন্তু পাল্টা আদর্শও লাগবে। এটাকে ইসলামের পরিভাষায় বলে ‘আকিদা’। ইসলামের প্রকৃত আকিদা তুলে ধরা গেলে কেউ আর সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার পথে পা বাড়াবে না, সুযোগসন্ধানী সাম্রাজ্যবাদীরাও তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের সুযোগ পাবে না। সেই লক্ষ্যে হেযবুত তওহীদ দেশব্যাপী লক্ষ লক্ষ সভা-সমাবেশ, র‌্যালি, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদির আয়োজন করে জাতিকে ইসলামের প্রকৃত আকিদা শিক্ষা দিচ্ছে এবং যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
লেখক: সহকারী সাহিত্য সম্পাদক, হেযবুত তওহীদ।
facebook/asadali.ht

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...