হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

জাতীয় নিরাপত্তায় কোরবানির শিক্ষা

জোবায়ের হাসান:
প্রতিবছর আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ মুসলিম বিশ্বে পালিত হয় ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ আর কোরবানি হলো ত্যাগ, উৎসর্গ, বিলিয়ে দেওয়া। নিজের প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে যে আনন্দ উৎসব পালন করা হয় তাকেই কোরবানির ঈদ বা ঈদুল আযহা বলে। কোরবানি শব্দটি এসেছে আরবি ‘কুরব’ থেকে যার অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, কাছে যাওয়া, সান্নিধ্য অর্জন, নৈকট্য লাভ ইত্যাদি। মূলত নিজের প্রিয় বস্তুকে স্বেচ্ছায় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য অর্জনের প্রত্যাশায় আল্লাহর রাহে বিলিয়ে দেওয়াই কোরবানি। এই কোরবানি হতে পারে পার্থিব বা জাগতিক। নিজের প্রিয় কোনো বস্তু, প্রিয় সম্পদ, ব্যবসা বাণিজ্যের মোহ যা আমরা ক্ষতিগ্রস্ত আশঙ্কা করি, মায়া-মমতায় জড়ানো সন্তান যাকে অসীম আদর, স্নেহ, যত্ন দিয়ে বড় করে তুলি বা নিজের অমূল্য জীবন যা আমরা প্রতিনিয়ত হারানোর ভয় করি।

বস্তুত কোরবানির প্রচলন হয় যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা সংক্ষেপে এই যে, আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে পাওয়া নির্দেশে তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে (আ.) কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। আল্লাহ তাঁর নবী ইব্রাহিমের (আ.) প্রিয় বস্তু কোরবানি করার মানসিকতায় সন্তুষ্ট হন, খুশি হন ফলে পুত্র ইসমাইলের (সা.) স্থলে একটি পশু কোরবানি হয়ে যায়। সুতরাং আমরা যারা প্রতিবছর পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের প্রত্যেকের স্মরণে রাখতে হবে সেদিনের ঘটনাকে, হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কোরবানির মানসিকতাকে। তিনি আল্লাহর আদেশকে মান্য করার জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের প্রিয় পুত্রকে সমর্পণ করে দিয়েছেন। এটাই হলো আসল কোরবানি। এটাই কোরবানির শিক্ষা। আজকে যদি পশু কোরবানির বদলে নিয়ম থাকতো মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করার, তাহলে কয়জন এই কোরবানিতে অংশগ্রহণ করতো সন্দেহ থেকেই যায়।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে একজন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু দুটি- একটি নিজের জীবন অন্যটি নিজের অধিকারে থাকা সম্পদ। এ দুটি জিনিস কখনো মানুষ হারাতে চায় না। এজন্য আল্লাহ মো’মেন হওয়ার শর্তে এই দুটি বস্তুকেই কোরবান করতে বলেছেন। আল্লাহ বলেন, “যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা.) প্রতি ঈমান আনে কোনো সন্দেহ পোষণ করে না এবং জীবন-সম্পদ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ (দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম) করে, তারাই সত্যনিষ্ঠ (মো’মেন)” (সুরা হুজরাত ১৫)। আল্লাহর দেওয়া সমস্ত আদেশ-নিষেধ মো’মেনের জন্য। সুতরাং কোরবানিও মো’মেনের জন্য।

আজ যে মুহূর্তে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে একইসাথে হজ ও কোরবানির ঈদ পালিত হচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে ৮ কোটি মুসলমান উদ্বাস্তু। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অসহায়ের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশেই প্রায় ২২ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান উদ্বাস্তু হয়ে আছে। মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ মুসলিম দেশগুলোতে চলছে যুদ্ধ, সংঘাত, উত্তেজনা। এক ফিলিস্তিনেই গত ৭৫ বছর ধরে যুদ্ধ চলছে। সেখানে পাখির মত গুলি করে, বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সামরিক শক্তিধর দেশগুলো নিজেদের স্বার্থচিন্তা নিয়ে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। যেখানে মুসলমানদের রক্তে হোলি খেলছে পশ্চিমা বিশ্ব, সেখানে বাকি মুসলিম বিশ্ব ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

এতো গেল মুসলিম হিসেবে বৈশ্বিক পরিসংখ্যান। এবার আসি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। অভ্যন্তরীণভাবে বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটের মধ্যে পতিত হয়েছে। চারদিক থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

১. একদিকে পরাশক্তিধর রাষ্ট্র চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই) বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর হিসেবে বিবেচনা করছে।
২. অপরদিকে পশ্চিমা বিশ্ব চায় ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে চীন ও রাশিয়াকে প্রতিহত করতে। সেজন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরকে সুবিধাজনক অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করছে।
৩. আবার পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতও চাচ্ছে বাংলাদেশের ভূমি ও সমুদ্রপথ ব্যবহার করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে (সেভেন সিস্টার্স) কৌশলগতভাবে নিরাপদ রাখতে।
৪. ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে আরেকটি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে- সীমান্তবর্তী অঞ্চল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহ গোষ্ঠী আরাকান আর্মির উত্থান। তাদের নিপীড়নে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গার আগমন ঠেকাতে ও তাদের ত্রাণ সহায়তার নামে মার্কিন মদদপুষ্ট জাতিসংঘ রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশের করিডোর ব্যবহার করতে চাচ্ছে। এটিও বাংলাদেশের জন্য কঠিন নিরাপত্তা হুমকি। ধারণা করা হচ্ছে, এর অনুমোদন পেলে মার্কিন সৈন্যরা অনায়াসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মাটি ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে পারবে।

পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর এই প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থ রক্ষা এবং কৌশলগত অবস্থান দখলের চেষ্টাই বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। এর পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দলগুলোর মধ্যে দলাদলি, বিভেদ, কোন্দল, জ্বালাও-পোড়াও নীতি, সহিংসতা, মব-হামলা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, রাহাজানি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা ইত্যাদি জনমানুষের নিরাপত্তাকে চরমভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে। এর আগে বিশ্বের বহু মুসলিম রাষ্ট্রে মার্কিন আধিপত্য যে কোনো ঠুনকো কারণ দেখিয়ে প্রবেশ করেছে, কিন্তু ফলাফল হয়েছে ধ্বংস। সুতরাং যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ, তাই বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থান ঘটিয়ে ধ্বংসের পাঁয়তারা সৃষ্টির চেষ্টা নতুন কিছু নয়। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা হুমকি। ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে নিয়ে এই ষড়যন্ত্র আমাদের গভীরভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।

সম্প্রতি চব্বিশের ছাত্র আন্দোলনের পর বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছিল তা এখনও স্থিতিশীল হয়নি। বরং দিনকে দিন পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। বিগত সরকার আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের ব্যাপক দুর্নীতি, টাকা-পাচার, ভোট কারচুপি, স্বজনপ্রীতি, স্বৈরাচারী মনোভাব ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। তার পতনের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উত্থান হয়েছে। এর মধ্যে নতুন গঠন হওয়া ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র বিরুদ্ধেও রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ। আবার বিগত সরকারের আমলে কোণঠাসা হয়ে থাকা বিএনপি’র বিরুদ্ধে আছে দেশজুড়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ। একইসাথে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোরও রাজনীতিতে সচল থাকার অভিযোগও আছে। এই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দোহাই দিয়ে এ পর্যন্ত অনেক জাতিবিনাশী কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, এখনও হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান করা হয়, কিন্তু কখনও জাতীয় ঐক্যের আওয়াজ ওঠেনি। দেশ রক্ষার জন্য একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্তা গঠনের প্রয়োজনীয়তাও কখনও তুলে ধরা হয়নি। অথচ বারবার রাষ্ট্র নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পতিত হচ্ছে। আমরা যদি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাত না ভুলে নিজেদের মধ্যে দলাদলিতে লিপ্ত থাকি তাহলে দেশ অচিরেই সাম্রাজ্যবাদীদের আখড়ায় পরিণত হয়ে ইরাক-সিরিয়া-ফিলিস্তিনে পরিণত হবে।

এই মুহূর্তে আমাদের করণীয়
প্রথমে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংকটের গুরুত্ব। এই সংকট থেকে পরিত্রাণের জন্য পুরো জাতিকে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটা হলো নিজেদের সবকিছু দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতিকে রক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ। এটাই হলো ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের শিক্ষা। শুধু পশুকে যবেহ করে তার গোশত খেলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় না। বরং পশু কোরবানি হলো প্রতীকী আমল। প্রকৃত কোরবানি হলো মানুষের প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করা। গরু, ছাগল, বকরী, ভেড়া, উট এসব নিশ্চয়ই মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নয়। মানুষের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হলো নিজের জীবন ও সম্পদ। তাই এখন সময় এসেছে নিজেদের জীবন ও সম্পদ বিলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি খেয়ে-না খেয়ে, জীবন দিয়ে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে স্বাধীন করেছিল ঠিক সেভাবে এখন বাংলাদেশের সকল নাগরিকের সবকিছু ভুলে এক ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্তা গড়ে তুলতে হবে।

আমরা যদি ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো- রসুল (সা.) ইসলামের প্রাথমিক সময়ে মক্কায় যখন তওহীদের দিকে মানুষকে আহ্বান করছিলেন তখন তাঁর উপর কী অবর্ণনীয় নির্যাতন, নিপীড়ন চলেছে। তাঁর মক্কার ১৩টি বছর কেটেছে অত্যাচার-নির্যাতন, নিপীড়ন, অভাব ও দারিদ্র্য নিয়ে। কিন্তু একটি মুহূর্তের জন্যও তিনি দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম থেকে পিছপা হন নি, শিরক ও কুফরের সামনে মাথা নত করেননি। এরপর বহু কোরবানির বিনিময়ে যখন তিনি মদিনায় আসলেন, তাঁকে মদিনার প্রধান হিসেবে সকলে গ্রহণ করে নিল। মদিনাকে তিনি তৈরি করলেন এক আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে। মদিনায় আসার কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হলো চতুর্দিক থেকে ষড়যন্ত্র, যুদ্ধ, সংঘাতময় পরিস্থিতি। তখন তিনি ও তাঁর আসহাবরা নিজেদের সবকিছু কোরবানি করে দিয়ে মদিনাকে রক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁদের অপরিসীম আত্মত্যাগ ও কোরবানির বিনিময়ে মদিনা নামক ভূখণ্ড রক্ষা পেয়েছে। এরপর ইসলাম ছড়িয়ে পড়লো অর্ধ-পৃথিবীতে। সেদিন যদি কিছু মর্দে মুজাহিদ মদিনাকে রক্ষার জন্য নিজেদের সবকিছু কোরবানি করে মাঠে না নামতেন তাহলে ধারণা করা যায় ইসলাম আজ অর্ধ-পৃথিবীতে বিস্তৃতি লাভ করতো না। আমরা নিজেদের মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে পারতাম না। সুতরাং একটি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য জাতির সকল সদস্যকে কোরবানির মূল শিক্ষাকে ধারণ করে ত্যাগের চূড়ান্ত নিদর্শন প্রদর্শন করা এখন সময়ের দাবি।

সুতরাং যারা সত্যিকার অর্থে তাকওয়া অর্জন করতে চান, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কোরবানি দিচ্ছেন, তাদের উচিত জাতির এই চরম নিরাপত্তা সংকটে নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে এই মাতৃভূমিকে রক্ষা করা। তাহলে দেশ বাঁচবে, সমাজ বাঁচবে, জাতি বাঁচবে, আমরা রক্ষা পাবো। নয়তো আমাদেরও পরিণতি ভোগ করতে হবে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনের মতো।

[যোগাযোগ: ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৬২১৪৩৪২১৩, ০১৭৮৩৫৯৮২২২]

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...