ঢাকার গাজীপুরে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৩টায় গাজীপুর সাগর সৈকত কনভেনশন হলে এ কর্মিসভার আয়োজন করে গাজীপুর জেলা ও মহানগর হেযবুত তওহীদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের শীর্ষ নেতা ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে বহু ধরনের সরকার গঠিত হয়েছে। কোনোটা সামরিক, কোনোটা একনায়কতান্ত্রিক, কোনোটা গণতান্ত্রিক। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কোনো সরকার ব্যবস্থাতেই ঘটতে দেখা যায়নি।
গত ৬ মাসে দেশে চলমান অপরাধের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, যত সংস্কারই করেন আর যত সুষ্ঠু নির্বাচনই দেন লাভ হবে না। যতদিন না মানবরচিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে আল্লাহর দেওয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে ততদিন অপরাধ, অন্যায়, দুর্নীতি বাড়তেই থাকবে। এখনই সময় মানবরচিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ‘না’ বলার।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের প্রবর্তিত বিধি-বিধান ও সিস্টেমেই আমাদের দেশ চলছে, আর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, লুটপাট, টাকা পাচার, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, খুন, গুমও বেড়ে চলেছে। যুগের পর যুগ আমরা মানবরচিত বিধানের মাশুল দিচ্ছি।’
নিজেদের মধ্যকার সকল দ্বন্দ্ব-সংঘাত ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের সিস্টেমে চলা রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিবর্তন করে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা (দীনুল হক) প্রতিষ্ঠায় গণবিপ্লবের ডাক দেন তিনি।
মাইলস্টোনের দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই ভয়াবহতা সকলের সহ্যসীমা অতিক্রম করেছে। এই হৃদয় বিদারি মর্মস্পর্শী দৃশ্য দেখে এমন কোনো মানুষ নেই চোখের পানি ফেলেনি। অভিভাবকদের অনেকে কান্না করতে করতে চলমান সিসটেমকে দায়ী করছেন।
তিনি বলেন, এটাতো একটি দুর্ঘটনা। এতটুকু চাপ নেয়ার শক্তি আমাদের নেই। অথচ ফিলিস্তিনে বোমা হামলার তুলনায় এটা কিছুই না। ফিলিস্তিনে গত ১ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে বিমান হামলা চলছে, মিসাইল মেরে সেখানকার মুসলিমদের নৃসংশভাবে হত্যা করা হচ্ছে। লক্ষাধিক বেসামরিক মানুষ মারা হয়েছে যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। তাদের জন্য কান্নারও কেউ নাই।
তিনি আরো বলেন, “আমরা যেন এক ভয়াবহ দুষ্টচক্রের সিস্টেমে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি, যেখান থেকে শত চেষ্টা করেও বের হতে পারছি না। এখন সময় এসেছে এই সিস্টেমকে ভেঙে ফেলার। তা না হলে এই কান্না থামবে না। এই সিস্টেম যতদিন বলবৎ থাকবে, ততদিন হয় এভাবে দুর্ঘটনায় মরব, নয়তো ওই দুষ্টচক্রের বিমান হামলায় আমাদের মরতে হবে। এক পর্যায়ে হয়তো কান্নারও কোনো লোক থাকবে না, যেমনটা ফিলিস্তিনে হচ্ছে, ঠিক তাই হবে আমাদের এই মাতৃভূমিতেও।” এই অমানবিক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের সম্মিলিতভাবে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে -বলেন হেযবুত তওহীদের এই নেতা।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, আমরা যদি মানবরচিত রাষ্ট্রব্যবস্থা বর্জন না করি, তবে সমাজে প্রকৃত শান্তি কখনোই প্রতিষ্ঠিত হবে না। গণতন্ত্র আমাদের মুক্তি দিতে পারবে না। আমাদের উচিত আল্লাহর হুকুম ও বিধান অনুসারে জীবন পরিচালনা করা। তখনই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষ দরজা খোলা রেখে ঘুমাতে পারবে, থাকবে না অন্যায় বা অবিচার। তাই আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর হুকুম মেনে নেই।

গাজীপুর ও উত্তরা অঞ্চলের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন।
তিনি বলেন, শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে আল্লাহ যে জীবনব্যবস্থা পাঠিয়েছেন, সেখানে যেমন নামাজ-রোজা ইত্যাদির বিধান দিয়েছেন, একইভাবে তিনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিচারিক, সামরিক ইত্যাদি সকল বিষয়ের বিধানও দিয়েছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই সবচেয়ে ভালো জানবেন কোন বিধানে মানুষের জীবনে শান্তি আসবে। হেযবুত তওহীদ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিপতি মহান আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থার দিকে মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছে।- বলেন তিনি।
তিনি বলেন, মানবরচিত রাষ্ট্রব্যবস্থার চর্চা আমরা অনেক করেছি। তার বিষফলও ভোগ করেছি। আর নয়। এখন সময় এসেছে মানবরচিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বিদায় জানানোর। আসুন মানবরচিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে না বলে আল্লাহর দেওয়া রাষ্ট্রব্যবস্থাকে হ্যাঁ বলি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নারী বিভাগের প্রধান রুফায়দাহ পন্নী বলেন, আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আরবের জাহেলি সমাজে জন্মগ্রহণ করে আল্লাহর শেষ রসুল মোহাম্মদ (সা.) কঠিন সংগ্রাম ও কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তওহীদভিত্তিক দীনুল হক বা আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ক্রমান্বয়ে আরবের চেহারা পাল্টে গেল এবং অনাবিল শান্তি, সুবিচার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হলো। এমন নিরাপদ সমাজ গঠিত হলো যে, একা একজন নারী রাতের অন্ধকারে নির্ভয়ে শত শত মাইল পথ হেঁটে যেত। মানুষ ঘরের দরজা খুলে ঘুমাতে পারত; স্বর্ণের দোকান খোলা রেখে মসজিদে যেত; আদালতে মাসের পর মাস অপরাধ-সংক্রান্ত মামলা আসত না; কালেভদ্রে দুই একজন নফসের তাড়নায় অপরাধ করে ফেললেও নিজেই বিচারকের কাছে এসে নিজের শাস্তি দাবি করত। মানবাধিকার এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে, ধর্ম-বর্ণ, সাদা-কালো, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, আরব-অনারব, মুসলিম-অমুসলিম, মালিক-শ্রমিক ভেদাভেদ ছিল না। সবাই সমাজের চোখে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হয়েছিল। -বলেন তিনি।
এটা সম্ভব হয়েছিল আল্লাহর দেওয়া সত্যদীনের আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, যা আল্লাহ নিজে রচনা করেছেন ও রসুল (সা.) এর মাধ্যমে মানবজাতিকে দান করেছেন। সেই সত্য আদর্শ আল্লাহ অতীব দয়া করে হেযবুত তওহীদকে দান করেছেন। মানবরচিত রাষ্ট্রব্যবস্থার বিপরীতে এই আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শান্তিময় সমজ গড়ে তোলা সম্ভব।- মন্তব্য করেন হেযবুত তওহীদের এই নেত্রী।
মুখলেছুর রহমান সুমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, ঢাকা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রব্বানী, নারী সম্পাদক তসলিমা ইসলাম, ঢাকা জেলা সভাপতি ইউনুস মিয়া, গাজীপুর মহানগর সভাপতি আবু রায়হান, জেলা সভাপতি আলী আকবর, কাপাসিয়া সভাপতি শাহাজাহান প্রধান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় হেযবুত তওহীদের বিপুলসংখ্যক কর্মী, ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও সুধীজন অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও কর্মীসভায় স্থানীয় পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি, সমাজ সচেতন নাগরিক এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কর্মসূচিকে আরও বর্ণাঢ্য করে তোলে। অনুষ্ঠান শেষে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মীসভা সমাপ্ত হয়।