ওবায়দুল হক বাদল:
জাতিকে বাঁচাতে আল্লাহর দেওয়া বিধান কার্যকর করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম হেসাইন মোহাম্মদ সেলিম। শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০ টায় রাজধানীর ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইডিইবি) অনুষ্ঠিত হেযবুত তওহীদের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদ আয়োজিত সম্মেলনে এবারের প্রতিপাদ্য হল ‘বিদ্যমান অশান্তি নিরসনে চাই আল্লাহর দেওয়া বিধান’।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘মুসলমান জাতি আজ আল্লাহর হুকুম-বিধান বাদ দিয়ে মানুষের তৈরি জীবন বিধান মেনে নিয়েছে। এর ফলেই সমাজে অন্যায়, অবিচার ও অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। সকল বাদ-মতবাদ বাদ দিয়ে আল্লাহর হুকুম-বিধান মেনে নিতে হবে, তবেই বিদ্যমান অশান্তি দূর হবে। নির্বাচন বা মানুষের বানানো তন্ত্রের মাধ্যমে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হলো আল্লাহর বিধান গ্রহণ করা।’
তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে একটি রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করবে কিনা তা নির্ভর করে ঐ রাষ্ট্রে গৃহীত ব্যবস্থা, নিয়ম-কানুন বা জীবনবিধানের (ঝুংঃবস ড়ভ ষরভব) উপরে। সিস্টেমটাই যদি ত্রুটিযুক্ত হয় তাহলে কখনোই সেখানে শান্তি আসবে না। বহুরকম চিন্তাভাবনা ও মতবাদ দিয়ে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা করা হয়েছে। যে সংবিধানটি ১৯৭২ সালে তৈরি করা হয়েছিল সেটাকে এ পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধনও করা হয়েছে। কিন্তু শান্তি আসেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষ বহু আইন-কানুন, বিধি-বিধান রচনা করেছে কিন্তু কোনো কিছু দিয়েই দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, রাজনৈতিক হানাহানি, রক্তপাত, গরিব মানুষের দুঃখ দুর্দশা, বৈদেশিক ঋণের চাপ, অর্থপাচার, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হয়নি বরং বেড়েই চলেছে। কারো সদিচ্ছা থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হয়নি। কারণ আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় মৌলিক ত্রুটি রয়েছে। এখন রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে যদি আমরা এসব দুর্গতি থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহলে প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা বজায় রেখে কিছু নিয়মকানুন পাল্টালে কোনো লাভ হবে না, আমাদেরকে রাষ্ট্রচিন্তা ও ব্যবস্থার বুনিয়াদি পরিবর্তনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

গণতন্ত্রের অসারতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “অধিকাংশ লোক বোঝে না, অজ্ঞ। হে রসুল, আপনি অধিকাংশ লোকের কথা শুনবেন না।” গণতন্ত্র তো এখানেই মারা যায়। এই জন্য জনসংখ্যা আমাদের বিজয়ের মূল ভিত্তি নয়। অস্ত্র বা অর্থও আমাদের বিজয়ের মূল ভিত্তি নয়। আমাদের বিজয়ের মূল সূত্র হচ্ছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। আল্লাহ আমাদের মুমিন হওয়ার তওফিক দান করুন। যদি আমরা মুমিন হতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের মতো অতি অল্পসংখ্যক মুমিনকে অধিক সংখ্যক প্রতিপক্ষের ওপর বিজয়ী করবেন।
হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমরা ২০০ বছর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের গোলাম ছিলাম। তারা ভারতবর্ষকে স্বাধীনতা দিয়ে যাবার সময় ধর্মের ভিত্তিতে আমাদেরকে দুইটি ভাগে ভাগ করল। আমরা পড়লাম পাকিস্তানের মধ্যে। প্রশ্ন উঠল, পাকিস্তান চলবে কিভাবে? আমাদের তো রাষ্ট্র পরিচালনা করার কোনো রূপরেখা নাই। ব্রিটিশ খ্রিস্টানদের দিয়ে যাওয়া ব্যবস্থায়ই রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করল আমাদের রাষ্ট্রনায়করা। সেই আমলা তন্ত্র, সামরিক বাহিনীর কাঠামো, হানাহানির রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, বহুমূখী শিক্ষা ব্যবস্থা; সবই ব্রিটিশদের তৈরি করা। অথচ জনগণকে বলা হয়েছিল যে, পাকিস্তান হবে ইসলামি রাষ্ট্র। কিন্তু তারা ইসলাম কায়েম করতে পারেনি।
এরই ধারাবাহিকতায় ’৭১ সালে আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও সেই একই সমস্যা দেখা দিল। চিন্তা-ভাবনা, গবেষণা করে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ আর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এই চারটি মূল নীতির উপর ভিত্তি করে শেষ পর্যন্ত একটা জগাখিচুড়ি মার্কা সংবিধান রচনা করলেন। সেই সংবিধান দিয়েই চলতে থাকল আমাদের দেশ। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই দেশে শুরু হলো চরম অশান্তি। নতুন লুটেরা সৃষ্টি হল। ফলে তখনকার শাসকরা চরমভাবে বিতর্কিত হলেন।
’২৪ এর গণঅভ্যুত্থ্যানের পরে সবাই বলছেন যে, এখন আর ‘৭১ পরবর্তী মুজিববাদ চলবে না। এখন আবার নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। এই বিষয়ে আমি বলতে চাই, আপনারা মুজিববাদ বাদ দিয়ে আবার অন্য একটা তন্ত্র নিবেন, সেটারও একই রেজাল্ট হবে। কারণ এগুলো সবই মানুষের তৈরি করা। সময় এসেছে সকল তন্ত্র-মন্ত্র, ইজম, ক্র্যাসি বাদ দিয়ে আল্লাহর বিধান দিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়ার। তাহলেই দেশে শান্তি আসবে। অন্যথায় নয়।
‘মানুষের তৈরি বিধান দিয়ে শান্তি আসবে না -এটা এখন প্রমাণিত। আর কত বৃথা চেষ্টা করবেন আপনারা? এখনই সময়, বিদ্যমান অশান্তি থেকে বাঁচতে, জাতিকে বাঁচাতে আল্লাহর দেওয়া বিধান কার্যকর করার।’- বলেন ইমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
ঢাকা মহানগর সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে আল্লাহ যে জীবনব্যবস্থা পাঠিয়েছেন, সেখানে যেমন নামাজ-রোজা ইত্যাদির বিধান দিয়েছেন, একইভাবে তিনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিচারিক, সামরিক ইত্যাদি সকল বিষয়ের বিধানও দিয়েছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই সবচেয়ে ভালো জানবেন কোন বিধানে মানুষের জীবনে শান্তি আসবে। হেযবুত তওহীদ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অধিপতি মহান আল্লাহর দেওয়া বিধানের দিকে মানুষকে আহ্বান করে যাচ্ছে।- বলেন তিনি।
আল আমিন সবুজ ও মুখলেছুর রহমান সুমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের প্রধান উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, হেযবুত তওহীদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নারী বিভাগের প্রধান রুফায়দাহ পন্নী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক উম্মুত তিজান মাখদুমা পন্নী, শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা রাজিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, সাহিত্য সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ফরিদ উদ্দিন রব্বানী, অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পাদক হারিসুর রহমান প্রমুখ।