হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

নামাজ নয়-‘সালাহ’

কাজী মাহফুজ

আল্লাহর দেয়া মানুষের জন্য জীবন বিধানে সালাতের গুরুত্ব ও মূল্য অত্যন্ত অধিক। তাঁর কোর’আনে আল্লাহ আশি বারেরও বেশি সালাহ্-কে উল্লেখ করেছেন, সালাহ্ কায়েম করতে বলেছেন। আজ পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ, লক্ষ লক্ষ বিরাট বিরাট সুদৃশ্য মসজিদে দিনে পাঁচবার একত্রিত হয় সালাহ্ কায়েম করতে, আল্লাহর আদেশ পালন করতে। কিন্তু আল্লাহ যে উদ্দেশ্যে মুমিনদের সালাহ্ কায়েম করতে আদেশ করেছেন সে উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে না। একশ’ পঞ্চাশ কোটির এই জাতিটি, যে জাতিটি নিজেদের মুমিন, মুসলিম ও উম্মতে মোহাম্মদী বলে বিশ্বাস করে, এই জাতিটি আজ পৃথিবীর অন্য সব জাতি দ্বারা পরাজিত লাঞ্ছিত, অপমানিত, নিগৃহিত। আল্লাহর রসুল পৃথিবী থেকে চলে যাবার সময় তাঁর গড়া এ জাতিটি সংখ্যায় ছিল পাঁচ লাখের মত। এটা ইতিহাস যে আল্লাহর রসুল চলে যাবার পর ৬০/৭০ বছরের মধ্যে ঐ ছোট্ট জাতিটি, একটি একটি করে নয়, এক সঙ্গে তদানীন্তন পৃথিবীর দু’টি বিশ্বশক্তি রোম ও পারস্যকে আক্রমণ করে তাদের সামরিকভাবে পরাজিত করে অর্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই পাঁচলাখের জাতিটাও সালাহ্ কায়েম করতো, আজ একশ’ পঞ্চাশ কোটির এই জাতিটাও সালাহ্ কায়েম করে, অন্তত করে বলে বিশ্বাস করে। তাহলে সেই একই কাজ করে, আল্লাহর একই আদেশ পালন করে সেই পাঁচ লাখের প্রায় নিরক্ষর, চরম দরিদ্র জাতি বিশ্বজয় করল আর বর্তমানের একশ’ পঞ্চাশ কোটির জাতি, তাদের মধ্যে বহু উচ্চ শিক্ষিত, আলেম, পীর মোরশেদ থাকা সত্ত্বেও, বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের একটা বিরাট অংশের মালিক হওয়া সত্ত্বেও আজ বিশ্বের সমস্ত জাতি দ্বারা পরাজিত, নিগৃহিত। একই কাজ করে, আল্লাহর একই আদেশ পালন করে পরিণতি, ফল শুধু আকাশ পাতাল নয়, একেবারে উল্টো কেন?
এই ‘কেন’র জবাব অনেক ব্যাপক। আজকে নামাজ শব্দটা ব্যবহার না করে সালাহ্ শব্দ কেন ব্যবহার করছি তা বলছি। এ উপমহাদেশে সালাতের বদলে নামাজ শব্দটা ব্যবহারে আমরা এতটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে সালাহ্ বললে অনেকে বুঝিই না সালাহ্ কি। কোর’আনে কোথাও নামাজ শব্দটা নেই কারণ কোর’আন আরবি ভাষায় আর নামাজ পার্শি অর্থাৎ ইরানি ভাষা। শুধু ঐ নামাজ নয় আরও অনেক শব্দ আমরা ব্যবহার কোরি যা কোর’আনে নেই। যেমন খোদা, রোজা, বেহেশত, দোযখ, ফেরেশতা, জায়নামাজ, মুসলমান, পয়গম্বর ইত্যাদি। এই ব্যবহার মুসলিম দুনিয়ায় শুধু ইরানে এবং আমাদের এই উপমহাদেশে ছাড়া আর কোথাও নেই। এর কারণ আছে। কারণটা হলো- ইরান দেশটি সমস্তটাই অগ্নি-উপাসক ছিল। আল্লাহর নবীর সুন্নাহ পালনের জন্য উম্মতে মোহাম্মদী যখন ইরানকে তিন শর্তের একটি মেনে নেয়ার আমন্ত্রণ দিলো তখন ইরান পৃথিবীর দুই বিশ্বশক্তির একটি; অন্যটি খ্রিস্টান রোমান। ঐ তিন শর্ত হলো-
১) আল্লাহর রসুল সত্য দীন নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন- এই দীন মেনে নিয়ে মুসলিম হয়ে যাও, তাহলে তোমরা আমাদের ভাই হয়ে যাবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুল এই দীনকে সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করার যে দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পণ করেছেন, সে দায়িত্ব তোমাদের ওপরও বর্তাবে। ২) যদি তা গ্রহণ না করো তবে আমাদের বশ্যতা স্বীকার করো, আমরা আল্লাহর দেয়া দীন, কোর’আনের আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করবো; তোমরা যার যার ধর্মে থাকবে, আমরা বাধাতো দেবই না বরং সর্বপ্রকারে তোমাদের এবং তোমাদের ধর্মকে নিরাপত্তা দেব; বিনিময়ে তোমাদের যুদ্ধক্ষম লোকেরা বার্ষিক সামান্য একটা কর দেবে, যার নাম জিজিয়া। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, স্ত্রীলোক, রোগগ্রস্ত মানুষ এবং বালক-বালিকা, শিশুগণকে এ কর দিতে হবে না। এর পরও তোমাদের রক্ষার জন্য যুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে যেসব যুদ্ধক্ষম লোক আমাদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করবে তাদের ঐ জিজিয়া দিতে হবে না। ৩) যদি এই দুই শর্তের কোনোটাই না মেনে নাও তবে যুদ্ধ ছাড়া আর পথ নেই। আমরা তোমাদের আক্রমণ করে পরাজিত করে আল্লাহর দীন, জীবন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করব।
এটা ইতিহাস যে প্রচণ্ড শক্তিশালী, অন্যতম বিশ্বশক্তি ইরান অবজ্ঞাভরে ঐ প্রথম দুই শর্ত উপেক্ষা করে তৃতীয় শর্ত যুদ্ধকেই বেছে নিয়েছিল ও অল্প সময়ের মধ্যে ঐ ছোট্ট উম্মতে মোহাম্মদীর কাছে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়ে গিয়েছিল। পরাজিত হবার পর প্রায় সমস্ত ইরানি জাতিটি অল্প সময়ের মধ্যে পাইকারি ভাবে দীন ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম হয়ে গিয়েছিল। এই ঢালাও ভাবে মুসলিম হয়ে যাবার ফলে তারা ইসলামের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি তা পূর্ণভাবে বুঝতে সমর্থ হলো না অর্থাৎ তাদের আকিদা সঠিক হলো না। তারা ইসলামে প্রবেশ করল কিন্তু তাদের অগ্নি-উপাসনার অর্থাৎ আগুন পূজার সময়ের বেশ কিছু বিষয় সঙ্গে নিয়ে ইসলামে প্রবেশ করল। আগুন উপাসনাকে তারা নামাজ পড়া বোলত, সালাহ্-কে তারা নামাজ বলতে শুরু করল, তাদের অগ্নি-উপাসনার ধর্মে উপবাস ছিল, তারা সাওমকে রোজা অর্থাৎ উপবাস বলতে লাগলো, মুসলিমকে তারা পার্শি ভাষায় মুসলমান, নবী-রসুলদের পয়গম্বর, জান্নাহ-কে বেহেশত, জাহান্নামকে দোযখ, মালায়েকদের ফেরেশতা এমন কি মহান আল্লাহর নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করে খোদা ইত্যাদিতে ভাষান্তর করে ফেললো। শুধু যে সব ব্যাপার আগুন পূজার ধর্মে ছিল না, সেগুলি স্বভাবতই আরবি শব্দেই রয়ে গেল; যেমন যাকাহ, হজ্ব ইত্যাদি। তারপর মুসলিম জাতি যখন ভারতে প্রবেশ করে এখানে রাজত্ব করতে শুরু করল তখন যেহেতু তাদের ভাষা পার্শি ছিল সেহেতু এই উপমহাদেশে ঐ পার্শি শব্দগুলির প্রচলন হয়ে গেলো। এক কথায় বলা যায় যে, আরবের ইসলাম পারস্য দেশের ভেতর দিয়ে ভারতে, এই উপমহাদেশে আসার পথে পার্শি ধর্ম, কৃষ্টি ও ভাষার রং-এ রং বদলিয়ে রঙ্গীন হয়ে এলো।
ব্যাপারটা অনেকটা এই রকম:- অগ্নি-উপাসক ইরান না হয়ে যদি মুর্তিপূজক হিন্দু ভারত উম্মতে মোহাম্মদীর কাছে সামরিকভাবে পরাজিত হয়ে ইসলাম ভালো করে না বুঝেই ব্যাপকভাবে, ঢালাওভাবে এই দীনে প্রবেশ কোরত তবে তারা সালাহ্-কে পূজা বা উপাসনা, সাওমকে উপবাস, নবী-রসুলকে অবতার, জান্নাহ-কে স্বর্গ, জাহান্নামকে নরক, মালায়েকদের দেবদূত, দেবতা, আল্লাহকে ভগবান বা ঈশ্বর ইত্যাদি চালু করে ফেলতো এবং আমরা যেমন এখন নামাজ, রোজা, বেহেশত, দোযখ, পয়গম্বর, ফেরেশতা, খোদা শব্দগুলি ব্যবহার কোরি তেমন করে ঐ ভারতীয় শব্দগুলি ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে যেতাম।
আমাদের উচিৎ এই পার্শি শব্দগুলির ব্যবহার ত্যাগ করে আল্লাহ কোর’আনে যে শব্দগুলি ব্যবহার করেছেন সেই শব্দগুলি আবার চালু করার চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে সতর্ক করে বলে দিয়েছেন যে, আল্লাহর আছে সুন্দর সুন্দর নাম, তোমরা তাঁকে সে নামেই ডাক, যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে (সুরা আরাফ- ১৮০) তাই খোদা শব্দের বদলে আল্লাহ, নামাজের বদলে সালাহ্ এবং রোজার বদলে সওম শব্দ, পয়গম্বরের বদলে নবী ব্যবহার করাই শুদ্ধ।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...