হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

অশ্লীল কথা ও অশালীন আচরণ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, এমাম, হেযবুত তওহীদ
EmamHT

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, হেযবুত তওহীদ

মানুষ যখন ভুল পথে পরিচালিত হয়, ভুল জীবনব্যবস্থা মেনে জীবনযাপন করে, তখন মানুষের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সকল অঙ্গনে যেমন বিশৃঙ্খলা গোলোযোগ শুরু হয়, তেমনি মানুষের মনোজগতে, মস্তিষ্কেও অসুস্থতা, ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। সেই অসুস্থ মননের প্রতিফলন ঘটে মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম, আচার, ব্যবহার ও কথাবার্তায়। এই বিকারগ্রস্ততা গ্রামের নিভৃত পল্লী থেকে শুরু করে জাতীয় অঙ্গন পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। তাই সংসদের ভেতরে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করার ঘটনা, ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় বক্তাদের একে অপরকে লক্ষ করে গালাগালির ঘটনা পর্যন্ত আমরা দেখেছি। আর অনলাইনে বিভিন্ন ব্যক্তির আইডি ও পেজের কমেন্টবক্সে নোংরা ভাষায় গালাগালির ঘটনা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি আমরা দেখতে পেলাম, একটি ফেসবুক লাইভে অশালীন কথাবার্তা বলার দায়ে সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হলো।

আমি মনে করি, আরও লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি আমাদের সমাজে রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ ঘটানো হলে প্রত্যেকেই শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য হবে। এই নোংরাভাষীদের দ্বারা আমি নিজেও আক্রান্ত হয়েছি বারবার। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমার ফেসবুক পেজে আপনারা দেখতে পাবেন- কোনো ভিডিও বক্তব্য আপলোড দিলে মুহূর্তের মধ্যেই কোত্থেকে একটি গালিবাজ চক্র এসে উপস্থিত হয়, চরম অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে আরম্ভ করে। তারা বক্তব্য শোনেও না, লেখা পড়েও না। এমন অশ্লীল কথা তারা বলে, যা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না। প্রাচীনকালের অসভ্য, বর্বর জনগোষ্ঠী, যারা হানাহানি মারামারিতে লিপ্ত থাকত, শিক্ষা-দীক্ষা ছিল না, ভালো-মন্দ বুঝত না, নোংরা অপরিষ্কার পোশাক পরে থাকত, তারাও এতটা নোংরাভাষী ছিল কিনা সন্দেহ আছে। অথচ এই নোংরাভাষীরা নিজেদেরকে সভ্য দাবি করে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে, অনেকে ধর্মীয় লেবাসও পরে থাকে। এদের মুখের ভাষা এত জঘন্য হতে পারে কীভাবে, তা আমার বুঝে আসে না। কুকুরের মুখের ঘেউ ঘেউ আওয়াজ মানুষ ঘৃণা করে, নোংরা আবর্জনা খাওয়া কালো কাকের কা কা আওয়াজ চরম বিরক্তির উদ্রেক করে, রাত্রিলোকে দূর থেকে ভেসে আসা হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের ডাক মানুষকে ভয়েভীত করে! অশ্লীলভাষী মানুষগুলোর মুখ থেকে যে আওয়াজ বেরোয় তা এরচেয়েও জঘন্য, এরচেয়েও দুর্গন্ধময়, যার আশেপাশে কোনো সুস্থচিন্তার রুচিবান মানুষ স্থির থাকতে পারে না।

আজ আমাদের সমাজ এই ভয়াবহ ব্যাধীতে আক্রান্ত। নানা মতের ও নানা মনোভাবের লক্ষ লক্ষ বিকৃতরুচির নোংরাভাষী মানুষ গিজগিজ করছে অনলাইন ও অফলাইন জগতে। আগেও বহুবার এসব নিয়ে কথা বলেছি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছি। সংবাদ সম্মেলন করেও জানিয়েছি। কিন্তু কার্যকরী কিছু হয়নি। দেশে আইন আছে ঠিকই, কিন্তু যারা ক্ষমতায় আছে বা ক্ষমতার কাছাকাছি আছে তারাই শুধু আইনের সুফল পায়। আমাদের মত ক্ষমতাবলয়ের বাইরে যারা আছে, তারা কোনো সুফল পায় না।

যাই হোক, এখন মনে হচ্ছে অশ্লীল, অশোভন ও নোংরাভাষীদের দিকে সম্ভবত সরকার মনোযোগ দিয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারের মনোযোগ যেন নির্দিষ্ট গ-িতে আবদ্ধ না থাকে সেই কামনা করি। প্রত্যেক নোংরাভাষীকেই পাকড়াও করা দরকার। যাদের শাস্তি প্রযোজ্য তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনার পর যদি দেখা যায় এই বিকৃতমস্তিষ্কের মানুষগুলোকে সুস্থ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানো উচিত- তাহলে সেটাও করা যায়। তবু সমাজটা দুর্গন্ধমুক্ত হোক। মানুষগুলো বিকারগ্রস্ততা থেকে মুক্তি পাক। মানুষের মুখের ভাষা মানুষের মতই হোক। প্রচলিত ভুল জীবনব্যবস্থার ফলে মানুষের চারিত্রিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে যে রোগ-ব্যাধি বাসা বেঁধেছে, তা থেকে পরিত্রাণ সন্ধানের এখনই সময়।



সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...