হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

প্রকৃত ইসলাম ও বিকৃত ইসলাম; মানবসমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠাই ইসলামের উদ্দেশ্য

 সাইফুল ইসলাম:

মোহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে ইসলামের সর্বশেষ সংস্করণটি আল্লাহ মানবজাতিকে যে উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন সে উদ্দেশ্যই এখন বদলে গেছে। মানব সৃষ্টির প্রারম্ভের ঘটনাগুলোর মধ্যে ইসলামের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। মানুষ সৃষ্টির সময়কার ঘটনাপ্রবাহ যা আল্লাহ আল কোর’আনের মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছেন তা মোটামুটি এই যে, ‘আল্লাহ যখন পৃথিবীতে তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসাবে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিবিশিষ্ট একটি নতুন সৃষ্টি (আদম) করতে চাইলেন, তখন সকল মালায়েক মানুষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন করে বলেছিল যে, ‘তোমার প্রশংসা ও গুণকীর্তণ করার জন্য আমরাই কি যথেষ্ট নই? তোমার এই সৃষ্টি পৃথিবীতে গিয়ে ফাসাদ (অন্যায় অশান্তি) ও সাফাকুদ্দিমা (রক্তপাত, যুদ্ধ বিগ্রহ) করবে (সুরা বাকারা ৩০)। কিন্তু আল্লাহ তাদের এই মৃদু আপত্তি সত্ত্বেও আদম (আ.) কে সৃষ্টি করলেন। এরপর আল্লাহ তাঁর নিজের রূহ আদমের (আ.) ভিতরে ফুঁকে দিলেন এবং সকল মালায়েককে আদমের খেদমতে নিয়োজিত করলেন। তারা প্রত্যেকেই আদমকে (আ.) সেজদা করার মাধ্যমে আল্লাহর এই হুকুমের আনুগত্য করল এবং আদমের সেবায় নিয়োজিত হলো। কিন্তু ইবলিস আল্লাহর এই হুকুমকে অন্যায্য ঘোষণা করে আদমকে সেজদা করা থেকে বিরত রইল। ফলে আল্লাহ ইবলিসকে তার সম্মানজনক অবস্থান থেকে বিতাড়িত (রাজীম) করলেন এবং অভিশাপ দিলেন। ইবলিসও তখন আল্লাহর কাছে অবকাশ চেয়ে নিলো এবং আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ দিলো যে সে বিভিন্ন প্রকার প্ররোচনা দিয়ে অধিকাংশ মানুষকেই আল্লাহর হেদায়াত (দিক নির্দেশনা), সরল পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে এবং প্রমাণ করবে যে মানুষ তার চাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টি। আল্লাহ জানিয়ে দিলেন যে, তিনি প্রতি যুগে, প্রতি জনপদে তাঁর নবী-রসুল পাঠিয়ে হেদায়াহ ও দীন (জীবনব্যবস্থা) প্রেরণ করবেন। সেটাকে অনুসরণ করলেই তারা দুনিয়াতে একটি শান্তিময় ও প্রগতিশীল সমাজে বসবাস করতে পারবে। সেখানে থাকবে না কোন ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা অর্থাৎ অন্যায়, অশান্তি, যুলুম, রক্তপাত, যুদ্ধ, ক্রন্দন, হতাশা অর্থাৎ সৃষ্টির আদিতে মালায়েকরা মানবজাতিকে নিয়ে যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল সেগুলো থাকবে না। পাশাপাশি ইবলিসের সঙ্গে করা চ্যালেঞ্জে আল্লাহ বিজয়ী হবেন।’
এজন্যই ইসলাম শব্দের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে শান্তি, এই নামকরণ আল্লাহ করেছেন এই জন্য যে, এই দীন, জীবন যাপন পদ্ধতি পৃথিবীর যে অংশে প্রতিষ্ঠিত হবে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে অশান্তির লেশও থাকবে না। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই দীনের আকীদা বা উদ্দেশ্য হলো- সমস্ত জীবনব্যবস্থার উপর একে সংগ্রামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করে মানবজীবনের সর্ব অঙ্গন থেকে অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ, রক্তপাত অর্থাৎ ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই কাজ করাই হচ্ছে আল্লাহর খেলাফত করা, আর খেলাফত করাই হলো প্রকৃত এবাদত। এখন মুসলিম দাবিদার জাতির সামনে থেকে দীনের এই উদ্দেশ্য হারিয়ে গেছে, তারা কেবল নামাজ, রোজা, হজ্ব করাকেই এবাদত হিসাবে ধরে নিয়ে ভালো মানুষ হওয়ার জন্য জোর প্রচেষ্টা করছে। পৃথিবীতে সেই এবাদত কোন শান্তি আনতে পারছে কি পারছে না, তা ভেবেও দেখছে না। যেন সমাজের শান্তি-অশান্তির সঙ্গে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, এবাদতেরও কোন সম্পর্ক নেই। আজ দীনের উদ্দেশ্য করা হয়েছে আখেরাতের পুঁজি হিসাবে সওয়াব অর্জন করা যেন মিজানের পরিমাপে পুণ্যের পাল্লা ভারি হয় আর পদ্ধতি করা হয়েছে উপাসনা। এটা জানা কথা যে, উদ্দেশ্য ভুল হলে আর কোন কিছুরই কোন মানে থাকে না। অথচ আল্লাহর দেওয়া ইসলামের উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, এই দীন অনুসরণের অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে শান্তি এবং অনুসরণ না করার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে অশান্তি। তাই যেখানে শান্তি নেই, আমরা বলতে পারি সেখানে ইসলাম নেই।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...