হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

কত নেকি হলে জান্নাত মিলবে?

Image result for সওয়াব

মোহাম্মদ আসাদ আলী:

একজন ব্যক্তি যদি ইসলামে প্রবেশ করতে চায় তাহলে তাকে আপনি সর্বপ্রথম কী করতে বলবেন? আমল করতে বলবেন নাকি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই তওহীদের ঘোষণা দিয়ে ঈমান আনতে বলবেন? অবশ্যই আগে তওহীদে ঈমান, তারপর আমল। অথচ বাস্তবে আমরা ঠিক উল্টোটি করে চলেছি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি আমলকে কীভাবে আরও নিখুঁত, অতি নিখুঁত করা যায়, কিন্তু তা ঈমানের দাবি অর্থাৎ তওহীদ থেকে হাজার মাইল দূরে সরে গিয়ে। তার চেয়েও হাস্যকর বিষয় হচ্ছে- এই আমলগুলো করা হচ্ছে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যহীনভাবে। যেমন- আল্লাহ নামাজের হুকুম দিয়েছেন, তাই আমরা প্রাণপণে নামাজ পড়ে যাচ্ছি, নামাজ কতটা নিয়মমাফিক সহিহ-শুদ্ধভাবে করা যায় তা নিয়ে আমাদের হাজারো চিন্তা। কিন্তু একটিবারও ভাবছি না যে, আল্লাহ নামাজ কাদেরকে পড়তে বলেছেন এবং কী উদ্দেশ্যে বলেছেন?

আল্লাহর রসুল বলেছেন- ‘ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ, যথা কলেমা, নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত।’ এর মধ্যে কলেমা হচ্ছে ঈমান, আর বাকিগুলো আমল। যিনি কলেমায় ঈমান আনবেন তিনি নামাজ পড়বেন, হজ্ব করবেন, যাকাত দিবেন ইত্যাদি অন্যান্য আমলগুলো করবেন। কিন্তু যিনি ঈমানেই নেই তার জন্য কি নামাজ রোজা আগে দরকার নাকি ঈমান আনয়ন আগে দরকার? ঈমান হচ্ছে হেদায়াহ, সঠিক পথ, যে পথে চললে মানুষ ইহকালে পাবে শান্তির ঠিকানা, পরকালে পাবে জান্নাত। আর সেই হেদায়াতের পথে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করে সাবধানে চলার নাম তাকওয়া। আপনার আমল যত নিখুঁত হবে, পথ যত সাবধানে চলবেন অর্থাৎ আপনি যত তাকওয়াবান হবেন তত আপনার জান্নাতের স্তর বাড়বে, আপনি উচ্চ থেকে উচ্চতর মর্যাদার অধিকারী হবেন। কিন্তু যদি হেদায়াতেই না থাকেন, আপনার পথটাই যদি সেরাতুল মোস্তাকীম না হয় তাহলে সেই পথ তো আপনাকে জান্নাতেই নিতে পারবে না, আপনার তাকওয়া হলো অর্থহীন!

উদাহরণস্বরূপ একজন পরীক্ষার্থী যতক্ষণ তেত্রিশ নম্বর না পান ততক্ষণ তিনি কৃতকার্য নন, তার গ্রেডের প্রশ্নই ওঠে না। তেত্রিশ নম্বর পাওয়ার মাধ্যমে তিনি পাশ করেন, অতঃপর বাকি নম্বর দিয়ে নির্ধারিত হয় তার পাশের গ্রেড বা স্তর। এই তেত্রিশ মার্ক হচ্ছে তওহীদে ঈমান অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই ঘোষণা দেওয়া। এরপর যত আমল করবেন তত মর্যাদার অধিকারী হবেন, কিন্তু তওহীদেই যদি না থাকেন কোনো আমলই আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না, অর্থহীন হয়ে যাবে, যেমনটা বর্তমানে হচ্ছে।

বর্তমানের বিকৃত আকিদায় ঈমান ও আমলের গুরুত্ব ওলটপালট হয়ে যাওয়ায় মনে করা হয় মানুষ সওয়াবের বিনিময়ে জান্নাতে যাবে। তাই বেশি বেশি আমল করে সওয়াব কামাই করার উপর আলেম-ওলামারা জোর দিয়ে থাকেন। অমুক কাজে এত নেকি, অমুক দোয়ায় এত সওয়াব ইত্যাদি বলে মানুষকে আমলের দিকে আকৃষ্ট করেন। কিন্তু কেউ জানে না কী পরিমাণ সওয়াব কামাতে পারলে বা নেকী করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে। আসলে সওয়াব দিয়ে কারো জান্নাত-জাহান্নাম নির্ধারণ হয় না, জান্নাত-জাহান্নাম নির্ধারিত হয় ঈমান দিয়ে। অনেকে যুক্তি দেখিয়ে বলবেন ঈমান তো আমাদের আছে, আমরা নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, মসজিদ-মাদ্রাসা বানাই, মিলাদ মাহফিল করি, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচা করে মক্কায় হজ্ব করতে যাই, ঈমান না থাকলে কি এসব করতাম? এই প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর হচ্ছে, আমাদের এই ঈমান আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ঈমান, আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রতি ঈমান নয়। এই ঈমান যে আল্লাহর কাছে গৃহীত হবে না সে কথা আল্লাহর রসুল নিজেই বলে গেছেন। আমাদের ব্যাপারেই রসুল (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন মানুষ রোজা রাখবে কিন্তু না খেয়ে থাকা হবে (অর্থাৎ উপবাস), তাহাজ্জুদ পড়বে কিন্তু ঘুম নষ্ট করা হবে (অর্থাৎ নামাজ কবুল হবে না)। বর্তমানে আমরা সেই সময়টিই অতিক্রম করছি। আজকের আমাদের যত আমল সব তওহীদহীন আমল, আমাদের তাকওয়া হেদায়াহহীন তাকওয়া, যার সাথে অন্যান্য ধর্মের মানুষের উপাসনা, আরাধনার বিশেষ পার্থক্য নেই।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...