তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থাই নারীর প্রকৃত অধিকার দিতে সক্ষম: ফেনীতে হেযবুত তওহীদের নারীরা

ফেনীতে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে ‘তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীদের অধিকার’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট ২০২৫) সকাল ১০ টায় ফেনী জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হেযবুত তওহীদের ফেনী জেলা নারী বিভাগ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নারী বিভাগের প্রধান রুফায়দাহ পন্নী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘পশ্চিমা পলিসি আমদানি করে বা কিছু কমিশন গঠন করে নারীর প্রকৃত মুক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বর্তমানে সমাজে নারীদেরকে যেভাবে ভোগ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। একমাত্র তাওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থাই নারীদের প্রকৃত সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম।’

ইতিহাস টেনে তিনি বলেন, আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে আরবের জাহেলি সমাজের নারীরাও নিপীড়িত হত, অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো। আল্লাহর দেওয়া দ্বীনুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে নবী করীম (সা.) নারীদের সেই মর্যাদা ফিরিয়ে দেন। ইসলাম আগমনের ফলে নারীরা সম্মানিত হলো। সেই প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথাই বলছে হেযবুত তওহীদ।’
তিনি আরও বলেন, রাসুলাল্লাহ (সা.)-এর যুগে নারীরা সামাজিক, ধর্মীয় ও প্রশাসনিক জীবনে সক্রিয় ছিলেন -মসজিদে যাওয়া, নামাজ পড়া, বাজার ও হাসপাতাল পরিচালনা করা, এমনকি যুদ্ধের ক্ষেত্রেও অংশগ্রহণ করতেন তারা। নারী হওয়ার কারণে কোনো দায়িত্ব থেকে তাদেরকে বাদ দেওয়া হতো না; তারা কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিলেন না।

অথচ আজকের অগ্রসর যুগেও নারীরা বঞ্চনার শিকার, তারা তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নারীদের হারানো মর্যাদা ও অধিকার ফিরিয়ে আনতে সংগ্রাম করছে হেযবুত তওহীদ। আজকের সময় এসেছে আমাদের নারীদেরকে জাগতে হবে, অন্য নারীদেরও জাগাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবিত তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীদের জন্য কোনো কোটার প্রয়োজন হবে না। নারীরা অবলা বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়; তারা তাদের যোগ্যতা, প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়েই রাষ্ট্রীয় সকল অঙ্গনে নিজেদের স্থান করে নেবে।’

হেযবুত তওহীদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুর আলম বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর নাজিলকৃত জীবনব্যবস্থা ইসলামে নারী ও পুরুষকে একে অপরের সহযোগী ও বন্ধুরূপে সৃষ্টি করেছেন। তাদের উভয়কেই তাঁর প্রতিনিধিত্ব তথা খেলাফতের কাজ দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। এর বাস্তবিক রূপ আমরা দেখতে পাই, রসুলাল্লাহ (সা.) এর সমগ্র জীবনীতে। প্রকৃত ইসলামের যুগে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সামাজিক, অর্থনৈতিক, সামষ্টিক, জাতীয় সকল কাজে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতেন। তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে নারীরা সেই অধিকার, মর্যাদা পাবে।’

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের কেন্দ্রীয় উপ-সম্পাদক রাকিব আল হাসান বলেন, ‘উম্মতে মোহাম্মদীর নারীরা যেমন পরিবারের সদস্যদের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন, সন্তানদের ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা প্রদান করেছেন, মেহমানদারি করেছেন তেমনি তারা প্রয়োজনে উপার্জন করেছেন, ইসলাম প্রচার করেছেন, যুদ্ধাহত সৈন্যদের সেবা করেছেন, জাতীয় অঙ্গনে বিভিন্ন গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন, এমনকি যুদ্ধের ময়দানে দুঃসাহসী ভূমিকাও রেখেছেন। রসুলাল্লাহর (সা.) যুগে মসজিদ ছিল সকল জাতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। মসজিদের দুয়ার ছিল নারী, পুরুষ সকলের জন্য অবারিত। রসুলাল্লাহর (সা.) সঙ্গে নারীরা একই জামাতে সালাত আদায় করতেন, তাঁর কাছ থেকে দীনের শিক্ষা লাভ করতেন। নারীদের জন্য পৃথক কক্ষ বা কোনো কালো পর্দার আড়াল তৈরি করা হতো না। অথচ বর্তমানে মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকারই নেই। তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে নারীরা সর্বোচ্চ মর্যাদা ও প্রকৃত অধিকার পাবে। এজন্য তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও অগ্রণী ভূমিকা পালনের তাগিদ দেন তিনি।’

হেযবুত তওহীদের ফেনী জেলা নারী সম্পাদক ছালেহা বেগম লাভলীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুর আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক জোবেদা আক্তার বেবী, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের কেন্দ্রীয় উপ-সম্পাদক রাকিব আল হাসান, ফেনী জেলা সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ মামুন, রাজনৈতিক যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক দিল আফরোজ, ফেনী জেলার সাবেক সভাপতি নুরুল আবছার সোহাগ, কুমিল্লা অঞ্চলের নারী বিষয়ক সম্পাদক আসমা আক্তার, ফেনী জেলা নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক রহিমা আক্তার সুমি।

বক্তারা বলেন, এখনো বাংলাদেশে নানান ভাবে নারীরা হেনস্থার শিকার হচ্ছে, নিপীড়িত হচ্ছে, তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং নারীদের প্রকৃত অধিকার ফিরিয়ে দিতে আল্লাহর প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই।

এর আগে হেযবুত তওহীদের নারী সদস্য আনিছা বিনতে আবছারের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা নারী সম্পাদক ছালেহা বেগম।

ফেনীর জেলার বিভিন্ন থানা থেকে শত শত নারী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসে উপস্থিত হলে হল রুম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মুহূর্মুহু স্লোগান এবং করতালির মধ্য দিয়ে তারা বক্তাদের বক্তব্যে সমর্থন জানান।