হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

চলমান জড়বাদী ধর্মহীন সভ্যতা দাজ্জাল ইবলিসের চূড়ান্ত প্রকাশ

রিয়াদুল হাসান
১৪০০ বছর ধরে মুসলিম নামধারী জাতিটির ঘরে ঘরে দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা চলে আসছে। এ সময়ের মধ্যে দাজ্জাল নিয়ে বহু গবেষণা, বই-পুস্তক আর ফতোয়ার ছড়াছড়ি হয়েছে। কথিত ধর্মনেতারা তাদের ক্ষুরধার মেধাকে কাজে লাগিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওয়াজ করেছেন, মানুষকে দাজ্জালের ফেতনা সম্পর্কে অবহিত করেছেন। আজও করে চলেছেন। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো-সবার অজান্তেই সেই দানব দাজ্জাল ইতোমধ্যেই পৃথিবীতে এসে গেছে। এমনকি শৈশব, কৈশোর অতিক্রম করে দাজ্জালের এখন যৌবনকাল চলছে। দোর্দণ্ড প্রতাপে সারা পৃথিবীকে সে তার পদানত করে রেখেছে; সারা পৃথিবীর মানুষকে সে বাধ্য করেছে তাকে রব (প্রভু) মানতে। কিন্তু তওহীদের ঝা-াবাহী মো’মেন ছাড়া কেউ তাকে চিনতে পারছে না, আর তাই প্রতিরোধও করছে না। কারণ আল্লাহর রসুল বলেছেন- লেখাপড়া না জানলেও কেবল মো’মেনরাই তাকে চিনতে পারবে, অন্যদিকে কাফের-মোশরেক ব্যক্তি যতই আলেম (জ্ঞানী) হোক না কেন দাজ্জালকে চিনতে পারবে না।
মানবতার মহাশত্রু, ইবলিসের চূড়ান্ত প্রকাশ এই দাজ্জালকে চিহ্নিত করেছেন এ যামানার এমাম, এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি কোর’আন, হাদীস, বাইবেলসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, বিজ্ঞান ও ইতিহাস দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, পাশ্চাত্যের ‘বস্তুবাদী ইহুদি-খ্রিষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতা’ই রসুল বর্ণিত দানব দাজ্জাল, যেটাকে তৎকালীন মানুষের বোঝার সুবিধার জন্য রসুলাল্লাহ রূপকভাবে বর্ণনা করেছিলেন। দাজ্জালের জন্ম হয়েছে আজ থেকে ৪৮১ বছর আগে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরির রাজত্বকালে। রাষ্ট্র পরিচালনায় খ্রিষ্টধর্মের ব্যর্থতার কারণে ১৫৩৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে পৃথক করে জন্ম দেয়া হয় ধর্মনিরপেক্ষতার, যার পরিণত রূপ আজকের ইহুদি-খ্রিষ্টান বস্তুবাদী ‘সভ্যতা’ বা দাজ্জাল।
সার্বভৌমত্ব আল্লাহর হাত থেকে মানুষের হাতে তুলে নেবার পর সংবিধান, আইন-কানুন, দ-বিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি তৈরি করে মানব জীবন পরিচালনা আরম্ভ হলো, যার নাম দেয়া হলো ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র (Secular Democracy)। এই গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব রইল মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠের হাতে। অর্থাৎ মানুষ তার সমষ্টিগত, জাতীয় জীবন পরিচালনার জন্য সংবিধান ও সেই সংবিধান নিঃসৃত আইন-কানুন প্রণয়ন করবে শতকরা ৫১ জন বা তার বেশি। যেহেতু মানুষকে আল্লাহ সামান্য জ্ঞানই দিয়েছেন সেহেতু সে এমন সংবিধান, আইন-কানুন দ-বিধি, অর্থনীতি তৈরি করতে পারে না যা নিখুঁত, নির্ভুল ও ত্রুটিহীন, যা মানুষের মধ্যকার সমস্ত অন্যায়, অবিচার দূর করে মানুষকে প্রকৃত শান্তি (ইসলাম) দিতে পারে। কাজেই ইউরোপের মানুষের তৈরি ত্রুটিপূর্ণ ও ভুল আইন-কানুনের ফলে জীবনের প্রতিক্ষেত্রে অন্যায় ও অবিচার প্রকট হয়ে উঠল। বিশেষ করে অর্থনৈতিক জীবনে সুদভিত্তিক ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করায় সেখানে চরম অবিচার ও অন্যায় আরম্ভ হয়ে গেল। মুষ্টিমেয় মানুষ ধনকুবের হয়ে সীমাহীন প্রাচুর্য্য ও ভোগবিলাসের মধ্যে ডুবে গেল আর অধিকাংশ মানুষ শোষিত হয়ে দারিদ্র্যের চরম সীমায় নেমে গেল। স্বাভাবিক নিয়মেই ঐ অর্থনৈতিক অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে ইউরোপের মানুষের এক অংশ বিদ্রোহ করল ও গণতান্ত্রিক ধনতন্ত্রকে বাদ দিয়ে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করল। ইউরোপের মানুষের অন্য একটা অংশ গণতান্ত্রিক পদ্ধতির অন্যান্য দিকের ব্যর্থতা দেখে সেটা বাদ দিয়ে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করল। অর্থাৎ গণতন্ত্র থেকে একনায়কতন্ত্র, ধনতন্ত্র থেকে সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ এগুলো সবই অন্ধকারে হাতড়ানো, এক ব্যবস্থার ব্যর্থতায় অন্য নতুন আরেকটি ব্যবস্থা তৈরি করা। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রকৃতপক্ষে সমষ্টিগত জীবনের ধর্মহীনতা অবলম্বন করার পর থেকে যত তন্ত্র (-cracy), যত বাদই (-ism) চালু করার চেষ্টা ইউরোপের মানুষ করেছে সবগুলোর সার্বভৌমত্ব মানুষের হাতেই ছিল। অর্থাৎ রাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, একনায়কতন্ত্র, এসবগুলোই মানুষের সার্বভৌমত্বের বিভিন্ন ধাপ, বিভিন্ন পর্যায় (Phase, step) মাত্র। এই সবগুলো তন্ত্র বা বাদের সমষ্টিই হচ্ছে এই ইহুদী-খ্রিষ্টান সভ্যতা, দাজ্জাল।

[লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট, যোগাযোগ: ০১৬৭০-১৭৪৬৪৩, ০১৭১১-০০৫০২৫]

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...