হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

তাহলে ধর্মজীবী মোল্লারা খাবেন কী করে?

Untitled-19

আরিফ মোহাম্মদ আলী আহসান:

আমরা যখন প্রকৃত ইসলাম কী এবং কিভাবে প্রকৃত ইসলাম মানবজীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এই বিষয়গুলো মানুষের সামনে তুলি ধরি, তখন সঙ্গতভাবেই ধর্মব্যবসায়ী আলেমদের প্রসঙ্গ এসে যায়। কারণ তারাই প্রচলিত ইসলামের অভিভাবক ও ধ্বজাধারী সেজে আছে। অথচ প্রকৃত ইসলামে ধর্মব্যবসার কোন সুযোগ নেই, রসুলাল্লাহর সময় এই ধর্মজীবীদের কোন অস্তিত্বও ছিল না। দীনের বিকৃতি ঘটায় ও খ্রিস্টানদের ঔপনিবেশিক শাসনামলে চক্রান্তের ফাঁদে পড়ে এই পুরোহিত শ্রেণি একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। এ কারণে প্রকৃত ইসলামের কথা বললে ধর্মজীবীদের অবৈধ বাণিজ্যের বিষয়টি এড়ানোর কোন সুযোগ থাকে না। তাই আমাদেরকে অনেকে প্রশ্ন করেন- তাহলে তারা কী করে খাবেন? তারা কী করে খাবেন তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এখন তারা কী খাচ্ছেন? আল্লাহ বলছেন, আল্লাহ যা নাজেল করেছেন যারা তা গোপন করে এবং এর বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছু প্রবেশ করায় না। (সুরা বাকারা ১৭৪)। সুতরাং ধর্মজীবী আলেমরা জাহান্নামের আগুন দিয়ে উদর পূর্তি করছেন। প্রশ্ন হলো, জাহান্নামের আগুন না খেলে তারা খাবেন কী? এর জবাব হলো:
১। ধর্মব্যবসা আমরা নিষেধ করি নি, স্বয়ং আল্লাহ নিষেধ করছেন। শুধু নিষেধই করেন নি, ধর্মের কথা বলে বিনিময় নিলে তাকে তিনি জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। ক্ষুধার তাড় নায়, কোন উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত পশু, শুকরের গোশত খেলেও আল্লাহ ক্ষমা করবেন কিন্তু কোন অবস্থাতেই দীনের কাজের বিনিময় নেয়া যাবে না একথা আল্লাহ কঠোরভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন (সুরা বাকারা ১৭৩-১৭৫)। সুতরাং প্রশ্নটি আমাদের করে কী লাভ? বরং আল্লাহকেই প্রশ্নটি করা দরকার যেহেতু নিষেধটি স্বয়ং আল্লাহই করেছেন।
২। নামাজ পড়ানোর জন্য তারা যে সময় ব্যয় করেন- মুসুল্লীও সেই একই সময় ব্যয় করেন, ওয়াজ করে তিনি যে সময় ব্যয় করেন- যে ওয়াজ শোনেন সেও একই সময় ব্যয় করেন। মুসল্লীগণ ও ওয়াজ শুনতে আসা লোকজন কী করে জীবন ধারণ করেন? নিশ্চয় তারা সামাজে অন্য সকলের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা, ক্ষেতখামার বা চাকুরি-বাকুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন? তাহলে ধর্ম নিয়ে কেন ব্যবসা করতে হবে? সকলের মতো তাদের জন্যও জীবিকা আহরণের পথ খোলা রয়েছে।
৩। সুরা জুম’আতে আল্লাহ বলেছেন নামাজ শেষে তোমরা কর্মে বেরিয়ে পড়? সুতরাং সকলের জন্যই জীবিকার নির্বাহ আবশ্যকীয়, অলসতার কোন সুযোগ নেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় রসুলাল্লাহও জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে একজন ইহুদির কূপ থেকে পানি তুলে দিতেন। প্রকৃত ইসলামের খলিফাগণও কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেছেন; বৃদ্ধ আবু বকর (র.) কাপড়ের গাট্টি মাথায় করে বাজারের দিকে ছুটেছেন, আলী (রা.) যবের আটা পিষে বিক্রি করেছেন এবং কুলির কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁরা চাইলে খুব সহজেই ধর্মের বিনিময় নিতে পারতেন। খানকা, হুজরা, মসজিদ, মাদ্রাসা তৈরি করে সেখানে বসে এখনকার মোল্লাদের চেয়ে বেশি আয়-রোজগার করতে পারতেন, ওয়াজ করে কাড়ি কাড়ি টাকা কামাতে পারতেন (নাউযুবিল্লাহ)। কিন্তু তাঁরা তা করেন নি, বরং কঠোরভাবে আল্লাহর হুকুম মান্য করেছেন। তাহলে ধর্মজীবীদের অন্য সকলের মতো কাজ করে উপার্জনে বাধা কোথায়?
রসুলাল্লাহ বলেন হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি, জীবিকা নির্বাহের জন্য সম্ভাব্য সকল উপায়ে চেষ্টা করো এবং তোমাদের প্রচেষ্টার পরিপূর্ণতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করো। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, কোন মুমিনের সত্তাকে দুনিয়ায় বেকার এবং অনর্থক সৃষ্টি করা হয় নি। বরং তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কর্ম ও কর্তব্যের সঙ্গে সংযুক্ত। কর্ম ও প্রচেষ্টার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। অল্পে সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার অর্থ এ নয় যে, হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা এবং নিজের বোঝা অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়া। নিশ্চয়ই আল্লাহর উপর ভরসা করা আমাদের প্রধান কর্তব্য। কিন্তু রেযেক হাসিল করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা নিতান্তই জরুরি বিষয় (মহানবীর স. ভাষণ-ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।
নায়েবে রসুলের দাবিদার ধর্মব্যবসায়ীরা ছাড়া রসুলের এ কথার বাইরে তো কাউকে দেখা যায় না। আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নিষেধ অমান্য করে যারা ধর্মব্যবসা করছেন সেই সকল ধর্ম ব্যবসায়ীরা কী করে খাবেন এ প্রশ্ন করা শুধু অনুচিত নয় আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরুদ্ধাচারণও বটে। তবে এ কথাও ঠিক যে, তাদেরকে প্রচলিত সিস্টেমের মাধ্যমেই হারাম উপার্জনের দিকে এক প্রকার ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকরা যখন পরিকল্পিতভাবে তাদের ঔপনিবেশগুলিতে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু করে সেখানে তারা কেবল ধর্মীয় বিকৃত জ্ঞানই শিক্ষা দেয়। তাদের সিলেবাসে অংক, ভূগোল, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার কোন কিছুই রাখা হয় না। ফলে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে এই সমস্ত আলেমরা রুজি-রোজগার করে বেঁচে থাকার জন্য ধর্ম বিক্রী করে রোজগার করা ছাড়া আর কোন পথ থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে তারা দীন বিক্রি করে উপার্জন করে এবং ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে ঐ বিকৃত ইসলামটা এই জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা দেয়। এ উপমহাদেশসহ খ্রিস্টানরা তাদের অধিকৃত সমস্ত মুসলিম দেশগুলিতে এই একই নীতি কার্যকরি করেছে এবং সর্বত্র তারা একশ’ ভাগ সফল হয়েছে। এই নিশ্চিত এবং সহজ জীবিকা, দাওয়াত, খানা-পিনা ও মান-ইজ্জত হারানোর ভয়ে এখন আলেম সাহেবরা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ধর্মব্যবসাকে জায়েজ করার জন্য বহু ফতোয়া আবিষ্কার করেছেন। এজন্যই আল্লাহ তাদের বিষয়ে বলেছেন, “আগুন সহ্য করতে তারা কতই না ধৈর্য্যশীল (সুরা বাকারা ১৭৪)।”
মনে রাখতে হবে, অন্যের করুণার দানের উপর যারা নির্ভর করে তাদের নৈতিক বল থাকে না। যারা তাকে ভিক্ষা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে তারা কোন অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে না। এজন্যই কোন ধর্মব্যবসায়ী সমাজের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন না। অথচ উম্মতে মোহাম্মদীর দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে বাধা প্রদান করা, এজন্য সবার আগে দরকার নৈতিক বল। তাই আলেম দাবি করেও যারা এখনও ধর্মব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন তাদের উচিত এই হারাম উপার্জন বন্ধ করা, যেহেতু তারাই সব সময় ওয়াজ করেন যে কোন ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল রুজি আর যে শরীর পুষ্ট হয় হারাম উপার্জনের দ্বারা সে শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...