রাকীব আল হাসান: বর্তমানে কিছু পুথিগত বিদ্যাকেই জ্ঞান মনে করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কিছু পুস্তক মুখস্থ করে সার্টিফিকেট অর্জন করলেই আমরা তাকে শিক্ষিত বলি, জ্ঞানী বলি। অপরপক্ষে মাদ্রাসাকে মনে করা হয় ইসলামি শিক্ষার কেন্দ্র। কেউ যখন মাদ্রাসা থেকে কিছু পুস্তক মুখস্থ করে আলেম, ফাজেল, কামেল ইত্যাদি পাশের সার্টিফিকেট নিয়ে বের হয় তখন তাকে আমরা বলি আলেম। কিন্তু যুগে যুগে যে জ্ঞানী, মহাজ্ঞানী পৃথিবীতে এসেছেন তাদের অধিকাংশই প্রচলিত এই পুথিগত বিদ্যা মুখস্থ করে নিজেদেরকে জ্ঞানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেননি। তারা ছিলেন সৃষ্টিশীল, তাদের জ্ঞান দ্বারা জগৎ আলোকিত হয়েছিল।
তাহলে প্রকৃত পক্ষে জ্ঞান বা এলেম কী? জ্ঞান হলো এমন একটা শক্তি যা মানুষের জীবনকে আলোকিত করে, সমাজকে আলোকিত করে, আলোকময় সভ্যতা গড়ে তোলে। যে জাতির মধ্যে যত বেশি জ্ঞানী, আলেম থাকবেন সে যাতি তত বেশি আলোকিত হবে, উন্নত হবে আর তারাই পৃথিবীর কর্তৃত্ব করবে।
ন্যায়, সুবিচার, সমৃদ্ধি, উন্নতি, প্রগতি, ঐক্য, শৃঙ্খলা, আনুগত্য, শান্তি, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বিনয়, পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহযোগিতা, দয়া-মায়া-মমতা, ভ্রাতৃত্ব, ইত্যাদি হলো নূর বা আলো অর্থাৎ স্রষ্টার স্বীকৃতি। জ্ঞানী তথা আলেমদের জীবন এই আলো দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে, তাদের কাছ থেকে এই আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে সমাজ, দেশ তথা সমগ্র পৃথিবীতে। এভাবে পৃথিবী আলোকিত হয়ে যায়।
অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, যুদ্ধ, রক্তপাত, হানাহানি, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্গতি, অসহযোগিতা, অনৈক্য, বিশৃঙ্খলা, শত্রুতা, হিংসা, অশ্রদ্ধা, অহংকার, আত্মম্ভরিতা, ধর্মান্ধতা, ধর্মব্যবসা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ভারসাম্যহীনতা, ইত্যাদি এক কথায় ¯্রষ্টার নাফারমানী এ সবই হলো অন্ধকার বা জাহেলিয়াত। জাহেলদের (মূর্খ) জীবন এই অন্ধকার দ্বারা আচ্ছান্ন থাকে। তাদের আশেপাশের মানুষগুলো, তাদের সমাজ এই অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে। অর্থাৎ জাহেলদের (মূর্খ) সমাজ হয় অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, যুদ্ধ, রক্তপাত ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ।
রসুলাল্লাহর (সা.) আগমনের সময়কার যুগকে জাহেলিয়াতের যুগ, অন্ধকারের যুগ বলা হয় এই কারণেই। রসুলাল্লাহ (সা.) এসে সেই অন্ধকার দূর করে ন্যায়, সুবিচার, শান্তিপূর্ণ এক আলোকিত সমাজ, আলোকিত সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করলেন। এ জন্য রসুলাল্লাহ (সা.) হলেন জ্ঞানের শহর, সবচেয়ে বড় জ্ঞানী, বড় আলেম। আর এই আলো চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে যারা রসুলাল্লা (সা.) এর পাশাপাশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেন তারা অর্থাৎ রসুলাল্লাহ (সা.) এর সাহাবীগণ হলেন প্রকৃত আলেম।
বর্তমান পৃথিবীতে বহু আইনজ্ঞ, বিশেষজ্ঞ, আলেম, পুরোহিত, বিজ্ঞানী, রাজনীতি, কূটনীতিক ইত্যাদি বহু মানুষ রয়েছে যাদেরকে আমরা জ্ঞানী, আলেম, ধর্মজ্ঞানী ইত্যাদি বলে ডাকছি কিন্তু বর্তমান পৃথিবীর কী অবস্থা? একদিকে পৃথিবী এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে অপরদিকে সমগ্র পৃথিবীতে চলছে চূড়ান্ত অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, যুদ্ধ, বিগ্রহ, যুলুম, অর্থনীতিক অবিচার, শোষণ ইত্যাদি। আর যদি মুসলিমদের কথা বলি তাহলে বলতে হয়- বর্তমানে মুসলিমদের হাতে কর্তৃত্ব নেই, তারা উন্নত নয়, তাদের সমাজে ন্যায়, সুবিচার, শান্তি প্রতিষ্ঠিত নেই এক কথায় তাদের জীবনে আলো নেই। তারা অন্যকে কী আলোকিত করবে? সমগ্র পৃথিবী এখন জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত। তাহলে আলেম কোথায়? লেবাস আছে, ব্যক্তিগত আমল আছে, বহু পুস্তক মুখস্থকারী মানুষ আছে কিন্তু প্রকৃত আলেমের বড়ই অভাব। আজ এমন জ্ঞানী, এমন আলেম প্রয়োজন যারা মানবজাতিকে যাবতীয় অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, যুলুম, নির্যাতন, শোষণ ইত্যাদি থেকে রক্ষা করতে পারবে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে, পৃথিবীকে সত্যিকার অর্থে আলোকিত করতে পারবে। আমরা সেই আলেমদের প্রত্যাশায় আছি।