সুলতানা রাজিয়া
আমাদের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই নারী। পুরুষের তুলনায় নারীরা জাতীয়, সামাজিক, রাজনীতিক অর্থাৎ সকল অঙ্গনেই পিছিয়ে আছে। তাদের এই পিছিয়ে পড়া একদিনে হয় নি, শত শত বছর ধরে তাদের উপর ধর্মের নামে হাজারো বিধিনিষেধ আরোপ করে এভাবে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য করা হয়েছে। আজ নারীরা যখন সব বাধাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চাইছে, ধর্মব্যবসায়ীরা চেষ্টা করছে তাদের চারপাশে ফতোয়ার প্রাচীর তুলে তাদের গতিকে রুদ্ধ করতে। এর পরিণামে নারীরা ধীরে ধীরে ধর্মের প্রতি আকর্ষণ ও শ্রদ্ধা হারাচ্ছে। আল্লাহ-রসুল তথা ধর্মকেই নিজেদের প্রগতির শত্র“ মনে করছে এবং পশ্চিমা অপ-সংস্কৃতিকেই মুক্তি ও উদারতার পথ মনে করে অশ্লীলতা ও অসভ্যতার দিকে পা বাড়াচ্ছে। আমরা বলছি, যে ফতোয়াগুলো আরোপ করে নারীর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ইসলাম সমর্থন করে না, সেগুলো ধর্মব্যবসায়ীদের মনগড়া ও অজ্ঞানতাসুলভ ফতোয়ামাত্র। দ্বিতীয়ত, পাশ্চাত্য সভ্যতা নারীর সামনে যে মুক্তির পথ প্রদর্শন করছে সেটা আসলে তাকে আরো অন্ধকারে নিয়ে যাবে, তাকে ভোগ্যপণ্যে পরিণত করবে। সুতরাং এ দুটি পথই ভুল। আমরা ইতিহাস থেকে প্রমাণ দিয়েছি যে, আল্লাহর রসুলের সময় নারীরা সকল সামাজিক, রাজনীতিক ও জাতীয় কর্মকাণ্ডে অবাধে অংশগ্রহণ করতেন। তারা মসজিদে পুরুষদের সঙ্গেই সালাহ (নামাজ) করতেন, যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন- সেখানে রসদ সরবরাহ, আহতদের সেবামূলক কাজগুলো যেমন করেছেন তেমনি অস্ত্র হাতে সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন। মদীনার হাসপাতালের অধ্যক্ষ ছিলেন নারী, বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও ছিলেন একজন নারী। অথচ ধর্মব্যবসায়ীরা ফতোয়া দিয়ে রেখেছেন যে নারী নেতৃত্ব হারাম। আমরা আমাদের লেখায় ও নারীর মর্যাদা শীর্ষক তথ্যচিত্রে প্রমাণ দিয়েছি যে, তাদের এ ফতোয়া সত্য নয়। তাই বহিরাঙ্গনে নারীরা বিনা দ্বিধায় কাজ করতে পারে, এ বিষয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে তাদের পথ রুদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। কাজেই আমাদের প্রস্তাবনা হচ্ছে, যেহেতু ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তাই সেই ধর্ম দিয়েই অর্থাৎ কোর’আন হাদিস দিয়েই জনগণের সামনে নারীদের প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরতে পারলে সাধারণ মানুষ সচেতন হবে, তাদেরকে আর কেউ ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে প্রভাবিত করতে পারবে না।