হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

চিরকাল ধর্মই ছিল আইনের উৎস

মোহাম্মদ আসাদ আলী

পৃথিবী আজ তার ইতিহাসের ভয়াবহতম ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। মানবজাতি তাদের লক্ষ লক্ষ বছরের অস্তিত্বের মাঝে বর্তমানের মত এত বড় দুর্যোগের সম্মুখীন আর কখনও হয়নি। সমস্ত পৃথিবী আজ অন্যায়-অবিচার, যুদ্ধ-রক্তপাত এককথায় অশান্তিতে পরিপূর্ণ বসবাসের অযোগ্য একটা মৃত্যুখাদে পরিণত হয়েছে। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বে কারণ তার মধ্যে বিরাজিত আল্লাহর দেওয়া আত্মা তো বহু আগেই মারা গেছে। এখন মৃত্যুর সম্মুখীন তার শারীরিক অস্তিত্ব।
কেন মানুষ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি হল? এমন তো হবার কথা ছিল না! মানবজাতির অতীত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, মানুষকে নিজেদের মধ্যে অশান্তি, অবিচার, মারামারি না করে শান্তিতে, ইসলামে থাকার জন্য জীবনবিধান দিয়ে আল্লাহ যুগে যুগে পৃথিবীর প্রতি স্থানে, প্রতি জনপদে, প্রতি জাতিতে তাঁর প্রেরিতদের, নবীদের পাঠিয়েছেন (কোর’আন- সুরা আন নহল ৩৬)। মানুষ জাতির কিছু অংশ তা গ্রহণ ও প্রতিষ্ঠা করেছে, কিছু অংশ করেনি। যারা গ্রহণ করেছে তাদের সমাজের রাজনীতি, অর্থনীতি ইত্যাদি জীবনের সমস্ত কিছুই ঐ ব্যবস্থার নির্দেশে পরিচালিত হয়েছে। তাদের সমাজের আইনের উৎস শুধু ঐ জীবন-বিধান বা ধর্মই ছিল না ঐ বিধানই আইন ছিল, ওর বাহিরের কোন আইন সমাজ গ্রহণ করত না। অনেক কারণে আল্লাহর দেয়া জীবন-বিধান বদলিয়ে ফেলে বা ইচ্ছামত তার ভুল ব্যাখ্যা করে তা চালানো হয়েছে। কিন্তু ঐ ভুল ও অন্যায় আইনকেও সেই ধর্ম বা দীনের আইন বলেই চালানো হয়েছে। তার বাহিরের, মানুষের তৈরি বলে চালানো যায় নি। পৃথিবীর ইতিহাসকে না তলিয়ে, শুধু এক নজরে যারা পড়েছেন তারাও এ কথা অস্বীকার করতে পারবেন না যে মানব সমাজ চিরদিন শাসিত হয়ে এসেছে ধর্মের আইন দিয়ে। যখন যেখানে যে নবী ধর্ম বা জীবন-বিধান প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেখানে রাজা বা শাসনকর্তা শাসন করেছেন সেই আইন দিয়ে- অন্য কোন কিছু দিয়ে নয়। আইনের নির্দেশ, উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেছেন সমাজের বিজ্ঞেরা, পুরোহিতরা, আর তাকে প্রয়োগ করেছেন রাজারা, শাসকরা। ওর বাইরের কোন আইন, আদেশ চালাবার চেষ্টা করলে সমাজ তা গ্রহণ করত না, প্রয়োজনে বিদ্রোহ করত। উদাহরণ হিসাবে পশ্চিম এশিয়া নিন। ইহুদিদের আগে ওখানে ‘আমন’ বা ‘রা’ দেবতা থেকে শুরু করে অনেক রকম দেব-দেবীর ধর্মের আইন চলতো। ওগুলোও পূর্বতন কোন নবীর আনা দীনের বিকৃতির ফল ছিল। ইব্রাহিম (আ.) আবার আল্লাহর একত্ববাদ, তওহীদ প্রতিষ্ঠা করার পর ইহুদিরা যতদিন মধ্য এশিয়ায় ছিল ততদিন ঐ আল্লাহ প্রেরিত দীনই ছিল তাদের জাতির আইন।

ভারতের কথা ধরুন। রামায়ন, মহাভারতসহ ইতিহাস পড়ুন। দেখবেন রাজারা শাসন করেছেন শাস্ত্রানুযায়ী- অর্থাৎ ওটাই ছিল শাসনতন্ত্র (Constitution)। ঐশ্বরিক বইয়ের (Scripture) উপর ভিত্তি করে শাস্ত্র, সেই শাস্ত্রের বিধান দিতেন ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা এবং বিধান বা আইন জনগণের উপর প্রয়োগ ও তার রক্ষার দায়িত্ব ছিল ক্ষত্রিয় রাজাদের উপর। এই শাস্ত্রীয় বিধানের বিরুদ্ধে কোন আদেশ, নির্দেশ দেয়া রাজা বা শাসকের সাধ্য ছিল না। ইউরোপের অবস্থাও তাই ছিল। পোপের নির্দেশে রাজ্য শাসন করতেন রাজারা। কোনো রাজা পোপের নির্দেশ অমান্য করতে পারতেন না- করলে তার দুরবস্থার সীমা থাকতো না। মোট কথা পৃথিবীর কোথাও আইনের উৎস ধর্ম ছাড়া আর কোন কিছুকে গ্রহণ করা হয় নি।

প্রশ্ন হতে পারে, তাই যদি হয় তবে আল্লাহর তওহীদের বিরোধী মূর্তিপূজা তাহলে কোথা থেকে এলো, গ্রিকদের গণতন্ত্রই বা কেমন করে গজালো? যতটুকু জানা যায়, শয়তানের প্ররোচনায়, নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির উদ্দেশ্যে অমলিন একত্বকে মুখে স্বীকার করেও কাজে বহুর পূজা করা হয়েছে। কিন্তু এই মূর্তির বা বহুর পূজা বা উপাসনাকেও কিন্তু স্রষ্টার, আল্লাহর ধর্মের নামে, তাদের উপর যে রসুল এসেছিলেন তারই নামে চালাতে হয়েছে- এই আমার বক্তব্য। আড়াই হাজার বছর আগে গ্রিকরা গণতন্ত্র নিয়ে যে একটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন তা ছিল ক্ষণস্থায়ী ও অতি ছোট শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সেটাও ধর্ম থেকে আলাদা হয়ে করা হয়েছিল তার কোন প্রমাণ নেই। বরং তখনকার দিনের শিল্প, দেব-দেবীর মূর্তির, মন্দিরের যে সব নিদর্শন পাওয়া গেছে তাতে ধর্মের শক্তিশালী প্রভাবই পাওয়া যায়। যদি ধরেও নেয়া যায় যে গণতন্ত্রের ঐ পরীক্ষা ধর্ম-নিরপেক্ষ ছিল, তা হলেও তা মানুষের হাজার হাজার বছরের ধর্মের ইতিহাসে এক ফোঁটার বেশি জায়গা নিতে পারে না।

কিন্তু বর্তমানে কোন নির্দিষ্ট জাতি, বর্ণ বা এলাকার অধিবাসী নয়, বরং সমস্ত পৃথিবীর মানুষ আজ তাদের জাতিয় জীবন পরিচালনা করছে তাদের নিজেদের তৈরি সিস্টেমে। যে সিস্টেমে ন্যায়-অন্যায়ের মানদণ্ড স্রষ্টা নন, তারা নিজেই। ঠিক এই কর্মের কুফলই মানবজাতি বর্তমানে ভোগ করছে। ভারসাম্যহীন সিস্টেমকে প্রতিষ্ঠা করে সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করার ফলে মানুষ আজ হয়ে পড়ছে ভারসাম্যহীন, আত্মাহীন, মানবতাহীন, দেহসর্বস্ব, একটি প্রাণীবিশেষ। শুধু তাই নয়, বনের পশুদের মধ্যে যে একতা থাকে, সম্প্রীতি থাকে তাও এই মানবজাতির পরিচয় বহনকারীদের মাঝে অনুপস্থিত। কাজেই তাদের এহেন কর্মকাণ্ডের পরিণতি ধ্বংস ছাড়া আর কীই বা হতে পারে?

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...