হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

আদর্শিক লড়াইয়ে সরকারের সহযোগিতা কাম্য

আব্দুল কুদ্দুস শামীম

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংস্কারমূলক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ বিগত ২৭ বছর যাবৎ দেশ ও জাতির কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে। হেযবুত তওহীদ জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংকট ধর্মের অপব্যবহার, অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক মোকাবেলা দ্বারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বৈপ্লবিক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। ধর্মীয় চেতনার অপব্যবহার করে যে সহিংসতাগুলো ঘটানো হয়ে থাকে সেগুলো শক্তিপ্রয়োগে নির্মূল হয় না, বরং আরো বৃদ্ধি পায়। আমরা হেযবুত তওহীদ ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যাগুলো মানুষের সামনে ডকুমেন্টারি ফিল্মে, পত্রিকা, বই-পত্র, হ্যান্ডবিল প্রচার, আলোচনা সভা অনুষ্ঠান ইত্যাদি বহুমুখী প্রচেষ্টার মাধ্যমে তুলে ধরছি। আমরা মনে করি, সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য অবদান রাখাই ধর্মবিশ্বাসী মানুষের বড় এবাদত, প্রতিটি ধর্মেরই উদ্দেশ্য শান্তি, ‘ইসলাম’ শব্দের অর্থও তাই শান্তি। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া সরকারের একক প্রচেষ্টায় একটি জাতি কখনো উন্নত হতে পারে না। কিন্তু আজ ধর্মব্যবসায়ীরা মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে কেবল আনুষ্ঠানিক উপাসনাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে, যার ফলে ধর্ম জাতীয় কল্যাণে কোনো অবদান রাখতে পারছে না। উল্টো বিভিন্ন শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী ফতোয়াবাজি, ইস্যুভিত্তিক অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা বিস্তার, জেহাদের নামে সহিংসতার প্রসার ইত্যাদি দ্বারা ধর্মকে অকল্যাণকর কাজে ব্যবহার করছে, যা প্রায়শই জাতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। যা কখনই ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে না।

আজ বিশ্বজুড়ে ধর্ম হচ্ছে বৃহত্তম ইস্যু। পৃথিবীর প্রায় সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠী ধর্মবিশ্বাসী ও ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। তাদের এ বিশ্বাসকে ছোট করে দেখার কোনো উপায় নেই, বাদ দেওয়ারও উপায় নেই। কিন্তু ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে ধর্মের নিয়ন্ত্রণ ফেলে রাখলে সেটাকে তারা ভুল পথে চালিতে করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে, এজন্য দেশ-জাতি ধ্বংস করে দিতেও তারা কুণ্ঠিত হয় না। তাই এখন একটাই উপায়, এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসকে রাষ্ট্র, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে, একটি এলাকায় লক্ষ লক্ষ মুসল্লিম জমায়েত হয়ে যিকির আজকার করার চেয়ে বড় এবাদত হলো, রাস্তা পাহারা দেওয়া যেন মানুষ নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে, কাউকে যেন জীবন্ত পুড়ে মরতে না হয়। তাহলে সরকারের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। ধর্মবিশ্বাসী মানুষ যদি বুঝতে পারে যে, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি জাতীয় স্থাপনাগুলো মানুষের উপকারে আসে, এগুলো নির্মাণ করাও ধর্মের কাজ, এবাদত। কেউ যদি মানুষের কল্যাণে, আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একটি ব্রিজ নির্মাণে অর্থ দান করেন, আখেরাতে আল্লাহ এই ওসিলায় তাকে পুলসিরাত পার করে দিতে পারেন। ধর্মের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণার বিকাশ ঘটাতে পারলে পদ্মা সেতুর মত একশ সেতু নির্মাণও এ জাতির জন্য কোনো সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না বলে আমাদের বিশ্বাস।

ধর্মবিশ্বাসকে ইতিবাচক পথে প্রবাহিত করে তা জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, তা তুলে ধরার জন্য আমরা বিভিন্ন তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছি এবং তা সর্বত্র বিভিন্ন সভা-সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের মাঝে প্রচার করে যাচ্ছি। যার মধ্যে রয়েছে- ‘ধর্মবিশ্বাস:  একটি বৃহৎ সমস্যার সহজ সমাধান’, ‘ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদ ও ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতির ইতিবৃত্ত’, একজাতি একদেশ-ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ’, ‘সকল ধর্মের মর্মকথা-সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’ শীর্ষক ইত্যাদি তথ্যচিত্র। বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা লক্ষাধিক অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। কিছুদিন পর পর সারাদেশে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয় এবং পশ্চিমা পরাশক্তি গুলো যেভাবে ইন্ধন যুগিয়ে থাকে তা খুবই উদ্বেগজনক। কিন্তু এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের কাছে শক্তি প্রয়োগ ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব জায়গায় থাকে না, তারা থাকে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে। ফলে দেশের সকল পথ-ঘাট তারা পাহারা দিতে পরে না। গ্রামে গঞ্জে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হয়ে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা এমন কি তাদের সন্তান-আত্মীয় পরিজনরাও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এ পরিস্থিতি থেকে জাতিকে রক্ষার একটি মাত্রই পথ খোলা আছে- মানুষকে বুঝিয়ে উদ্বুদ্ধ করে (Motivation) করে গণ-প্রতিরোধ সৃষ্টি করা। জ্বালাও পোড়াও অশান্তির বিরুদ্ধে, বোমাবাজির বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাণ করছি, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করাছি, বই প্রকাশ করছি, হেন্ডবিল প্রকাশ করছি, সভা-সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করছি। এর সাথে সাথে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরছি। যদি মানুষের মাঝে আমাদের এই আদর্শ আরো ব্যাপকভাবে প্রচার করা যায়, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, তাহলে জনগণ সরকারের সহায়তায় এগিয়ে আসবে এবং ষড়যন্ত্রকারীরা দুর্বল হয়ে যাবে। আমরা এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা কামনা করি, আমাদের কোনো রাজনীতিক, আর্থিক বা কোনো প্রকার জাগতিক স্বার্থ নেই।

আমরা চাই ধর্ম ও রাষ্ট্র উভয়ের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে জাতি সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হোক। এজন্য সর্বপ্রথম বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে, তাদেরকে ধর্মের গঠনমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এটা করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে আছে। যা আমরা মানুষের কাছে বিভিন্ন সভা-সেমিনার, পত্র-পত্রিকা, বই-পত্র, হ্যান্ডবিল ইত্যাদির মাধ্যমে তুলে ধরছি। দেশবাসীকে সচেতন করে চলছি। কিন্তু আমাদের এই কাজ, আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায়, পুরো জাতির কাছে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, আমাদের এই আদর্শ যদি জাতি গ্রহণ করে তবে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের স্বার্থউদ্ধার করে চলছে, ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা দিয়ে নানা অপরাধ, জঙ্গিবাদ, নানা সংকট সৃষ্টি করে জাতিকে যারা ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে চলছে, সেই শ্রেণিটিও আমাদের এই কাজের বিরোধিতা করে যাচ্ছে এবং ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠীকে আমাদের পিছনে লেলিয়ে দিচ্ছে। যার ফলে আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে নানা জায়গায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে চলেছি। আমাদের নিজেদের ধন-সম্পদ এমনকি নিজেদের জীবনও হুমকির মুখে পড়ছে। আমাদের এই আদর্শ প্রচার করতে গিয়ে আমাদের চারজন সদস্যের প্রাণও চলে গিয়েছে। তারপরও আমরা এই আদর্শ প্রচারে পিছপা হইনি। আমাদের এই আদর্শ প্রচারের ফলে দেশ ও জাতি ধর্মের নামে সৃষ্ট সংকটগুলো থেকে পরিত্রাণ পাবে এবং সমাজের সকল পর্যায়ের সকল অন্যায় দূর হবে।

আমাদের এই কাজ শুধু মাত্র জাতির কল্যাণের জন্য। আমরা এই কাজ সম্পূর্ণ নিস্বার্থভাবে করে চলছি। আমরা অকপট হৃদয়ে শুধু দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে চাই। এই কাজ আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের প্রয়োজন সরকারের সহযোগিতা ও আন্তরিকতা।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...