হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশনে সিস্টেম পরিবর্তন শীর্ষক সেমিনার

৫ই অক্টোবর ২০১৩ শনিবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন মিলনায়তনে দৈনিক দেশেরপত্রের উদ্যোগে “জঙ্গিবাদ তথা যাবতীয় সন্ত্রাস দমনে আমাদের প্রস্তাবনা” এবং “অন্যায় দূরীকরণে সিস্টেম পরিবর্তনের বিকল্প নেই” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দৈনিক দেশেরপত্রের একক পৃষ্ঠপোষকতায় রাজধানীর শাহজাদপুর, গুলশান, বাড্ডা, মেরুলবাড্ডা, রামপুরা, তেজগাও, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ, প্রভাষক, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কমিশনার, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, শিল্প-উদ্যোক্তা, আইনজীবী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সমাজে ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ এর কারণে সৃষ্ট নানাবিধ সমস্যা এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে দৈনিক দেশেরপত্রের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রুফায়দাহ্ পন্নী উপস্থিত সকল অতিথিদেরকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “ আজ আমরা যারা এখানে উপস্থিত আছি আমাদের একেকজনের মতাদর্শ হয়তো একেক রকম কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা সবাই একই বাবা মা অর্থাৎ আদম হাওয়ার সন্তান। আজ পৃথিবীর সকলকে একটি জাতির অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা ছিল। কিন্তু আজ সেই একই বাবা-মায়ের সন্তানদের মধ্যে এত হানাহানি, যুদ্ধ, রক্তপাত কেন? কে আমাদের মধ্যে এই শত শত বিভেদের দেয়াল দাঁড় করিয়েছে, কেন আমরা নির্মমভাবে একজন আরেকজনকে হত্যা করে চলেছি, কেন আমাদের সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র মিথ্যায় ছেয়ে গেছে, ঘরে-বাইরে, হাটে-বাজারে কোথাও আমাদের নিরাপত্তা নেই কেন?” তিনি আরো বলেন, “আল্লাহ আমাদেরকে একটি চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা দিয়েছেন। আজ থেকে ৩০০ বছর পূর্বে আমরা যখন পশ্চিমা ব্রিটিশদের গোলাম হলাম তখন থেকেই তারা আমাদের উপর তাদের তৈরি আত্মাহীন, বস্তুবাদী জীবনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে, আমরাও আমাদের জাতীয় পরিচয় ভুলে তাদের তৈরি সিস্টেম গ্রহণ করে নিয়েছি। আল্লাহর দেওয়া সেই পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাকে পুরোপুরি ত্যাগ করে কেবল ব্যক্তি জীবনে কিছু এবাদত বন্দেগি করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই ব্যক্তিগত ধর্মপালন যে জাতীয় জীবনে শান্তি আনতে পারছে না তার প্রমাণ আজকের সমাজ।”রুফায়দাহ পন্নী আরো বলেন, “আলো জ্বালালে যেমন অন্ধকার দূরভিত হয়, তেমনি প্রকৃত সত্য প্রকাশ হলে সমাজের সকল অন্যায়-অত্যাচার, ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি দূর হবে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই বস্তুবাদী সিস্টেমকে পরিত্যাগ করে আল্লাহর দেওয়া অপরূপ, নিখুঁত সিস্টেমটি গ্রহণ করতে হবে। একমাত্র আল্লাহর দেয়া সিস্টেমই পারে সমাজের সকল প্রকার পাপাচারের পথ বন্ধ করতে।” তিনি সেই সিস্টেম বাস্তবায়নের ফলে আজকের ঘুণে ধরা সমাজের অসৎ মানুষগুলিই একেকজন সোনার মানুষে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

দৈনিক দেশেরপত্রের উপদেষ্টা মসীহ উর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, “আজ আমরা দুনিয়ার কাজকর্মে এতই ব্যস্ত হয়েছি যে, আমাদের সামনে শান্তির কোন পথ খোলা আছে কিনা তা ভাবার সময় ও সুযোগ নাই। আমরা আমাদের পরবর্র্তী প্রজন্মকে কোন পরিবেশে রেখে যাব তা ভাবতে হবে।” পত্রিকার পাতার সা¤প্রতিক সময়কালের লোমহর্ষক কিছু ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেখানে প্রাণাধিক প্রিয় স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে হত্যা করছে, সন্তান পিতা-মাতাকে হত্যা করছে, পিতা-মাতা সন্তানকে হত্যা করছে সেখানে কোন নিরাপত্তা বাহিনীই আমাদেরকে রক্ষা করতে পারবে না। ” তিনি সবাইকে আল্লাহর সিস্টেমে ফিরে গিয়ে একটি শান্তিময় সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ‘জঙ্গিবাদ নির্মূলের উপায়’ বিষয়ক আলোচনাটি ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এতে অংশ নেন দেশেরপত্রের জনসংযোগ কর্মকর্তা জনাব আজমল হোসাইন। তিনি বলেন, “বর্তমানে এটা প্রমাণিত যে শুধুমাত্র বুলেট বোমা দিয়ে, গ্রেফতার-রিমান্ড দিয়ে অর্থাৎ শক্তি প্রয়োগে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন সম্ভব নয়। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এ কথা স্বীকার করেছেন যে, আদর্শ দিয়ে আদর্শ মোকাবেলা করতে হবে। আজ থেকে চার বছর আগে যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজিদ খান পন্নী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, শুধুমাত্র শক্তি প্রয়োগে কখনই সফলতা আসবে না। জনাব আজমল হোসাইন বলেন, “কোরআন-হাদিস থেকে ভুল বোঝানোর কারণেই মানুষ জঙ্গি হয়। তারা মনে করে এই পথেই জান্নাত। এই বিশ্বাসে তারা জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দেয়। এখন যদি কোরআন-হাদিস থেকে যুক্তি দিয়ে তাদের বোঝানো যায় যে, এটা ভুল পথ, এই পথে তারা দুনিয়া এবং জান্নাত দুটিই হারাচ্ছে তবে নিশ্চয় তারা সে পথ ত্যাগ করবে”। তিনি বলেন, “বর্তমানের আলেমদের দিয়ে জঙ্গিদের এই কথা বোঝানো যাবে না, কারণ তারা নিজেরাই ধর্ম বিক্রীর মত একটি হারাম কাজে লিপ্ত আছেন। ধর্মকে ব্যবসার হাতিয়ার বানাতে আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা সেটাই করছেন। তাই যারা নিজেরাই ভুল পথে আছেন তাদের সাহায্য নিয়ে জঙ্গিদের ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়”। তিনি আরও বলেন, “জঙ্গিদের বোঝানোর জন্য এমন মানুষ দরকার যারা পার্থিব কোন বিনিময়ের জন্য ইসলাম প্রচার করে না এবং সত্য পথের উপর প্রতিষ্ঠিত। সেই সত্যবাদিতা আল্লাহ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজিদ খান পন্নীকে দান করেছেন।” তিনি বাংলাদেশ সরকারকে যামানার এমামের দেয়া এই প্রস্তাবনার আলোকে আদর্শিকভাবে জঙ্গি দমন করে পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত রাখার আহবান জানান

অনুষ্ঠানে আগত অতিথি জনাব সিরাজুল ইসলাম দৈনিকদেশের পত্রের এই কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, “শান্তি পেতে হলে ব্যক্তি থেকে শুরু করে দেশের শাসক পর্যন্ত সবাইকে মিথ্যা পরিহার করতে হবে এবং সত্যের অনুকরণ করতে হবে।” ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনে তিনি আয়োজকদের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে আগত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ তাদের আলোচনায় জাতির বিশেষ সঙ্কটকালে দেশেরপত্রের এই উদ্যোগ ও প্রস্তাবনাকে অভিনন্দন জানান। তারা এই উদ্যোগকে একান্ত সময়োপযোগী ও কার্যকরী বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এবং সবাইকে দেশেরপত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে মানবতার কল্যাণে সত্যের প্রকাশে দৈনিক দেশেরপত্রের গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম এবং জঙ্গিবাদের উত্থান ও উত্তরণের উপায়ের ওপর নির্মিত সংক্ষিপ্ত ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রখ্যাত নজরুল সংগীতশিল্পী জিল্লুল শাহীনের গান পরিবেশনে অনুষ্ঠান আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। রুফায়দাহ পন্নীর সভাপতিত্বে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক দেশেরপত্রের উপদেষ্টা মসীহ উর রহমান, জনসংযোগ কর্মকর্তা আজমল হোসাঈন, ডাঃ ওমর ফারক, প্রখ্যাত ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম, দৈনিক আজাদের বিনোদন মহাসচিব সালাম মাহমুদ, নয়দিগন্তে স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ শরীফ, দৈনিক তরুন কণ্ঠের সম্পাদক এম আর আই শান্ত, দৈনিক স্বাধীন পত্রিকার সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আকাশ, ডিএমপি সদর দপ্তর প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম, এসবি সদর দপ্তর প্রতিনিধি জনাব রাহাত, দেলোয়ার প্রমুখ।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...