হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

প্রাণের দামে কিনেছি, কারো দানে পাইনি

রিয়াদুল হাসান

১৫.০২.২০১৬ তারিখে ঢাকার আদাবরে অনুষ্ঠিত জনসভা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে করমর্দন করছেন মাননীয় এমাম জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

হেযবুত তওহীদের অনুষ্ঠানে পুলিশ নিরাপত্তা প্রদান করছে। এ দেখে অনেকেই প্রশ্ন করেন যে, পুলিশ কেন আমাদেরকে সহযোগিতা করছে। তাদেরকে বলব, রাষ্ট্রের যে কোনো বৈধ নাগরিককে তার সাংবিধানিক অধিকার চর্চা করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রদান করতে পুলিশ বিভাগ দায়বদ্ধ। এটি তাদের উপর রাষ্ট্রকর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব। যদি আমরা কোনো বে-আইনী কাজ করতাম আর পুলিশ প্রহরা দিত সেক্ষেত্রে আপনাদের প্রশ্নটি যৌক্তিক হতে পারত।

যারা এ প্রশ্নটি করেন তাদের অনেকের মনোবাসনা হচ্ছে, আমরা প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতো বা আন্দোলনগুলোর মতো কর্মসূচি পালনকালে সহিংসতা সৃষ্টি করি, জনগণের পথ অবরোধ করি, গাড়ি দোকানপাট ভাঙচুর করি, অর্থাৎ যেটাকে তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন বলে মনে করে আমরা সেভাবে কাজ করি। জবাবে পুলিশ আমাদের উপর গুলি চালাক, আর আমরাও তাদেরকে আক্রমণ করি, তাদের মাথা ইট দিয়ে থেঁতলিয়ে দেই আর তারা আমাদের উপর টিয়ারগ্যাস, গরম পানি, রাবার বুলেট মারুক। তখন আমরা তাদের গজফিতায় হতাম খাঁটি ইসলামিক দল। তাই তো?

কিন্তু আমরা তা করি না, আমরা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিঘ্নিত করাকে, দেশের সম্পদ, মানুষের সম্পদ ধ্বংস করাকে অধর্ম মনে করি। আমরা জানি যে, পুলিশ এখন অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত, তথাপি আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের এই কার্যক্রমের দ্বারা দেশ ও জাতির কী উন্নতি হবে তা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে, জাতির উন্নয়নে অংশ নেওয়ার জন্য তাদেরকেও উদ্বুদ্ধ করছি, তাদেরকে মানবতার কল্যাণে উজ্জীবিত করতে চেষ্টা করছি।

প্রতিটি মানুষের মধ্যেই আল্লাহর রূহ রয়েছে যা বিবেক হিসাবে মানুষকে সঠিক ও ভুলকে নির্দেশ করে দেয়। পুলিশ সদস্যরাও মানুষ ও তাদের মধ্যেও আল্লাহর রূহ (বিবেক) রয়েছে। সেটাকে সুপ্ত অবস্থা থেকে জাগ্রত করার সচেতন চেষ্টা আমাদের বক্তব্যে রয়েছে। ফলে তারা সত্যের খাতিরে হোক, আর পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য হোক, আমাদের অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা দিচ্ছে সন্তুষ্টচিত্তে, ঘুষের বিনিময়ে নয়, কোনো লোভে পড়ে নয়। আর সেটাই হচ্ছে একটি শ্রেণির গাত্রদাহের কারণ।

কিছু ইসলাম বিদ্বেষী মিডিয়া এবং ধর্মজীবি আলেম মোল্লা শ্রেণীর জঘন্য মিথ্যা প্রচারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সরকারের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বিভাগ এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বার আমাদের কর্মীদেরকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। আমরা কোন অপরাধ, কোন আইনভঙ্গ করি নাই বলে আদালতে প্রতিবার আমাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। তাই ঐ ৫০০ বার নির্দোষ কর্মীদেরকে গ্রেফতার কোরে জেল হাজতে প্রেরণ করা সত্ত্বেও হেযবুত তওহীদ সত্যের উপর বিজয়ী, দীপ্ত, আলোকিত। দীর্ঘ ২০ বছরে একটি মাত্র অপরাধ ও একটি মাত্র আইনভঙ্গ না করার মত দাবি কোন দলতো দূরের কথা, কোন আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও করতে পারবে না। এটি হেযবুত তওহীদের একটি অনন্য গৌরব।

আমরা দমে না গিয়ে সত্য প্রচার গেছি, সর্ব উপায়ে সর্বত্র। সরকার ও প্রশাসনকে বুঝিয়েছি, জনগণকেও বুঝিয়েছি। শত সহস্রবার বুঝিয়েছি। বোঝাতে গিয়েও প্রশাসনিক হয়রানি, গ্রেফতার রিমান্ডের সম্মুখীন হয়েছি, তবু হাল ছাড়ি নি, আইন নিজেদের হাতে তুলে নেই নি, কাউকে আক্রমণ করি নি।

হেযবুত তওহীদের ক্রমাগত সংস্পর্শে আসতে আসতে, আমাদের পত্রিকা, ডকুমেন্টারি, বই ইত্যাদি অসংখ্যবার তাদের সামনে উপস্থাপিত হতে হতে এখন অনেকেই তাদের পূর্ববর্তী ভুল ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে, পূর্বে কৃত নির্যাতনের জন্য অনুতপ্ত হয়ে হেযবুত তওহীদের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন। কারণ তারা দেখেছেন আমাদের কথা ও কাজ সত্যিই সমাজ ও মানুষের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে এবং ঘটাবে। এটা আমাদের আদর্শিক বিজয় যা আমরা অনেক দাম দিয়ে কিনেছি, কারো দানে পাওয়া নয়। আজ আমরা যে মানুষের সামনে প্রকাশ্যে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারছি, এ পরিবেশ আমাদের সদস্যদের জীবন-জীবিকার হানি, অতুলনীয় ত্যাগ, রক্ত, ঘাম, হয়রানি, পঙ্গুত্ব বরণ, প্রশাসনিক ও সামাজিক নির্যাতন এমনকি বহু সদস্য সদস্যার প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। সুতরাং যারা বক্র দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন, তাদের সেই ইতিহাসও জানা উচিত।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...