মাগুরায় হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা ও মব সৃষ্টির আশঙ্কা, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

মাগুরায় হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর উগ্র-সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ধারাবাহিক হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং নতুন করে মব সৃষ্টি করে হামলার পায়তারার প্রতিবাদে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটির জেলা শাখা। গতকাল শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এই সম্মেলনে বক্তারা মাগুড়ায় সংগঠিত দুটি ঘটনায় তাদের সদস্যদের উপর হওয়া নির্যাতন ও আসন্ন হুমকির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন এবং প্রশাসনের কাছে হেযবুত তওহীদ সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেন।

জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি মো. আলিম শেখের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি মো. লতিফুল ইসলাম মিলন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে উস্কে দিয়ে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মো. লতিফুল ইসলাম মিলন বলেন, সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে মাগুরার চাউলিয়া ইউনিয়নের ধলহারা গ্রামে। “শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জুম্মার খুতবায় সাহাজির কান্দি গ্রামের মো. আব্দুল রউফের ছেলে এবং ধলহারা পশ্চিমপাড়া ঈদগাহ জামে মসজিদের ইমাম মো. এনামুল হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে মুসল্লিদের উস্কে দেন। এরই জের ধরে শনিবার সকালে ইমাম এনামুলের নেতৃত্বে ধলহারা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদ আমিনের ছেলে মো. মঞ্জু, মৃত মহসিনের ছেলে মো. তাকওয়া, মৃত হাইয়েজ শেখের ছেলে মোঃ আবুল বাশারসহ একদল লোক আমাদের সদস্য মো. তোফাজ্জল হোসেন, মো. রাকিবুল ইসলাম, মো. মিজানুর রহমান ও মো. আব্দুল মতিনের বাড়িতে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা রবিবার (আজ) সন্ধ্যায় একটি ‘শালিশি বৈঠক’-এর নামে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের ডেকে পাঠিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এই শালিশের আড়ালে একটি মব তৈরি করে তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন, অপমান এবং এলাকাছাড়া করার নীলনকশা করা হচ্ছে। হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, যদি তারা হেযবুত তওহীদ না ছাড়ে এবং শালিশে উপস্থিত না হয় তবে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মাগুরা পৌরসভায় ঘটে যাওয়া এক নৃশংস হামলার কথাও তুলে ধরা হয়। ওই ঘটনায় মাগুরা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ইসলামবাগ পশ্চিমপাড়ায় হেযবুত তওহীদের সদস্য মো. মধু মিয়া (৫০) এবং তার পরিবারের উপর বর্বর হামলা চালানো হয়।

অভিযোগ অনুযায়ী, গত ১৯ সেপ্টেম্বর মাগরিবের নামাজের পর ২নং ওয়ার্ডের আসাদুজ্জামানের ছেলে এবং ইসলামবাগ পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আনিসুর রহমান (৪১) এর নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামলা চালায়। হামলাকারীদের মধ্যে ২নং ওয়ার্ডের মৃত রফিকের ছেলে আবু তাহের (৪০), মো. আলফাজ (৪২), কবির (৩৫) সহ অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জন ছিল। তারা বাঁশের লাঠি, লোহার রড, পাইপ ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ‘নারায়ে তাকবীর’, ‘খ্রিস্টান ধর, ইসলামের শত্রু নিধন কর’ ইত্যাদি উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে মো. মধু মিয়ার বাড়ি ঘেরাও করে। হামলাকারীরা বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে মধু মিয়াকে টেনেহিঁচড়ে বের করে এনে উঠানে ফেলে বেধড়ক মারধর করে। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়, লোহার পাইপ দিয়ে হাত-পায়ে পিটিয়ে পঙ্গু করার চেষ্টা করা হয় এবং চোখে আঙুল দিয়ে অন্ধ করে দেওয়ারও অপচেষ্টা চালানো হয়। মধু মিয়ার স্ত্রী তাকে বাঁচাতে গেলে তাকেও লাথি মেরে ফেলে দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।

শুধু তাই নয়, হামলাকারীরা বাড়িতে থাকা গরু কেনার নগদ ৮০,০০০ টাকা এবং স্বর্ণালঙ্কারসহ মোট প্রায় ১,৭০,০০০ টাকার মালামাল লুট করে নেয়। সবশেষে তারা মধু মিয়ার বসতঘরে আগুন লাগানোর চেষ্টা চালায়। পরে হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলামের ফোনে মাগুরা সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় মুমূর্ষু অবস্থায় মধু মিয়া ও তার স্ত্রীকে উদ্ধার করে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হয়। পরবর্তীতে মাগুরা সদর থানায় এজাহার দায়ের করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ভুক্তভোগী পরিবারটি বর্তমানে আদালতে মামলা দায়ের করেছে (মামলার ধারা: ৩২৩/৩০৭/৩৫৪/৩৭৯/৪২৭/৫০৬(২)/১১৯)।

সংবাদ সম্মেলন থেকে হেযবুত তওহীদের নেতারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, “সরকার পতনের পর থেকে এই উগ্রবাদী গোষ্ঠী আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা আইন-আদালতের কোনো তোয়াক্কা করছে না।”

সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে বলা হয়:

১. অবিলম্বে মাগুরা পৌরসভার ইসলামবাগ পশ্চিমপাড়ায় মো. মধু মিয়ার উপর হামলাকারী ইমাম মাওলানা আনিসুর রহমান, আবু তাহের, আলফাজ, কবিরসহ এজাহারভুক্ত সকল আসামীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. চাউলিয়া ইউনিয়নের ধলহারা গ্রামে যারা নতুন করে মব সৃষ্টির পায়তারা করছে, সেই ইমাম মো. এনামুল এবং তার সহযোগী মো. মঞ্জু, মোঃ তাকওয়া, মো. আবুল বাশার গংদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং আমাদের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. মাগুরা জেলাসহ সারাদেশে হেযবুত তওহীদের সকল সদস্য ও তাদের পরিবারের জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধানে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোঃ কামরুল ইসলাম, মাগুরা সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ওবায়দুর রহমান, মাগুরা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ফারুক আহমেদ, দৈনিক প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি মোঃ আশিকুর রহমান, দৈনিক দেশের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি খন্দকার মিলন আহমেদ, আনন্দ টিভির জেলা প্রতিনিধি মোঃ মিরাজ আহমেদ, মহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি মোঃ কামরুল ইসলাম, বিজয় টিভির জেলা প্রতিনিধি মোঃ ওবায়দুর রহমান, দৈনিক যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি আবু বাশার আকন্দ এবং দীপ্ত টিভির জেলা প্রতিনিধি কাসেমুর রহমান শ্রাবণ সহ স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের জেলা সভাপতি মোঃ আলী শেখ, জেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ লতিফুল ইসলাম মিলন, জেলা অর্থ সম্পাদক মোঃ ফুল মিয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন এবং সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মেঘদাদ বিন লতিফ, রাকিবুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও মধু মিয়া।