হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

চুক্তিতে ফিরে আসতে হবে

[সাইদ হোসাইন]

আল্লাহর সাথে যে চুক্তি, শপথ বা অঙ্গীকার করে প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করার জন্য আমরা (মানবজাতি) পৃথিবীতে এসেছি, সেই চুক্তি পালন করছি কি-না। আমরা চুক্তি করেছি আল্লাহর পক্ষ হয়ে দুনিয়াতে আল্লাহর খেলাফত কায়েমের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করব। সেই শান্তি হবে সর্বব্যাপী শান্তি, দুনিয়াব্যাপী শান্তি। বর্তমানে দুনিয়ার কোথাও এক বিন্দু পরিমাণ শান্তি নাই। এতে এটাই বোঝা যায় যে, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করি নি। চুক্তি মোতাবেক দায়িত্ব পালন করলে তো পৃথিবীতে শান্তিই থাকতো। অথচ সমস্ত দুনিয়া অন্যায় যুলুম যুদ্ধ রক্তপাতে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। এই অশান্তিপূর্ণ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যাদের উপর সবচেয়ে বেশি ছিল তারাই আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত, লাঞ্ছিত এবং অন্য জাতির ঘৃণিত গোলাম হয়ে আছে। অবস্থা এই হয়েছে যে, যে সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানো হয় সেই সরিষাতেই যেন ভূত ভর করেছে। সরিষাতে ভূত থাকলে সরিষার বাইরেই শুধু ভূত তার অত্যাচার আর অশান্তি সীমিত রাখে না, স্বয়ং সরিষাকেও দলিত মথিত করে ছাড়ে। আমাদের অবস্থাও বর্তমান দুনিয়াতে ঠিক তাই। এটা আর কিছুই নয়, চুক্তি ভঙ্গের পরিণাম। সুতরাং কেউ স্বীকার করুক বা না করুক এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার যে, আমরা চুক্তি ভঙ্গকারী, আমরা চুক্তিতে নাই।
বর্তমানে দুনিয়াতে মোসলেম নামের এই জাতির অবস্থা ফুটবলের মত। যে-ই পায় সেই লাথি মারে। লাথি আর লাথিই হচ্ছে এদের ভাগ্য। মোসলেম নাম শুনা মাত্রই অন্যজাতির থুথু পড়ে গায়ে। এই সংকটাপন্ন অবস্থা আল্লাহর প্রতিনিধির হতে পারে না এ অসম্ভব। সুতরাং আমরা মোসলেম নামের এই জাতি আজ চুক্তিহারা। তাই আমরা সর্বহারা, সৃষ্টির সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টিতে পরিণত হয়েছি কিন্তু পূর্ণ তাকওয়ার সাথে দৈনিক পাঁচবার মসজিদে দৌঁড়াচ্ছি, সওম হজ্জ যাকাত ইত্যাদি ইবাদত দিয়ে আসমান জমিন ভরে ফেলছি, লক্ষ লক্ষ লোকের এজতেমা করছি আর তাহাজ্জুদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিষ্ফল মোনাজাত করে যাচ্ছি অর্থাৎ নূন্যতম বোধশক্তি হারিয়ে গেলে যা হয়। এই জাতি চুক্তিতে থাকলে আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই এই জাতির সাথে থাকত। এখনও যদি আমরা সতর্ক না হই, আবার চুক্তিতে ফিরে না আসি, তাহলে দুনিয়াতে আমাদের উপরে লানত যা চলছে তাতেই বুঝা যায় আখেরাতে আমাদের অবস্থান কোথায় হবে। সেটা এক অবর্ণনীয় করুণ দুরবস্থা। কেননা যে জাতি দুনিয়াতে অন্য জাতির ঘৃণ্য গোলাম, সে জাতি আখেরাতে জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান পাবে এটা হতেই পারে না।
এখন আমাদের উচিত কোরআনের সেই আয়াতের দিকে যাওয়া, “আল্লাহর রহমত হতে তোমরা নিরাশ হয়ো না। কারণ কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত আল্লাহর রহমত হতে কেউ নিরাশ হয় না। (সূরা ইউসুফ:৮৭) ” আল্লাহ আরও বলেন, হতাশ হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না, বিজয়ী তোমরা হবেই যদি তোমরা মুমিন হও। এইভাবে দয়ালু আল্লাহ অনেক অনেক আশ্বাস, অভয়বাণী, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে রেখেছেন তাদের জন্য যারা চুক্তিতে ঠিক থাকবে। এখন আমাদের একমাত্র কাজ আবার আল্লাহর সঙ্গে যে চুক্তি আমরা করে এসেছি সেই চুক্তিতে ফিরে আসা। শেষ নবী সমস্ত পৃথিবীর বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ নামক চুক্তির। দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে ডাক দিয়ে বললেন, তোমরা শুধু এটুকু ঘোষণা দাও- হুকুমদাতা হিসাবে এক আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মানি না। তাহলে তোমরা সফলকাম হয়ে যাবে এ জীবনে এবং পরজীবনে। এখন আমাদের একমাত্র কাজ মেরুদণ্ড সোজা করে, বুক টান করে, মাথা উচু করে আবার চুক্তিতে ফেরার ঘোষণা দেওয়া। কোন ভয়ভীতি, রক্তচক্ষু, শক্তি, হিংস্রতা, বর্বরতা কোন কিছুর পরোয়া না করে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে। তবেই আসবে আমাদের জন্য আল্লাহর সাহায্য, আসন্ন বিজয় এবং পরকালে মহাপুরস্কার জান্নাত।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...