হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

কে হবে সেই আলোর দিশারী?

ইয়াছিন হোসেন পাভেল:

মানব সমাজ যখন অন্যায়, অশান্তি, অবিচারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে, সমাজে যখন ধনী-গরীবের ব্যবধান ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়, তখন কিছু মহানব্যক্তি সমাজের মানুষকে এই অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-ত্রাসন থেকে মুক্তি দিয়ে একটি সুখময়, শান্তিময় জীবন উপহার দিতে আবির্ভূত হন। এই মহান ব্যক্তিত্বরা ইতিহাসে ‘বিপ্লবী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। আর তাদের সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনের নাম হয়েছে ‘বিপ্লব’। ‘বিপ্লব’ শুধু একটি শব্দ নয়, এটি স্বপ্ন সমষ্টি। বিপ্লবীরা যুগে যুগে এসেছেন সময়ের দাবি মেটাতে। সমাজের স্বার্থরক্ষায় তারা জীবন-সম্পদ সব কিছু ত্যাগ করেছেন। এই চূড়ান্ত ত্যাগের বিনিময়ে তারা পার্থিব জীবনে হয়তো কিছুই লাভ কোরতে পারেন নি, কিন্তু মানুষের মনিকোঠায় থেকেছেন চির অমর হয়ে। সমাজের সকল শ্রেণি থেকেই উঠে এসেছেন অন্যায়ের সাথে আপোষহীন এই বিপ্লবীরা। তারা মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন, দেখিয়েছেন কল্যাণের পথ।
আজ দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সর্বত্রই যখন হানাহানি-মারামারি, অন্যায়-অত্যাচার, ধনী-গরিবের বৈষম্য বিদ্যমান তখন ঐ বিপ্লবীদের খুবই প্রয়োজন। কিন্তু কে হবে সেই বিপ্লবের অগ্রপথিক, অন্ধকারের পথ প্রদর্শক? আজ সমাজে শিক্ষিত বোলতে যে শ্রেণিটি আছে তারা চরম সুবিধাভোগী। এদের কাছে কোরবানি বা ত্যাগ একটি অবোধ্য বিষয়। এরা সমাজের জন্য যা করেন বলে মুখে প্রচার করে থাকেন তার বেশিরভাগ মূলত আত্মস্বার্থেই করেন। সমাজের মানুষের জন্য এরা যতটুকু করেন সেটুকু ব্যবসায়ে পুঁজি খাটানোর মতো। পরবর্তীতে সুদসহ আসল তুলে নেয়াই এদের প্রধান লক্ষ্য। লাভের গুঁড়ের পিঁপড়ার ভাগও এরা ছাড়েন না। এই সমাজের শিক্ষকের কাছে ছাত্র নিরাপদ নয়, ছাত্রের কাছে শিক্ষক নিরাপদ নয়। ছাত্র নিজের স্বার্থ আদায়ে শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে আবার শিক্ষক নিজের স্বার্থ আদায়ে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অনৈতিকতার দিকে ঠেলে দেয়। রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি অধিকাংশ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ও শিক্ষকদের সংস্কৃতিতে পরিণত হোয়েছে, শিক্ষাদান-শিক্ষাগ্রহণ সবই এখানে গৌণ। আর যারা এগুলোর বাইরে আছেন তাদের জগতও শুধুমাত্র নিজেদের নিয়ে। সমাজের স্বার্থে, মানবতার স্বার্থে বিপ্লব করা এদের কাছে অকল্পনীয় ব্যাপার। কোনভাবে খেয়ে পরে জীবনটা পার করে দিতে পারলেই এরা তৃপ্ত। সমাজের অধিকাংশ চিকিৎসকদের কাছে রোগীর জীবনের চেয়ে নিজেদের অর্থোপার্জনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে মাসে একবার হাজিরা দিয়েই এরা সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারেন। এদের বিবেক সমুদ্রের মতো বিশাল তাই ছোট-খাট আত্ম-গ্লানি এদের কাবু করতে পারেনা! এছাড়াও বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, দার্শনিক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদসহ সুশীল সমাজের সকল গর্বিত প্রতিনিধিরা সমাজের মানুষকে তাদের দাবার গুটি হিসেবেই বেশি ব্যবহার করেন। তার পেছনে মতলব থাকে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার, কিন্তু উপরের মোড়কটা থাকে জনস্বার্থ, জনকল্যাণ ইত্যাদি। সাধারণ মানুষ মুক্তির আশায় তাদের দ্বারস্থ হয় কিন্তু বার বার তারা শুধু পরাজিতই হয়, প্রতারিতই হয়। কিন্তু পরাজিত হলেও এরা হাল ছাড়ে না, কারণ তারা নিরুপায়। উপায় খুঁজতে গিয়ে মানুষ বার বার জুয়া খেলে। ঘোর অন্ধকারে পাগলের মতো হাঁতড়ে বেড়ায় আলোর দিশা। কিন্তু কে হবে সেই আলোর দিশারী যে নিজের স্বার্থ পায়ে ঠেলে জাতিকে আলোর পথ দেখাবেন? এতো সময় কি কারো আছে? কিন্তু তিনি আসবেনই, তাঁকে আসতেই হবে। কারণ এটাই এখন যুগের দাবী, এই সময়ের দাবী। তিনি ঠিকই হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালার মতো বিপ্লবের সুর নিয়ে আবির্ভূত হবেন। কিন্তু আমরা কি তৈরি আছি তাঁকে বরণ করে নেওয়ার জন্য?

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...