হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

‘গণতান্ত্রিক সন্ত্রাস’ কেন বৈধ হবে?

রিয়াদুল হাসান

জঙ্গিবাদ বর্তমান পৃথিবীর এক প্রবল সংকট। বাংলাদেশ সরকার এ সংকট মোকাবেলায় আগাগোড়াই বেশ তৎপরতা প্রদর্শন করেছে। আমরা দেখেছি আফগানফেরতা বাংলাদেশিদের দ্বারা যখন এদেশে জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটল তখন থেকেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তিকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। হত্যাকারী তো বটেই, হুকুমের আসামিদেরকেও ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে হাজারে হাজারে। প্রতিদিনের পত্রিকায় এসব সংবাদ আমরা দেখেছি। তারপর রমনা বটমূলে হামলা, সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, সিনেমাহল, আদালত প্রাঙ্গনে বোমা হামলার পথ বেয়ে হলি আর্টিজান পর্যন্ত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারগুলোর জিরো টলারেন্স মনোভাব আমরা দেখেছি। এরপর এসেছে, জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো এবং তাদের আত্মঘাতী হওয়ার ধারাবাহিক ঘটনা-পরিক্রমা। অক্টোবর ২০১৮-তেও এমন ঘটনা ঘটছে।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই যে কঠোর মনোভঙ্গি তা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বজ্ঞান ও দায়বদ্ধতারই প্রতিফলন। এই অবস্থান অবশ্যই আশা-জাগানিয়া।

আমাদের সংবিধানের ২৭ নম্বর আর্টিকেলে বলা আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান (All citizens are equal before law and are entitled to equal protection of law)। আইন যদি কারো ক্ষেত্রে কঠোর কারো ক্ষেত্রে নমনীয় হয় তাহলে রাষ্ট্রের উপর নাগরিকদের আস্থা বিনষ্ট হয়। এর একটি উদাহরণ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেই আমর দেখতে পাই। সেটা হচ্ছে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরূপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। গত ৪৭ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে দৃশ্যটা দেখতে পাচ্ছি সেটা হলো এখানে গণতন্ত্রের নামে সবাই ক্ষমতা দখল করতে চায়, ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। গণতন্ত্রের নাম দিয়ে করলে সব কাজই জায়েজ হয়ে যায়। মানবতা, মানবাধিকার, ন্যায়-অন্যায়, বৈধ-অবৈধের কোন বালাই থাকে না।

স্বাধীনতার পর থেকে বারবার বাংলাদেশে রাজনৈতিক কারণে বিপর্যকর পরিস্থিতি ও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হাজারো মায়ের বুক খালি হয়েছে, হাজারো সন্তান এতিম হয়েছে, দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে। এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি কারা সৃষ্টি করেছে? সেক্যুলার দলগুলো নয় কি? এই রাজনৈতিক দলগুলো কী পরিমাণ তাণ্ডব চালিয়েছে দেশে, কত লোক হত্যা করেছে, দেশের কত লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি করেছে সে চিত্র সকলের সামনে রয়েছে। বিস্মৃতিপরায়ণ বাঙালি বারবার প্রতারিত হয়েছে ভুলে যাওয়ার দরুন। তাদের সামনে দুটো বিষের পেয়ালা। একটা লাল আরেকটা নীল। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাঁচ বছর অন্তর যে কোনো একটি বিষের পেয়ালা তারা পান করবে। বিষ খাবো না – এমন চিন্তাও তাদের মনে জাগ্রত হয় না। তাদেরকে দিনরাত গণমাধ্যগুলো শেখাচ্ছে গণতন্ত্রের চর্চা করো, শান্তি আসছে না- আরো বেশি চর্চা করো। গণতন্ত্র কোনো গন্তব্য নয়, গণতন্ত্র একটি পথ। আজীবন এই পথেই চলতে থাকো। গন্তব্য তো এক মরীচিকা। এই সিস্টেমকেই তারা জীবন মনে করছে যেন এর বাইরে কিছু হতে পারে না। এই অন্ধত্ব, এই মূর্খতা, এই চিন্তা না করার প্রবণতা বাঁচিয়ে রেখেছে গণতন্ত্রের পুরোহিত রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের ‘প্রোপাগান্ডা মেশিন’ গণমাধ্যমগুলো।

একটু পেছনে ফিরে যাই। আমাদের অনেকের মধ্যেই একটি প্রবণতা আছে যে, আমরা সবাইকে কোনো না কোনো খোপে ফেলে চিন্তা করি। আমি যদি বিএনপি কর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিরুদ্ধে বলি ধরে নেওয়া হবে আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক। একইভাবে যদি গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে কথা বলি ধরে নেওয়া হবে আমি একাত্তরের চেতনাবিরোধী। আমরা এই গতানুগতিক চিন্তাপদ্ধতির উপরে উঠে যদি বিগত কয়েক বছরের ‘গণতান্ত্রিক সন্ত্রাস’ আর ‘ধর্মীয় সন্ত্রাস’ এর মধ্যে তুলনা করি তাহলে দেখব ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা গো-হারা হেরে যাবে গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসীদের কাছে। ৬৩ টি জেলায় সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মপ্রকাশ করা জেএমবি সর্বসাকুল্যে কয়জন মানুষকে হত্যা করেছে? খুব বেশি হলে শ’ খানেক। এর প্রতিক্রিয়ায় সর্বাগ্রে যেটা করা হয়েছে তা হলো তাদের দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, গণগ্রেফতার করা হয়েছে, সরকারি বাহিনীগুলো অভিযান চালিয়ে ‘জঙ্গিনিধন’ করেছে, নেতাদেরকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের পক্ষে যা যা করা সম্ভব কিছুই বাদ রাখা হয়নি। জঙ্গিবাদ হচ্ছে ধর্মের নামে চালানো সন্ত্রাসবাদ। এটি অবশ্যই মহা অন্যায় কাজ, তাই রাষ্ট্র জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে এটাই বাঞ্ছনীয়, রাষ্ট্রের কাজই দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন। কিন্তু গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসীরা যে ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বিগত বছরগুলোতে তার প্রতি সুধিজন, দেশি-বিদেশি বোদ্ধামহল, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচন কমিশন, সরকার – এদের দৃষ্টিভঙ্গি নমনীয় কেন? কেন গণতান্ত্রিক সন্ত্রাসীদের দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয় না, কেন দলের কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য সেই দলের নেতৃত্বকে হুকুমের আসামি বানিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয় না, কেন তাদের নিবন্ধন বাতিল না করে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়।

আবারও বলছি, কেউ যেন না ভাবেন যে আমি নির্দিষ্ট কোনো দল বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বলছি। আমাদের দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ, লঙ্কায় গেলে তারা উভয়েই রাবণ বনে যায়। ক্ষমতার বাইরে যেই থাকে সেই সরকার পতনের আন্দোলন চালাতে গিয়ে দেশকে নরককুণ্ডে পরিণত করে। এই সহিংসতার চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছি বিগত আন্দোলনগুলোয়। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। এসময় সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতার ৪১৯ টি প্রধান ঘটনায় ৪৯২ জন নিহত হয় এবং ২২০০ জন আহত হয়। আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারো নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। শত শত যানবাহন ভাংচুর করে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় পেট্রোল বোমা, হাতে বানানো বোমা এবং অন্যান্য সহিংসতায় ২০জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। সহিংসতার সময় রাস্তার পাশে থাকা হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। এছাড়া, ছোট দোকান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও আগুন দেয়া হয়। মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গীর্জা ভাঙচুর করাসহ পবিত্র কুরআনের শত শত কপি জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটে। নির্বাচনের দিন, একজন প্রিসাইডিং অফিসারসহ মোট ২৬ জন রাজনীতিক সহিংসতার বলি হয়। সারাদেশে ৫৮২টি স্কুলে ভোটকেন্দ্রে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে।

২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন আবারও জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়। ওই সময় ২৩১ জনকে হত্যা করা হয় যাদের বেশিরভাগই পেট্রোল বোমা এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায়। ওই ঘটনায় আহত হয় আরো ১ হাজার ১শ ৮০ জন। সেসময় ২,৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি এবং ৮টি যাত্রীবাহী জাহাজে আগুন লাগানো হয়। ওই সময় হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় সরকারি অফিসগুলো। এই রাজনৈতিক সহিংসতায় ভাঙচুর এবং আগুনে পুড়ে ৬টি ভূমি অফিসসহ ৭০টি সরকারি কার্যালয় নষ্ট হয়ে যায়।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মতে, হরতাল-অবরোধের প্রতিটি দিন দেশের ১৬০০ কোটি টাকা (অথবা ১৯২.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বা জিডিপি’র ০.২ শতাংশ ব্যয় হয়। এর অর্থ ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে এ সকল হরতাল-অবরোধে দেশের ১.৫৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ ক্ষয় হয়। তবে এই ক্ষতি কেবল ব্যবসায়িক খাতের ক্ষতি। রাজনৈতিক সহিংসতায় যে সম্পদের ক্ষতি হয়েছে তা এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।

জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের পরবর্তী সহিংস ঘটনায় ২০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি সম্পদ নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় সারাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়। হরতালের কারণে বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থাও চূড়ান্তভাবে ভেঙে পড়ে। সে সময় একেকটি হরতালের কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে ঝরে গেছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ।

কথা হচ্ছে এই যে বিপর্যয় যারা সৃষ্টি করল তারাও কি জঙ্গিবাদীদের সমান বা অধিক অপরাধে অপরাধী নয়, তারাও কি জঙ্গি নয়? কিন্তু আজকে তাদের অবস্থান কী? আইনের চোখে তাদের অবস্থান কী? জাতি তাদেরকে কী চোখে দেখে?

তাদের অবস্থা হলো, নির্বাচন কমিশন তাদেরকে নিয়ে বৈঠক করে, মিডিয়াগুলি তাদের নেতানেত্রীদের সাক্ষাৎকার প্রচার করে, তারা রাজধানীতে মহাসমাবেশ করে, গণসংযোগ করে, ভোট চায় এমন কি তারা ক্ষমতায় যাবে যাবে ভাব। অর্থাৎ তারা ভীষণ বৈধ। কারণ, হিসাব সোজা- দুই যোগ দুই চার। আজকে সমস্ত দুনিয়া পাশ্চাত্য বস্তুবাদী ধর্মহীন ‘সভ্যতা’ তথা দাজ্জালের করায়ত্ত। তারা পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের প্রচারক, তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে অন্যের দেশ ধ্বংস করাকে, লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করাকে কেবল জায়েজ নয়, উত্তম কাজ মনে করে। ইরাকে তারা এ অজুহাতে দশ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে। সে তুলনায় বাংলাদেশে যা হয়েছে তা তো নস্যি। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে তো এই কথা বলাই যায় যে, নরহত্যা-জ্বালাও পোড়াও কোনো ফ্যাক্টর নয়, ফ্যাক্টর হলো ইসলাম। জঙ্গিবাদীরা ইসলামের নামে যা করেছে তাও ইসলামসম্মত ছিল না, তারাও ইসলামকে ব্যবহার করছে ধর্মমোহে পড়ে, আরো নির্দিষ্ট করে বললে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে। তবে সেটা অন্য প্রসঙ্গ।

যাহোক, যে কারণে এ প্রসঙ্গের অবতারণা করছিলাম, যে দেশে ন্যায়-অন্যায় এর কোন বালাই নাই সে দেশটি শান্তিতে থাকার যোগ্য নয়, শান্তির হাজার প্রচেষ্টাও সেখানে নিষ্ফল হতে বাধ্য। অন্যায় যে-ই করবে তার দাড়ি থাকুক আর নাই থাকুক, আরবি লেবাস পরুক বা মুজিব কোট পরুক, জিন্দাবাদ বলুক বা জয় বাংলা বলুক, ইসলাম করুক আর গণতন্ত্রই করুক কিংবা সমাজতন্ত্রই করুক সেটাকে অন্যায় হিসাবে সমদৃষ্টিতে দেখতে হবে, তাদেরকে সমান শান্তি দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে এ পর্যন্ত বাস্তবে দেখে এসেছি সম্পূর্ণ উল্টো। যে ইসলামের কথা বলে সে কোনো আইনভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়, জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়া হয়। আর গণতান্ত্রিকরা করলে সাধারণ পিনাল কোডে মামলা করা হয়। এই অবিচারকে ন্যায্য মনে করা আমরা কোথায় শিখলাম?

তাই এই জাতি যতক্ষণ না পর্যন্ত ন্যায় অন্যায় আলাদা করতে পারবে অর্থাৎ অন্যায় যে-ই করুক সেটা অন্যায়, তাকে ঘৃণা করা হবে, তার শাস্তি হবে। আর ন্যায় যেই করুক সেটা ন্যায়- তাকে সম্মান করা হবে, পুরস্কৃত করা হবে। এখানে তার বিশ্বাস বা লেবাস বা দল কোনো প্রভাব ফেলবে না। জাতি যতক্ষণ এই মানদণ্ডে আসতে না পারবে ততক্ষণ তাদের সমাজে শান্তি আসবে না, তাদের ওপর থেকে আল্লাহর শাস্তি, অভিশাপও যাবে না। সতর্ক না হলে একটা পর্যায়ে তাদের দশা হবে ইরাক সিরিয়া লিবিয়ার মতো, আদ-সামুদের মতো। এটা প্রাকৃতিক বিধান। যখন গণতন্ত্রের নামে প্রভাবশালীর অন্যায়কে উপেক্ষা করা হয় আর দুর্বলের উপর আইন চাপানো হয় তখন সেই গণতন্ত্র হয় নির্যাতনের কল। আমরা এ জাতীয় গণতন্ত্রকে ঘৃণা করি, প্রত্যাখ্যান করি।

কেউ আপত্তি করতে পারেন যে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গে বিপক্ষশক্তিকে বা জঙ্গিবাদী দলগুলোকে এক কাতারে দাঁড় করাচ্ছি কোন যুক্তিতে?

হ্যাঁ, আমি সচেতনভাবেই এ যুক্তি তুলে ধরছি কারণ, দেশের সংবিধান মোতাবেক ন্যায়-অন্যায়ের মানদণ্ডে, আইনের দৃষ্টিতে কোনো বড় ছোট নেই, ধর্ম-বর্ণ নেই। একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ইসলামের নামে কথা বললে দলিত-মথিত হবে, আর গণতন্ত্রের লেবাস পরলে পুষ্পমাল্যে বরিত হবে- এটা তো সংবিধানপরিপন্থী। ইসলামের নাম নিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীরা যে অপরাধের ফাঁসির দড়িতে ঝুলেছেন বা অন্যান্য সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের সে দণ্ডপ্রাপ্তিকে আমি ন্যায়সঙ্গত মনে করি, কিন্তু প্রশ্ন হলো সেই একই ধরনের অপরাধ যখন বহুগুণ বেশি পরিমাণে সেক্যুলার দলগুলোর দ্বারা সংঘটিত হয় তখন তাদেরকে কেন ফাঁসি ও সমপরিমাণ দণ্ড দেওয়া হবে না? এটা না করা হলে একটা পর্যায়ে রাষ্ট্রের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।

লেখাটি শেয়ার করুন আপনার প্রিয়জনের সাথে

Email
Facebook
Twitter
Skype
WhatsApp
সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...