হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খোলা চিঠি

ওআইসি-র কাছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের আহ্বান অরণ্যে রোদন

এ উদ্যোগ আপনাকেই নিতে হবে

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। সম্প্রতি আপনি ও.আই.সি মহাসচিবের সাথে সাক্ষাতে বললেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ বিষয়ে আপনি ওআইসি’র উদ্যোগ আশা করেছেন। আপনার এ চাওয়াটাকে আমরা রাজনৈতিক বক্তব্য মনে করি না, যদিও আজকাল অনেকেই রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু আমরা মনে করছি যে আপনি সত্যিকারভাবেই চাচ্ছেন মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, উপলব্ধি করছেন যে ঐক্য ছাড়া এখন আর এ জাতির বাঁচার কোন পথ নাই।
কিন্তু ঐক্য হবে কী দিয়ে? ঐক্যবদ্ধ হতে অবশ্যই একটি আদর্শ লাগবে। সেটা তো এ জাতির কারো কাছে নেই। সবাই নিজেকে ঠিক এবং অন্যকে ভুল মনে করছে। জাতির মধ্যে ঐক্য যেন প্রতিষ্ঠিত না হতে পার সে ষড়যন্ত্র তো কয়েক শতাব্দী থেকেই চলছে, যারা সচেতন তারা তা জানেন। তাছাড়া পূর্ব থেকেই শিয়া, সুন্নী, শাফি, হানাফী, হাম্বলি, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া এমন হাজারো ফেরকা, মাজহাব, তরিকায় এই উম্মাহ খণ্ড বিখণ্ড হয়ে আছে। সেই অনৈক্যের প্রাচীর এতই উঁচু যে একজন সনাতন ধর্মী বা খ্রিষ্টানকে মুসলমান করা সম্ভব কিন্তু একজন সুন্নিকে শিয়া বানানো সম্ভব নয়। কাজেই এখন এমন একটি আদর্শ লাগবে যা এই বিভক্তিগুলোকে এক করে দিতে পারে।
আমরা হেযবুত তওহীদ আল্লাহর রহমে এমন একটি আদর্শ লাভ করেছি যা মুসলমান জাতি তো বটেই, মানবজাতির মধ্যে বিরাজমান সকল অনৈক্যকে নির্মূল করে দিতে সক্ষম। সেই আদর্শ আমরা এ জাতিকে দিতে চাই এবং এই সংকট থেকে তাদেরকে উদ্ধার করতে চাই। আমরা নিজেরা আমাদেও সাধ্যমত সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি যা আপনি অবগত আছেন। আজ যেহেতু মুসলিম বিশ্ব মহা ধ্বংসযজ্ঞের সম্মুখীন তাই এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য স্বভাবতই ঐক্য অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
এটা অনুধাবন করে আপনি যে আরবদের কাছে এই ঐক্য সৃষ্টির জন্য আহ্বান করছেন তারাই তো অনৈক্যের বীজ বপন করেছে এবং যুগসঞ্চিত অনৈক্যকে সযত্নে লালন করছে। তারাই শিয়া-সুন্নি দাঙ্গাকে পশ্চিমা প্রভুদের স্বার্থে জিইয়ে রাখছে। বৈষয়িক স্বার্থ ছাড়া তারা কোনোদিন দুটো দেশ ঐক্যবদ্ধ হয় নি, তাই জাতীয় ঐক্যের যে আহ্বান তারা জানিয়ে থাকে তা আহ্বানেই সীমাবদ্ধ। আরব দেশগুলো নিজেদের সিংহাসন টিকিয়ে রাখার জন্য পশ্চিমা প্রভুদের তাবেদারি করে যাবে, আর নিজেদের অঢেল সম্পদ প্রভুদের সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করবে। মুসলিম জাতির পাশে তারা দাঁড়াতে প্রস্তুত নয়, কারণ তাতে প্রভুরা নাখোশ হতে পারে।
কিন্তু মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্বের স্বার্থে এখন ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে। অন্যথায় তারা নিজেদের প্রতিটি রাষ্ট্র একে একে হারাবে, হয় পশ্চিমাদের দখলে যাবে কিংবা জঙ্গিদের দখলে যাবে। যেটাই হোক ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছুই থাকবে না। জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী যেভাবে আগ্রাসী সম্প্রসারণ নীতি নিয়েছে তাতে কোনো দেশই বাদ থাকবে না, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সব মুসলিম দেশই এতে জড়িয়ে যেতে বাধ্য হবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। ঐক্যবদ্ধ না হয়ে যে পররাষ্ট্রনীতিই গ্রহণ করা হোক তা ব্যর্থ হবে। কারণ জঙ্গিরা বিকৃত ধর্মীয় চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ। তারা সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে একটি অখণ্ড রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় এবং এ বিষয়ে তারা তাদের পূর্বপরিকল্পনা ও কল্পিত মানচিত্রও গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। আর পশ্চিমা বিশ্ব চায় রণাঙ্গন যেখানে তারা অস্ত্র বিক্রি করে নিজেদের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে ফেলতে পারবে।
এই পরিণাম এড়ানোর জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে ঐক্য প্রয়োজন সেই ঐক্য সৃষ্টির পদক্ষেপ আপনিও নিতে পারেন। কারণ ঐক্যবদ্ধ করতে যে আদর্শ লাগবে সেই আদর্শ আল্লাহর রহমে আপনার নিকটেই আছে। এই ভূখণ্ডে আল্লাহ সত্যের তরবারি দান করছেন যা দিয়ে ধর্মের নামে প্রচলিত প্রতিটি মিথ্যাকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারেন আপনি। সেই মহাসত্য আমাদের এমামুযযামানকে আল্লাহ দান করছেন। আপনি একবার একটি স্বপ্ন দেখছিলেন যা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে উল্লেখ করেছিলেন। স্বপ্নে আপনি আপনার বাবাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘পার্টি যদি ভেঙ্গে যায় দেশে ফিরবো কিভাবে?’ তিনি বলেছিলেন, ‘না। পার্টি ইউনাইটেড থাকবে’ (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৮ মে ২০১৪)। তখনও আপনার চিন্তার কারণ ছিল অনৈক্য আর এখনো তাই। এখন আপনার বাঙালি জাতিকে, এবং বিশ্বময় মুসলিম জাতিকে বাঁচাতে হলে ঐক্য ছাড়া কোন পথ নাই। আর সেই ঐক্য হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে, হকের পক্ষে, সত্যের পক্ষে। সেই ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া ও পথ আমাদের কাছে আছে।
আপনি বলছিলেন যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কারও সামনে মাথা নত করব না’। একথা একজন মোমেনের কথা, একজন ধর্মবিদ্বেষী বা নাস্তিক এ ধরনের কথা বলতে পারে না, যদিও ধর্মব্যবসায়ীরা আপনাকে নাস্তিক বলে অপপ্রচার করে থাকে। কিন্তু আমরা সেটা মনে করছি না। কিন্তু যদি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ না করা গেলে মাথানত করতে হবেই। ধর্মব্যবসায়ীদের কাছে, জঙ্গীবাদের কাছে, বহিঃশত্রুর কাছে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে মাথা নত করতেই হবে। এটা প্রাকৃতিক নিয়মেই হবে, কেউ ফিরাতে পারবে না। সাদ্দাম, গাদ্দাফি এদের পরিণতি সে সত্যকেই প্রকাশ করে। আর যদি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন তাহলে আল্লাহ ছাড়া কারো সামনেই মাথানত করতে হবে না। আল্লাহ আপনার সঙ্গে থাকবেন। আপনার স্বপ্ন পূরণ হবে, আহ্বান ফলপ্রসূ হবে, আশাবাদ সত্য হবে। আপনি জানেন যে যুদ্ধজয় শক্তি বা অস্ত্র দিয়ে হয় না, যুদ্ধ জয় হয় যোদ্ধার আত্মবিশ্বাসের শক্তি দিয়ে। সেই আত্মবিশ্বাস আসে তার আদর্শ থেকে এবং সেনানায়কের উপর আস্থা থেকে। এ জাতির মধ্যে আমরা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করতে অবশ্যই সক্ষম হবো এনশা’আল্লাহ। তবে জাতির কর্ণধার হিসাবে আপনার ভূমিকা এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।
ধন্যবাদান্তে,

sign
মসীহ উর রহমান

(আমীর, হেযবুত তওহীদ)

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...