ঢাকায় হেযবুত তওহীদের মহা সমাবেশ

উগ্রবাদ-সাম্প্রদায়িকতা-ধর্মব্যবসার বিরুদ্ধে গণজোয়ার
.
ঘড়িতে সকাল আটটা। ঢাকা ও এর আশোপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজারো নারী-পুরুষ মিলিত হয় রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে। এসময় তাদের কণ্ঠস্বরে উচ্চারিত হয়, ‘ধর্মব্যবসার ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না’, ‘উগ্রবাদের বিরুদ্ধে, লড়তে হবে একসাথে’, ‘আমরা সবাই ভাই-ভাই, ভেদাভেদ ভুলে যাই’। এসব স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো এলাকা। বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সমাবেশস্থলে দলে দলে সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ করে তারা। গত শনিবার গুলিস্তানে কাজী বশির মিলনায়তন প্রাঙ্গণে হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগীয় কর্মী সম্মেলনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
সমাবেশ উপলক্ষে পুরো এলাকায় সাজ সাজ রব উঠে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর পদচারণে পুরো এলাকায় একটি উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্মেলনে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় দশ হাজার নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে। হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা ও এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিভাগের সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ।
সকাল নয়টায় পবিত্র কোর’আন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। শুরুতেই হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় সভাপতিগণ একে একে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। এসময় তাদের বক্তব্যে দলটির সুদীর্ঘ পথচলার বিপ্লবী ঘটনাপ্রবাহ, ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি কর্তৃক মিথ্যা অপপ্রচারের নিন্দা, অনলাইন-অফলাইনে হেযবুত তওহীদের এমাম ও সদস্যদের হত্যার হুমকির প্রতিবাদ এবং জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্বর উঠে আসে। সভাপতির বক্তব্যে বিগত বছরে হেযবুত তওহীদের নিবেদিতপ্রাণ বেশ কয়েকজন সদস্যের অকালমৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব পেশ করা হয়। সম্মেলনে গত বছর পাবনায় উগ্রবাদীদের হামলায় নিহত শহীদ সুজনের ভাই মো. ইয়াকুব মণ্ডল তাঁর স্মৃতিচারণ করেন। এসময় পুরো সমাবেশস্থলে এক আবেগঘণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বেলা এগারোটায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের পূর্বে ঢাকা বিভাগের পক্ষ থেকে সভাপতির নেতৃত্বে হেযবুত তওহীদের এমামকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এসময় মুহুর্মুহু করতালি ও সেøাগানে প্রকম্পিত হয় পুরো অনুষ্ঠানস্থল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম প্রায় ৩০টি বিষয়ের উপর দীর্ঘ দুই ঘণ্টা বক্তব্য দেন। এসময় নেতাকর্মীদের আগামী দিনে দল পরিচালনায় বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “একাত্তরে লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়া প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে আজকে গভীর চক্রান্ত চলছে। পশ্চিমাদের অনুকরণে তৈরি হওয়া পুঁজিবাদী, গণতান্ত্রিক, সেক্যুলার আদর্শনির্ভর রাজনৈতিক দলগুলোর হানাহানি, সংঘাত, অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেশকে শেষ করে দিচ্ছে। এদিকে পবিত্র ধর্ম ইসলামকে আশ্রয় করে তৈরি হওয়া বিভিন্ন দল-উপদল নিজেদের মধ্যে হানাহানি-রক্তারক্তিতে লিপ্ত। কয়েকদিন পরপর একেকটা ইস্যু সৃষ্টি করে দেওয়া হচ্ছে। সেইসব ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য হামলা, জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদি ঘটনা ঘটে চলেছে। এমনি একটি পরিস্থিতিতে সত্যের মশাল নিয়ে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ।”
তিনি বলেন, “বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ করে কোনো এক মসজিদে জুমার নামাজ শেষে হাজার হাজার মুসল্লি একত্রিত হয়ে নির্দিষ্ট কোন ফেরকা বা তরিকার মানুষের উপরে হামলা করছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে। এ ধরনের ঘটনার ফলে সাধারণ মানুষ হতাহত হচ্ছে, রাষ্ট্রের সম্পদ ও অর্থের অপচয় হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মহলের কাছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ঘটনা একদিনে হয়নি বরং একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে হ্যান্ডবিল রচনা করে, অপপ্রচারমূলক বক্তব্য দিয়ে, কথা টুইস্ট করে কোর’আন-হাদিসের মিথ্যা ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে উস্কানি দিতে থাকে। তারা নিজেদেরকে ইসলামের কর্তৃপক্ষ, নায়েবে নবী মনে করে এবং তারা না থাকলে ইসলাম থাকবে না- এই ধরনের একটি ভাবমূর্তি জনগণের সামনে প্রকাশ করে। এসব করে তারা একটি প্রেক্ষাপট রচনা করে। নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঠিক করে, কারা হামলা করবে, কবে হামলা করবে, সব ঠিকঠাক করে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। ঘটনা কি ঘটবে তারা তা আগে থেকেই জানে এবং তারা সেভাবেই বিবৃতি দিতে থাকে।”
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোন রাষ্ট্রের জন্য এই ধরনের লক্ষণ ভালো নয়। কোন রাষ্ট্রে এ ধরনের কার্যক্রম চললে সেই রাষ্ট্র বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন হতে পারে না এবং একদিন ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকে না, সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়। অতীতের সভ্যতা গুলো এভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এসব উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। এসময় তিনি সরকারের প্রতি ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
হেযবুত তওহীদের এমামের বক্তব্যের পর প্রথম অধিবেশন শেষ হয়। বেলা ৩টায় দুপুরের খাবারের বিরতির পর দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রধান খাদিজা খাতুন, নারী এবং শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক উম্মুত তিজান মাখদুমা পন্নী। পরে মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিরা তওহীদ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘পন্নী পরিবারের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠান শেষে হেযবুত তওহীদের এমামের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল বের হয়। সেখানে সম্মেলনে আসা বিভিন্ন নেতাকর্মীরা রঙ-বেরঙের ফেস্টুন হাতে অংশগ্রহণ করেন। এসময় তারা ধর্মব্যবসা, সাম্পদ্রায়িকতা, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের সোচ্চার অবস্থান জানান দিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের স্লোগানের শব্দে প্রকম্পিত হয় পুরো এলাকা। মিছিলটি সম্মেলনস্থল থেকে বের হয়ে গুলিস্তার গোলচত্বর হয়ে বঙ্গভবনের সামনে দিয়ে প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সম্মেলনস্থলে এসে শেষ হয়।
সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সভাপতি মো. মশিউর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগীগের সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন, ময়মনসিংহ বিভাগের সভাপতি এনামুল হক বাপ্পা, বরিশাল বিভাগের সভাপতি আল-আমিন সবুজ, খুলনা (অঞ্চল-১) বিভাগের সভাপতি মোতালিব খান, খুলনা (অঞ্চল-২) বিভাগের সভাপতি মো. শামসুজ্জামান মিলন, সিলেট বিভাগের সভাপতি মো. আলী হোসেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন রব্বানী, ঢাকা বিভাগীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক তাসলিমা ইসলাম, ঢাকা মহানগর প্রচার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেসবাউল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা সভাপতি ইউনুস মিয়া, বৃহত্তর মিরপুরের সভাপতি আব্দুল হক বাবুল, বৃহত্তর যাত্রাবাড়ীর সভাপতি ওলিউল্লাহ, সাভার থানা সভাপতি সোহেল তালুকদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন হেযবুত তওহীদের তথ্য সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা ও শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক উপ-কমিটির সম্পাদক শাহনেওয়াজ খান রিপন।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
জনপ্রিয় পোস্টসমূহ