হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

প্রকৃত এবাদত কী?

রাকীব আল হাসান:

আল্লাহ বলেছেন যে তিনি মানুষকে এবাদত করা ভিন্ন অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেন নি। তাহলে কী সেই এবাদত? বর্তমানে আলেমরা ওয়াজে নসিহতে মানুষকে কেবল নামাজ, রোজা, হজ্ব ইত্যাদি করার জন্য উপদেশ দেন, এগুলিকেই তারা এবাদত ও ধর্মকর্ম বলে মনে করেন। নামাজ রোজা করা মানুষের প্রকৃত এবাদত নয়। এবাদত কথাটির অর্থ হচ্ছে যে জিনিসকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেই কাজ করা। একটি ঘড়ি তৈরি করা হয়েছে সময় দেখানোর জন্য, এটা করাই তার এবাদত। সূর্য সৃষ্টি করা হয়েছে আলো, তাপ ইত্যাদি দেওয়ার জন্য, এগুলি দেওয়াই তার এবাদত। মানুষকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা আগে জানতে হবে। কারণ সেটা করাই তার এবাদত। মানুষকে কি মসজিদে, মন্দিরে, গির্জা, প্যাগোডায় গিয়ে বসে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে? না। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে সত্য ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য, এটা প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। পৃথিবী যখন অশান্তির জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড হয়ে আছে, মানুষের মুখে ভাত নেই, মসজিদ থেকে পর্যন্ত জুতা চুরি হয়, যে সমাজে চার বছরের শিশু কন্যা পর্যন্ত ধর্ষিত হয় সেখানে এক শ্রেণির লোক মসজিদে গিয়ে পড়ে থাকে, মনে করে এবাদত করছে, মন্দিরে গিয়ে দুধ-কলা দেন মনে করেন যে উপাসনা করছেন, মক্কায় গিয়ে মনে করেন যে, এবাদত করছেন। আসলে তাদের এবাদত করা হচ্ছে না। মানুষের প্রকৃত এবাদত হলো মানবতার কল্যাণে কাজ করা। আল্লাহ বলেছেন, পূর্ব এবং পশ্চিমদিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোন পুণ্য নেই। কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, মালায়েকদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসুলগণের উপর ঈমান আনবে, আর আল্লাহরই প্রেমে স¤পদ ব্যয় করবে আতœীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও দাসমুক্তির জন্যে। আর যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা স¤পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই মুত্তাকী (সুরা বাকারা ১৭৭)। সুতরাং মানুষ কী করলে শান্তিতে থাকবে, দরজা খুলে ঘুমাবে সেই লক্ষ্যে কাজ করাই হলো এবাদত। যারা মানবতার কল্যাণে এই কাজগুলি করবে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করবে তাদের প্রশিক্ষণের জন্য, তাদের চরিত্র সৃষ্টি করার জন্য দরকার হলো নামাজ, রোজা ইত্যাদি। যেমন একটি বাড়িতে খুঁটি দেওয়া হয় ছাদকে ধরে রাখার জন্য। যদি ছাদই না দেওয়া হয়, তাহলে শুধু খুটি গেঁড়ে কোন লাভ নেই। নামাজ রোজা হচ্ছে এই খুঁটির মত। তেমনি যারা শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করবে না, তাদের জন্য এই নামাজ-রোজা কোনো কাজে আসবে না। এগুলো তাদেরকে স্বর্গে বা জান্নাতে নিতে পারবে না। এর অর্থ কেউ যদি এই বুঝে থাকেন যে, আমি আপনাদের মসজিদে, মন্দিরে, প্যাগোডা, গীর্জায় যেতে নিষেধ কোরছি তাহলে আমি আপনাদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি বলছি প্রধান কাজ হলো শান্তি প্রতিষ্ঠা, কাজেই আসুন শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখি, মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করি। মানবজীবন তখনই সার্থক হবে যখন মানুষ নিজেকে অন্যের কল্যাণে নিয়োজিত করবে।
যারা আইন-শৃঙ্খলার কাজে, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়জিত তারা যদি সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, মানবতার কল্যাণে নিস্বার্থভাবে এই কাজ করে তবে তাদের এই কাজ আল্লাহর প্রকৃত এবাদত বলে গণ্য হবে, সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সকলকে পূর্ণ নিরাপত্ত দান করাই ইসলামের প্রধান কাজ। তাদেরকে বুঝতে হবে এই কাজ স্রষ্টার অতি প্রিয় কাজ। যুগে যুগে নবী-রসুলগণ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতেই পৃথিবীতে আগমন করেছেন।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...