হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত হেযবুত তওহীদ আন্দোলনটির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি এমন এক ঐতিহ্যমণ্ডিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান যাদের এ উপমহাদেশে শিক্ষা, ধর্মবিস্তার, সংস্কৃতি, শাসন, সমাজসেবায় বিপুল অবদান রয়েছে, যাদের দ্বারা উপকৃত হয়েছে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ। তাঁর ঘটনাবহুল ৮৬ বছরের জীবনে একবারের জন্যও আইনভঙ্গের কোন রেকর্ড নেই, নৈতিক স্খলনের কোন নজির নেই।

তাঁর পিতৃনিবাস টাঙ্গাইলের করটিয়া জমিদারবাড়ি। জন্ম ১৫ শাবান ১৩৪৩ হিজরী মোতাবেক ১৯২৫ সনের ১১ মার্চ। শৈশব কাটে নিজ গ্রামে। এইচ. এম. ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৪২ সনে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর সা’দাত কলেজে এবং বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষ শেষ করে দ্বিতীয় বর্ষে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন।

এখানে শিক্ষালাভের সময় তিনি ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে সম্পৃক্ত হন। সেই সুবাদে তিনি এই সংগ্রামের কিংবদন্তিতুল্য নেতৃবৃন্দের সাহচর্য লাভ করেন যাঁদের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী, কায়েদে আযম মোহম্মদ আলী জিন্নাহ্, অরবিন্দু ঘোস, শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দি, মওলানা আবুল আলা মওদুদী অন্যতম। শিকারের নেশা তাঁর রক্তে মিশে ছিল। দেশের বিভিন্ন এলাকার বনে-জঙ্গলে হিংস্র পশু শিকারের লোমহর্ষক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

১৯৬৩ সনে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, মুসলিম লীগের প্রার্থীগণসহ বিপক্ষীয় মোট ছয়জন প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করে এম.পি. নির্বাচিত হন। প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য থাকা অবস্থায় তিনি ‘কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশন’ এর সদস্যপদ লাভ করেন।

ছোটবেলায় মুসলিম জাতির ইতিহাস আর বর্তমানের মধ্যে তিনি বিরাট পার্থক্য লক্ষ করে রীতিমত সংশয়ে পড়ে যান যে এরাই কি সেই জাতি যারা শিক্ষায়, জ্ঞানে বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে, ধনবলে ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিমান, জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি অঙ্গনে যারা ছিল সকলের অগ্রণী? কীসের পরশে এই জাতি ১৪০০ বছর পূর্বে একটি মহান উম্মাহয় পরিণত হয়েছিল, আর কীসের অভাবে আজকে তাদের এই চরম দুর্দশা?

মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি ধীরে ধীরে এ সকল প্রশ্নের উত্তর লাভ করলেন। ১৯৯৫ সনে তিনি হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের সূচনা করেন। সত্য প্রচার করতে গিয়ে তিনি নিজের সকল সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেন। ১৬ জানুয়ারী ২০১২ তারিখে এ মহান ব্যক্তিত্ব পরলোকগমন করেন।

বিশেষ অর্জন (Achievements)

১. চিকিৎসা: বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান, তৎকালীন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি তাঁর রোগীদের অন্তর্ভুক্ত।

২. সাহিত্যকর্ম: বেশ কিছু আলোড়ন সৃষ্টিকারী বইয়ের রচয়িতা যার দাজ্জাল? ইহুদী-খ্রীস্টান ‘সভ্যতা’! বইটি ২০০৮ এর সর্বাধিক বিক্রয়কৃত বই। তাঁর শিকারী জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা “বাঘ-বন-বন্দুক” বইটি পাকিস্তান লেখক সংঘের (পূর্বাঞ্চল শাখা) সম্পাদক শহীদ মুনির চৌধুরীর সুপারিশে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যসূচিতে দ্রুতপাঠ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এছাড়াও তিনি পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা, ধর্ম ও রাজনৈতিক প্রসঙ্গে প্রবন্ধ লিখেছেন।

৩. শিকার: বহু হিংস্র প্রাণী শিকার করেছেন যার মধ্যে চিতাবাঘ, বন্য শুকর, অজগর সাপ, কুমির প্রভৃতি রোয়েছে।

৪. ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম: তিনি ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের তরুণ বিপ্লবী নেতা ছিলেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি আল্লামা এনায়েত উল্লাহ খান আল মাশরেকীর ‘তেহরীক এ খাকসার’ আন্দোলনের পূর্ব বাংলা কমান্ডার এবং ‘সালার এ খাস হিন্দ’ পদের অধিকারী হয়েছিলেন।

৫. রায়ফেল শুটিং: ১৯৫৪ সনে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তান দলের অন্যতম রায়ফেল শুটার হিসাবে নির্বাচিত হন।

৬. রাজনীতি: পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য (এম.পি.) নির্বাচিত হন (১৯৬৩-৬৫)।

৭. সমাজসেবা: হায়দার আলী রেডক্রস ম্যাটার্নিটি এ্যান্ড চাইল্ড ওয়েলফেয়ার হসপিটাল ও সা’দাত ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা।

৮. শিল্প সংস্কৃতি: নজরুল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...