উদ্দেশ্যহীন আমল ও বর্তমান আলেম সমাজ

রিয়াদুল হাসান

আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী মোহাম্মদ (স.) পর্যন্ত ইসলামের মর্মবাণী ছিল একটিই। তওহীদ- লা ইলাহা ইলল্লালল্লাহ হ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম মানি না। এর অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে জীবনের যে যে বিষয়ে আল্লাহ হুকুম রয়েছে সেখানে আর কারো হুকুম না মানা। শুধুমাত্র মহান আলস্নাহর জীবনবিধানকেই জীবনের সর্বাঙ্গনে স্বীকার করে নেয়া। এই সহজ সরল পথ ছেড়ে আমাদের দীনের মহাপন্ডিত দীনের চুলচেরা বিশেস্নষণ করে এই সহজ সরল পথকে একটি ভিন্ন রূপে পরিবর্তন করে ফেললেন। সহজ সরল সিরাতুল মুক্তাকিম পরিণত হলো দুর্বোধ্য একটি জীবন-ব্যবস্থায়। ধনুকের ছিলার মতো সরল রাস্তাকে মাছ ধরার জালের মতো জটিল করে তুললেন। ফলে পুরো জাতি আজ জালে আটকা পড়ে অসহায় হয়ে ছটফট করছে এবং স্থবির জীবনযাপন করছে।

এই স্থবিরতার ফল কী হয়েছে তা বর্তমান জাতির দিকে তাকালেই স্পষ্ট দেখা যায়। বর্তমান জাতি পরিণত হয়েছে শত্রুর ঘৃণিত গোলামে। জাতির মাথায় অর্থাৎ নেতৃত্বের আকিদায় পচন ধরেছে, অজ্ঞানতা, অশিক্ষায়, কুশিক্ষায় জাতির এমন হাল হয়েছে যা পূর্বের জাহেলিয়াতের অবস্থাকেও হার মানায়। জাতির আলেম সমাজ যারা ধর্মকে জীবিকা হিসেবে ব্যবহার করে আজ ধর্মব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছে এবং পরিণত হয়েছে কুয়োর ব্যাঙে। যারা দুনিয়ার খবর রাখেন তাদের কাছে চোখে এরা অবজ্ঞার পাত্র, হাসির খোরাক। আকাশের মতো বিশাল দীনকে এরা তাদের দাঁড়ি-টুপি ও লম্বা কোর্তার পকেটে পুরে ফেলেছেন। মিলাদ পড়ে, বাড়ি বাড়ি দাওয়াত খেয়ে ও সুর করে ওয়াজ করেই তাদের জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন।

যদি তাদের এই ওয়াজে কোন সারকথা থাকতো তবেও না হয় মেনে নেয়া যেত কিন্তু তাদের ওয়াজে সারকথার বদলে সেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা নিয়েই তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিবাহিত করেন। দীনের মর্মকথা, দীনের উদ্দেশ্য ইত্যাদি কিছুই তাদের জানা নেই। দীনের যে মূল দিক অর্থাৎ জাতীয় দিক সেই দিকটিকেও এরা সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দিয়েছেন। ব্যক্তি জীবনের যে সমান্য অংশ তারা ধরে রেখেছে তাও সঠিক নয়। যে দাড়ি রাখাকে এরা দীনের অতি প্রয়োজনীয় কর্তব্য বলে মনে করে, সারা রাত শুধু এই একটি বিষয় নিয়েই ওয়াজ করেন উপদেশে দেন সেই দাঁড়ির কথাই বিবেচনা করুন। আল্লাহ রসুল বলেছেন, “তোমরা মোছ কেটে ফেল এবং দাঁড়িকে ছেড়ে দাও।” এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কিছু ধর্মীয় দল দাঁড়িকে তাদের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। রসুলাল্লাহ দাঁড়ি যে ঠোঁটের নিচ থেকে শুরু করে এক মুষ্ঠি দীর্ঘ ছিল সেটা সর্বজনবিদিত। কিন্তু সেই কথার ধার ধারার সময় এদের নেই।

অন্য আরেকটি হাদিসে রয়েছে, রসুলাল্লাহ কে একজন ইয়েমেনের সাহাবী মাথা কামানো অবস্থায় দেখেছেন। এই হাদিসটির উপর ভিত্তি করে যদি এবার কোন ধর্মীয় দলের সকলে মাথা কামিয়ে ফেলেন তবে তা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত হবে? সেই ইয়েমেনী সাহাবি রসুলের সাড়্গাত লাভ করেন হজের সময়। তখন সব হাজিদেরই মাথা কামানো ছিল। রসুলের সারাটি জীবন কাঁধ পর্যন্ত কুঞ্চিত দীর্ঘ কেশ ছিল তা সকল সিরাতগ্রন্থেই উল্লেখ করা আছে কিন্তু সেটা বিবেচনায় নেয়ার সময় তাদের নেই। অতএব উদ্দেশ্যচ্যুতির ফলাফল স্বরূপ তারা যে অযথা পাহাড় ঠেলে যাচ্ছে তা সহজেই বোঝা যায়। অতএব দীন সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা, সঠিক আকিদা এখন অত্যাবশ্যক। নয়তো যারা তাদের অনুসরণ করছেন তারাও তাদের মতোই হবেন। অতএব দীনের সঠিক জ্ঞান লাভ করা বর্তমানে অত্যাবশ্যক।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
জনপ্রিয় পোস্টসমূহ