হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

একজন মানুষ পাল্টে দিয়েছেন একটি জনপদ

একজন মানুষ পাল্টে দিয়েছেন একটি জনপদ, সৃষ্টি করেছে এক নতুন দৃষ্টান্ত, তৈরি করেছেন এক আদর্শ গ্রাম। তিনি হলেন চাষীরহাটের কৃতী সন্তান, চাষীরহাটের উন্নয়নের রূপকার হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। ব্যাপারটি পরিষ্কার হলো- চাষীরহাট উন্নয়ন মেলায় এসে। নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষীরহাট ইউনিয়নের ‘চাষীরহাট নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয়’ মাঠে সাতদিনব্যাপী এই মেলা শুরু হয়েছে গত শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) থেকে। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজন এমন কিছু নেই যা এখানে পাওয়া যায়নি। গরুর গোস্ত, মহিষের গোস্ত, খাসির গোস্ত, মুরগি, হাঁস, ডিম, দুধ, ইলিশ মাছ, সামুদ্রিক মাছ, দেশি মাছ, চুনা মাছ, চাষের বিভিন্ন ধরনের মাছ, সর্বপ্রকার কাচা তরকারি, শাক-সবজি, পোশাক-আশাক, বাচ্চাদের পোশাক, নারীদের পোশাক, পুরুষদের পোশাক, বাচ্চাদের খেলনা, ক্রোকারিজ আইটেম, ফার্নিচার, সৌখিন বিভিন্ন জিনিসপত্র, খাবারদাবারসহ সর্বপ্রকার দ্রব্যাদি পাওয়া গেছে এই মেলায়।
মেলার বিশেষ আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার দই, নাটরের কাচাগোল্লা, পাবনার ঘি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কলাই রুটি, রাজশাহীর খেজুরগুড়, মহাস্থানগড়েরর কটকটি, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, চাঁদপুরের ইলিশ, লক্ষ্মীপুরের নারকলে এবং হারিয়ে যেতে বসা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী শতাধিক আইটেমের পিঠা-পায়েশ। আর এর সিংহভাগ পণ্যই মূলত উৎপাদন করছে চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রতিষ্ঠন। চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্ষুদ্রশিল্প, খাদ্যপ্রস্তুত, পোশাক শিল্প, মাৎস ইত্যাদি অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মূলত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই চাষীরহাট অঞ্চলটি একটি অজপাড়া গাঁ থেকে সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন একটি স্মার্ট গ্রামে রূপ নিয়েছে। আর এর পেছনে যিনি মূল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তিনি হলেন হেযবুত তওহীদ আন্দোলনের সর্বোচ্চ নেতা এই চাষীরহাটের কৃতী সন্তান হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।
কাজের প্রয়োজনেই প্রতিদিন আমাকে মেলায় যেতে হয়েছে। মেলা ঘুরে দেখা গেল এই একজন মানুষ যেন এখানে প্রতিটি মানুষের মাথার তাজ হয়ে আছেন। সকাল বেলা যখন মেলাতে কোনো দর্শনার্থীর ভিড় নেই তখন থেকেই তিনি প্রতিটি স্টলে ঘুরে ঘুরে খোঁজ নিচ্ছেন বেচাকেনা, তাদের থাকা-খাওয়ার সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে। কোনো পণ্য নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে কি না, কোনো পণ্যে আবার ত্রুটি আছে কি না, কেউ চড়া দাম রাখছে কি না সব তদারক করে বেড়াচ্ছেন। মেলা প্রাঙ্গণে যেন কোনো ময়লা-আবর্জনা না থাকে সেটাও পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নিচ্ছেন, এমনকি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পর্যন্ত ঠিক আছে কিনা নিজে তদারক করছেন। কীভাবে আগত দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া যায় তিনি সেটা নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনা করছেন। বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে সর্বোচ্চ মূল্যছাড় দেবার ব্যবস্থা করছেন আর চাষীরহাট উন্নয়ন প্রকল্পের পণ্যে তিনি নিজ দায়িত্বে অভাবনীয় ছাড় দিয়ে বিক্রী করছেন।
মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের গ্রামকে একটি আদর্শ গ্রাম, একটি স্মার্ট গ্রাম তৈরির চেষ্টা করছি। এখানে অর্ধশতাধিক উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান দিয়েছি। এখন আশে-পাশের দশ গ্রামের মানুষ তো সেটা জানতে হবে, তারা যদি আমাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মান যাচাই করতেই না পারে তাহলে আমার এ উন্নয়নের সুফল তারা কীভাবে পাবে। আমাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা দ্বারা সারা দেশের মানুষই উপকৃত হচ্ছে কিন্তু স্থানীয়রা যেন এটা ভালোভাবে বুঝতে পারে, জানতে পারে এজন্যই মূলত এই মেলার আয়োজন। তাছাড়া মেলা হলো গ্রামবাংলার এক ঐতিহ্য, কিন্তু এই মেলায় জুয়া, অশ্লীল সব কর্মকাণ্ড যুক্ত করে মেলার সেই অনাবিল সৌন্দর্য নষ্ট করা হয়েছে, যার ফলে এখন আর গ্রামে তেমন মেলা আয়োজন হতে দেখা যায় না। যাও কিছু মেলার আয়োজন হয় সেখানেও মানুষ পরিবারসহ যেতে পারে না। আমরা চেয়েছি এমন এক দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে যে, মেলায় মানুষ যেন পরিবারসহ আসতে পারে। এখানে দেখেন পরবারসহ মানুষ আসছে, কেনাকাটা করছে। সমগ্র গ্রামে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের লাভ বা লোকসান যেটাই হোক আমি খুশি, গ্রামের মানুষের মাঝে এমন ঐক্য, এমন আনন্দ দেখে।’
সাধারণত মানুষ যখন শিল্প-কলকারখানার চিন্তা করে, বড় পরিসরে ব্যবসার চিন্তা করে তখন গ্রাম থেকে শহরে চলে আসে। কারণ গ্রামের মানুষের কাছে অর্থকড়ি কম, বিদ্যুৎ, যোগাযোগব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ-সুবিধার অভাব ইত্যাদি কারণে গ্রামে কেউ শিল্প গড়ে তুলতে চায় না। কখনো কখনো জায়গার দাম কম হওয়ায় শহরের কাছাকাছি যোগাযোগ সুবিধা সম্পন্ন জায়গা বেছে নেওয়া হয় এই কাজের জন্য। কিন্তু শহর থেকে কেউ গ্রামে এসে কেবল গ্রামের উন্নয়নের চিন্তা করে, গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে, কোটি কোটি টাকা খরচ করার ঝুঁকি কেউ নেয় না। কিন্তু হেযবুত তওহীদের এমাম, সর্বোচ্চ নেতা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম সেই কাজটিই করেছেন। গ্রামে চার তলা বিশিষ্ট একটি মসজিদ কমপ্লেক্স করেছেন, আবাসন প্রকল্প হিসাবে ছয়তলা বিশিষ্ট একটি ভবনসহ তাঁরই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তিন শতাধিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাবৃন্দের জন্য আবাসন প্রকল্প তৈরি করেছে। নিজ জমিতে, নিজ অর্থায়নে একটি স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপন করেছেন। চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য একটি ক্ষুদ্র গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করেছেন, একটি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কম্পানি করেছেন যেখানে প্রায় ৭০টার মতো পণ্য প্রস্তুত হচ্ছে, সারাদেশে বাজারজাত হচ্ছে। গরুর খামার করেছেন ৪টি যার মধ্যে একটি ডেইরি খামার ও বাকিগুলো মোটাতাজাকরণ খামার। মৎস্য প্রকল্প করেছেন ৬০ বিঘা জমিতে। ছাগলের খামার, ভেড়ার খামার, হাঁসের খামার, লেয়ার মুরগী, ব্রয়লার মুরগির খামার করেছেন একটি করে। কৃষি প্রকল্প রয়েছে (শাক-সবজি ও ধানচাষের) ৯০ বিঘার উপরে। চামড়ার ব্যাগ তৈরির কারখানা, ঘড়ি অ্যাসেম্বল কারখানা, ইলেকট্রিক বাল্ব অ্যাসেম্বল কারখানা, পরিবহন, ক্ষুদ্র ব্যবসাসহ রয়েছে অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান।
কয়েক বছর আগেও যে জায়গাটি ছিল বছরে নয় মাস পানিতে ডুবে থাকা কর্দমাক্ত স্থান, সেখানেই আজ আলোঝলমল এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে মানুষ নিরাপত্তার অভাবে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে সেখানেই আজ বহু মানুষ নতুন আবাস গড়ে তুলছে। যেখানে ছিল মাদকের ছড়াছড়ি সেই জায়গা আজ মাদকমুক্ত। যারা ছিল বেকার তারা কর্ম করছে, অভাবীরা সমৃদ্ধ হচ্ছে।
কেন শহর ছেড়ে গ্রামের উন্নয়নে মনোযোগী হলেন, এই প্রশ্নের উত্তরে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই কাজ করেছি। আজ তো কেবল রসুলাল্লাহ (সা.) এর লেবাসের অনুকরণ করা হয়, কিন্তু আমরা যদি তাঁর আদর্শের অনুসরণ করতাম তাহলে সমাজ, রাষ্ট্র পাল্টে যেত। ইসলাম যে মানুষের উন্নতি চায়, প্রগতি চায়, সমৃদ্ধি এনে দেয় সেটা রসুলাল্লাহ (সা.) দেখিয়ে গেছেন। তিনি যখন মদিনাতে গেলেন তখন সেটা ছিল একটা পিছিয়ে পড়া গ্রাম। তিনি সেটাকে শহরে (মদিনা শব্দের অর্থই শহর) রূপান্তরিত করেছেন। বেকারত্ব দূর করেছেন, চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, বাজারব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছেন। সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বহু রকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন আসহাবদেরকে দিয়ে। আমিও সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার নিজ গ্রাম, নিজ ইউনিয়নকে একটি মডেল হিসাবে দেশবাসীর কাছে, বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।’
সাতদিনব্যাপী চলমান এই উন্নয়ন ও পণ্যপ্রদর্শনী মেলা কতটুকু সফল হলো জানতে চাইলে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘এই মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের উৎপাদিত পণ্যগুলোর মান সম্পর্কে মানুষকে জানানো। আমাদের চাষীরহাট ইউনিয়ন যে আর অজপারা গ্রাম নেই বরং একটি নগরীতে রূপ নিয়েছে, উন্নয়নের রোল মডেলে রূপ নিচ্ছে তা আশেপাশের এবং দূরদূরান্তের মানুষকে জানানো। সে হিসেবে আমরা বলব, শুধু সফল না, এই মেলার মাধ্যমে আমরা এলাকাতে অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি। প্রথম দিন থেকে শুরু করে মেলার প্রতিটি দিনই লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছে মেলাপ্রাঙ্গন। আশেপাশের বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষের ঢল নেমেছে এখানে। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে চাষীরহাট ইউনিয়ন। যারা দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে তারা এই মেলার শৃঙ্খলা দেখে, নিরাপত্তা দেখে, এত শালীন অথচ জমকালো আয়োজন দেখে তারা অভিভূত হয়েছে। এমনকি অনেকে অনুরোধ করছে মেলাকে আরো কয়েকদিন বাড়ানোর জন্য। অনেকে
বলেছে, প্রতিবছর এরকম মেলার আয়োজন আমরা যেন করি। পরিবার-পরিজন, আত্মীয় সকলকে নিয়ে মেলায় এসে, এত সুন্দর একটি আয়োজন দেখে তারা খুবই উচ্ছসিত হয়েছে। তাছাড়া মেলাতে আমাদের পণ্যের যে গুণগতমান, সাশ্রয়ী মূল্যে তারা বিভিন্ন পণ্য পেয়েছে যা সচরাচর তেমন দেখা যায় তারা এটার প্রশংসা করেছে। সেই হিসেবে বলতে গেলে আমাদের মেলা শতভাগ সফল হয়েছে’।
নোয়াখালী মেলাকে চাষীরহাট থেকে বৃহত্তর পরিসরে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধু এইটুকু না, আমরা আসলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে একটি ডিজিটাল ও আদর্শ গ্রাম তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এই কার্যক্রম শুধু গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা আমাদের থানাকে মডেল থানা বানাব, জেলাকে মডেল জেলাতে রূপ দিব ইনশাল্লাহ। আমরা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে চাই। বাঙালি জাতি দরিদ্র বা তারা কিছু জানে না, তারা আমদানি করে চলে। আমাদের সম্পর্কে এই ধারণা, এই মনোভাবটা আমরা বদলে দিতে চাই। একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে চাই। পুরো বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই বাঙালি জাতি আসলে সমৃদ্ধ, বাঙালি জাতির মেধা আছে, যোগ্যতা আছে, বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ। তারা হানাহানি করে না, তারা পরিশ্রমী এবং তারা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিতে পারে। এ বার্তা আমরা সমস্ত পৃথিবীকে দিতে চাই এবং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই’।
গতকাল শুক্রবার ছিল মেলার শেষ দিন। বিদায়ের মুহূর্তে বেদনায় ভারী হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ। মনে হচ্ছিল যেন সবাই নিজের প্রিয়জন ও ভালোবাসার বস্তু পেছনে রেখে যাচ্ছেন। উন্নয়ন মেলা, বাণিজ্য মেলা, পিঠা উৎসব বা পণ্য প্রদর্শনী ইত্যাদি যে নামেই এই মেলাকে আখ্যায়িত করা হোক না কেন, দর্শনার্থীদের কাছে এই মেলা ছিল তাদের প্রাণের মেলা।

No Images.
Please upload images in images manager section. Click on Manage Images button on the right side of the gallery settings.
Please make sure that you didn't enabled option: Images of the Current Gallery. Option should have Show value to show images.

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...