হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশেরপত্রের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্পাদক

বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশেরপত্রের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হলো বহুল প্রচারিত ‘দৈনিক দেশেরপত্র’র ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ‘মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশ’ এই স্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে দৈনিক দেশেরপত্র পত্রিকা ১৫ বছরে পদার্পণ করল।
এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে দেশেরপত্র পরিবার। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনের সূচনা হয়ে আলোচনা সভা ও শেষে কেক কাটার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনে ছিল আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সকাল ১০টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে ‘মানবতার কল্যাণে সাংবাদিকতা’ শৗর্ষক আলোচনা সভায় দৈনিক দেশেরপত্রের সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি প্যানেলে ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিএফইউজে এর সভাপতি ওমর ফারুক ও বাংলাদেশ কমিউনিকেশন্স স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) বোর্ড চেয়ারম্যান প্রযুক্তিবিদ ড. শাহজাহান মাহমুদ। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন এশিয়ান টিভির চেয়ারম্যান আলহাজ হারুন-উর-রশিদ সিআইপি। প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর আলোচনা রাখেন অতিথিবৃন্দ।
দৈনিক বজ্রশক্তি পত্রিকার সম্পাদক এসএম সামসুল হুদার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পিনাকল মিডিয়া লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ও হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশেরপত্রের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

প্রথম অধিবেশনে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ।প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘একটা সময় পত্রিকা ছিল সাহিত্যপত্র। বড় বড় সাহিত্যিকরা পত্রিকায় লিখতেন, সম্পাদনা করতেন। তারা পত্রিকার মধ্য দিয়ে আদর্শিক সাহিত্যের চর্চা করেছেন। কিন্তু বর্তমানে পত্রিকা হয়ে গেছে বিভিন্ন কর্পোরেট বাণিজ্যের বাহন। পত্রিকাগুলো বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। দেশেরপত্র পত্রিকাটি গতানুগতিক পত্রিকাগুলোর মতো বাণিজ্যিক পত্রিকা নয়। এটি একটি আদর্শিক পত্রিকা। ধর্মের নামে চলমান যাবতীয় অধর্মকে চিহ্নিত করে তার সঠিক রূপটা জনসম্মুখে তুলে ধরা হচ্ছে এই পত্রিকার মাধ্যমে। দেশেরপত্র এটা করছে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে, ধর্মে বাইরে থেকে নয়, বিরুদ্ধে গিয়েও নয়’ দাবি করেন তিনি।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন শাস্ত্রের রেফারেন্স দিয়েই। রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আইন পাশ করান, এজন্য তিনিও প্রমাণ করেছিলেন যে সনাতন ধর্মের মূল শিক্ষার মধ্যে সতীদাহ নেই। ঠিক সেভাবে ইসলামেও জঙ্গিবাদ নেই, সাম্প্রদায়িকতা নেই, অপরাজনীতি নেই, ধর্মব্যবসা নেই, ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে সংখ্যালঘুর পল্লীতে হামলা করার অনুমতি নেই। এটা কোরআন হাদিস থেকে প্রমাণ করে মানুষকে সচেতন করে তোলা এবং এইসব বিভ্রান্তি দূর করার কঠিন সাহসী কাজটিই করছে দেশেরপত্র  বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘ধর্মীয় উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ইসলামবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, ধর্মব্যবসা, গুজব, ধর্মীয় উন্মাদনা এ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের মশাল হচ্ছে দেশেরপত্র। সত্যের এই মশালকে নিভিয়ে দেয়ার জন্য অসংখ্য মামলা-হামলাসহ অনেক প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু কোনো প্রতিবন্ধকতাই দেশেরপত্রকে রুখতে পারেনি আর পারবেও না ইনশাল্লাহ’-বলেন হেযবুত তরহীদের এই নেতা।

সভাপতির বক্তব্যে দৈনিক দেশেরপত্রের সম্পাদক রূফায়দাহ পন্নী বলেন, ‘অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ ১৪টি বছর অতিক্রম করল দেশেরপত্র। এজন্য আমরা দেশেরপত্রের একটি সংখ্যাও যিনি হাতে নিয়েছেন তিনিও নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন যে, এই পত্রিকা বিজ্ঞাপন প্রধান নয়, কোনো কর্পোরেশনের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য এই পত্রিকার জন্ম হয়নি। এ পত্রিকা কেবল সংবাদ ও কিছু তথ্যের ধারক নয়, এটি একটি আদর্শিক পত্রিকা। ধর্মের নামে চলা যাবতীয় অধর্মের বিপরীতে ধর্মের প্রকৃত আদর্শ তুলে ধরছে দেশেরপত্র।’ দাবি করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার শিক্ষা আমি ইসলাম থেকে পেয়েছি, আল্লাহর রসুলের জীবনী থেকে পেয়েছি, আমার বাবার থেকে পেয়েছি। আল্লাহর রসুল মুসলিম নারীদের অবলা বানায়নি, অপরাজেয় যোদ্ধা বানিয়েছিল। তাছাড়া আমার পরিবারের ইতিহাস আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আমার পরিবারের সদস্যরা জেলে গিয়েছে তবুও নতি স্বীকার করেনি। আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য দাঁড়িয়েছি। অন্যায়ের সাথে কখনো আপোস করতে শিখিনি, আপোস করব না ইনশাল্লাহ’ বলেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, কিছুকিছু পত্রিকা আছে যারা উল্টো আমাদের পেছনে লেগেছে যা দুঃখজনক। আমার বিশ্বাস, তারা আমাদের বক্তব্য ভালো করে জানার বা বোঝার চেষ্টা করেন নি। তাদেরকে অনুরোধ করব, আমাদের সঙ্গে বসুন, আমাদের বিষয়ে জানুন, আমাদের অনুষ্ঠানে আসুন। আমরা ইসলামের কথা বলি মানেই আমরা গোড়াপন্থী, উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী এটা ধরে নেওয়া এক প্রকার যুক্তিহীন আচরণ। ইসলামের যে রূপ আমাদের সমাজে আমরা দেখতে পাই, সেটা ইসলামের আসল চেহারা নয়। আমাদের লেখাগুলো পড়লে, আমাদের কার্যক্রমকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করলে আমাদের সম্পর্কে ভ্রান্তি কেটে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মাটি সাংস্কৃতিকগোষ্ঠীর সভাপতি কিংবদন্তী গিটারিস্ট এনামুল কবীর, অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কালিম উল্লাহ, একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক মসিহ উদ্দিন শাকের, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সাবেক সভাপতি ও যুগবার্তার হেড অব নিউজ রফিকুল ইসলাম সুজন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটির সভাপতি গীতিকার আলী আশরাফ আখন্দ, বিশিষ্ট কবি, গল্পকার ও গীতিকার মাহমুদুল হাসান নিজামী, ঢাকা সাংবাদিক পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কোষাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, কালিয়াকৈর প্রোসক্লাবের সভাপতি আউয়ুব রানা প্রমুখ। এছাড়াও গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ্য কবি আশরাফুল ইসলাম।

দ্বিতীয় অধিবেশনে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দৈনিক দেশেরপত্রের সহকারী নির্বাহী সম্পাদক ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক কবি রিয়াদুল হাসান, সিনিয়র রিপোর্টার ফরিদ উদ্দিন রব্বানি, বিশেষ প্রতিনিধি আয়শা সিদ্দীকা, ইলা ইয়াসমিন, তাসলিমা ইসলাম প্রমুখ।

আলোচনা সভা শেষে দেশেরপত্রের স্টাফ রিপোর্টার এইচ এম রাকিবকে শ্রেষ্ঠ রিপোর্টারের কৃতিত্বস্বরূপ ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়াও দেশেরপত্র সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয় গাজীপুর ব্যুরো আশিকুর রহমানকে। একপর্যায়ে অতিথিদের সাথে দেশেরপত্র পরিবারের সদস্যদের ফটোসেশনের পর অতিথিরা আনন্দঘন পরিবেশে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন।

আবৃত্তিকার অনামিকা হকের সঞ্চালনায় মধ্যাহ্নভোজের পর শুরু হয় দ্বিতীয় অধিবেশন। এ পর্বে ‘মানবতার কল্যাণে সাংবাদিকতা’ প্রতিপাদ্যের উপর আলোচনা রাখেন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান স্যাটেলাইট বিজ্ঞানী ড. শাহজাহান মাহমুদ, প্রধান আলোচক পিনাকল মিডিয়া লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ও হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম, ইলদ্রিম মিডিয়ার চেয়ারম্যান খাদিজা খাতুন, বাংলাদেশ সাংবাদিক জোটের সভাপতি মশিউর রহমান, কবী জাকির আবু জাফর প্রমুখ।

এরপর আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। এছাড়াও বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মেহেরুন আশরাফসহ দেশের স্বনামধন্য শিল্পীবৃন্দ গান পরিবেশন করেন অনুষ্ঠানে। শীপ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালের বোর্ড ডিরেক্টর ফুটোসি কুনোর কণ্ঠে জাপানি গান আগত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানের শেষাংশে মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে শহীদুল ইসলামের রচনা ও নাট্য নির্দেশনায় পরিবেশিত হয় নাটিকা ‘কানের দুল’।

Previous slide
Next slide
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...