হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

রাজধানীতে হিজবুত তাওহীদ আয়োজিত জনসভায় বক্তারা: সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সাধারণ জনতার নির্বিকার থাকার সুযোগ নেই

Untitled-2 Untitled-3
গত ৩০ জানুয়ারি রাজধানীতে হিজবুত তাওহীদ আয়োজিত এক জনসভায় বক্তারা বলেন, বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ পৃথিবীকে এক মহাযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করেছে। বাংলাদেশেও একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার হীন উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। এই পরিস্থিতিতে জাতি ও দেশকে নিরাপদ রাখতে ষোল কোটি মানুষ সকল প্রকার সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-ধর্মব্যবসা-অপরাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। এখন সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে কোনোভাবেই সাধারণ জনতার নির্বিকার থাকার সুযোগ নেই। জনসভায় উদ্বোধক ও মুখ্য আলোচক হিসাবে চলমান সঙ্কট থেকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য দিকনির্দেশনামূলক বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখেন হিজবুত তাওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতিসহ সকল অন্যায় দূর করার লক্ষ্যে বিগত বিশ বছর যাবৎ দেশের জনগণকে সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে ধর্মীয় কর্তব্যবোধ এবং দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত করে যাচ্ছে হিজবুত তাওহীদ। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাজধানীর ওয়ারীর মাদ্রাসা রোডে “বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সন্ত্রাস দমনে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই” শীর্ষক এ জনসভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করে ৩৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলো। মিডিয়া পার্টনার ছিল ‘দৈনিক বজ্রশক্তি’, ‘বাংলাদেশেরপত্র.কম’ ও ‘জেটিভি অনলাইন’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ময়নুল হক মনজু, অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হিজবুত তাওহীদের আমীর মসীহ উর রহমান। অনুষ্ঠানে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও এলাকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত বিশ্বের বহু দেশ। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি এই বাংলাদেশকে নিয়ে ভেতরে বাইরে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। যদি কোনোভাবে এই দেশকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেওয়া যায় তবে ষড়যন্ত্রকারী স্বার্থান্বেষীদের উদ্দেশ্য সফল হবে। তাই এই মুহূর্তে করণীয় হলো আগে এই সঙ্কট অনুধাবন করা এবং দেশের আপামর জনগণকে সঙ্কটের বিরুদ্ধে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ করা। এ জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক আদর্শের। আমাদের প্রিয় জন্মভূমির পবিত্র মাটিকে যাবতীয় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সামাজিক অপরাধ ও হানাহানির কবল থেকে রক্ষার জন্য দেশের জনগণকে সেই সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে ঈমানী চেতনা এবং দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত করতে হবে।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে হিজবুত তাওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে মানুষ, অন্যান্য সৃষ্টি থেকে তাই মানুষ আলাদা। মানুষকে অন্য পশুর মতো শুধু খাওয়া আর বংশবৃদ্ধির জন্য পৃথিবীতে পাঠানো হয়নি। আমাদেরকে যেমন নিজেকে নিয়ে ভাবতে হয়, নিজের পরিবারকে নিয়ে ভাবতে হয় তেমনি সমাজ, দেশ ও বিশ্বকে নিয়েও ভাবতে হবে। স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে আমরা বসে থাকতে পারি না। আজ সমগ্র পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসেছে, বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলো ১৬ হাজারের বেশি পারমাণবিক বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা মজুদ করেছে মানবজাতিকে ধ্বংস করার জন্য, পৃথিবীব্যাপী চলছে যুদ্ধের দামামা। এই মুহূর্তে পৃথিবীর প্রায় ছয় কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পশুর ন্যায় জীবনযাপন করছে। কিন্তু আমরা নির্বিকারভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। কোনো চিন্তাও করছি না। আমাদেরকে এখন ভাবতে হবে, বুঝতে হবে কেন এই মুসলিম জাতি আজ অন্য সকল জাতির লাথি খাচ্ছে, অন্য জাতির দ্বারা অপমানিত হচ্ছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীব্যাপী চলছে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ। এই জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়েছে ঐ পশ্চিমা পরাশক্তিধর দেশগুলো। অস্ত্রব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য একদিকে তারা জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে অন্যদিকে সন্ত্রাস দমনের নামে সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। এখন তারা পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। এখন যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় তবে সমগ্র মানবজাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। এদিকে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থাও ভয়ানক। একদিকে সামাজিক অন্যায়-অবিচার জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে, অপর দিকে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটানোর নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এই অবস্থায় শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এই জঙ্গিবাদ ও সামাজিক অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়, শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি প্রয়োজন একটি নির্ভুল আদর্শ। সেই আদর্শ মহান আল্লাহ দয়া করে হিজবুত তাওহীদকে দান করেছেন। এখন এই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সামাজিক অপরাধ দূরীকরণে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই। জনগণের কাছে এই সঠিক আদর্শটি তুলে ধরার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। সর্বোপরি জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে দেশরক্ষার এই মহতী কাজে।
তিনি আরও বলেন, একটা বিষয় আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, ধর্ম হলো ধারণ করা অর্থাৎ দয়া, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, মনুষ্যত্ব, অন্য মানুষের ব্যথায় ব্যথিত হওয়া, ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারা ইত্যাদি গুণ হৃদয়ে ধারণ করা। অন্যের দুঃখ, দুর্দশা দেখার পর হৃদয়ে অনুভব করা এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করা। স্বার্থপর মানুষ কখনোই ধার্মিক হতে পারে না। আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর ব্যক্তি কখনও মু’মিন-মুসলিম হতে পারে না। আল্লাহর হুকুমের পরিপন্থী অর্থাৎ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবন-সম্পদকে মানবতার কল্যাণে উৎসর্গকারী ব্যক্তিই হলো প্রকৃত মো’মেন। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আকিদা সহিহ না হলে ঈমানের কোনো মূল্য নেই আর ঈমান না থাকলে আমল অর্থহীন। সেই মহামূল্যবান আকিদা যদি জনগণকে শিক্ষা দেওয়া না হয় তবে ঈমান ভুল পথে প্রবাহিত হবেই। ঈমানের মূল বিষয় হলো কলেমা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম ছাড়া অন্য কিছু না মানা, এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা আর আকিদা হলো কোনো বিষয় সম্পর্কে সঠিক ও সম্যক ধারণা। আর আমল হলো সালাহ (নামাজ), যাকাত, হজ্ব, সওম (রোজা) ইত্যাদি এক কথায় সেই সমস্ত কাজ যা মানুষের কল্যাণ করে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে তা সবই আমল। কিন্তু নিজের জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না করলে কারও আমলই কবুল হবে না। আজ পৃথিবীজোড়া আমল হচ্ছে কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে সঠিক আকিদা না থাকার কারণে ইমান ও আমল সবই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব ময়নুল হক মনজু বলেন, হিজবুত তাওহীদের কার্যক্রম সম্পর্কে, তাদের বক্তব্যগুলো শুনে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি, আমি তাদের কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত। ইসলাম শন্তির ধর্ম, হিজবুত তাওহীদও শান্তির কথা বলে। রসুলাল্লাহ (সা.) কখনোই হানাহানির ইসলাম শিক্ষা দিয়ে যাননি। কিন্তু আমরা দেখি অনেকেই এখন ইসলামের নামে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার ঘটনার নিন্দা করে বলেন, কওমী মাদ্রাসার ছেলেরা যে দেশের প্রায় একশ’ কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করল তা কখনোই ইসলামের কাজ হতে পারে না। নানা অজুহাতে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণিটি দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে দেশের সম্পদ ধ্বংস করে। আবার হেফাজতে ইসলামের ঘটনা আপনারা সকলেই জানেন, তারা নারীদেরকে কর্ম করতে দিতে চায় না, তাহলে বাংলাদেশে যে প্রায় ৮০ লাখ নারী শ্রমিক আছে তাদেরকে খাওয়াবে কে? ইসলাম তো নারীদের কর্ম করতে নিষেধ করে না। তারা কথায় কথায় যাকে তাকে নাস্তিক বলে গালি দিতে থাকে। নাস্তিক কাকে বলে তারা তা জানেই না। যে ব্যক্তি আল্লাহকে স্বীকার করে, কলেমা পড়ে তাকে কীভাবে নাস্তিক বলা যায় তাদের কাছে আমার প্রশ্ন।
মহানগর আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা ও ঢাকা দক্ষিণ ৩৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মাইনুল ইসলাম ময়না বলেন, ইসলাম শন্তির ধর্ম। ইসলামসহ সকল ধর্মেই মানুষ হত্যা মহাপাপ। মানবসেবাই বড় ধর্ম। তালেবান, আইএসসহ সকল জঙ্গিদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে তিনি বলেন, ইসলাম তো মানুষ হত্যা করতে বলেনি। এলাকাবাসীকে তিনি এ ব্যাপারে সচেতন হতে আহ্বান করেন।
ঢাকা দক্ষিণের ৩৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ইয়াহিয়া মাহমুদ খোকন বলেন, আমরা একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক, আমরা আমাদের মৌলিক অধিকার চাই। স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও এটা নিশ্চিত করা যায়নি।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...