হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

জনতার প্রশ্ন – আমাদের উত্তর

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

প্রশ্ন: আপনারা হেযবুত তওহীদ যে সত্যদীনে আছেন, হেযবুত তওহীদের আদর্শটাই যে সত্যদীন এই দাবিটা কীভাবে করেন? এর প্রমাণটা কি?

উত্তর: আপনি জানেন কোনো বিষয়কে সত্য প্রমাণ করার জন্য দুটো পন্থা আছে। একটি হচ্ছে চোখে দেখা এবং আরেকটি হচ্ছে যুক্তি, বুদ্ধি বা জ্ঞান। মুসা (আ.) বলেছিলেন, ‘আমি আল্লাহর রসুল। তোমরা আমার কথা মেনে নাও। হে বনী ইসরাইল, ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষার জন্য, উদ্ধার করতে আমি তোমাদের কাছে এসেছি। তোমরা আমার হুকুম অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম মেনে নাও, বল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’ মুসা (আ.) যখন এই দাবি করলেন, তিনি যে সত্যিই আল্লাহর নবী এটা বোঝার জন্য এবং প্রমাণ করার জন্য দরকার ছিল এই দুটি জিনিসের। মানুষও দুই রকমের। এক ধরনের মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই, সৃষ্টিগতভাবেই যুক্তিবোধসম্পন্ন, জ্ঞানী। তার বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আরেক ধরনের মানুষ আছেন যারা বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, সবসময় একটা সন্দেহের মধ্যে থাকেন, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেন। তাদের জন্য দরকার হয় চাক্ষুষ প্রমাণ যেটার নাম হচ্ছে আয়াত, নিদর্শন বা মো’জেজা।

তাহলে মুসা (আ.) নবী নাকি নবী নন এর প্রমাণ মানুষ কী করে পেল? এটা বোঝার জন্য যারা বোধশক্তিসম্পন্ন তারা তাঁর কথা, বক্তব্য, আহ্বান শুনলেন। তারা বুঝলেন যে, তিনি যে কথা বলেছিলেন এটা আল্লাহর কথা। কোনো মানুষ একথা বলতে পারেন না। তারা নবীর কথা শুনে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছেন। আর যারা যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে পারেন নি তাদের জন্য তিনি মো’জেজা প্রদর্শন করলেন। তাঁর হাতের লাঠিটি বিরাট অজগর হয়ে অন্যান্য জাদুকরদের সৃষ্ট সাপগুলোকে ভক্ষণ করে ফেলল। লোহিত সাগরের পানি সেই লাঠির আঘাতে দিখণ্ডিত হয়ে সড়কে পরিণত হলো, আসমান থেকে মান্না-সালওয়া ইত্যাদি খাদ্য অবতীর্ণ হলো। এসব চাক্ষুণ প্রমাণ দেখে সেই ব্যক্তিরাও বুঝতে পারল যে তিনি আল্লাহর নবী।

আমাদের শেষ নবী এসে যখন বললেন, “আমি আল্লাহর রসুল, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত শেষ নবী। আমার কথা তোমরা শোন।” এ কথাটিকে প্রমাণ করার জন্য (সুরা আনআমের, ৫০) নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “তুমি বল, আমার কাছে আল্লাহর কোনো তহবিল নাই। আমি কোনো গায়েবের খবর জানি না। তবে আমি কোত্থেকে এ কথাগুলি বলি?”

রসুল কি আল্লাহ প্রেরিত কিনা সেটা বোঝার জন্যও দুটি জিনিস দরকার ছিল। একটি হল তাঁর বাণী, কথা বা আহ্বান। সেটা শুনে সত্যনিষ্ঠ মানুষ বুঝতে পেরেছে। আলীর (রা.) মত, আবু বকরের (রা.) মত, আম্মা খাদিজা (রা.) কিংবা বেলালের (রা.) মত যারা তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন যে এ তো সত্য কথা, এটা তো কোনো সাধারণ মানুষের কথা নয়। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কথা। তাঁরা যুক্তি, বুদ্ধি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে এগুলো সত্যিই আল্লাহর কথা, তিনি যা বলছেন সব সত্যই বলছেন, আর আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া এটা কেউ বলতে পারেন না। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষগুলো তবুও বিশ্বাস করতে পারল না। রসুলের মাধ্যমে বহু অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে, এমন কি তিনি আল্লাহর হুকুমে ইশারা করায় চাঁদও দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় মো’জেজা হচ্ছে আল কোর’আন। আল্লাহ বলেছেন তিনিই কোর’আনকে অবিকৃতরূপে সংরক্ষণ করবেন (সুরা হিজর, ৯)। আজ পর্যন্ত বহু চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু কেউই এর একটি অক্ষরেরও পরিবর্তন করতে পারে নি।

কাজেই আমি বলছি, হেযবুত তওহীদ সত্য কি মিথ্যা, এটা আল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত নাকি মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞান দ্বারা পরিচালিত সেটা বোঝার জন্য এখানেও দু’টি শর্ত লাগবে। প্রথমত হেযবুত তওহীদের বক্তব্য। আপনি সেটা শুনবেন, জানবেন। আল্লাহ আপনাকে বিবেক দিয়েছেন। আপনি উপলব্ধি করবেন, চিন্তা করবেন। আপনি যদি সত্যনিষ্ঠ মানুষ হয়ে থাকেন, আপনি রায় দিবেন, হ্যাঁ, হেযবুত তওহীদ সত্য। তবুও যদি সন্দেহ থাকে যে হেযবুত তওহীদ সত্য নাকি মিথ্যা, তাহলে সেটাও আল্লাহ দূর করে দিয়েছেন ২০০৮ সালে একটা অলৌকিক ঘটনার মধ্য দিয়ে। সেদিন আমাদের মহামান্য এমামুয্যামান মোবাইল ফোনযোগে যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন তখন একটা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল আপনারা জানেন। এর বিস্তারিত বিবরণ নিয়ে আমাদের একটি বইও আছে ‘আল্লাহর মো’জেজা: হেযবুত তওহীদে বিজয় ঘোষণা’। সেই মোজেজা সংঘটনের সময়ে যে ভাষণ তিনি দেন তার মধ্যে এই ঘোষণাটিও উচ্চারিত হয়েছিল যে, “হেযবুত তওহীদ হক ও সত্য, হেযবুত তওহীদ দিয়েই সমগ্র পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।” এখন আপনি বলতে পারেন একথা বিশ্বাস করি না। বিশ্বাস করা বা না করা আপনার বিষয় তবে সেই মো’জেজার সময় সেখানে ৪৩টি শিশু উপস্থিত ছিল। ওই ১০ মিনিট ৯ সেকেন্ডে একটা বাচ্চাও কোনো শব্দ করেনি। প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহ ছিল সেদিন, বছরের শীতলতম দিন ছিল সেটি। ছাদের উপরে প্যান্ডেল টাঙিয়ে অনুষ্ঠানটি হচ্ছিল। কিন্তু ঐ সময়টুকুতে ঠাণ্ডা বাতাস ও শীত কেউ অনুভব করে নি। সাউন্ড সিস্টেম ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের কিন্তু খুব চমৎকারভাবে কাজ করছিল সেটা। বাইরের থেকে কোনো মাইকের বা রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের কোনো শব্দ ঐ সময়ে ছাদে প্রবেশ করে নি। এভাবে আটটা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল।

এছাড়াও আরেকটি বিষয় আছে। হেযবুত তওহীদের মোজাহেদ-মোজাহেদারা ইন্তেকাল করলে তাদের দেহ শক্ত হচ্ছে না। চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical Science) মতে মানুষ মারা গেলে দুই ঘণ্টা পর থেকেই শক্ত হতে আরম্ভ করে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে মৃতদেহ এক খণ্ড কাঠের মত শক্ত হয়ে যায় এবং তাপমাত্রা বরফের মত ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দেহ এভাবে শক্ত অবস্থায় থাকে। এর পর থেকে দেহ আবার নরম হয়ে পচতে গলতে আরম্ভ করে। চিকিৎসাবিজ্ঞান মতে মানুষের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই শক্ত হয়ে যাওয়া। শুধু মানুষ নয়, পুরো জীবজগতে এই নিয়মের কোন ব্যতিক্রম নেই, প্রত্যেক প্রাণীর দেহই মৃত্যুর পর একইভাবে কাঠের মত শক্ত হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই শক্ত হওয়াকে বলে Rigor mortise কিন্তু হেযবুত তওহীদের বেলায় এর ব্যতিক্রম ঘটছে। হেযবুত তওহীদের সত্যনিষ্ঠ কোনো মানুষ, মো’মেন মো’মেনা ইন্তেকাল করলে তার শক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া আর হয় না। তিনি শক্ত হচ্ছেন না। এটা কেন, এর কারণ কি, রহস্য কোথায়? আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের কাছে গিয়েছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল, পি.জি. হাসপাতালসহ সারা ঢাকা মহানগরীর বড় বড় ডাক্তারদের কাছে গিয়েছি। আমরা অনলাইনের মাধ্যমে সারা দুনিয়ার বড় বড় ডাক্তারদেরকে আহ্বান করেছি, ছবি দেখিয়েছি, তাদের বলেছি এটা আমাদের হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না গবেষণা করুন, জবাব দিন। তারা বলেছে এর কোনো জবাব আমাদের কাছে নেই।

তখন আমাদের এমামুয্যামানকে বলেছিলাম, আপনি একটা জবাব দেন, এটা কেন হচ্ছে। বহু এলাকার মধ্যে মানুষ সন্দেহের মধ্যে পড়ে গিয়েছে যে, এ লোক তো আসলে মারা যায়নি। এত নরম কেন, এত স্বাভাবিক কেন? তখন এমামুয্যামান বললেন, “আল্লাহর রসুল বলেছিলেন, “যারা দাজ্জালকে প্রতিহত করবে তারা বদর এবং ওহুদের দুই শহীদের সমান মর্যাদা পাবে।” আল্লাহ বলেছেন, “শহীদরা মৃত নয়, তারা জীবিত। তাদেরকে তোমরা মৃত বোলো না” (সুরা বাকারা-১৫৪)। এজন্যই তারা শহীদের মর্যাদাপ্রাপ্ত। তাই সাধারণ মানুষের মত স্বাভাবিক মৃতদেহ তাদের হবে না। তিনি বললেন এছাড়া দ্বিতীয় আর কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। তোমাদের কাছে জানা থাকলে বলতে পার। আজ পর্যন্ত আমরা দ্বিতীয় আর কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারি নাই। কোনো চিকিৎসাবিজ্ঞানী পারে নাই। এ বিষয়ে আমরা ডকুমেন্টারি তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দিয়েছি, প্রচার করেছি। এই অলৌকিক ঘটনা নিয়ে অনেকে মজা করেছে, হেসেছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনে ‘তালাশ’ নামক মিথ্যা অনুষ্ঠান নির্মাণ করে তাতে এ নিয়ে অপপ্রচার করেছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, মজা পরে করো, আগে ব্যাখ্যা দাও। এটাতো গোপন কিছু নয়। আমাদের শত শত ভাইবোনের মৃতদেহকে আমরা ভিডিও করেছি, প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে সাক্ষ্য নিয়েছি। কোন বানোয়াট কথা নয়। কাজেই হেযবুত তওহীদ হক ও সত্য। আমরা যেটাকে প্রতিরোধ করছি সেটাই সেই রসুলাল্লাহ বর্ণিত দাজ্জাল। এটা প্রমাণিত।

হেযবুত তওহীদের এ বক্তব্যে সাধারণ মানুষের আত্মার পরিবর্তন হচ্ছে। গত নারী সম্মেলনে এক নারী বললেন, আমি স্বামীর নির্যাতনে নিপীড়নে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু হেযবুত তওহীদের শিক্ষা পেয়ে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরে এসেছি। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী মাদকব্যবসা থেকে ফিরে এসেছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ জঙ্গিবাদের দিকে পা না বাড়িয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করছেন। তাহলে এটা অলৌকিক হবে না তো কোনটা অলৌকিক হবে? আমি একবার মেহেরপুরে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে একটি ঘটনা বলেছিলাম। আমার বক্তব্য শোনার পর এক লোক গভীর রাতে যাওয়ার সময় একটি বাজারের ব্যাগ পড়ে পেয়েছিল। সে পরদিন সকালে ব্যাগটির মালিককে খুঁজে বের করে ফেরত দেয়। সেই ব্যাগে অনেক টাকা ছিল এবং মূল্যবান দ্রব্যাদি ছিল। সে বলল, “আমি ইচ্ছা করলে সেগুলো নিতে পারতাম কিন্তু নেইনি।” তাকে জিজ্ঞাসা করা হল কেন নেন নি। সে বলল, “গতকাল আমি হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমামের বক্তব্য শুনেছিলাম। আগে তো কোনোদিন শুনি নাই, তাঁর বক্তব্য শোনার পর আমার ভেতরে একটা পরিবর্তন আসলো যে আমি আর অন্যায় করব না। এজন্যই আর ব্যাগটা নিলাম না।”

কত কোটি টাকা দিয়ে মানুষের এই আত্মার পরিবর্তন করবেন? কত কোটি টাকা দিয়ে মানুষকে দেশপ্রেমিক বানাবেন? এভাবে মানবতার কল্যণকামী করবেন? হবে না। কত ওয়াজ হচ্ছে, নামাজ-রোজা হচ্ছে, কিন্তু মানুষের আত্মার পরিবর্তন হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের মতো গোনাহগারের কথায় সেই পরিবর্তন হচ্ছে। এর কারণ এটাই হচ্ছে আল্লাহর কথা, হক ও সত্য।

অলৌকিক যে দু’টি ঘটনার কথা বললাম, এতে প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ হক ও সত্য। তবুও আপনাদের মনে যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকে, আমি বলব, সন্দেহ নিয়ে হেযবুত তওহীদে আসবেন না। অপেক্ষা করুন। সারা দুনিয়াতে হেযবুত তওহীদ দিয়ে আল্লাহর এই সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হবে। যদি না হয় তখন বলবেন, আপনারা না বলেছিলেন দীন প্রতিষ্ঠা হবে, কোথায় হলো না তো? তখন আমাদের কথা প্রমাণিত হয়ে যাবে আমরা সত্য বলেছি নাকি মিথ্যা বলেছি। আমি আবারও দাবি করছি হেযবুত তওহীদ হক ও সত্য। আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...