ইসলামবিদ্বেষীদের জবাব: আম্মা আয়েশার (রা.) বিয়ের বয়স কত ছিল?

রিয়াদুল হাসান:
আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে আরবে নারীকে পণ্য বা উপকারী প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হত। ইসলামের নবী (সা.) সেই অবহেলিত নারীকে কন্যা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, বোন ও মা হিসেবে নয় কেবল, মানুষ হিসাবে যাবতীয় অধিকার দিয়ে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। অথচ আজ নারী অধিকারের এই প্রবক্তাকে “কন্যা শিশু নির্যাতনকারী” হিসেবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। এ ধরনের অপপ্রচারের জবাব দেওয়া প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে। যে কোনো ব্যক্তির সকল মহৎ কর্ম ও অর্জন ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে নারীঘটিত অপবাদ উত্থাপন করাই যথেষ্ট। পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ইসলাম তথা মুসলিমরা যেন সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য তাদের মন থেকে মহানবীর বিষয়ে শ্রদ্ধা দূরীভূত করার জন্য শত শত বছর ধরে প্রোপাগান্ডা চলছে। রসুলাল্লাহর স্ত্রী উম্মুল মোমিনীন আয়েশা (রা.) এর উপর তাঁর জীবদ্দশাতেই অপবাদ আরোপ করেছিল মদিনার মুনাফেকরা। আজ ১৪শ’ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও তাঁকে নিয়ে নানারকম বিতর্কের জাল বিস্তার করেই যাচ্ছে ইসলামের শত্রুরা।

আল্লাহ কোর’আন নাজিল করেছেন এবং তিনি কেয়ামত পর্যন্ত কোর’আনকে অবিকৃতরূপে সংরক্ষণ করবেন (সুরা হিজর ৯)। কিন্তু ইসলামের পণ্ডিতরা তাদের ফেরকা বা মাজহাবের হাদিসের কেতাবগুলোকেও আসমানী কেতাবের কাতারে দাঁড় করিয়ে দিতে চান যদিও হাদিসগ্রন্থে বহু অসঙ্গতি আছে বলে বিশেষজ্ঞরা একমত। বিশেষ করে যেসব হাদিসের ভাষ্য কোর’আনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সেগুলো পরিত্যাজ্য বলে মত দিয়েছেন সকল হাদিস সংগ্রাহক ইমামগণ। তথাপি ইসলাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠী কোনো উক্তির নিচে আল কোর’আন বা আল হাদিস লেখা থাকলেই সেটা বিশ্বাস করে ফেলে, আরবি ভাষায় কিছু লেখা থাকলেই সেটাকে ধর্মীয় লেখা মনে করে। যাচাই করে দেখার প্রয়োজনীয়তা তারা বোধ করে না। এই অন্ধবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে থাকে ইসলামবিদ্বেষীরা। একটা অযৌক্তিক ও অবান্তর জাল হাদিসকেও তারা সূত্র হিসাবে নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে থাকে আর মুসলিমরা হাদিস না মেনে কোথায় যাবে। তারা উভয়সংকটে পড়ে যায়। আম্মা আয়েশা (রা.) ও রসুলাল্লাহর বিবাহ নিয়েও এক শতাব্দির অধিক সময় থেকে এ কৌশলটি অবলম্বন করে আসছে ইসলামবিদ্বেষীরা। একটি হাদিসের ভিত্তিতেই তারা নবীকে (সা.) শিশু নির্যাতনকারী হিসাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে (নাউযুবিল্লাহ)। তাদের ভাষ্য হচ্ছে, যেহেতু এই বর্ণনা হাদিসেই আছে তাই এ বিষয়ে ইসলামবিদ্বেষীদেরকে দায়ী করা মুসলমানদের উচিত নয়।

নবীর অবমাননায় উম্মত ক্ষুব্ধ হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ যদি হিংসাত্মক ও সন্ত্রাসী কায়দায় করা হয় তাহলে তা ইসলামের ভাবমূর্তিই বিনষ্ট করবে। এ কারণে নবীর অবমাননার বিপরীতে সঠিক বস্তুনিষ্ঠ জবাব দেওয়া উম্মতে মোহাম্মদী দাবিদারদের দায়িত্ব। যে হাদিসটিতে বর্ণিত তথ্যের ভিত্তিতে ইসলামবিদ্বেষীরা রসুলকে অবমাননা করার সুযোগ পাচ্ছে সেই হাদিসটি নিয়ে পর্যালোচনা করা যায়। মানবজাতিকে মা আয়েশার (রা.) বিবাহকালীন বয়সের সঠিক তথ্য না দিয়ে শুধু সংকীর্ণ হিংসাত্মক পথ অবলম্বন করলে ভবিষ্যতেও এ প্রসঙ্গটি ঘুরে ফিরে আসতেই থাকবে।

২০২২ সালে যারা রসুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তাদের মধ্যে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সাবেক মুখপাত্র নূপুর শর্মাসহ একাধিক ব্যক্তি আছেন। এ ঘটনায় সমগ্র মুসলিম বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এবং বেশকিছু প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনার ঠিক একশত বছর আগে ১৯২৩ সালে কৃষ্ণ প্রসাদ নামে এক ব্যক্তি নূপুর শর্মার মতো একই বিষয়ে রসুল (সা.) চরিত্র হনন করে ‘রংগীলা রসুল’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন। ১৯০৫ সালের আগ পর্যন্ত মোহাম্মদ (সা.) এর সাথে আয়েশা (রা.) এর বিয়ের বয়স কোন ইস্যুই ছিল না। ১৯০৫ সালে জোনাথন ব্রাউন সর্বপ্রথম এটা নিয়ে জল ঘোলা করেন। তাদের অভিযোগটির ভিত্তি হলো বোখারী শরীফের নীচের ৩৮৯৬ নং হাদিস-

হিশাম ইবনে উরউয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.)-এর মদিনায় হিজরতের তিন বছর আগে খাদিজা (রা.)-এর ইন্তেকাল হয়। তারপর দুই বছর বা এর কাছাকাছি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি আয়েশা (রা.)-কে বিয়ে করেন। তখন তিনি ছিলেন ছয় বছরের বালিকা। তারপর ৯ বছর বয়সে বাসর যাপন করেন।’

নূপুর শর্মার মতে ৬ বছরের শিশুকে বিয়ে করে ৯ বছরের সময় তার সাথে নির্জনবাস কোনো মহামানবের কাজ হতে পারে না।

নবীর (সা.) পুতপবিত্র চরিত্রের প্রতি অংগুলিনির্দেশের প্রতিবাদ হিসেবে দুটি যুক্তি দাঁড় করানো হচ্ছে। প্রথম যুক্তি হলো- অন্যান্য ধর্ম ও সমাজে শিশু বিবাহের রীতি প্রচলিত ছিল বিধায় রসুলও কম বয়সী মা আয়েশাকে বিয়ে করায় শিশু নির্যাতনকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন না। দ্বিতীয় যুক্তি হলো- যেহেতু হাদিসে মা আয়েশার সাথে নবী করিম (সা.) এর বিয়ের বয়স ৬ বছর উল্লেখ করা হয়েছে, তাই বয়সের বিষয়টি বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। তারা আরো বলতে চান মা আয়েশাসহ আরবের নারীগণ ৯ বছর বয়সে নির্জনবাসের জন্য শারীরিকভাবে উপযুক্ত হন।

প্রথম যুক্তিটি খুবই দুর্বল। রসুল অন্যান্য ধর্মের বিয়ের বয়স বা রীতিনীতি নয়- তিনি তার উপর নাজিলকৃত আল্লাহর ওহী কোর’আনের বিধান অনুসরণ করতেন। কোর’আনে সুরা নিসার ২১ নং আয়াতে বিবাহকে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ‘মজবুত চুক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পৃথিবীর সকল ধর্মে এবং আইনে কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) লোকদের মধ্যেই চুক্তি সম্পাদিত হয়। বর্তমানে পৃথিবীর সকল দেশে চুক্তিপত্র, আদালতে সাক্ষী/ভোট/মতামতের বয়স ১৮ বছর আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা আছে। অতীতের সকল সভ্যতায় চুক্তি করার বয়স এমনই ছিল। এ হিসেবে মা আয়েশার (রা.) বয়স সংসার জীবনে প্রবেশের সময় ১৮ বছরের কাছাকাছি ছিল ধরে নেওয়া যায়। বিশেষ করে আল্লাহ একটি নয় বছরের শিশুর সঙ্গে ‘মজবুত চুক্তি’ করার অনুমতি দিবেন না এটা সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়।

এছাড়া সুরা নিসার ৬ নং আয়াতে একজন নারীর বিবাহের উপযুক্ততা হিসেবে ৩ টি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। (১) বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক (আশুদ্ধা) হওয়া, (২) জ্ঞান-বুদ্ধির বিকাশ (রুশদান) হওয়া এবং (৩) সম্পদ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা অর্জন করা। আল্লাহ বলেন, ‘এতিমদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পণ করতে পার (সুরা নিসা ৬)।

এখানে বোঝাই যাচ্ছে বিয়ের বয়সের সঙ্গে বুদ্ধিবিবেচনার উন্মেষের একটা সম্পর্ক আছে। এতটুকু বুদ্ধি হওয়া জরুরি যতটুকু বুদ্ধি থাকলে একটি মেয়ে তার নিজের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও হিসাব নিকাশ করতে পারে। নয় বছরের একটি মেয়ে কি সেটা পারে? অবশ্যই নয়। তাহলে বিশ্বাসী মুসলমানদের নবীকে নিয়ে হীনম্মন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার দরকার কী? রসুলাল্লাহ নিশ্চয়ই কোর’আনের বাইরে কোনো কাজ নিজে করতে পারেন না। সুরা আনয়ামের ৫০ তম আয়াতে আল্লাহ রসুলকে দিয়ে এই অঙ্গীকার করিয়েছেন- ‘আমি তো শুধু সেই ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি নাজিল করা হয়।’ কোর’আনের এই আয়াতের পর নবী করীম (সা.) কি আল্লাহ নির্ধারিত বিবাহের এই তিন মূলনীতি উপেক্ষা করে বিয়ে করতে পারেন? কখনো নয়।

এবার আমরা বোখারীর হিশাম ইবনে উরউয়াহর (রা.) হাদিসটি পর্যালোচনা করে দেখব। পাশাপাশি নবীর সীরাত রচয়িতা ঐতিহাসিকগণের পরিবেশিত-রসুল (সা.) এর সাথে মা আয়েশার বিবাহের আগেপরের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করেও বিবাহের বয়স কত ছিল তা দেখার চেষ্টা করব। ইসলামের পণ্ডিতগণের পক্ষ থেকে ৯ বছর বয়সের উপর সমর্থনের কারণ হল- হাদিসটি সিহাহ সিত্তার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ধরে নেয়া হয়েছে এটি সহিহ। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত মোহাদ্দেস নাসির উদ্দীন আলবানীর (১৯১৪-১৯৯৯ খ্রি) মতে বোখারীসহ সিহাহ সিত্তার অন্তর্ভুক্ত হাদিসের কিতাবে সনদ ও মতনের ভিত্তিতে জাল-জয়ীফ হাদিস থাকতে পারে। তাই হাদিসের গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি সনদ (হাদিস বর্ণনাকারীর ধারাবাহিকতা) ও মতনের (মূল বক্তব্য বা Text) ভিত্তিতে এই হাদিসটিতে মা আয়েশার (রা.) বিবাহ ও নির্জনবাসের বয়সের সত্যতা যাচাই করার সুযোগ রয়েছে।

এ হাদিসের বর্ণনাকারী উচ্চ বংশীয় হিশাম ইবনে উরউয়াহ (৬৮০-৭৬৩ খ্রি.) মদিনায় ৭১ বছর পর্যন্ত বসবাস করার পর তাঁর বয়সজনিত স্মৃতি বিভ্রাট হয়। এরপর তিনি ইরাকের কুফায় গিয়ে ১৩ বছর বসবাস করেন এবং সেখানেও অনেক হাদিস বর্ণনা করেন। তাই সকল হাদিস সংগ্রহকারী এই হিশাম ইবনে উরউয়াহ (রা.) সূত্রে পাওয়া হাদিসকে নির্ভরযোগ্য মনে করেন না। এখানে উল্লেখ করা দরকার, যে কোনোভাবেই হোক ইমাম বোখারী মদিনার কোনো রাবি (বর্ণনাকারী) থেকে নয় উরউয়াহ সূত্রে ইরাকের রাবিগণ থেকে এ হাদিসটি গ্রহণ করেছেন। তাই হিশাম ইবনে উরউয়াহর স্মৃতিবিভ্রমজনিত কারণে আয়েশা (রা.) এর বয়স সম্পর্কিত এই হাদিসটির মতন বা Text সন্দেহজনক বিধায় বয়সের বিষয়টিও সন্দেহজনক হয়ে পড়ে।

রসুল (সা.) ৬১০ সালে মক্কায় নবুওত প্রাপ্ত হওয়ার আগেই মা আয়েশার জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ রসুলের নবুওত পাওয়ার সময় মা আয়েশা জুবায়ের ইবনে মুতইম এর বাগদত্তা ছিলেন। পরবর্তীকালে মা আয়েশা বালেগ হওয়ার পরও তার পিতা আবু বকর (রা.) মুতইমের সাথে বাগদত্তা কন্যাকে বিবাহ দেন নাই-কারণ মুতইম ইসলাম গ্রহণ করে নাই। এ ঘটনা প্রমাণ করে রসুল (সা.) এর সাথে বিয়ের সময় (৬২১ খ্রি.) মা আয়েশার বয়স কমপক্ষে ১২ এর বেশি ছিল। কারণ নবুয়্যতের ১২তম বর্ষে তাঁদের বিয়ে হয়, আর নবুয়্যতের পূর্বেই আম্মা আয়েশা (রা.) জুবায়ের ইবনে মুতইমের বাগদত্তা ছিলেন। বাগদানের সময় তিনি বালিকা ছিলেন তো বটেই। সুতরাং বিয়ের সময় তাঁর বয়স ১৮ এর কাছাকাছি থাকা সম্ভব। ঐতিহাসিক তাবারির মতে আবুবকর (রা.) এর কন্যা মা আয়েশাসহ চার সন্তানের জন্ম হয়েছিল নবুওতের (৬১০ খ্রিস্টাব্দে) পূর্বে মক্কায়।

৬২৫ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ওহুদ যুদ্ধ মা আয়েশা (রা.) সাহাবীদের পানি পান করানোর কাজে অংশগ্রহণ করেন। এ যুদ্ধে রসুল (সা.) অংশগ্রহণকারী সকলের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করেছিলেন ১৫ বছর। তাই তার বয়সও ১৫ বছরের কম ছিল না।

ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীনতম সিরাতগ্রন্থ রচয়িতা ইবনে ইসহাকের বর্ণনামতে নবুয়্যতের তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের নির্দেশ আসে। এর পূর্বেই যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তাদের একটি তালিকা এই প্রামাণ্য সিরাতগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। (সিরাতে রসুলুল্লাহ সা.- ইবনে ইসহাক, পৃ: ১৪৩, প্রথমা প্রকাশন)। এই তালিকার মধ্যে আবু বকরের (রা.) দুই মেয়ে আসমা ও ছোট্ট মেয়ে আয়েশার নামও রয়েছে। এ সময়ে যদি আম্মা আয়েশার (রা.) বয়স ছয় বছরও হয়ে থাকে তাহলে তাঁর সাথে রসুলাল্লাহর বিয়ের বয়স ১৬ বছরের নিচে নয় আর সংসার জীবনে প্রবেশের বয়স অন্তত ১৮/১৯ বছর।

ঐতিহাসিক ইবনে কাছিরের মতে আয়েশা (রা.) তার বড় বোন আসমার (৫৯৫-৬৯২ খ্রিষ্টাব্দ) চেয়ে বয়সে ১০ বছরের ছোট ছিলেন। আসমার (রা.) জন্ম ৫৯৫ খ্রিস্টাব্দ হলে মা আয়েশার জন্ম এর ১০ বছর পর ৬০৫ খ্রিস্টাব্দে। এ হিসবে মা খাদিজার ইন্তেকালের (৬১৯) দুই বছর পর রসুলের সাথে মা আয়েশার বিবাহের (৬২১খ্রি.) সময় বয়স ছিল ১৬/১৭ বছর এবং এর ৩ বছর পর মদিনায় রসুলের সাথে রুসমত বা পারিবারিক জীবন শুরু (৬২৩ খ্রি.) হয় ১৮/১৯ বছর বয়সে।

সুতরাং আমরা দেখতে পেলাম বিয়ে একটি মজবুত চুক্তি। আর এই চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হলে একজনকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে, তার জ্ঞানবুদ্ধির বিকাশ হতে হবে, সম্পদ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এমন একটি বয়সেই রসুলাল্লাহ (সা.) আম্মা আয়েশাকে (রা.) বিবাহ করবেন, কারণ তিনি কোর’আনের নীতি লংঘন করতেই পারেন না। এর সমর্থনে বেশ কিছু ঐতিহাসিক দলিলও আমরা দেখলাম। এরপরও কেউ যদি একটি সন্দেহজনক হাদিসের ভিত্তিতে এইসব অকাট্য প্রমাণকে অস্বীকার করতে চান তাহলে তার ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। মুসলিমদের এ দলিল প্রমাণগুলো জানা আবশ্যক। অন্যথায় তারা নিজেরাও অপপ্রচারকারীদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারে।