হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

সন্ত্রাসের কালো থাবায় বিপন্ন গ্রহ

Untitled-15রিয়াদুল হাসান

সারা দুনিয়াময় যে জীবনব্যবস্থা বা সিস্টেম চলছে সেই সিস্টেমই হচ্ছে সকল অপরাধ, অন্যায়, অবিচার ও অশান্তির উৎস। এই সিস্টেমের কারণেই কলুষিত আমাদের অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষাব্যবস্থা সবকিছু। দুনিয়াময় যে সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসবাদ করাল থাবা বিস্তার করে আছে, সেটাও এই সিস্টেমেরই সৃষ্টি।
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত হয় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত জ্বালামুখে, তারপর সেই গলিত লাভার স্রোত উচ্চভূমি থেকে নিুগামী হয়ে পাদদেশের সমতলভূমিকে ভষ্মীভূত করে দেয়। ঠিক তেমনি সন্ত্রাসবাদের জন্ম হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্বের পরাশক্তিদের হাতে। সেখান থেকে বিস্তারলাভ করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, তারপর তা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের রূপ নিয়ে প্রতিটি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং ধীরে ধীরে সামাজিক অঙ্গন, শিক্ষাঙ্গন পেরিয়ে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত খুনোখুনি, রক্তের স্রোত, নিরাপত্তাহীনতা, অন্যায় ও অশান্তির দাবানল জ্বালিয়ে দেয়। সন্ত্রাস মিশে যায় মানবসমুদ্রে। প্রতিদিন জন্মায় নতুন সন্ত্রাসী।
আন্তর্জাতিক ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস:
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে চলছে রক্তারক্তি, হানাহানি। ইরাক, আফগানিস্তান, মিশর, সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন, ইসরাইল, আমেরিকা, রাশিয়া প্রভৃতি দেশগুলোতে চলছে রাষ্ট্রের অনুমোদনে সন্ত্রাসবাদ। কোন কোন রাষ্ট্র ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধে, কখনও সন্ত্রাস দমনের নামে নিজেরাই পৃথিবীকে অগ্নিগোলকে পরিণত করে রেখেছে। এই শতাব্দীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধে চৌদ্দ কোটি বনি আদম যে শুধু হতাহত হয়েছে তাই নয়, ঐ যুদ্ধের পর সংঘাত এড়াবার মানবিক প্রচেষ্টার ফল জাতিসংঘের জন্মের পরও শুধু ২০০০ সন পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে ৪০,৯৬৮,০০০ (চার কোটি নয় লক্ষ আটষট্টি হাজার) মানুষ শুধু নিহতই হয়েছে, আহতদের সংখ্যা স্বভাবতই এর দশ গুণের বেশি (Stockholm International Peace Research Institute)। আর এই নতুন শতাব্দীর একটি দিনও অতিবাহিত হয় নি, যেদিন পৃথিবীতে কোথাও না কোথাও যুদ্ধ ও রক্তপাত হয় নি। শুধুমাত্র ইরাকেই নিহত হয়েছে ১০ লক্ষ মানুষ, আফগানিস্তান, মায়ানমার, সিরিয়া, ফিলিস্তিন এসব দেশের কথা বাদই দিলাম। এই মৃত্যুর সঙ্গে যে দুঃখ, হাহাকার, দারিদ্র্য, ক্ষুধা, ধর্ষিতার ক্রন্দন, গৃহ হারানোর বেদনা আর অশ্র“ জড়িয়ে আছে তা কোন পরিসংখ্যানে নেই।
রাজনৈতিক সন্ত্রাস:
মানবজাতির মধ্যে বিরাট অনৈক্য আর বিভেদের প্রাচীর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে পাশ্চাত্যের সৃষ্ট রাজনৈতিক মতবাদগুলি। ৪/৫ বছর পর পর অকল্পনীয় অর্থ ব্যয় করে দাঙ্গা হাঙ্গামার মধ্য দিয়ে একটি দল ক্ষমতায় আরোহণ করে। পরদিন থেকেই শুরু হয় বিরোধীদলের তীব্র সরকার বিরোধিতা যা খুব শীঘ্রই আন্দোলনে রূপ নেয়। কোন সরকারই তার মেয়াদকালে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয় না, কারণ পেছনে লেগে থাকে বিরোধী দল নামক শত্র“সেনা। আগে যুদ্ধ হতো রাজায় রাজায়, এখন যুদ্ধ হয় সরকার আর বিরোধী দলে। দু’দলই জনগণের কথা বেমালুম ভুলে যায়। রাজনীতির মাঠে চলে ক্ষমতার লড়াই আর অস্ত্রের ঝনঝনানি। খেলার মাঠে ফুটবলের যে দশা, গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে জনগণের অবস্থাও তেমন। জনগণ ভালো করেই জানে যে, সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, আদর্শবান মানুষ রাজনৈতিক অঙ্গনে অচল। বরং যে প্রচুর কালো টাকার মালিক, যার সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী আছে, যে বেশি সাজিয়ে মিথ্যা বলতে পারে সেই নির্বাচনে জয়ী হয়। তারপর শুরু হয় দেশের সম্পদ লুণ্ঠন, দুর্নীতি, নামে বেনামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি ইত্যাদি যেন পরবর্তীতে আর ক্ষমতায় না আসলেও টেনশন না করতে হয়।
সামাজিক সন্ত্রাস:
সমাজের বুকেও চলছে ভয়াবহ এই সন্ত্রাসবাদের আগ্রাসন, মহল্লায়-মহল্লায়, পাড়ায়-পাড়ায়, গ্রামে-গ্রামে, এমনকি পরিবারের সাথে পরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্ব সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে সন্ত্রাসবাদের দিকে। আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি নিয়ে রেষারেষি, খুন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এমনকি গুমের মতো ঘটনা ইত্যাদিও অহরহ ঘটে চলেছে। রোজকার পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় টুকরো টুকরো লাশ, পানির ট্যাংকে, ম্যানহলের মধ্যে গলিত লাশ উদ্ধারের খবর।
শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস:
অন্যান্য অঙ্গনের মতো শিক্ষাঙ্গনও আজ সন্ত্রাসবাদের কবলের বাইরে নয়। বরং সংঘঠিত ছাত্র সমাজকে সন্ত্রাসবাদের মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, আর শিক্ষাঙ্গনকে বানিয়ে রেখেছে সন্ত্রাসবাদের আখড়া। প্রায়ই ছাত্রাবাস থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ধারাল অস্ত্রপাতি উদ্ধারের সংবাদ আমরা দেখি। গ্রামের কোন দরিদ্র কৃষক হয়ত পরের জমিতে বর্গা চাষ করে উদয়াস্ত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগান। সেই সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হয়ে যায় সন্ত্রাসী। অথবা বাড়ি ফেরে লাশ হয়ে। বর্তমানে ছাত্র এবং শিক্ষক উভয়ই রাজনৈতিক দলগুলির লেজুড়বৃত্তিতে মগ্ন। ছাত্রদেরকে কোন না কোন দলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়, নয়তো হলে থাকতে দেওয়া হয় না। এটাই হচ্ছে আমাদের শিক্ষাঙ্গনের চালচিত্র।
ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ:
যে ধর্ম এসেছে মানুষের কল্যাণের জন্য, সেই ধর্মই আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে আতঙ্কের অপর নাম। ধর্মের নামে পৃথিবী জুড়ে চলছে উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদ। ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড, জিংজিয়াং, নাইজেরিয়া, মায়ানমার, বাংলাদেশ এভাবে পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রেই মহামারি আকার ধারণ করেছে এই ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ। বলা চলে বর্তমান সময়ে বিশ্বের সকল সন্ত্রাসবাদের মূল কেন্দ্রবিন্দু এই ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসবাদ। একে দমন করার অজুহাতেই গত দুই যুগ ধরে বিশ্বব্যাপী চলছে যুদ্ধ আর রক্তক্ষরণ। অন্যদিকে যে ধর্মব্যবসাকে আল্লাহ হারাম করেছেন, সেই ধর্মকে ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত করেছে এক শ্রেণির ধর্মজীবী মোল্লা। অন্যান্য ব্যবসায়ে যেমন সিন্ডিকেট করে মনোপলি করা হয়, ঠিক সেভাবে ধর্মকেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোল্লারা নিজেদের কুক্ষিগত করে রেখেছে। সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষিত ছাড়া যেন কারও প্রবেশাধিকার নেই। সেই কূপমণ্ডূক ধর্মজীবী আলেম শ্রেণি প্রায়ই বিভিন্ন ইস্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় উন্মাদনা ও উন্মত্ততা সৃষ্টি করে চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্নপ্রকার সন্ত্রাস, রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।
এভাবেই মানবজাতি পৌঁছে গেছে ধ্বংসের একেবারে দ্বারপ্রান্তে। মানবিকতা, নীতি নৈতিকতার বোধ বহু আগেই বিদায় নিয়েছে মানবসমাজ থেকে। এখন সময় এসেছে শারীরিক ধ্বংসের। সারা দুনিয়ার প্রতিটি জনপদ, প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের আকুতি কিভাবে মুক্তি আসবে? কিভাবে, কোন পথে পৃথিবী শান্ত হবে।
অসহায় বিশ্বশক্তি:
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোন কিছু করার উপায় নেই, সেখানে জড়িত আছে বিশ্বের মাথা রাষ্ট্রগুলি। কিন্তু সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য কম চেষ্টা তদবির হচ্ছে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলমান এই সংকট নিরসনে একটার পর একটা জীবন ব্যবস্থা পরিবর্তন করা হয়েছে, বিভিন্ন সংস্থা সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান করে যাচ্ছে নিয়মিত সভা সেমিনার। বিভিন্ন সামরিক, আধা সামরিক, বেসামরিক বাহিনী তৈরি করে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করার জন্য। তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে উচ্চতর প্রশিক্ষণ। কিন্তু সব ব্যর্থ। পৃথিবীর সর্ব ক্ষমতাবান ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টই স্বীকার করছেন তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ২৮ মার্চ, ০৯ তারিখে তিনি আফগানে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে বলেন, A campaign against extremism will not succeed with bullets or bombs alone অর্থাৎ চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে শুধু বুলেট ও বোমা দিয়ে সফল হওয়া যাবে না (বিবিসি, The STAR, 3 April, 2009)। কিন্তু এর কোন বিকল্প তাদের সামনে না থাকায় এখনও তারা সামরিক শক্তি দিয়েই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করে যাচ্ছেন এবং স্বভাবতই সফল হচ্ছেন না। তারা নিজেদের দেশে সামাজিক সন্ত্রাসও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি। তাই আজও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ অপরাধ সংঘটনের তালিকায় শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ। সেখানে প্রতি ঘণ্টায় ৭৮ জন নারী ধর্ষিতা হয়। এটা মোট সংঘটিত ধর্ষণের মাত্র ১৬%। বাকিগুলো পুলিশের গোচরীভূত হয় না। আর আমাদের উপমহাদেশের সুপার পাওয়ার ভারতে প্রতি ২২ মিনিটে ধর্ষিতা হন একজন নারী। কানেকটিকাটের একটি স্কুলে একজন ছাত্রের গুলিতে ২৭টি শিশু নিহত হওয়ার ঘটনায় কথা বলতে গিয়ে বারাক হোসেন কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এর শিশুদেরকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলো। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্রপ্রধান মি. ওবামা যদি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এভাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন তাহলে অন্যান্য দেশগুলির অবস্থা যে আরও ভয়াবহ তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না।
তার এই কান্নাকে খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই, কিন্তু সেই সঙ্গে একটি প্রশ্ন প্রাসঙ্গিকভাবে এসে যায়: বারাক হোসেনের যুদ্ধনীতি হচ্ছে ড্রোন হামলা। তিনি পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে যে ড্রোন হামলা চালিয়ে কতজন শিশু হত্যা করেছেন সে হিসাব কি তিনি রাখছেন?
যাই হোক। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ আশা করি অন্তত একটি বিষয়ে একমত যে তারা সকলেই চান শান্তি আসুক। কিন্তু তারা জানেন না যে কোন পথে সেই শান্তি আসতে পারে। একেক জন একেকভাবে চেষ্টা করছেন। প্রার্থনাকারীরা তাদের উপাসনালয়ে নিয়মিত প্রার্থনা করে যাচ্ছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে তাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ। চারিদিকে কেবল হতাশা আর হতাশা।
অন্ধকারে আশার আলো:
হ্যাঁ, এই অশান্ত পৃথিবী এনশা’আল্লাহ অচীরেই শান্ত হবে, সকল সন্ত্রাসবাদ, অন্যায় অশান্তি দূর হবে। অবিচার বন্ধ হবে। অশান্তির আগুনে দগ্ধ পৃথিবীর বুকে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে পারে একমাত্র সৃষ্টিকর্তার থেকে আগত সনাতন, শাশ্বত, সত্য জীবনব্যবস্থা।
তাই আহ্বান পুরো মানবজাতির প্রতি, আমরা যদি সত্যিই মানবজাতির মঙ্গল চাই, আমাদের নিজেদের মঙ্গল চাই, যদি বাঁচতে চাই, যদি সত্যিই আমরা আমাদের সন্তানদেরকে ভালোবাসি, আসুন আমরা আমাদের স্রষ্টার দেওয়া সত্য জীবনব্যবস্থাটি মেনে নেই, এমন একটি পৃথিবী গড়ি যেখানে আমরা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারবে। পাশাপাশি পরজীবনেও আমরা লাভ কোরব চিরস্থায়ী জান্নাত, স্বর্গ ও হ্যাভেন।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...