পটুয়াখালীতে হেযবুত তওহীদের নারী সম্মেলন

‘তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীদের অধিকার’ স্লোগানকে ধারণ করে পটুয়াখালীতে নারী সম্মেলনের আয়োজন করেছে হেযবুত তওহীদ। গতকাল শনিবার (৩০ আগস্ট) সকাল ১০টায় শহরের পুরাতন টাউন হল মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নারী কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অংশগ্রহণে মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

সম্মেলনে বক্তারা আধুনিক সমাজে নারীর বঞ্চনা, নিরাপত্তাহীনতা এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির নামে নারীকে ভোগ্যপণ্যে পরিণত করার তীব্র সমালোচনা করেন। এর বিপরীতে ইসলাম তথা তওহীদের আলোকে কীভাবে নারীর প্রকৃত সম্মান ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, তার একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরেন তারা।

পটুয়াখালী জেলা হেযবুত তওহীদের নারী সম্পাদক জিউন নাহার পলির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি শফিকুল আলম উখবাহ। সভায় মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির নারী বিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুল আলম উখবাহ বলেন, “পশ্চিমা বিশ্বের অনুকরণে প্রণীত আইন বা সাময়িকভাবে গঠিত কোনো কমিশন নারীর প্রকৃত মুক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। আজকের সমাজে নারীকে যেভাবে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞাপন আর বিনোদনের নামে ভোগ্যপণ্যে পরিণত করা হচ্ছে, তা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও দুঃখজনক।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “নারীর সম্মান ও অধিকারের বিষয়টি বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়, এটি একটি সামগ্রিক জীবনব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। একমাত্র তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থাই সেই সামগ্রিক সমাধান দিতে পারে, যা নারীর প্রকৃত সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে নারীরা পুরুষের প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, বরং সহযোগী হিসেবে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবে, যা আমাদের দেশের মানুষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

সভার মুখ্য আলোচক আয়েশা সিদ্দিকা তার বক্তব্যে ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবিত তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীদের এগিয়ে যেতে কোনো বিশেষ কোটা বা করুণার প্রয়োজন হবে না। নারীরা তাদের মেধা, প্রজ্ঞা ও যোগ্যতা দিয়েই রাষ্ট্রের সকল স্তরে নিজেদের স্থান করে নেবে।”

তিনি ইসলামের সোনালী ইতিহাসের উদাহরণ টেনে বলেন, “ভাবুন সেই সমাজের কথা, যেখানে কন্যাসন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। সেই অন্ধকার যুগেই ইসলাম এসে নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছে। পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, কোরআনে আল্লাহ মোমেন পুরুষ ও মোমেন নারীকে একে অপরের বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে ঘোষণা করেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়।”

আয়েশা সিদ্দিকা আরও বলেন, “আমরা এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, যেখানে নারীরা পুলিশ, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আসীন হতে পারবে। এমন এক নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে, যেখানে একজন নারী অলংকার পরিহিত অবস্থায় রাতের আঁধারে নির্ভয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণ করতে পারবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা।”

তিনি বলেন, “নারী আল্লাহর এক বিশেষ সৃষ্টি ও নিদর্শন। তাদের সৃজনশীলতা, নেতৃত্বের গুণাবলী, জ্ঞান ও যোগ্যতার আলোকে রাষ্ট্রে পুরুষের পাশাপাশি সমান ভূমিকা রাখাই ইসলামের মূল অভিপ্রায়। ধর্মীয় বিধি-নিষেধের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে কিংবা সামাজিকতার দোহাই দিয়ে নারীকে পিছিয়ে রাখার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই।”

তিনি ইতিহাসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ইসলাম আগমনের আগে বিশ্বের নানা প্রাচীন সভ্যতায় নারী অবমাননা, বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার ছিল। ইসলামই সর্বপ্রথম নারীকে পূর্ণ মানবাধিকার, সম্পত্তির অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে।

তিনি সমাজের সকল নারীকে প্রচলিত ধ্যানধারণার ঊর্ধ্বে উঠে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে সাহসিকতার সাথে অবতীর্ণ হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।

হেযবুত তওহীদের সদস্য মরিয়ম আক্তার জেরিন ও মিথিলার সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল আঞ্চলিক আমির মোঃ রুহুল আমিন মৃধা, পটুয়াখালী জেলা সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সাইফ, বরিশাল জেলা সভাপতি লোকমান হোসেন, বিভাগীয় নারী সম্পাদক খাদিজা আক্তার মুন্নি, বরিশাল জেলা নারী নেত্রী জারিন তাজনিন লাবনী, ভোলা জেলা নারী নেত্রী খালেদা আক্তার লুনা প্রমুখ।

এর আগে সকাল ১০টার মধ্যেই পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নারী কর্মী ও শুভাকাঙ্খীদের অংশগ্রহণে টাউন হল মিলনায়তন মুখরিত হয়ে ওঠে। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের বক্তব্যে তওহীদভিত্তিক সমাজ গঠনে নারীর অপরিহার্য ভূমিকার ওপর আলোকপাত করেন।

সম্মেলনের শেষে হেযবুত তওহীদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮২ জন নতুন সদস্য দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার শপথ গ্রহণ করেন।