কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
চলমান সংকট নিরসনে তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানিয়ে কুষ্টিয়ায় হেযবুত তওহীদের কর্মী সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকালে কুষ্টিয়া মাস্টার কমিউনিটি সেন্টারে জেলা হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে “চলমান সংকট নিরসনে তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের বিকল্প নেই” শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি মানবরচিত নিয়মকানুন ও বিধিবিধানের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে চলমান সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হিসেবে আল্লাহর দেওয়া জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন। এ লক্ষ্যে তিনি মুসলিম উম্মাহর মধ্যকার আত্মঘাতী বিভেদকে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে কলেমার ঘোষণা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নাই) ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সম্মেলন ঘিরে সকাল ৯টা থেকে কুষ্টিয়া মাস্টার কমিউনিটি সেন্টারে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সকাল ১০টার মধ্যেই শুধু কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হেযবুত তওহীদের হাজারো নেতাকর্মীর আগমনে অনুষ্ঠানস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলনের মূল পর্বের সূচনা করা হয়। দিনব্যাপী এই সম্মেলনে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ও উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
প্রধান অতিথি হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম তার বক্তব্যে বলেন, “একটি রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে কিনা তা নির্ভর করে ঐ রাষ্ট্রে গৃহীত ব্যবস্থা, নিয়ম-কানুন বা জীবনবিধান তথা সিস্টেমের উপর। সিস্টেমটাই যদি ত্রুটিযুক্ত হয় তাহলে কখনোই সেখানে শান্তি আসবে না। আমরা এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাস করছি, যার ভিত্তিই নড়বড়ে।” তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে বহুরকম চিন্তাভাবনা ও মতবাদ দিয়ে আমাদের রাষ্ট্রটা পরিচালনার চেষ্টা করা হয়েছে। সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র – এগুলো মিলিয়ে-মিশিয়ে একাকার করে আমরা প্রয়োগ করে দেখলাম। কিন্তু কাঙিক্ষত শান্তি আসেনি।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও তন্ত্র-মন্ত্রের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আমাদের সংবিধান যা ১৯৭২ সালে তৈরি করা হয়েছিল, যে সংবিধানটি এ পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধনও করা হয়েছে। কিন্তু তা জাতিকে সেই কাক্সিক্ষত শান্তি দিতে পারে নি। আর বারংবার এই সংশোধন প্রমাণ করে, মানুষের তৈরি এই ব্যবস্থা কতটা অসম্পূর্ণ, কতটা দুর্বল। এটি একটি ছেঁড়া কাঁথায় তালি দেওয়ার মতো নিষ্ফল প্রচেষ্টা। ফলাফল কী? অবিচার, দুর্নীতি, হানাহানি, নিরাপত্তাহীনতা আর হতাশায় নিমজ্জিত এক জাতি।”
হেযুবত তওহীদের ইমাম বলেন, “মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে তৈরি বিধান মানবজাতির জন্য স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। কারণ মানুষের জ্ঞান সীমাবদ্ধ। একমাত্র স্রষ্টাই জানেন মানুষ কিভাবে চললে শান্তিতে থাকবে। তাই জাতিকে যদি এই অবক্ষয় আর অশান্তির অতল গহ্বর থেকে টেনে তুলতে হয়, তবে আমাদেরকে সেই উৎসের দিকে ফিরতে হবে, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। সেই মহান স্রষ্টার দেওয়া নিখুঁত, শাশ্বত ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনবিধান কার্যকর করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে আমাদের একমাত্র মুক্তি।”
মুসলিম উম্মাহর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিভেদকে মূল শত্রু হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য- মুসলিম উম্মাহর সীসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা ছিল, কিন্তু তারাই আজ ফেরকা, মাজহাব, দল আর গোষ্ঠীর নামে শত শত খণ্ডে বিভক্ত। আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে ফতোয়ার তীর ছুড়ছি, একে অপরকে ইসলামের শত্রু বলে আখ্যা দিচ্ছি, এমনকি একে অপরের রক্ত ঝরাতেও দ্বিধা করছি না। এই আত্মঘাতী বিভেদই আমাদের শক্তিকে নিঃশেষ করে দিয়েছে এবং শত্রুদের সামনে আমাদেরকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এই আত্মঘাতী বিভক্তি মুছে ফেলে, বিভেদের সকল পথ বন্ধ করে মুসলিমদেরকে এক কালেমার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ঐক্যের মূল ভিত্তি কী হবে তা ব্যাখ্যা করে হেযবুত তওহীদের ইমাম বলেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা, বিধানদাতা নেই।” তওহীদের এই ঘোষণাই হতে পারে মুসলিম বিশ্বের মুক্তির মূলমন্ত্র। অর্থাৎ সার্বভৌমত্বের মালিক, হুকুমদাতা ও বিধানদাতা হিসেবে একমাত্র আল্লাহকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে মেনে নিতে হবে। এই একটি ঘোষণাই ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদেরকে এক জাতিতে পরিণত করতে পারে। এটিই সেই লৌহবর্ম, যা আমাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করবে।
সম্মেলনে উপস্থিত সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা শুধু একটি সংগঠনের কর্মী নন, আপনারা এক নতুন সভ্যতার অগ্রদূত। হেযবুত তওহীদের এই ঐক্যের আহ্বান, ইসলামের এই বাস্তবিক শিক্ষা আজ প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। একটি শান্তিময় ও সম্প্রীতির সমাজ গড়ে তুলতে হবে।”
রাজশাহীতে কতিপয় উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের বেআিইনী তৎপরতার কারণে হেযবুত তওহীদের একটি আলোচনা সভা স্থগিতের বিষয়ে তিনি বলেন, “রাজশাহীতে যা ঘটেছে তা হলো আদর্শিকভাবে পরাজিত ধর্মব্যবসায়ীদের ফ্যাসিবাদী আস্ফালন। তারা জানে, সত্যের সামনে তাদের মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে যাবে। তাই তারা পেশিশক্তি প্রদর্শন করে আমাদের কণ্ঠ রোধ করতে চায়। কিন্তু হুমকি-ধমকি দিয়ে বা ষড়যন্ত্র করে হেযবুত তওহীদের অগ্রযাত্রা থামানো যাবে না। এই উগ্রবাদীরাই দেশের শান্তি ও সম্প্রীতির প্রধান শত্রু এবং এদের প্রতিরোধে আজ একটি শান্তিময় রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।”
কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি মো. আক্কাস আলীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসেব উদ্দিন, নারী ও শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা রাজিয়া, খুলনা বিভাগীয় নারী সম্পাদক জেরিন সাইয়ারা, জেলা নারী সম্পাদক শারমিন খানম প্রমুখ।