হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ইসলামী রাজনীতির নামে শুভঙ্করের ফাঁকি!

মোহাম্মদ আসাদ আলী
‘রাজনীতি’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে যে চিত্র ভেসে ওঠে তা হচ্ছে- একটি রাষ্ট্রক্ষমতাকে কেন্দ্র করে দুই বা ততোধিক রাজনৈতিক দলের অবিশ্রান্ত লড়াই, হানাহানি, রক্তারক্তি, জালিয়াতি, দমন-পীড়ন, বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি। সত্য মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের চিন্তা এখানে অবান্তর। নেতারা সেটাই বলেন ও করেন যে কথা বা কাজ দ্বারা মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করা যায়, তা সত্য হোক বা মিথ্যা, কল্যাণকর হোক বা ক্ষতিকর। যে দল যত বেশি সংখ্যক মানুষকে ভুজংভাজং বুঝিয়ে পক্ষে রাখতে পারে তারাই রাজনৈতিক দৌড়ে এগিয়ে থাকে, ক্ষমতায় যায়। অন্য দলটি তখন কাঁঠালের আঠার মত লেগে থাকে সরকারি দলের পেছনে, সরকারের বিরোধিতা করা ও সরকারের ব্যাপারে জনগণের মনে অবিশ্বাস সৃষ্টি করাই তাদের রাজনৈতিক কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। এরই নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাজনীতি’। আপনি রাজনীতি করলে এই ধারার ভেতরে থেকেই করতে হবে, সেটা ইসলামের নামেই করুন বা সমাজতন্ত্রের নামেই করুন, এটাই বাস্তবতা। ধাপ্পাবাজিতে টিকে থাকবেন যতক্ষণ, আপনার রাজনীতির মেয়াদ ততক্ষণ। ধাপ্পাবাজী করবেন না? সফলতার দেখাও পাবেন না। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধাপ্পাবাজীর রাজনীতি কি বিশ্বনবীর আমলে ছিল? ছিল না। কেউ ইতিহাস থেকে দেখাতে পারবেন না যে, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবার জন্য রসুলাল্লাহ তাঁর সমসাময়িক কাফের-মোশরেক অর্থাৎ আবু জাহেল, ওতবা, শায়বা, আবু লাহাবদের সাথে ভোটযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। তখন অনেক রাজ্যের রাজা ছিলেন, তারা রাজ্যশাসন করতেন, কিন্তু সেটা প্রচলিত অর্থের রাজনীতি নয়। অনেক সমাজপতি ছিল, সর্দার ছিল, গোত্রপতি ছিল, তারা যার যার গোত্র ও জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করত, সেটাও প্রচলিত অর্থের রাজনীতি ছিল না। রাজনীতি নামক প্রচলিত ধারণাটির জন্মই হলো এই সেদিন, পাশ্চাত্যের জাতিগোষ্ঠীগুলোর মগজ থেকে।
পাশ্চাত্য প্রবর্তিত এই ধান্দাবাজীর রাজনীতির সাথে যারা রসুলাল্লাহর রাষ্ট্রচালনার ইতিহাসকে গুলিয়ে ফেলেন তাদের বোঝা উচিত যে, রাষ্ট্রশক্তি অর্জন করাই ইসলামের মূল কথা নয়। আল্লাহর রসুলকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তিনি আদর্শ প্রচার ছেড়ে দিলে তাঁকে আরবের বাদশাহ বানিয়ে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়াই যদি উদ্দেশ্য হত, তাহলে রসুল সেই প্রস্তাব মেনে নিয়ে ক্ষমতাটা আগে হাতিয়ে নিতে পারতেন, তারপর আদর্শ প্রচার করলে কারো সাধ্য থাকত না বাধা দেওয়ার। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব তো প্রত্যাখ্যান করলেনই, সেই সাথে বলে দিলেন, আমার এক হাতে চন্দ্র আর অপর হাতে সূর্য এনে দিলেও আমি সত্য প্রচার থেকে বিরত হব না। অর্থাৎ সত্য প্রচারকেই তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব দিলেন। এর কারণ বুঝতে পণ্ডিত হতে হয় না। তাঁর মূল দায়িত্ব ছিল মানুষের সামনে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য তুলে ধরা, ন্যায় ও অন্যায় সু¯পষ্ট করে দেওয়া, ধর্ম থেকে অধর্মকে পৃথক করে দেওয়া, এক কথায় জনগণের চোখ খুলে দেওয়া। সেটাই যদি না করা গেল তবে রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়ে কী হবে? তাই ইতিহাসে দেখি ক্ষমতায় যাবার সহজ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে রসুল সত্য প্রতিষ্ঠার বন্ধুর পথটিকেই বেছে নিলেন। এরপর সত্য ও মিথ্যা যখন আলাদা হয়ে গেল, তখন ঐ সাধারণ মানুষই তাঁকে নেতৃত্বের দায়িত্ব অর্পণ করল। নেতা হবার বাসনায় মদীনার ঘরে ঘরে গিয়ে আত্মপ্রচার করতে হয় নি তাঁকে, মদীনাবাসীই তাঁকে পরম সম্মানের সাথে নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে জাতির নেতা বানিয়েছে। সেই রহমাতাল্লিল আলামিনের পবিত্র জীবনীর উপর যারা বর্তমানের কলুষিত ‘রাজনীতি’র তকমা লাগাতে চায় তারা আল্লাহ ও রসুলের নাম বিক্রি করে নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে মাত্র। এটাও প্রকারান্তরে ধর্মব্যবসা। এই ধর্মব্যবসায়ীদেরকে যদি ক্ষমতায় যাবার সহজ কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়, আর শর্ত দেওয়া হয় যে, তারা আল্লাহ ও রসুলের কথা বলতে পারবে না, তাহলে স্বভাবতই তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়াটাকেই অগ্রাধিকার দিবে, কারণ তাদের সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূলে আছে ঐ ক্ষমতা, ঐ সিংহাসন। সমাজ আলোকিত নাকি অন্ধকারে নিমজ্জিত সেটা দেখার বাধ্যবাধকতা তাদের ‘রাজনৈতিক ইসলামে’ নেই।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...