হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

মাদারীপুর হামলা

২৭ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে হেযবুত তওহীদের মাদারীপুর জেলা কার্যালয়ে ধমব্যবসায়ীরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর লুটপাটসহ সদস্যদের মারধোর করে এবং নথিপত্র বই ইত্যাদি ভস্মীভূত করে। প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালালেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করেনি।

আর মাত্র একদিন বাদেই সেই প্রতিক্ষিত মাহেন্দ্রক্ষণ; মাদারীপুরে আয়োজিত হবে হেযবুত তওহীদের আলোচনা সভা। কত শ্রম, কত প্রচেষ্টা, কত পরিকল্পনার বিনিময়ে অবশেষে সভাটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে! হাজারো পরিশ্রমের মধ্যেও সবার চোখেমুখে তৃপ্তির আভা। ইতোমধ্যেই মাদারীপুরে পৌঁছে গেছেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান। আরও উপস্থিত আছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ। রংপুর থেকে গেছেন আমিরুল ইসলাম। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে কর্মচঞ্চলতা। সভার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে মোজাহেদ মোজাহেদারা ইউনিয়নে ইউনিয়নে বালাগে বেরিয়ে গেছেন। অফিস প্রায় ফাঁকা, শুধু আছেন আমীররা। স্থানীয় আমীরদের মধ্যে আছেন আব্দুর রহমান ও রানা মিয়া। আর রান্না করার কাজে নিয়োজিত আছেন মাদারীপুরের মোজাহেদ মোখলেছ হাওলাদার, পটুয়াখালী থেকে আসা মো. জুলহাস, পিরোজপুর থেকে আসা হাসান খানসহ বরিশালের আরো দুইজন সদস্য।

হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আব্দুর রহমানের। একটি অপরিচিত নম্বর। কেউ একজন বলল, ‘আমি চাঁদমারী মসজিদ থেকে সৈয়দ আবুল বাশার বলছি। ভাই, আপনারা আগামীকালকে (২৯ শে এপ্রিল) কী প্রোগ্রাম করবেন, একটু চাঁদমারী মসজিদে আসেন শুনি। আলেম সমাজ জানতে চায়, কী প্রোগ্রাম করবেন?’

আব্দুর রহমান মার্জিতভাবে তার প্রশ্নের জবাব দিলেন। তিনি বললেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের একটি কর্মীসভার আয়োজন করা হয়েছে।’

সে বলল, ‘তাহলে তো ভালোই। আসেন আমরা সবাই মিলে করি। আপনারা প্রোগ্রাম করবেন আলেম সমাজকে জানাবেন না?’

আব্দুর রহমান বললেন, ‘দেখুন, আমরা সবাইকেই দাওয়াত দিয়ে থাকি। সাধারণ মানুষ থেকে আলেম/ওলামা পর্যন্ত সবার কাছেই পৌঁছতে চেষ্টা করি। আপনারা তো আমাদের এই অনুষ্ঠানের খবর পেয়েছেন, তাহলে কালকের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করুন।’

বস্তুত তাদের অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। কাজেই আব্দুর রহমান কী বলল সেটায় কর্ণপাত না করে তারা তাদের মত চেষ্টা করতে লাগলো- হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে ওদের কাছে ডেকে নিতে। লোকটা বলল, ‘আমরা বসে আছি আলেম সমাজ আপনার কাছ থেকে প্রোগ্রাম সম্পর্কে কিছু শুনবে। আপনি এসে আলেম সমাজের সাথে বসেন।’

আব্দুর রহমান এবার সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন তার পক্ষে কোথাও যাওয়া এখন সম্ভব হবে না, তিনি এখন প্রচণ্ড ব্যস্ত আছেন। তিনি বরং তাদেরকে অনুরোধ জানালেন যেন তারা আগামীকালের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সরাসরিই দেখে নেন আমরা কী প্রোগ্রাম করছি। আব্দুর রহমান বললেন, ‘অনুষ্ঠান দেখার পরও যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই উত্তর দিব, আলেমদের সাথে বসতে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু এখন নয়। প্রোগ্রামের ব্যস্ততা কাটিয়ে তারপর বসব।’

এরপর কল কেটে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই হেযবুত তওহীদের মাদারীপুর জেলা সভাপতি মো. রানা মিয়ার ফোনে কল আসে। তাকে বলা হয়- ‘আপনি কি রানা মিয়া বলছেন? আপনাদের অফিস কোথায়?’ রানা উত্তর দিলেন- ‘আমাদের অফিস থানতলী আনসার ক্যাম্পের বিপরীত পাশে বাঘা সুপার মার্কেটে।’ ওপার থেকে বলা হলো, ‘আপনি অফিসে থাকবেন। কোথাও যাবেন না। আমরা আসতেছি।’

হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই, কতজনই তো অফিসের ঠিকানা নেন, আসেন, দেখা-সাক্ষাৎ করেন। হুমকি-ধামকিও কতই পাওয়া যায়। কাজেই ফোনটাকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে যার যার কাজে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ওইদিকে যে ধর্মব্যবসায়ী সাপের দল তাদের বিষাক্ত ফণা তুলে তেড়ে আসছে সেটা কেউ ধারণাও করতে পারলেন না।

প্রায় ৪০ মিনিট পর হঠাৎ ৩০/৪০ জনের মোটরসাইকেলের বহর অফিসের সামনে দাঁড়ালো। তাদের মাথায় টুপি, গায়ে জোব্বা। আরও আছে সন্ত্রাসী, মাস্তান প্রকৃতির কিছু রাজনৈতিক দলের ক্যাডার। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিল মোল্লারা। তারা মোটরসাইকেল থেকে নেমেই হিংস্র জানোয়ারের মত অফিসের দিকে দৌড় দিল। এদিকে আচমকা হামলার শিকার হয়ে অফিসের সদস্যরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কোনোভাবে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে আমীরুল ইসলাম অফিস ত্যাগ করতেই শুরু হলো মোল্লাদের তাণ্ডব। তাদের একদল প্রবেশ করল জেলা সভাপতি রানার রুমে। একজন বলল, ‘এই তুই কি রানা?’ ‘হ্যাঁ’ বলতেই শুরু করল মারধোর। আরেকজন বলল, ‘তুই সভাপতি, তোর মুখে দাড়ি কই? তোর লেবাস কই?’ কেউ থাপ্পড়, কেউ কিল-ঘুষি, কেউ হাত দিয়ে, কেউ লাঠি দিয়ে, কেউ জুতা দিয়ে মারতে লাগলো। একজন ছেড়ে দিলে আরেকজন মারা শুরু করে, সে ছাড়লে আরেকজন মারে। আরেকদল ব্যস্ত অফিসের মালামাল লুটপাট ও ভাঙচুরের কাজে। আব্দুর রহমান একবার চেষ্টা করলেন থানায় ফোন দিতে। কিন্তু মোবাইল হাতে নিতেই দৌড়ে এসে এক মোল্লা তার জামার কলার ধরে টেনে টেনে মোল্লাদের কাছে নিয়ে গেল। ‘কার কাছে ফোন দিস?’ প্রশ্ন করেই শুরু করল এলোপাতাড়ি থাপ্পড়।

মারধোরের এক পর্যায়ে তারা অফিসে তালা মারার জন্য চাবি খুঁজতে লাগলো। চাবি খুঁজতে গিয়ে অফিসের কেয়ারটেকারকে পেল। লোকটা হিন্দুধর্মাবলম্বী, তবে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হওয়ায় তাকেও মার খেতে হলো। রানাকে মারতে মারতে অফিসের উপর থেকে নিচে নামানোর সময় হঠাৎ মোল্লাদের নজর পড়ল নতুন অফিস রুমে। সেখানে মোজাহেদরা বিশ্রাম নিতেন এবং ওইখানেই মূলত বালাগ কার্যক্রমের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি যেমন প্রজেক্টর, পিডিভিডি, পত্রিকা, পোস্টার, ক্যালেন্ডার, প্রকাশনা ইত্যাদি রাখা হত। এইসব দেখেই সন্ত্রাসী ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বিতীয় দফা তাণ্ডব শুরু হলো। অবাধে চলতে লাগল লুটপাট। প্রকাশ্য দিবালোকে কেউ প্রজেক্টর, কেউ পিডিভিডি, কেউ পোস্টার, কেউ প্রকাশনা ইত্যাদি লুট করে নিয়ে যেতে লাগলো। ঘটনাক্রমে পিরোজপুরের হাসান পত্রিকা রিসিভ করে ওই সময়েই অফিসে উঠছিলেন, তাকেও সামনাসামনি পেয়ে গেল ধর্মব্যবসায়ীরা। তাকেও মারধোর করে পত্রিকাগুলো কেড়ে নেওয়া হলো এবং সমস্ত পত্রিকা ছিঁড়ে ফেলল।

তারা অফিসে প্রাপ্ত সমস্ত পোস্টার, প্রকাশনা, ক্যালেন্ডার নিচে জড়ো করে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিল। পুরো তাণ্ডব হয়ে যাবার পর তারা যখন চলে যেতে উদ্যত হয়েছে, তখন এলো পুলিশের গাড়ি। কিন্তু পুলিশ চাইলে তারপরও অপরাধীদেরকে হাতেনাতে ধরতে পারত। তাদের অনেকে পুলিশের সামনেই উল্লাস করছিলো। এক পর্যায়ে পুলিশের সামনে দিয়েই তারা একে একে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়।

ধর্মব্যবসায়ীরা অফিসে হামলা করেও ক্ষান্ত নয়!

মাদারীপুর জেলা অফিসে হামলার পরও ধর্মব্যবসায়ীরা ক্ষান্ত নয়। তারা একদিনের জন্যও হেযবুত তওহীদের সাথে শত্রুতা বন্ধ করেনি, বরং বিষাক্ত সাপ যেমন সুযোগ পেলেই ছোবল মারে, তেমনিভাবে সুযোগের অপক্ষায় থাকে কখন হেযবুত তওহীদের উপর আবারও হামলে পড়া যায়। আর হেযবুত তওহীদের কোনো সদস্যকে একা পেলে তো কথাই নেই। ফলে অফিসে হামলার পর পুনরায় ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটির হামলার শিকার হয় একজন মোজাহেদ। তার নাম শানাল মোল্লা। সর্বাত্মক বালাগের সময় একা পেয়ে ধর্মব্যবসায়ীরা তার উপর চড়াও হয় এবং অন্যায়ভাবে গায়ে হাত তোলে।

জানা গেছে, মাদারীপুর শাখার মোজাহেদ শানাল মোল্লা আমীরের নির্দেশে চলতি বছরের ১৭ জুন পত্রিকা বিক্রি করতে বের হন। দিনটি ছিল পবিত্র ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ সর্বাত্মক বালাগের দিন। তিনি ৪০টি পত্রিকা নিয়ে মাদারীপুর সদরের খোয়াজপুর টেকেরহাট বাজারে যান। সেখানে ৩৬টি পত্রিকা বিক্রি করেন। সময় তখন বাজে বেলা ১২টা। অবশিষ্ট ৪টি পত্রিকা হাতে নিয়েই তিনি বাড়ির উদ্দেশ্যে খোয়াজপুর টেকেরহাট বাজার থেকে রওনা হন। মাদারীপুর সদর পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে এসে তিনি যান শ্রমিক ইউনিয়নের একজন নেতাকে পত্রিকা দিতে। এরই মাঝে পিছনে ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে একজন লোক বের হয়ে তাকে লক্ষ্য করে এগিয়ে আসতে থাকে। টুপি দাড়িওয়ালা লোকটা ক্ষিপ্ত কণ্ঠে শাষাতে লাগলো- ‘এই তুই এই পত্রিকা বিক্রি করিস! এইটা তো বায়াজীদ খান পন্নীর, তাই না?’ মোজাহেদ শানাল মোল্লা বললেন, ‘হ্যাঁ এটা তাঁর পত্রিকা।’ উত্তর শুনেই সাথে সাথে সে ফোন করে আরো ৩ জন লোক ডেকে আনলো। তারা এসেই মোজাহেদ শানাল মোল্লাকে আচমকা আক্রমণ করে বসলো। পিছন থেকে কিল ঘুষি মারতে লাগলো। একজন বলল, ‘তোদের সভাপতি রানা মিয়া না? জানস না রানাকে সেদিন ইচ্ছামত মারছি?’ শানাল মোল্লাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তারা একটি অটোগাড়িতে উঠিয়ে দিলো আর বললো, ফের যেন তোকে এই এলাকায় না দেখি, দেখলে হাত পা ভেঙে দিব।’

মোজাহেদ শানাল মোল্লা জানতেন তাকে অন্যায়ভাবে আক্রমণ করা হলেও তিনি যদি শুধু প্রতিরোধও করতেন তাহলে সমস্ত দোষ গিয়ে পড়ত তার কাধে। কারণ থানা হেযবুত তওহীদের পক্ষে ছিলো না। তারা ধর্মব্যবসায়ীদের কথাই শুনত। এই দাজ্জালের সভ্যতায় ন্যায়-অন্যায় বলে কিছু নেই, এখানে হেযবুত তওহীদ করাটাই বিরাট অন্যায়, যদিও হেযবুত তওহীদ কোনো আইনভঙ্গ করে না, অপরাধ করে না। কাজেই অহেতুক প্রশাসনের শরণাপন্ন না হয়ে মোজাহেদ শানাল মোল্লা তাকে অন্যায়ভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের এই ঘটনার বিচার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছেন। অবশ্যই আল্লাহ তার এই মোজাহেদের আকুতি কবুল করবেন, কারণ আল্লাহর কাছে একজন মো’মেনের সম্মান তাঁর কাবারও ঊর্ধ্বে।

মাদারীপুরের বর্তমানে অবস্থা

মাদারীপুর জেলা হেযবুত তওহীদের কার্যালয়ে হামলার পর ব্যাপকভাবে ওই এলাকার স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে ক্রমশই পরিবেশ অনুকূল হয়ে উঠতে থাকে। একজন যুবলীগ নেতা আক্তার হাওলাদার, যিনি একদা রানা মিয়াকে থাপ্পড় মেরেছিলেন, তার সাথে সাক্ষাৎ করে যখন মাননীয় এমামের ভাষণ দেখানো হলো এবং হেযবুত তওহীদের কার্যক্রম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া হলো, তিনি তার ভুল বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, ‘আমাকে তো তারা (মোল্লারা) আপনাদের সম্পর্কে ভুল বুঝিয়েছে। আপনারা নাকি এক ওয়াক্ত নামাজ পড়েন! আপনারা অফিস নেন আমি আপনাদের জন্য যে কোনো ধরনের সহায়তা করব।’

এলাকার সাধারণ মানুষেরও ভুল ভাঙতে লাগলো। ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি হেযবুত তওহীদের কণ্ঠরোধ করতে গিয়ে যে ডাহা মিথ্যাচার করেছিল সেগুলোর ব্যাপারে যতই তারা জানতে লাগলো, ততই তারা বিস্মিত হলো। সংশ্লিষ্ট এলাকার অনেকেই বর্তমানে হেযবুত তওহীদকে অনুরোধ করেন যেন ওই এলাকায় আবার অফিস নেওয়া হয়। ওই অফিসের কেয়ারটেকার মো. ভুলুও ঐ ভবনে আবারো অফিস নিতে বলেন। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকরাও এখন হেযবুত তওহীদের ব্যাপারে অনেক ইতিবাচক ধারণা পোষণ করে।

সংবাদ সম্মেলন

মাদারীপুরে হেযবুত তওহীদের জেলা কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলার বিচারের দাবিতে ঘটনার দিন বিকেলে ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে একটি সংবাদ সম্মেলন করে হেযবুত তওহীদ। গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা। মাদারীপুরের বাঘা সুপার মার্কেটে অবস্থিত হেযবুত তওহীদের কার্যালয়ে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের ইমাম এবং চরমোনাই পীরের অনুসারী মাদ্রাসাশিক্ষিত কিছু উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী এ হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সোমবার সকাল ১০ টার সময় কয়েকটি মোটর সাইকেল ও অটোরিক্সায় করে হেযবুত তওহীদের কার্যালয়ের সামনে লাঠিসোটা হাতে প্রায় ৩০/৪০ জন দাঙ্গাকারী উপস্থিত হয়। তাদের অধিকাংশের পরনে ছিল লম্বা জোব্বা, লুঙ্গি, পাজামা, মাথায় টুপি অথবা পাগড়ি। বেশ কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির যুবকও ছিল যারা টি-শার্ট জিন্স ইত্যাদি পোশাক পরিহিত ছিল। তাদের নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন দাঙ্গাবাজ মুহূর্তের মধ্যেই হেযবুত তওহীদের কার্যালয়ে প্রবেশ করে এবং কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উপর হামলে পড়ে এবং এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে, লাঠি ও রড দিয়েও পিটাতে থাকে। হামলাকারীরা কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, ল্যাপটপসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং হেযবুত তওহীদের পোস্টার, বই, লিফলেট ইত্যাদি কার্যালয়ের সামনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ হামলার ঘটনায় প্রায় চার লক্ষ টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২৯ এপ্রিল ২০১৮ মাদারীপুরে কর্মী সম্মেলনের প্রয়োজনে নগদ এক লক্ষ টাকা কার্যালয়ে রাখা ছিল যা লুট করা হয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনাব হুদা বলেন, “বেশ কিছুদিন থেকেই চরমোনাই পীরের স্থানীয় অনুসারীরা এলাকার বেশ কয়েকটি মসজিদে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে মুসল্লিদেরকে হামলার উসকানি দিয়ে আসছিল। এখন পর্যন্ত আমরা হামলায় অংশগ্রহণকারী দু’জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। তারা হল ইটের পরস মসজিদের ইমাম এবং তানমারী মসজিদের ইমাম।”

এই বিষয়ে মাদারীপুর সদর থানার ভাররপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) নাঈম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হেযবুত তওহীদের একটি কর্মী সম্মেলনকে সামনে রেখে মাদারীপুরে আন্দোলনটি প্রচার কার্যক্রম চলছিল। এর বিরোধিতা করে আসছিলেন স্থানীয় কিছু আলেম শ্রেণির লোক। তারা এ অনুষ্ঠানটি বানচাল করার জন্যই সহিংস ঘটনাটি ঘটায়। তবে তারা চরমোনাই পীরের অনুসারী কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান ওসি (তদন্ত) নাঈম।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী সদর থানার সাব ইন্সপেকটর শ্যামল ঘোষ জানান, হামলার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং হামলাকারীদের সরিয়ে দেয়। হামলাকারীরা অধিকাংশই ছিল জোব্বা পরিহিত হুজুর প্রকৃতির লোক। তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের ইমাম এ হামলার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে হেযবুত তওহীদ নেতৃবৃন্দ বলেন, “এ হামলার ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। আমরা ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে থাকি। আমাদের বিরুদ্ধে তাই জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী, ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী নানারকম মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাধারণ মানুষকে আমাদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তুলতে চায়। এরা চায় ধর্মপ্রাণ মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে সর্বপ্রকার সহিংসতা চালিয়ে তার দায় জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে। এভাবে তারা নিজেরা ধর্মীয় লেবাস দেখিয়ে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে চায়। কয়েকদিন আগে চরমোনাই পীরের একটি মাহফিলে মুফতি ফয়জুল করিম তাদের লক্ষাধিক মুরিদের সামনে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিরোধ করার হুকুম দেন। ওই উসকানির পর থেকেই বরিশাল অঞ্চলের হেযবুত তওহীদ সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে। মাদারীপুরে আমাদের জেলা কার্যালয়ে হামলার এ ঘটনাটি তারই ধারাবাহিকতা। গত কাল ২৭ এপ্রিল রাতেও এ এলাকায় চরমোনাই পীরের অনুসারীদের কর্তৃক আয়োজিত একটি মাহফিলে হেযবুত তওহীদের উপর হামলা চালাতে মুসুল্লিদেরকে উসকানি দেওয়া হয়।” হেযবুত তওহীদ নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং জড়িতদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...