মানবসৃষ্ট মতবাদ পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে স্রষ্টার সার্বভৌমত্বের ওপর ভিত্তি করে একটি তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে হেযবুত তওহীদ। এই প্রস্তাবনাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এবং একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি।
সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নারায়ণগঞ্জের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে হেযবুত তওহীদের জেলা শাখার উদ্যোগে “তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে গণমাধ্যম কর্মীদের ভূমিকা” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বৈঠকটি অত্যন্ত প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
হেযবুত তওহীদের নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের সভাপতি মো. আরিফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং জেলা গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক সাজেদা ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের ঢাকা বিভাগীয় আমির ডা. মাহাবুব আলম মাহফুজ।
মূল প্রবন্ধে ডা. মাহাবুব আলম মাহফুজ বলেন, “ইতিহাস সাক্ষী, মানবসৃষ্ট কোনো মতবাদ বা ব্যবস্থা পৃথিবীতে কাঙ্ক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বরং যুগে যুগে এসব ব্যবস্থা সংঘাত, বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ও বৈষম্যকে উস্কে দিয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। চলমান বিশ্বব্যবস্থা আজ এক গভীর সংকটের মুখোমুখি।”
এই গভীর সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হিসেবে তিনি স্রষ্টার সার্বভৌমত্বের নীতির ওপর ভিত্তি করে ‘তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা’র রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্র মানে কোনো পশ্চাৎপদ ধারণা নয়। এটি এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল ও কল্যাণকর ব্যবস্থা যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। এই ব্যবস্থায় ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক সংঘাত, অপরাজনীতি এবং সকল প্রকার অবিচারের কোনো স্থান থাকবে না। এখানে স্রষ্টার আইনে সকলেই সমান।”
প্রস্তাবিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণমাধ্যমের ভূমিকার ওপর আলোকপাত করে ডা. মাহফুজ বলেন, “তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রে গণমাধ্যম হবে সমাজের প্রকৃত দর্পণ এবং এর কর্মীরা দায়িত্বশীলতার সাথে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবেন। তবে এই স্বাধীনতা শর্তহীন নয়, বরং নৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতাযুক্ত।”
তিনি গণমাধ্যমের অপরিহার্য দায়িত্বগুলো উল্লেখ করে বলেন, “যেকোনো তথ্য প্রচারের পূর্বে তার সত্যতা যাচাই করা, ভিত্তিহীন মিথ্যা ও গুজব কঠোরভাবে পরিহার করা এবং কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ থেকে মানহানিকর বা উপহাসমূলক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকা হবে গণমাধ্যমের নৈতিক দায়িত্ব। গণমাধ্যম সঠিক তথ্য দিয়ে জনগণকে সচেতন করবে এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে ন্যায়ের পক্ষে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করবে।”
দেশের চলমান সংকট নিরসনে হেযবুত তওহীদের এই প্রস্তাবনাকে একমাত্র বিকল্প হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি এই শান্তির বার্তা আপামর জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর একটি প্রাণবন্ত মুক্ত আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা তওহীদভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে গঠনমূলক প্রশ্ন উত্থাপন করেন এবং তাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেন।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহিদের কেন্দ্রীয় গণমাধ্যম যোগাযোগ বিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক মোখলেছুর রহমান সুমন এবং কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা। তাঁরাও হেযবুত তওহীদের প্রস্তাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনাকে আরও সমৃদ্ধ করেন এবং গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করেন।
গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ছিলেন মোহনা টিভির প্রতিনিধি মো. আজমির, এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি মো. ফারুক হোসেন, দেশ টিভির বিল্লাল হোসাইন, কালবেলার আব্দুল কাইয়্যুম, ইন্ডেপেন্ডেন্ট টিভির হাসান উল রাকিব, জিটিভির রেদওয়ান আরিফ, মাছরাঙ্গা টিভির আনিসুর রহমান নয়ন, ডিবিসির শাহরিয়ার ইসলাম, নিউজ টুয়েন্টিফোরের শরীফ সুমন, এসএ টিভির প্লাবন রাজু, এটিএন নিউজ এর উল্লাস চৌধুরি, বৈশাখী টিভির অন্তর সাহা, বাংলা ভিশনের রাব্বী, টাইমস অব বাংলাদেশের মোহাম্মদ কামাল হোসেন, নাগরিক টিভির মোহাম্মদ কামাল হোসেন, বৈশাখী টিভির রাফিজুল ইসলাম, যমুনা টিভির আমির হুসাইন, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর এর মিকাইল, সাংবাদিক রায়হান কবির, মো. আলী, মো. শহিদ, জাহিদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহিদে নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক গুলজার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী সম্পাদক কিরণ ইসলাম, সদস্য নিজাম উদ্দিন, হাসানুজ্জামান মাসুমসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।