হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

চলমান সঙ্কট মোকাবেলায় হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবনা

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম:
বিশ্ব পরিস্থিতি বর্তমানে ভীষণ টালমাটাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সাম্রাজ্যবাদী অস্ত্রব্যবসায়ী পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো একের পর এক যুদ্ধ সংঘটিত করে বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। দেশে দেশে সংঘাত সংঘর্ষ নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশগুলিকে পদানত ও শোষণ করার জন্য নানা অসিলায় অন্যায়ভাবে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, ফিলিস্তিন, বসনিয়া, চেচনিয়া ইত্যাদি দেশগুলোকে একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। বর্তমানে রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেন আক্রমণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী এক যুদ্ধের সূচনা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ, ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেস সকলেই বলছেন যে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধই হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা।

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে অবধারিত বিষয় হচ্ছে এতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হবে যা ভয়াবহ অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োগ হলে মানবজাতিও বিনাশ হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন জরিপ মতে, বর্তমানে প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্র পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে রয়েছে। পৃথিবীর মোট ১৯৬টি দেশের মধ্যে মাত্র ৯টির এখতিয়ারে পারমাণবিক অস্ত্রসমূহ রয়েছে। পৃথিবীতে অবস্থিত এ সকল পারমাণবিক হাতিয়ারের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মালিকানাধীন। ‘আর্থস ফিউচার’ নামক বৈজ্ঞানিক গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশিত ২০১৪ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র ১০০টি পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণই পৃথিবীতে ২৫ বছরের জন্য সূর্যালোকের আগমন বন্ধ করে দেবে। যার ফলে পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্যতা হারাবে এবং পরিণামে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে মানবজাতি। যেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত পারমাণবিক বোমা লিটল বয় একটি শহর ধ্বংসের পাশাপাশি ৭০,০০০ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল, সেখানে রাশিয়ার হাতে থাকা ‘জার বম্বা’ যদি নিউইয়র্কে ফেলা হয়, তাহলে তা ৭৬ লক্ষ মানুষ নিধনের পাশাপাশি আরো ৪০ লক্ষ মানুষকে আহত করবে। এর থেকে সৃষ্ট পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয় ধূলিকণা ঘণ্টায় ১৫ মাইল বেগে বহমান বাতাসে প্রায় ৭,৮৮০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ হারাতে হবে।ইউক্রেনের এই যুদ্ধের ফলে সমগ্র পৃথিবীর অর্থনীতিতে ইতোমধ্যেই বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। হুহু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ। বৈদেশিক ঋণের বোঝা দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাঁধে বর্তায়। এই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে বৃদ্ধি করা হয় দ্রব্যমূল্য। এই ঋণের যাঁতাকলে পড়ে ইতোমধ্যেই শ্রীলঙ্কায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট। এক কাপ চায়ের মূল্য দাঁড়িয়েছে ১০০ টাকা, এক কেজি চালের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫০০ টাকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে জনগণের বিক্ষোভের মুখে সরকারের পতন ঘটেছে। প্রভাবশালী এমপি, মন্ত্রীদের গণপিটুনির শিকার হতে হয়েছে ন্যাক্করজনকভাবে।

১৯৭১ সনে লাখো দেশপ্রেমী জনতার জীবনের বিনিময়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। আমরা চেয়েছিলাম সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ একটি দেশ ও জাতি গড়ে তুলতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে পাশ্চাত্য সভ্যতার শেখানো রাজনৈতিক দলবাজি প্রবলভাবে বিস্তার লাভ করে। ছাত্রদেরকেও দলীয় সন্ত্রাসী ক্যাডারে পরিণত করা হয়। পাশাপাশি ধর্মের নামে অপরাজনীতি, সাম্প্রদায়িক ঘৃণাবিস্তার ও দাঙ্গা, অন্ধত্বের কুশিক্ষার প্রসার, ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র ইত্যাদি জাতিকে গ্রাস করে নেয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সামাজিক অঙ্গন হয়ে ওঠে দুর্যোগপূর্ণ, অস্থিতিশীল। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি প্রবেশ করে জাতির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে গুড়িয়ে দিয়েছে, দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসাবে পরিচিত করেছে। দেশের পরিশ্রমী তরুণ প্রজন্ম বিদেশে গিয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করছে, তাদের আরো বড় একটি অংশ পোশাক শিল্পে অমানবিক শ্রম দিচ্ছে। কিন্তু তাদের সেই অর্থ শোষণ করা হচ্ছে। তথাপি এই দুটো খাত বাদ দিলে আমাদের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে এমন বড় কোনো খাত আর নেই। এরই মধ্যে দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারির কারণে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা নেমে এসেছে। দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতি একেবারে পঙ্গু হয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ধস, করোনা মহামারির ফলে কর্মহীনতা, বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক অঙ্গন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি সব মিলিয়ে আমাদের এই দেশ এমন এক ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে যে পরিণতি চিন্তা করে সকল শ্রেণির মানুষের কপালেই ভাঁজ পড়েছে। সরকার যেমন উদ্বিগ্ন, প্রতিদিন প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনী দ্রব্য চাল, ডাল, আটা, তেল, মাছ, মাংস, শাক-সবজি সব কিছুর দাম সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। কীভাবে কাটবে জীবন, সন্তানদের মুখে দুটো ভাত তুলে দিতে পারব তো? সংকটকালে শিয়াল-কুকুর, সাপ বেজিও একসাথে বাস করে। আমরা কি পারব এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে এতদিনকার যাবতীয় দ্বন্দ্ব-বিরোধ আপাতত একপাশে সরিয়ে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে? নাকি সংকটকালে আমরা আরো স্বার্থপরতায় আক্রান্ত হয়ে পূর্ব থেকে চলে আসা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে মারামারি, খুনোখুনি, রক্তারক্তির দিকে হাঁটব?

আমরা মনে করি, কোনো সঙ্কট আসলে জাতিকে সম্মিলিতভাবে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। হেযবুত তওহীদ এ পর্যন্ত এ প্রস্তাবটিই দিয়ে আসছে। সমস্ত অশান্তির মূল হলো অনৈক্য। ঐক্যবদ্ধ হতে চাইলে এখনও হওয়া সম্ভব। বিশেষ করে এ দেশের ১৫ কোটি মানুষ মুসলমান। আমরা আল্লাহ, রসুল, কোর’আন বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি, ইসলাম এমন একটি উত্তম জীবনব্যবস্থা যার দ্বারা মানবজীবনের সকল সংকটের সমাধান করা সম্ভব। ইসলামপূর্ব জাহেলি সমাজেও এধরনের নানা সঙ্কট ও সংঘাত ছিল যেগুলো সমাধান রসুলাল্লাহ করেছিলেন ইসলাম দিয়েই। কিন্তু বিগত ১৪০০ বছরে সেই ইসলাম বিকৃত ও বিপরীতমুখী হয়ে যাওয়ার দরুন শান্তি আসছে না। আমরা হেযবুত তওহীদ আবারও সেই হারিয়ে যাওয়া অবিকৃত ইসলামকে তার অনাবিলরূপে উদ্ধার করে মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করছি। এ চলমান বৈশ্বিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সঙ্কট, ধর্মীয় উগ্রপন্থা, গুজব-সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের মোকাবেলায় হেযবুত তওহীদের স্পষ্ট প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:

প্রথম প্রস্তাব:
পুরো জাতিকে এখন ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। বর্তমান এই সঙ্কট মোকাবেলা করতে হলে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। আমরা ভুল রাজনীতির চর্চা করি, যাতে জাতির ঐক্য ধ্বংস করার সকল আয়োজন সুসম্পন্ন করা হয়েছে। সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী বহু নীতির দল রয়েছে। আবার ইসলামপন্থী দলও রয়েছে শত শত। দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে হাজার হাজার পীর। তাদের সবার আছে ভিন্ন ভিন্ন তরিকা। তাদের অনুসারী বেড়ে গেলে অনেকেই রাজনীতির মাঠে চলে আসেন। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, এত ধরনের এত পুরোনো সব অনৈক্যের দেওয়াল কীভাবে চুরমার করা যাবে? আদৌ কি এটা সম্ভব? কে করবে এই কাজ? কোন সূত্র দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবে?

ঠিক এই সমস্যাটাই ১৪০০ বছর আগের আরবীয় জাহেলি সমাজে ছিল। আরব উপদ্বীপে বসবাসকারী গোত্রগুলোর মধ্যে এমন অনৈক্য ও বিবাদ ছিল যে কেউ বিশ্বাস করত না যে এরকম সংঘর্ষ, দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত গোত্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা যাবে। কিন্তু সেই অবিশ্বাস্য ঘটনাটাই ঘটল। ইতিহাসের এক বিস্ময়কর ঘটনা ছিল আরবদের সেই পরিবর্তন যা ঘটিয়েছিলেন নবী করিম (দ.)। তিনি ঠিকই শতধাবিচ্ছিন্ন আরব গোত্রগুলোকে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণাকেই ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় তওহীদ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নেই। কোনটা ন্যায়, কোনটা অন্যায় তার চূড়ান্ত মানদণ্ড হিসাবে আল্লাহর বিধানকে মেনে নেওয়াই হচ্ছে ঐক্যের একমাত্র সূত্র। আমাদের দেশের সকল হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খ্রিষ্টান, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি সকলকে যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বার্থচিন্তার কারণে দেশকে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। দেশ ধ্বংস হলে কেউই রক্ষা পাবে না।

পরবর্তী প্রশ্ন হবে – ঐক্যবদ্ধ করবেন কে, কার কথায় মানুষ বিশ্বাস স্থাপন করবে?
বিশ্বাস স্থাপন করার মত অবস্থা নাই। প্রত্যেকের দোষ খুঁজে খুঁজে বের করা হচ্ছে। এভাবে দোষ বিচার করতে বসলে কাউকেই নির্দোষ পাওয়া যাবে না। তাই কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করতে হবে কেবল জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে। তবে হেযবুত তওহীদ এই ঐক্য গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে উদ্যোগ নিচ্ছে। হেযবুত তওহীদ গত ২৭ বছর ধরে এই ঐক্যের ডাক দিয়ে যাচ্ছে এবং ঐক্য ভঙ্গের কোনো কাজ হেযবুত তওহীদ করে না। এই দীর্ঘ সময়ে হেযবুত তওহীদ দেশের কোনো আইন ভঙ্গ করে নি। হেযবুত তওহীদের কোনো কর্মী বিদেশে টাকা পাচার করেছে এমন প্রমাণও কেউ দেখাতে পারবে না। আমাদের যে সমস্ত সদস্যরা প্রবাসে কাজ করেন তারা বরং বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়েছেন। আমরা সকল সদস্যের প্রদত্ত অর্থে বহু ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছি এবং জাতির কল্যাণে সামান্য হলেও ভূমিকা রাখছি। কাজেই হেযবুত তওহীদ ঐক্য নষ্টকারী কোনো কাজ করবে না, ছোটখাট বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না, সঙ্কীর্ণতার মধ্যে যাবে না – এটা অতীতেও প্রমাণিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে ইনশাল্লাহ।

দ্বিতীয় প্রস্তাব:
দেশের একটা টাকাও বিদেশে পাচার করতে দেয়া যাবে না। শুধু বিদেশ থেকে কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করা যাবে। কোনো একটি বিলাসদ্রব্যও আমদানি করা যাবে না।

তৃতীয় প্রস্তাব:
ভোগবাদি জীবনযাবন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন খরচ কমানোর জন্য। আসলে বিষয়টা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মানুষ এমনভাবে ভোগবাদী ও বস্তুবাদী হয়েছে, যে মানুষ আগে দশ হাজার টাকা দিয়ে চলতে পারত, তার আজকে বিশ হাজার টাকা লাগে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সত্য, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতায়, যুগের হাওয়ায় গা ভাসিয়ে মানুষ অনেক বেশি অপচয় করছে এটা তার চেয়ে বড় সত্য। একেকটা সামাজিক অনুষ্ঠানে মানুষ ব্যাপক খরচ করে। কেবল লোক দেখানোর জন্য ব্যয়বহুল রেস্টুরেন্টে খেয়ে মধ্যবিত্ত মানুষ এখন হাজার হাজার টাকা নষ্ট করে। মোহনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে নতুন নতুন মডেলের ফোন ব্যবহার করার নেশা তাদেরকে পেয়ে বসেছে। গরীবের সংসারে বড়লোকি চলে না। বাংলাদেশে কিছু উঠতি উচ্চবিত্ত থাকলেও অধিকাংশ মানুষ এখনও দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে, এ বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এ জাতীয় অহেতুক ব্যয়গুলো কমাতে হবে।

আমাদের দেশে পাশ্চাত্য জীবনব্যবস্থার উপজাত হিসাবে একটি অভিজাত, ধনপতি আমলা, উচ্চবিত্ত রাজনৈতিক নেতা শ্রেণি সৃষ্টি হয়ে গেছে, যারা তাদের হাজার হাজার কোটি টাকা তারা বিদেশের ব্যাংকে জমা করেছে, কানাডা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছে, বিয়ে শাদির বাজার করতে তাদের ব্যাংকক দুবাই না গেলে চলছে না, সর্দিকাশি হলেও তারা চলে যাচ্ছে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথে কিংবা পুনেতে। এইভাবে টাকা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে, তা দিয়ে লাভবান হচ্ছে অন্যরা। দেশকে রক্ষা করতে হলে আমাদেরকে চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন, কেনাকাটা ইত্যাদি খাতে বিদেশে খরচ করার প্রবণতা একদম বন্ধ করতে হবে।

চতুর্থ প্রস্তাব:
এলিট (অভিজাত) শ্রেণিকে সাধারণ মানের জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। ব্রিটিশদের অনুকরণে ব্রিটিশ লর্ডরা যে মানের জীবনযাপন করতেন আমাদের অনেক আমলা, আইনপ্রণেতাও (এমপি) সেই মানের জীবনযাপন করেন। কিন্তু আমাদের মত দরিদ্র দেশের এলিট শ্রেণিকে এটা করা সাজে না। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্রিটিশ তথা পশ্চিমা সভ্যতা আর আমাদের ইতিহাস ভিন্ন। এক সময় আমরা ধনেজনে সমৃদ্ধ ছিলাম। সেই ধনরাশি দেখে লোভাতুর ইউরোপীয় জাতিগুলো আমাদেরকে ছলে বলে কৌশলে পদানত করেছে। তারপর দীর্ঘ দুইশ বছর শোষণ করে সম্পদশালী একটা উপমহাদেশকে প্রায় ফকির বানিয়ে, ৪/৫ টা মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ দেখিয়ে, কোটি কোটি মানুষের প্রাণহানী করে, মগজে সাদারাই সেরা (ডযরঃব ঝঁঢ়ৎবসধপু) এই বিশ্বাস এবং আত্মদৈন্যের গ্লানি ও হীনম্মন্যতা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। এই উপমহাদেশ থেকে চুরি করা সম্পদের পাহাড়ে বসে তাদের রাজারানী, মন্ত্রী, লর্ড, সিনেটরদের যে বিলাসিতা সাজে, আমাদের তা সাজে না। আমাদের অত টাকা নেই যা দিয়ে আমাদের নেতাদেরকে আমরা সেইভাবে রাখতে পারি। আমাদের নেতারা সেটা না বুঝে দরিদ্র প্রজাদের উপর দিন দিন আরো ঋণের বোঝা করের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। উপনিবেশযুগের মতই শোষণ করছে নিজ স্বাধীন দেশের মানুষকে।

কৃষক শ্রমিক জনতার কষ্টের টাকায় এ দেশ চলে। এদেশের কোটি কোটি তরুণ তরুণী জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে বছরের পর বছর বিদেশে পড়ে আছে। ওদের টাকায় এ দেশ চলে। পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করে লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ তিলে তিলে তাদের জীবন শেষ করে দিচ্ছে। সেই গার্মেন্টেস শ্রমিকদের আয় দিয়েই এ দেশ চলে। তাই আমাদের এলিট শ্রেণির এই জঘন্য বিলাসিতা মানায় না। দেশকে রক্ষা করতে হলে অতি সত্বর এই আত্মপ্রচঞ্চনা থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ন্যূনতম সাধারণ মানের জীবনযাপনে তাদেরকে অভ্যস্ত হতে হবে।

পঞ্চম প্রস্তাব:
দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

ষষ্ঠ প্রস্তাব:
ধর্মকে ব্যবহার করে ব্যবসা, অপরাজনীতি, কায়েমি স্বার্থ উদ্ধার করা, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়া, গুজব-হুজুগ সৃষ্টি করা বন্ধ করতে হবে। যেহেতু এই দেশের প্রায় ৯০% জনসংখ্যা মুসলমান, তাদের ধর্মানুভূতিকে ব্যবহার করে, ঈমানকে হাইজ্যাক করে বারবার এদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। কেউ তাদের ঈমানকে ব্যবহার করে রাজনীতি করেছে, কেউ জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়েছে, কেউ কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়েছে। ধর্মকে আশ্রয় করে তাদের এই রোজগারের পরিমাণ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে সরকার একে আয়করের আওতায় আনারও পরিকল্পনা নিয়েছে। তারা ওয়াজের মঞ্চে বসে তাদের প্রতিপক্ষকে বেআইনী হুমকি দিচ্ছে, প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, হুজুগ গুজব ছড়িয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করছে। এগুলো বন্ধ করার উপায় একটাই, ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা আল্লাহ রসুলের ইসলামের প্রকৃত রূপ জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে। তাহলেই মানুষ পরিষ্কার বুঝতে পারবে ইসলামের উদ্দেশ্য কী, রসুল কেন এসেছেন, কোনটা হক কোনটা বাতিল, কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা, কোনটা আল্লাহর হুকুম আর কোনটা ধর্মব্যবাসয়ীদের বানানো শরিয়াহ, কোনটা রাসুলুল্লাহর নির্দেশ আর কোনটা মিথ্যা ফতোয়া। এটা যখন জনগণের সামনে পরিষ্কার হবে তখন আর কেউ তাদের ঈমানকে হাইজ্যাক করতে পারবে না। ইসলামের প্রকৃত রূপ, প্রকৃত ইতিহাস ও আদর্শ জাতির সামনে তুলে ধরে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজটি আমরা করছি। এ লক্ষ্যে আমরা দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ পথসভা, জনসভা, সেমিনার, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠান করেছি, পত্রিকা প্রকাশ, বই-হ্যান্ডবিল প্রচার, অনলাইন মাধ্যমসহ যতভাবে সম্ভব প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।

এই সংকটের সুযোগ নিয়ে অনেকে চেষ্টা করবে লুটতরাজ করতে, পণ্য মজুদ করে, নানা উপায়ে স্বার্থ হাসিল করতে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীরা হয়ত চেষ্টা করবে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের দায়িত্ব আছে দেশটাকে রক্ষা করার জন্য। এ জাতীয় জাতিবিনাশী কর্মকাণ্ড ঘটার আগেই এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

পরিশেষ বলতে চাই, এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় উগ্রবাদের সঙ্কটগুলি দূর করানোর জন্য আর পারস্পরিক দোষাদোষি নয়, হানাহানি নয়, দাঙ্গা নয়, বিক্ষোভের নামে জ্বালাও পোড়াও নয়, এগুলো করলে আমাদেরই ক্ষতি হবে। আমরা আবারও পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে যাব। এই সংকটকালে ভয় পেয়ে কেউ কেউ হয়ত দেশ ছেড়ে পালাবে, কেউ আবার সুযোগ বুঝে দেশে ঢুকবে। কিন্তু আমাদের দেশের জনগনের মুক্তি হবে না। সেই মুক্তির জন্য আসলে কী করণীয় সেই রূপরেখা হেযবুত তওহীদ তুলে ধরছে। আমরা দেশকে রক্ষার প্রস্তাব নিয়ে ময়দানে আছি। আমরা সবসময় জাতির কল্যাণে কথা বলেছি। আমরা বলেছি প্রয়োজনে বাংলাদেশের মাটিতে জীবন দেব, তবু দেশ ছেড়ে পালাব না, বাংলাদেশকে ইরাক সিরিয়া আফগানিস্তান হতে দেব না ইনশাল্লাহ। এই ভূমি সত্যের ভূমি। রসুলাল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা রক্ত দিয়ে, খেয়ে না খেয়ে, পেটে পাথর বেঁধে, গাছের লতাপাতা খেয়ে মদিনাকে রক্ষা করেছেন, কারণ মদিনা ছিল সত্যের ভূমি। ঠিক তেমনি বাংলার মাটিতে আমরা সেজদা করি, এই মাটিতে আমাদের পূর্বপুরুষের অস্থি মজ্জা মিশে আছে, এ দেশের আলো বাতাসে আমরা বেড়ে উঠেছি। এই মাটিতে আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই এ দেশকে আমরা ধ্বংস হতে দিতে পারি না। এখান থেকে আমরা যদি উদ্বাস্তু হই, তাহলে আমাদের কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না। তাই আমরা বাংলাদেশকে ধ্বংস হতে দেব না। এই অঙ্গীকার আমরা হেযবুত তওহীদ করেছি। আমরা আপনাদেরকেও আহ্বান করছি, আসুন একটা কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হই, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে পুরো জাতি ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলি।

যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, ইনশা’আল্লাহ হলফ করে বলতে পারি, এই সংকট আমরা মোকাবেলা করতে পারব। আমাদের কাউকে না খেয়ে মরতে হবে না, বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে না, কেউ বস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাবে না, শিক্ষা থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না। এতটুকু নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি। ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্ত্বা গড়ে তুলতে পারলে সাম্রাজ্যবাদী অস্ত্রব্যবসায়ী পরাশক্তিধর সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্রগুলোর লোলুপদৃষ্টি থেকে আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি নিরাপদ থাকবে। আল্লাহও তখন আমাদেরকে সাহায্য করবেন। সময় বেশি বাকি নেই, তাড়াতাড়ি হেযবুত তওহীদের আহ্বানে সাড়া দিন। আল্লাহ আমাদেরকে সামগ্রিক পরিস্থিতি উপলব্ধি করার এবং সত্যের পথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তওফিক দান করুন।

প্রস্তাবক: এমাম, হেযবুত তওহীদ
ফোন: ০১৭১১০০৫০২৫, ০১৭১১৫৭১৫৮১, ০১৬৭০১৭৪৬৪৩
ইমেইল: hezbuttawheed1995@gmail.com

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...