হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

তোমাদের উপর সওমকে ফরজ করা হলো

রাকীব আল হাসান

  • মহান আল্লাহর বাণী
    হে মো’মেনগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মতো তোমাদের উপরও সওম ফরদ করা হয়েছে, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার। (সুরা বাকারা-১৮৩)।
  • রসুলাল্লাহর (সা.) বাণী
    আয়েশা (রা) বলেন: এক ব্যক্তি নবীর (সা.) নিকট এসে অনুতাপের সঙ্গে বলল, ‘এই বদ-নসিব ধ্বংস হয়েছে।’ নবী জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার কী হয়েছে?’ সে বললো, ‘আমি সওম থাকা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি।’ নবী বললেন, ‘তোমার কি একজন ক্রীতদাস মুক্ত করার ক্ষমতা আছে?’ সে বললো, ‘না;’ নবী (সা.) বললেন, ‘২ মাস রোযা থাকতে পারবে?’ সে বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘৬০ জন গরিবকে খাওয়াতে পারবে?’ বলল,‘না।’ এমন সময় এক লোক বড় পাত্রভরা খেজুর নিয়ে আসল। তখন নবী (সা.) ঐ ব্যক্তিকে বললেন, ‘ঐ খেজুর নিয়ে যাও এবং স্বীয় গোনাহর কাফ্ফারা হিসেবে সদকা দাও।’ সে বলল,‘ এটা কি এমন লোককে দেব যে আমার চেয়ে অধিক গরিব? আমি কসম করে বলছি, আমার মতো গরিব এ এলাকায় আর কেউ নেই।’ তিনি এ কথা শুনে স্বভাবগত মৃদু হাসির চেয়ে একটু অধিক হেসে বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি তোমার পরিবারবর্গকেই খেতে দাও।’ (বোখারী, ২য় খ-, ৮ম সংস্করণ; আ. হক, পৃ: ১৭৫)।
  • সওম নিয়ে বাড়াবাড়ি
    রসুলাল্লাহর (সা.) জীবনী ও হাদীস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় কখনও কখনও তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছেন। সেই রিপুজয়ী মহামানব কী কারণে রেগে লাল হয়ে গেছেন? রাসুল (সা.) অক্লান্ত পরিশ্রম করে সমগ্র পৃথিবীতে আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে অপরাজেয় জাতি তথা উম্মতে মোহাম্মদী সৃষ্টি করলেন; সেই জাতি বিনাশী কর্মকা- তাঁর সামনে ঘটলে তিনি অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হতেন এবং ক্রোধান্বিত হওয়াটা অত্যন্ত যুক্তিসংগত। এই জাতিবিনাশী কাজগুলির একটি হচ্ছে দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি ও অতি বিশ্লেষণ।
    একদিন আল্লাহর রসুলকে (সা.) জানানো হলো যে কিছু আরব রোযা রাখা অবস্থায় স্ত্রীদের চুম্বন করেন না এবং রমযান মাসে সফরে বের হলেও রোযা রাখেন। শুনে ক্রোধে বিশ্বনবীর (সা.) মুখ-চোখ লাল হয়ে গেলো এবং তিনি মসজিদে যেয়ে মিম্বরে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ বলার পর বললেন- সেই সব লোকদের কী দশা হবে যারা আমি নিজে যা করি তা থেকে তাদের বিরত রেখেছে? আল্লাহর কসম তাদের চেয়ে আমি আল্লাহকে বেশি জানি এবং বেশি ভয় করি (হাদীস-আয়েশা (রা.) থেকে বোখারী, মুসলিম, মেশকাত)। একদিন একজন লোক এসে আল্লাহর রসুলের (সা.) কাছে অভিযোগ করলেন যে ওমুক লোক নামায লম্বা করে পড়ান, কাজেই তার (পড়ানো) জামাতে আমি যোগ দিতে পারি না। শুনে তিনি (সা.) এত রাগান্বিত হয়ে গেলেন যে -বর্ণনাকারী আবু মাসউদ (রা.) বলছেন যে- আমরা তাকে এত রাগতে আর কখনও দেখিনি (হাদীস- আবু মসউদ (রা.) থেকে বোখারী)।
    অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কোনো বিষয়ে মসলাহ জানতে চাইলে বিশ্বনবী (সা.) প্রথমে তা বলে দিতেন। কিন্তু কেউ যদি আরও একটু খুঁটিয়ে জানতে চাইতো তাহলেই তিনি রেগে যেতেন। কারণ তিনি জানতেন ঐ কাজ করেই অর্থাৎ অতি বিশ্লেণ ও ফতওয়াবাজী করেই তার আগের নবীদের জাতিগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। কিন্তু তার অত ক্রোধেও অত নিষেধেও কোনো কাজ হয়নি। পরবর্তীতে দুঃজনক ইতিহাস হচ্ছে তার জাতিটিও ঠিক পূর্ববর্তী নবীদের (আ.) জাতিগুলির মতো দীন নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে অতি মুসলিম হয়ে মসলা-মাসায়েলের তর্ক তুলে বিভেদ সৃষ্টি করে হীনবল, শক্তিহীন হয়ে শত্রুর কাছে পরাজিত হয়ে তাদের গোলামে পরিণত হয়েছে।
  • সওমের গুরুত্বের ওলট পালট
    সওমের মাস আসলে যেভাবে ব্যাপক আয়োজন শুরু হয়, মনে হয় যেন সওমই ইসলামের একমাত্র কর্তব্য। গণমাধ্যমগুলি ক্রোড়পত্র বের করে, প্রতিদিন পত্রিকায় বিশেষ ফিচার, প্রবন্ধ ইত্যাদি লেখা শুরু হয়। টেলিভিশনে জাদরেল মওলানা, মৌলভীরা আলোচনার ঝড় তোলেন। কিছু ডাক্তার আসেন সওমের স্বাস্থগত উপকারিতা বোঝাতে। সারারাত চলে হামদ ও নাত, শেষরাতে সেহরী অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে যেন এক এলাহি কা-। এটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য, কারণ ইসলামের একটি বিষয় যত বেশি আলোচিত হবে, সেটা মানুষের জীবনেও তত বেশি আচরিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যেখানে আল্লাহ কোর’আনে সওম ফরদ হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন মাত্র একবার আর সওম পালনের নিয়ম কানুন উল্লেখ করেছেন আর দুই/তিনটি আয়াতে, আর সত্যদীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তথা জেহাদ ফরদ হওয়ার কথা বলা হয়েছে বহুবার আর এর বিবরণ দেওয়া হয়েছে প্রায় সাতশ’র মতো আয়াতে। জেহাদ-কেতাল সংক্রান্ত সব আয়াত একত্র করলে প্রায় আট পারার মতো হয়ে যায়। মো’মেনের সংজ্ঞার মধ্যেও আল্লাহ জেহাদকে অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘মো’মেন শুধুমাত্র তারাই যারা আল্লাহ ও রসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহ পোষণ করে না এবং সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে (সূরা হুজরাত ১৫)।’ এ সংজ্ঞাতে আল্লাহ সওমকে অন্তর্ভুক্ত করেন নাই, জেহাদকে করেছেন। শুধু তাই নয়, সওম পালন না করলে কেউ ইসলাম থেকে বহিষ্কার এ কথা আল্লাহ কোথাও বলেন নি, কিন্তু জেহাদ না করলে আল্লাহ কঠিন শাস্তি দিবেন এবং পুরো জাতিকে অন্য জাতির গোলামে পরিণত করবেন (সূরা তওবা ৩৯)।
    আল্লাহ যে বিষয়টি একবার মাত্র করার হুকুম দিলেও সেটা অবশ্যই ফরদ ও গুরুত্বপূর্ণ কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে বিষয়টি একইভাবে ফরদ করা হলো এবং সেই কাজের বিষয়ে শত শতবার বলা হলো সেটির গুরুত্ব আর দুই তিনটি আয়াতে যে বিষয়টি বলা হলো এই উভয় কাজের গুরুত্ব কি সমান? নিশ্চয়ই নয়। মহান আল্লাহ কোর’আনে শত শতবার জেহাদ কেতাল সম্পর্কে বলার পরও এ প্রসঙ্গে কেউ একটি শব্দও উচ্চারণ করেন না। মিডিয়াতে তো প্রশ্নই ওঠে না, এমন কি যে এমাম সাহেব মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে সিয়ামের ফজিলত নিয়ে সুরেলা ওয়াজে শ্রোতাদের মোহিত করেন, তিনিও ভুলেও জেহাদের নাম উচ্চারণ করেন না।
    এর কারণ কী? এর কারণ সওম অতি নিরাপদ একটি আমল যা করলে সুঁইয়ের খোঁচাও লাগার আশঙ্কা নেই। এতে জীবনের ঝুঁকি নেই, আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ারও সম্ভাবনা নেই, কোনো কোরবানীরও প্রশ্ন নেই। পক্ষান্তরে জেহাদ এমন একটি কাজ যা করতে গেলে জীবন ও সম্পদের সম্পূর্ণ কোরবানী প্রয়োজন। আরেকটি কারণ হলো আজকের, দুনিয়াময় যে ইসলাম চালু আছে এটা আল্লাহ ও রসুলের ইসলাম নয়। ব্রিটিশরা মাদ্রাসা বসিয়ে নিজেরা সিলেবাস Curriculum তৈরি করে এই জাতিকে যে বিকৃত ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে এটা সেই ইসলাম। এতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বা তওহীদ নেই, দীনুল হক প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম নেই, কোন জাতীয় আইন-কানুন নেই, দ-বিধি, অর্থনীতি নেই; অর্থাৎ নামাজ, রোযা আর ব্যক্তিগত আমলসর্বস্ব অন্যান্য ধর্মের মতোই একটি ধর্মে পরিণত হয়েছে। এই ধর্মের প-িতদের, আলেমদের কাছে দীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নামাজ, রোযা, দাড়ি, টুপি, মিলাদ, মেসওয়াক ইত্যাদি আর জেহাদ একেবারেই নিপ্রয়োজন। এজন্য এই ইসলাম একটি মৃত, আল্লাহর রসুলের ইসলামের বিপরীতমুখী ধর্ম। এই বিকৃত ধমের্রর উপাসনা ও আনুষ্ঠানিকতাগুলি মানুষ পালন করে আল্লাহর কাছ থেকে বিনিময় ও জান্নাত পাওয়ার আশায়। পবিত্র রমজান মাসে এই সমস্ত আমলের প্রতিদান অন্য সব মাসের চেয়ে সত্তর গুণ হবে এই আশায় ধর্মপ্রাণ মানুষ ফরদ, ওয়াজেব, সুন্নাহ, নফল, মোস্তাহাব ইত্যাদি সর্বপ্রকার আমল প্রচুর পরিমাণে করে থাকেন এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করছেন বলে পরিতৃপ্ত থাকেন। কিন্তু সেই আমল গৃহীত হবে কী করলে সেটা কেউ ভেবে দেখে না। তওহীদহীন ইসলাম আল্লাহর কাছে গৃহীত নয় ফলে জাতিগতভাবে আমাদের মো’মেন থাকা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আরেকটি মারাত্মক বিষয় হচ্ছে গুরুত্বের ওলটপালট। আল্লাহ এবং তাঁর রসুল যে বিষয়ের অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন, এই বিকৃত ইসলামে তাকে একেবারে গুরুত্বহীন করে ফেলা হয়েছে; পক্ষান্তরে আল্লাহ-রসুল যে কাজের গুরুত্ব দিয়েছেন কম, সেটিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
    জেহাদ সংক্রান্ত আলোচনা না করায় কী ক্ষতি হচ্ছে: জেহাদ সংক্রান্ত আলোচনা কোর’আন ও হাদিসের বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে। এটা নিয়ে যখন মিডিয়া, রাষ্ট্র এমনকি আলেম সমাজ, মসজিদের ইমামগণ প্রায় নীরব ভূমিকা পালন করেন তখন জেহাদের সঠিক আকীদা সাধারণ মানুষ জানতে পারে না। জেহাদ যে আসলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, জেহাদ এবং সন্ত্রাস যে ভিন্ন বিষয়, জঙ্গিবাদী কর্মকা- ও জেহাদ যে সম্পূর্ণ বিপরীত- এ বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের অজানাই থেকে যায়। এই অজ্ঞতার সুযোগই নেয় জঙ্গিরা। ধর্মপ্রাণ মানুষদেরকে জেহাদের আয়াত ও হাদিস দেখিয়ে নিজেদের দলে ভেড়ায়। তাদেরকে বোঝানো হয়- দেখ, দেখ জেহাদের কত গুরুত্ব, কত মাহাত্ম অথচ তোমার মসজিদের ইমাম তো কখনোই এই কথাগুলো তোমাকে শেখায়নি। তখন সেও এটাতে উদ্বুদ্ধ হয়। এজন্য সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে জেহাদ সংক্রান্ত আকিদা পরিষ্কার করা প্রয়োজন, তাদেরকে বোঝানো দরকার যে, জেহাদ এক বিষয় আর জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস অন্য বিষয়। হেযবুত তওহীদ ইসলামের যাবতীয় বিষয়গুলোর সঠিক আকীদা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে।
    কাজেই ইসলামে জেহাদ এর মানে কী, কেন জেহাদ করবে, কার বিরুদ্ধে করবে, কী দিয়ে করবে ইত্যাদি শিক্ষা ধর্মপ্রাণ মানুষকে দিতেই হবে।
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...