হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

জনতার প্রশ্ন আমাদের উত্তর

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, এমাম, হেযবুত তওহীদ:
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, অপরাজনীতি, ধর্মব্যবসা ও যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে যখন আমরা সভা-সেমিনার করি, আলোচনা সভা, জনসভা করি তখন দেশব্যাপী লাখো জনতা আমাদের এই কার্যক্রমসমূহে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে, তাদের সমর্থন প্রকাশ করে। এর মধ্য থেকেই কিছু মানুষের মনে এই প্রশ্ন আসে যে আমরা শুধু জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি বিষয়ের ব্যাপারেই এত সোচ্চার কেন? আমদের দেশে প্রতিনিয়ত যে চুরি, ডাকাতি, খুন, দুর্নীতি ইত্যাদি হচ্ছে সেগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলছি না কেন? জঙ্গিরা তো ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব কেন?

তাদের প্রশ্নের জবাবে আমি বলতে চাই, আমরা শুধু জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধেই কথা বলছি না, আমরা যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। মানবজাতির মধ্যে বিরাজমান যে সকল সমস্যা রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে এই জঙ্গিবাদ, যে সমস্যায় আজ গোটা মুসলিম বিশ্ব আক্রান্ত। আমরা হেযবুত তওহীদ আন্দোলন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে শুধু একটি বিষয়ের উপর আহ্বান করছি আর তা হলো আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো হুকুম মানব না। আল্লাহর হুকুমের দিকে যখন আহ্বান করছি তখন এর মধ্যেই সকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় চলে এসেছে। আল্লাহর হুকুমে কোন অন্যায় থাকে না। আল্লাহ কারো উপর জুলুম করার হুকুম দেন নি, তিনি কারো উপর অন্যায় করার হুকুম দেন নি, কারো সাথে দুর্নীতি করার হুকুম দেন নি। এক আল্লাহর হুকুমের উপর ভিত্তি করে যদি আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি তবে এ সকল সমস্যাই দূরীভূত হয়ে যাবে। আমাদের এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী জঙ্গিবাদ ইস্যু নিয়ে সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠিয়েছেন। তিনি সেখানে উল্লেখ করেছেন যে সত্তরের দশকে রাশিয়া যখন আফগানিস্তানে হামলা করে তখন আফগানিস্তানকে বাঁচানোর জন্য আফাগানিস্তানের লোকেরা স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু করেন।

প্রতিটি যুদ্ধেই জনবল বাড়ানোর জন্য চেতনা, অনুপ্রেরণার প্রয়োজন হয়। এখানে ইসলামী চেতনাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার স্নায়ু যুদ্ধ (Cold War) অনেকদিন থেকেই চলে আসছিল। যুক্তরাষ্ট্র যখন দেখলো রাশিয়া এবার আফগানিস্তানে আটকে গিয়েছে তখন তারা বিশাল ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে ভাড়া করল সেনাসংগ্রহের জন্য, তারা এ কাজে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করল। তাদের ভাড়া করা ধর্মব্যবসায়ী আলেমগণ হাজার হাজার মুসলিম যুবককে আফগানিস্তানে গিয়ে নিজেদের জীবন বাজি রাখার জন্য উব্দুদ্ধ করতে লাগলো। লক্ষ লক্ষ তরুণকে বুঝানো হল যে সেখানে যা হচ্ছে সেটা কাফের কম্যুনিস্টদের বিরুদ্ধে জিহাদ। তারা তখন জিহাদি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের এ যুদ্ধে নিজেদের তাজা প্রাণ বিসর্জন দিয়ে আসল। শেষে দেখা গেল তালেবানরা ক্ষমতায় এসেছে। কিছুদিন যেতেই যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেছে, ফলশ্রুতিতে আফগানিস্তান বর্তমানে গণকবরে পরিণত হয়েছে।

এই আফগান যুদ্ধ থেকে ছড়িয়ে পড়লো জঙ্গিবাদ সমস্যা। যারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা এই ভ্রান্ত পদ্ধতি দেখে অনুপ্রাণিত হলো এবং এর ফলে বিভিন্ন জায়গায় এই একই ধরনের প্রচেষ্টা শুরু করল। আমাদের এমামুয্যামান এরূপ লক্ষ লক্ষ তরুনদের এরূপ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে যোগদানের ফলে ব্যাথিত হলেন। তিনি জানতেন যে, এই মুসলিম তরুণদের জীবন সঠিকভাবে পরিচালিত হলে, দেশ ও জাতির উপকার হত, মানবতার কল্যাণ হত, প্রকৃতভাবেই আল্লাহর রাস্তার কাজ হত।

কিছুদিন আগে আমি খবরে পেলাম যে মিরপুরের একটি বাসায় বোমা বিস্ফোরণে সাত জন লোক জীবন্ত পুড়ে মারা গিয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু ও রয়েছে। কে কোন ধর্মের, কোন জাতের সে কথা এখানে কোন গুরুত্ববহন করে না। একজন মানুষের কষ্টে অন্য মানুষের মন ব্যথিত হবে এটাই স্বাভাবিক। মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মানুষের ভিতরে আল্লাহর রূহ রয়েছে, আল্লাহ মানুষকে সুন্দরতম অবয়ব দান করেছেন। এমামুয্যামান এই বেদনাদায়ক অবস্থা থেকে মানুষ কী করে বেরিয়ে আসতে পারে সেটা নিয়ে চিন্তা করতেন এবং একটা সময়ে তিনি সেই পথের দিশাও লাভ করলেন। তিনি তাঁর বইয়ের মাধ্যমে তুলে ধরলেন যে যারা এরকম আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, রসুলকে পাওয়ার জন্য জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে, তাদের নিয়তে কোন গলদ নেই কিন্তু তারা যে পথে যাচ্ছে সে পথটি ভুল। সেই পথে গেলে তারা কখনই আল্লাহকে পাবে না, তাঁর রসুলকে পাবে না, জান্নাতেও যেতে পারবে না। অপরদিকে মুসলিম জাতি আজ এই সমস্যায় পতিত হয়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। এই সকল বিচ্ছিন্ন সহিংস প্রতিবাদে কোন উপকার তো হচ্ছেই না বরং মুসলিমদের দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, মুসলিমদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, মুসলিমরাই আজ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে।

যারা মনে করে যে জঙ্গিবাদী তাণ্ডব যারা চালাচ্ছে তারা সঠিক পথে রয়েছে ও আল্লাহর রাস্তায় কাজ করছে তারা আমাদের এই জঙ্গিবাদ বিরোধী কাজ নিয়ে সমালোচনা করে। তারা অভিযোগ করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভুল করছি। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা ভুল ভাবছেন। যদি সত্যিই এই বিচ্ছিন্ন কার্যক্রমের ফলে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হতো তবে এতদিনে তা হয়ে যেত এবং আল্লাহ স্বয়ং তাদের সহয়তা করতেন। কিন্ত আল্লাহর কোন সাহায্যই তাদের কোন কাজে দেখা যায় না।

আইএস যখন বিশাল একটি ভ‚খণ্ড দখল করে সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে ঘোষণা করল তখন কী সেই ইসলাম টিকেছিল। টিকে নি। সেই আইএস আজ বিলুপ্তির পথে। আল্লাহর সাহায্য থাকলে পৃথিবীতে পরাজিত করতে পারে এমন কোন শক্তি নেই। আল্লাহর রসুল ও তাঁর আসহাবদের জীবনী থেকে আমরা দেখতে পারি যে সংখ্যায়, অস্ত্রশস্ত্রের দিক দিয়ে দুর্বল হওয়া সত্তেও আল্লাহর সাহায্যের ফলে তাঁরা বিজয়ী হয়েছিল। বর্তমানে আমরা যে ইসলামটা সমগ্র দুনিয়ায় দেখতে পাচ্ছি তা আল্লাহর রসুলের প্রকৃত ইসলাম নয়। এই বিকৃত ইসলামকে শত কাঠ-কয়লা পুড়িয়ে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও তাতে শান্তি আসবে না। তালেবানদের মতো আইএসও ইরাক, সিরিয়াতে একই কাজ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করল কিন্তু ইসলাম প্রতিষ্ঠা পেল না কারণ আল্লাহর সাহায্য নেই। দুনিয়ার সকল মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিলেও ইসলাম প্রতিষ্ঠা পাবে না কারণ সেটা আল্লাহর রসুলের কর্মসূচি অনুযায়ী হচ্ছে না এবং তাদের হাতে যে দীনটি রয়েছে, ব্যবস্থাটি রয়েছে সেটা আদৌ আল্লাহ রসুলের ইসলামই নয়, সেটা তেরশ বছরের ক্রমাগত বিকৃতির ফসল। আল্লাহ সাহায্য করবেন শুধু মো’মেনদের। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে মো’মেনদের সাহায্য করার ওয়াদা করেছেন। আল্লাহর রসুল বলেছেন, “আমার উপর নবুয়্যতের দায়িত্ব না থাকলে আমি শহীদ হতাম এবং আল্লাহ আমাকে পুনরায় জীবিত করতো, আমি আবার শহিদ হতাম… (এরূপ চার বার বললেন)।” আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে শহীদদের মৃত বলতে নিষেধ করেছেন। ইসলামের শাহাদাতের মর্যদা সবচেয়ে বেশি কিন্তু তথাকথিত জঙ্গিরা যে পদ্ধতি অবলম্বন করছে তাতে তারা শাহাদাতের মর্যাদা পাবে না কারণ আগেই বলেছি তাদের পথ সঠিক নয়।

এখন আমাদের প্রকৃত ইসলামকে বুঝতে হবে। আকিদা বুঝতে হবে। যারা এ পথে নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে তাদেরকে এই ধ্বংসের পথ থেকে রক্ষা করার জন্য এখন দরকার একটি পাল্টা আদর্শ (Counter Ideology, narrative)। আমাদের এমামুয্যামান গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের কাছে যে চিঠি পাঠিয়েছেন সেখানে তিনি এই কথাটি উল্লেখ করেন। তিনি সেখানে আর বলেছেন যে ঈমানী চেতনার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগে কোন লাভ হবে না বরং এর ফলে তাদের ঈমানী চেতনা আরো দ্বিগুণ আকারে বৃদ্ধি পাবে। তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য এখন কোর’আন ও হাদিসের আলোকে, যুক্তিসহকারে তাদেরকে তাদের ভুল রাস্তাটি চিনিয়ে দিতে হবে ও সঠিক রাস্তাটি দেখিয়ে দিতে হবে। এর ফলে তারা তাদের ঈমানী শক্তিকে মানবতার কল্যাণে ব্যবহার করবে ও দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

আমাদের দেশেসহ অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম তাদের ঈমানী চেতনাকে এভাবেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমরা চাই তারা সঠিক ইসলামকে চিনতে পারুক। তাদের ঈমানকে আর যাতে কোন গোষ্ঠী ভুল খাতে প্রবাহিত করে জাতি বিনাশী কর্মকাণ্ড করতে না পারে সেই প্রচেষ্টাই আমরা করছি। তাদের এ কাজের ফলে যে ইসলামের ক্ষতি হচ্ছে, ইসলামকে গালি দেয়া হচ্ছে তা তাদের উপলব্ধিতে আনতে হবে। তাদেরকে আহ্বান করতে হবে জীবন যদি দিতেই হবে তবে মানবতার কল্যাণে দিতে হবে। ‘৭১ এ আমরা জীবন বাঁচিয়েছি আমাদের এই দেশকে রক্ষার জন্য। মানবতাকে রক্ষার জন্য। তাই তাদের এখন প্রকৃত ইসলামের শিক্ষার মাধ্যমে মো’মেন হতে হবে। আমরা চাই তারা নিজেরাও মো’মেন হবেন এবং মো’মেন হয়ে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে মানবজাতির সামনে তুলে ধরবেন। এটাই একজন মো’মেনের কর্তব্য। তাহলে ধর্মের নামে এমন জাতিবিনাশী কাজ যেমন বন্ধ হবে তেমনি ধর্মের নামে অন্ধ বিশ্বাসও বন্ধ হবে।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...