হেযবুত তওহীদ

মানবতার কল্যাণে নিবেদিত

ইসলামের সোনালি ইতিহাসের কয়েকটি শিক্ষণীয় ঘটনা

রসুলুল্লাহের (স.)- এর সর্বশেষ ইমামতি
রসুলাল্লাহর (সা.) রোগের তীব্রতা তখন অত্যধিক। কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এন্তেকালের চারদিন আগের ঘটনা। সেদিন তার এমামতিতে সর্বশেষ জামাতে সালাহ অনুষ্ঠিত হয়। যোহরের ওয়াক্তে তাঁর চেতনা ফিরে আসলে তিনি বলেন সাতটি কূপ থেকে পানি এনে একত্র করে তাঁর মাথায় ঢালার জন্য। পানি ঢালা হলে তিনি একটু আরাম বোধ করলেন। অবস্থার আরও একটু উন্নতি হলে তিনি মাথায় পট্টি বেঁধে আব্বাস (রা.) ও আলী (রা.)-এর কাঁধে ভর দিয়া মসজিদে গেলেন এবং সালাহ কায়েম করালেন। অতঃপর তিনি সাহাবাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। এটাই ছিল তাঁর সর্বশেষ ভাষণ। মিম্বরে আরোহণ করে আল্লাহ তা’আলার হামদ ও ছানা পাঠ করার পর প্রথমেই তিনি ওহুদ যুদ্ধের শহীদদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন, তাঁদের জন্য দোয়া করলেন। অতঃপর তিনি তাঁর কবরকে উপাসনার বস্তু বানাতে নিষেধ করলেন। এও বলেন যে ইহুদি-নাসারারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছিল। অতঃপর তাঁর কাছে কারও কিছু প্রাপ্য থাকলে তা তিনি পরিশোধ করতে ইচ্ছা করলেন। তিনি আনসারদের জন্য উত্তম ওসিয়ত করে বললেন:
“হে মোহাজেরবৃন্দ! তোমরা আনসারদের সাথে উত্তম আচরণ করো। কারণ অন্য লোক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে, কিন্তু আনসারগণ পূর্বের অবস্থাতেই রয়েছে। তারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে না। তারা আমার গোপন ভেদ, যার নিকট আমি আশ্রয় নিয়েছি। তাই তোমরা তাদের সদাচরণকারীদেরকে ক্ষমা করবে। শুনে রাখো, আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুনিয়ায় অথবা আল্লাহর নিকট যা আছে তার যে কোনটি গ্রহণ করার এখতিয়ার প্রদান করেছেন। অতঃপর সেই বান্দা আল্লাহর নিকট যা আছে তাই গ্রহণ করেছে।”

আবু বকর (রা.) এর মর্মার্থ অনুধাবন করে ফেললেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস হলো যে, এর দ্বারা তিনি নিজের কথাই বুঝাচ্ছেন। তিনি ক্রন্দন করে বললেন, বরং আমরা আমাদের নিজেদেরকে এবং আমাদের পুত্রদেরকেই বিনিময় হিসেবে পেশ করব। রসুলাল্লাহ (স.) বললেন, হে আবু বকর! সবর কর। তারপর বললেন, মসজিদের এই সকল দরজা বন্ধ করে দাও, আবু বকরের দরজা ব্যাতীত। কারণ সাহচর্যের ক্ষেত্রে আমার কাছে আবু বকর অপেক্ষা উত্তম আর কেউ নেই। আমি আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কাউকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে আবু বকরকেই বন্ধু বানাতাম। তবে সে আমার সাহাবী ও দীনী ভাই। আল্লাহ তাঁর নিকট আমাদের সকলকে একত্র করবেন।

এ সময় তিনি ওসামা ইবন যায়দ (রা.) এর নেতৃত্ব সম্পর্কেও গুরত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। উল্লেখ্য যে রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বশেষ যে অভিযান প্রেরণ করেন তা ছিল ফিলিস্তিনে অভিযান। উক্ত সেনাদলের নেতৃত্বভার প্রদান করেন ওসামা ইবন যায়দ (রা.)-কে। সেনাদলে মুহাজির ও আনসারদের প্রবীণ সাহাবীগণও ছিলেন। তাই লোকজন কানাঘুষা করতে লাগল যে, এত বড় বড় সাহাবী থাকতে এক তরুণকে নেতৃত্বভার প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) মিম্বরে বসে তাঁর ভাষণে বললেন, হে লোকসকল! তোমরা ওসামার অভিযান সফল কর। আমার জীবনের কসম! তোমরা তার নেতৃত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছ, ইতিপূর্বে তোমরা তার পিতা যায়েদ সম্পর্কেও প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলে। আল্লাহর কসম! যায়দ নেতৃত্বের উপযুক্ত ছিল। তার পুত্রও নেতৃত্বের উপযুক্ত, তারা উভয়েই আমার প্রিয়পাত্র।
এ সময় তিনি আরও বললেন, ‘হে লোকসকল! আমি তোমাদের নিকট সেই আল্লাহর প্রশংসা করছি, যিনি ব্যতীত আর কোনও ইলাহ নাই। তোমাদের কাছ থেকে আমার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমি তো মানুষ, তাই আমি যদি কারও পিঠে প্রহার করে থাকি তবে এই আমার পিঠ, সে যেন প্রতিশোধ গ্রহণ করে। আমি যদি কারও সম্পদ হরণ করে থাকি তবে এই আমার সম্পদ, সে যেন তা গ্রহণ করে। আমি যদি গালি-গালাজ করে কারও সম্মানহানি করে থাকি তা হলে এই আমার সম্মান, সে যেন প্রতিশোধ গ্রহণ করে। কেউ যেন এই কথা না বলে যে, ‘আমি রসুলাল্লাহ (স.) হতে শত্রুতার আশংকা করছি। জেনে রাখো, শত্রুতা আমার প্রকৃতিতে নেই। আর তা আমার মর্যাদাজনকও নয়। জেনে রাখো, তোমাদের মধ্যে আমার নিকট সবচেয়ে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে আমার নিকট হতে তার পাওনা গ্রহণ করেছে অথবা আমাকে দায়মুক্ত করেছে, অতঃপর আমি পাক-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করেছি।”

এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসুল! আপনার নিকট আমার তিনটি দেরহাম (রৌপ্য মুদ্রা) পাওনা রয়েছে। রসুলাল্লাহ বললেন, “আমি তো কোন দাবীদারকে মিথ্যাবাদী বলব না এবং শপথ করে প্রমাণ করার দাবিও করব না। তবে কী ব্যাপারে পাওনা রইল?” লোকটি বলল, “আপনার কি মনে পড়ে না, এক প্রার্থী আপনার নিকট এসেছিল এবং আপনি আমাকে হুকুম দিলে আমি তাকে তিনটি দিরহাম প্রদান করেছি।” রসুলাল্লাহ বললেন, “হে ফাদল! তাকে দিয়ে দাও। হে জনগণ! কারো নিকট (সরকারী সম্পদ হতে) আত্মসাৎকৃত কিছু থাকলে তা সে ফেরত দিয়ে দিক। কেউ তার মনের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব অনুভব করলে সে যেন দাঁড়িয়ে যায়, আমি তার জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করবো।” তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, “ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি অবশ্যই মোনাফেক, আমি অবশ্যই মিথ্যুক এবং আমি অবশ্যই দুর্ভাগা ও কুলক্ষুণে। আমার কাছে তিনটি দিরহাম রয়েছে, যা আমি আল্লাহর পথে আত্মসাৎ করছিলাম।” রসুলাল্লাহ বললেন, “তবে তুমি তা আত্মসাৎ করছিলে কেন? লোকটি বলল, “সেগুলির প্রতি আমি অভাবী ছিলাম”। রসুলাল্লাহ বললেন, “ফাদল! তার নিকট হতে সেগুলি নিয়া নেও।” তখন উমার (রা.) বললেন, “হে দুর্ভাগা! আল্লাহ তো তোমাকে আবরণ দিয়েছিলেন, তুমিও যদি নিজকে আবৃত করে রাখতে।” রসুলাল্লাহ বললেন, “আহ! ইবনুল খাত্তাব! দুনিয়ার লাঞ্ছনা আখেরাতের লাঞ্ছনার তুলনায় সহজতর। হে আল্লাহ! তাকে সত্যবাদিতা ও ঈমান নসীব করুন এবং তার কুলক্ষণ ও দুর্ভাগ্য দূর করে দিন। উমার আমার সাথে আমি উমারের সাথে। ন্যায় ও সত্য আমার পরে উমারের সাথে।”
অতঃপর তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে যোহরের নামাজ পড়লেন, এরর পর আবারও মিম্বরে আরোহণ করে অনুরূপ ভাষণ দান করলেন।

খলিফা হওয়ার পর আবু বকরের (রা.) ভাষণ
খলিফারূপে নির্বাচিত হবার পরই আবু বকর (রা.) দাঁড়িয়ে উপস্থিত সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বললেন: “আমি তোমাদের নেতা নির্বাচিত হয়েছি। আমি চাই নি, তবুও তোমরা আমাকে এ দায়িত্বপূর্ণ পদে আসীন করলে। আমার এ পদে আর কাউকে বসালে তাতেই আমি বেশি খুশি হতাম। কিন্তু যখন এ পদে বসিয়েছ, তখন আমার কয়েকটি কথা রাখতে হবে। কথা কয়টি এই:
আমি সামান্য মানুষ মাত্র, তোমাদেরই দশজনের মতো একজন। সুতরাং আমার উপর নজর রাখবে: আমি যদি ন্যায় কাজ করি, তবে তোমাদের কর্তব্য হচ্ছে আমাকে সাহায্য করা। আর যদি আমি কোন ভুল পথ অবলম্বন করি, তবে তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আমাকে সেরাতুল মুস্তাকিম (সোজাপথ) প্রতিষ্ঠিত করা। সত্যবাদিতা ও সত্যকথা বলা একটি আমানত এবং মিথ্যা কথা হচ্ছে একটি খেয়ানত। তোমাদের মধ্যে যে দুর্বল সে আমার নিকট শক্তিশালী – যে পর্যন্ত আমি তার প্রাপ্য বুঝিয়ে না দিই। আর তোমাদের মধ্যে যে শক্তিশালী, সে আমার নিকট দুর্বল – যে পর্যন্ত আমি তার নিকট থেকে প্রাপ্য বুঝে না নিই। তোমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম (জেহাদ) পরিত্যাগ করবে না। যে জাতি জেহাদ পরিত্যাগ করে আল্লাহ সে জাতিকে অপমানিত না করে ছাড়েন না। আমি যতদিন আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করব, ততদিন তোমরা আমার আনুগত্য করবে। আর আমি যদি আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে অমান্য করি, তবে তোমরা আমাকে পরিত্যাগ করবে। কেননা, তখন তোমাদের উপর আমার আনুগত্য করা ফরজ নয়।”

আবু বকর (রা.) এর তাকওয়া
যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) এর একজন ভৃত্ত ছিল। সে প্রায়ই খলিফা আবু বকর (রা.) এর সাথে অসঙ্গত আচরণ করত। একবার রাতে খলিফার কাছে কিছু খাবার উপস্থিত করল। তিনি সেই খাবার থেকে কিছু খাবার গ্রহণ করলেন। তখন ভৃত্ত তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, “আপনার আজ কী হলো আপনি তো আমাকে প্রত্যেক রাতেই খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, “কিন্তু আজ রাতে আমাকে এ ব্যাপারে কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না?” আবু বকর রা. বললেন, “প্রচণ্ড ক্ষুধাই আমাকে এমনটি করতে বাধ্য করেছে। আচ্ছা তুমি এ খাবার কোত্থেকে এনেছো?” কৃতদাস বলল, “জাহিলি যুগে আমি একটি গোত্রেরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম। তখন আমি তাদের জনৈক রোগীকে ঝাড়-ফুঁক করেছিলাম। তার আমাকে এর বিনিময় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অতঃপর যখন সেই প্রতিশ্রুতির দিনটি আসলো তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে দেখি তারা এক আনন্দানুষ্ঠানে উদ্যাপন করছে। তারা আমাকে দেখে সেই প্রতিশ্রুত পাওনা বুঝিয়ে দিল।

আবু বকর (রা.) বলেলন, তুমিতো আমাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছো। অতঃপর তিনি গলার ভেতর হাত ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু মুখ থেকে কিছুই বের হচ্ছিল না। তাকে বলা হলো এসব খাবার পানি ছাড়া এভাবে বের হবে না। তিনি পানি চাইলেন, তারপর পানি পান করছিলেন আর বমি করছিলেন। অতঃপর তাকে বলা হলো, “আপনার ওপর আল্লাহ রহমত করুন! এই সামান্য একটু খাবারের কারণে আপনি এতো কষ্ট করলেন।” আবু বকর (রা.) বললেন, “যদি এ খাবার বের করতে গিয়ে আমার প্রাণ বের করার প্রয়োজন হতো, তবুও আমি তা করতাম। আমি রসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: প্রত্যেক ঐ শরীর যা হারাম দ্বারা গঠিত হয়েছে, আগুনই তার জন্য যোগ্য। তাই আমি ভয় পেয়েছি যদি ঐ খাবার দ্বারা আমার শরীরের কিছু গঠিত হয়।”

আবু বকর (রা.) কাপড়ের ব্যবসা করে এর দ্বারাই জীবিকা নির্বাহ করতেন। খলিফা নিযুক্ত হওয়ার পর একদিন সকালবেলায় কয়েকটি চাদর হাতে নিয়ে বিক্রয় করার জন্য বাজারের দিতে চললেন। পথিমধ্যে ওমর (রা.) এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যাচ্ছেন? তিনি বলেন, বাজারে। ওমর (রা.) বলেন, আপনি যদি এরূপ ব্যবসায় নিমগ্ন হন, তাহলে খেলাফতের কাজ চলবে কীভাবে? তিনি বলেন, তা হলে পরিবার পরিজনকে খাওয়াবো কীভাবে? ওমর (রা.) বলেন, আবু ওবায়দার (রা.) কাছে চলুন, যাঁকে রসুলাল্লাহ (সা.) ‘উম্মতের আমীন’ উপাধি দিয়েছেন। তিনি আপনার জন্য বায়তুল মাল থেকে কিছু ভাতা নির্ধারণ করে দেবেন। উভয়েই তাঁর কাছে গেলে তিনি একজন মোহাজের সাধারণভাবে যে পরিমাণ ভাতা পেত – বেশিও নয় – কমও নয়, সে পরিমাণ তাঁর জন্য নির্ধারণ করে দিলেন।
একবার আবু বকর (রা.)- এর স্ত্রী আবেদন জানালেন মিষ্টি খেতে মন চাচ্ছে। তিনি বলেন, আমার কাছে তো মিষ্টি কেনার মতো অর্থ নেই। স্ত্রী ভাবলেন, আমাদের দৈনন্দিন খোরাক থেকে কিছু কিছু করে বাঁচিয়ে রাখবে। কয়েকদিন এভাবে জমা করলেন। আবু বকর (রা.) বলেন, বোঝা গেল এ পরিমাণ সম্পদ আমরা বায়তুল মাল থেকে অতিরিক্ত গ্রহণ করছি। এজন্য স্ত্রী যা সঞ্চয় করেছিলেন প্রতিদিনের জমার তাও বায়তুল মালে জমা করে দিলেন এবং পরবর্তীতে নিজের ভাতা থেকে এ পরিমাণ কমিয়ে দিতে বায়তুল মাল হেফাজতকারীকে নির্দেশ দিলেন।

আবু বকরের (রা.) মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হলে তখন তিনি আয়েশা (রা.) কে ডেকে বলেন, আমার কাওমের লোকেরা জানে, আমার ব্যবসা আমার পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্যই যথেষ্ট ছিল। বায়তুল মাল থেকে কিছু গ্রহণ করতে আমার মন চাচ্ছিল না। কিন্তু ওমর (রা.) বললেন এতে কষ্ট হবে আর আপনার ব্যবসায় নিমজ্জিত হওয়ার কারণে মুসলমানদের ক্ষতি হবে। এজন্য বধ্য হয়ে আমাকে বায়তুর মাল থেকে ভাতা গ্রহণ করতে হলো। এখন তার পরিবর্তে অমুক বাগানটি যেন ওয়াকফ করে দেওয়া হয়। তিনি আরও ওসিয়ত করেন যে, বায়তুল মালের যে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস তাঁর কাছে রয়েছে সেগুলো যেন তাঁর মৃত্যুর পর পরবর্তী খলিফার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আবু বকরের (রা.) ইন্তেকালের পর আয়েশা (রা.) ওমরের (রা.) কাছে লোক পাঠিয়ে এবং পিতার ওসিয়ত অনুযায়ী সে বাগানটিই দান করেন দিলেন। ইন্তেকালের সময় আবু বকরের (রা.) কাছে কোনো দিনার-দিরহাম ছিল না। একটি দুধের উটনী, একটি পেয়ালা, একজন খাদেম, কোনো কোনো বর্ণনায় একটি চাদর ও একটি বিছানার কথাও উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীকালে এ সমস্ত জিনিস যখন ওমরের (রা.) কাছে পৌঁছে তখন তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা আবু বকরের প্রতি রহম করুন। তিনি তাঁর পরবর্তীদেরকে কষ্টে ফেলে গেলেন। তাঁর উদ্দেশ্য যে কাউকেও তিনি মুখ খোলার সুযোগ দেবেন না।’

সদকার দুধপানে ওমরের (রা.) বমি
ওমর (রা.) একদিন কিছু দুধপান করাকালে এর স্বাদ অস্বাভাবিক ও ভিন্নরকম মনে হলো। যে ব্যক্তি পান করাচ্ছিল তাকে ওমর (রা.) জিজ্ঞেস করেন, এ দুধ কীভাবে কোথা থেকে এসেছে? সে বলল, অমুক মাঠে সদকার উট। আমি সেখানে গেলে তারা দুধ দোহন করলে যে দুধ থেকে তারা আমাকেও দিল। ওমর (রা.) মুখে হাত ঢুকিয়ে সমস্ত দুধ বমি করে ফেলেন।
খলিফা ওমরের (রা.) সময় একবার দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। যতদিন দুর্ভিক্ষ ছিল ততদিন দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ যেমন অর্ধাহারে অনাহারে থাকে তিনিও তেমনি থাকতেন। ওমর (রা.) প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যতদিন না জনসাধারণ এমন অবস্থায় পৌঁছবে যে তারা ভালো করে খাবার পরও উদ্বৃত্ত থাকবে ততদিন তিনি গোশত-মাখন এমনকি দুধ পর্যন্ত খাবেন না এবং খানও নি। মরুপ্রধান আরব দেশে তখন উটের বা বকরির গোশত ও দুধই প্রধান খাদ্য। তিনি বলতেন “আমি যদি ঠিকমত খাই তবে আমি কী করে বুঝব আমার জাতি কী কষ্ট সহ্য করছে?” এই অর্ধাহারে অনাহারে থেকে খলিফা ওমরের (রা.) মুখ রক্তশূন্য ও চুপসে গিয়েছিল।

নিজ স্ত্রীর দ্বারা মেশক ওজন করাতে অস্বীকৃতি
একবার ওমর (রা.) এর খেদমতে বাহরাইন থেকে মেশক আসলে তিনি বলেন, কেউ যদি এটা ওজন করে মুসলমানদের মধ্যে বণ্টন করে দিত। তখন তাঁর স্ত্রী আতিকা (রা.) বলেন, আমি ওজন করে দিব। তিনি শুনে চুপ করে রইলেন। কিছুক্ষণ পর আবার বলেন, কেউ যদি এটা ওজন করে দিত তাহলে আমি বণ্টন করে দিতাম। তাঁর স্ত্রী আবারও বলেন, আমি ওজন করে দিব। তিনি এবারও নীরব রইলেন। তৃতীয়বারে তিনি একই কথা বলেন এবং তার স্ত্রী পুনরায় বলেন, আমি ওজন করে দিব। এবারও তিনি নীরব রইলেন। এরপর ওমর (রা.) বলেন, আমি এটা পছন্দ করি না যে তুমি নিজ হাতে এটা পাল্লায় রাখবে। আবার সে হাত নিজের শরীরে বুলিয়ে নিলে, তাতে হয়ত এর পরিমাণ আমার অংশে কিছু বেশি আসবে।
ওমর বিন আব্দুল আজিজ (রহ.) যাঁকে দ্বিতীয় ওমরও বলা হয়, তাঁর যামানায় একবার মেশক ওজন করা হয়েছিল, তখন তিনি নাক বন্ধ করে নিয়ে বলেন, খোশবু গ্রহণই মেশকের উদ্দেশ্য।

উসমান (রা.) দানশীলতা
ঘটনা ১: একবার মহানবীর কাছে তাঁর জামাতা উসমান (রা.) এসে আরজ করলেন, “ইয়া রসুলাল্লাহ আমার সম্পদ কমে যাবার জন্য কোনো উপায় বলে দিন।” আল্লাহর রসুল একথা শুনে চমকিত হলেন। বললেন, কী
ব্যাপার উসমান? লোকজন ধন-সম্পদ বাড়ানোর পথ জানতে চায়, আর তুমি সম্পদ কমে যাবার জন্য দোয়া চাইছো, কেন? জবাবে উসমান (রা.) বললেন, আমার অন্যান্য ভাইয়েরা বহু অতিরিক্ত ইবাদত করেন। বেশি বেশি কোর’আন তেলাওয়াত করেন। কিন্তু আমি অধিক সম্পদের হিসাব করতে গিয়ে সে পরিমাণ আমল করতে পারি না।
দু’জনের মধ্যে যখন এমন কথা চলছিল, তখনি জিবরাঈল (আ.) এসে রসুলাল্লাহকে (সা.) কিছু বললেন। রসুলাল্লাহ (সা.) উসমানকে (রা.) বললেন, “হে উসমান! তোমার সম্পদ কমানোর তদবির আল্লাহ তা’আলা পাঠিয়ে দিয়েছেন।” উপস্থিত সকলেই নীরব হয়ে গেলেন। রসুলাল্লাহ (সা.) বললেন, “তোমার আরজ শুনে আল্লাহ তা’আলা জিবরাঈলকে পাঠিয়েছেন একথা বলতে যে, তুমি যেন আল্লাহর পথে দান কমিয়ে দাও।” উসমান বললেন, “এটা কিভাবে সম্ভব যে, আল্লাহ তা’আলা আমাকে সম্পদ দান করবেন, আর আমি তাঁর পথে খরচ করব না?” জিবরাঈল তখন রসুলাল্লাহ (সা.) কে বললেন, “এটাও কি সম্ভব যে, উসমান আল্লাহর পথে দান করবেন অথচ আল্লাহ তা’আলা তার সম্পদ বাড়িয়ে দেবেন না?”

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত ঘটনা। আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এর শাসনকালে একবার মদীনায় অনাবৃষ্টির কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। উচিত মূল্য দিয়েও খাদ্য সংগ্রহ দু®প্রাপ্য হয়ে গেলো। মানুষের মধ্যে হতাশা হাহাকার। লোকজন এসে আমীরুল মু’মিনীনকে কিছু একটা করবার জন্য আরজ পেশ করলো। খলীফাতুল মুসলিমীন সবাইকে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে বললেন।
তৎকালীন সময়ে উসমান (রা.) ছিলেন মদীনার সবচেয়ে বড় আমদানিকারক। একদিন সিরিয়া থেকে তাঁর বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যের বহর মদীনায় এসে পৌঁছল। আমদানিকারকদের নিয়ম হলো, মাল আমদানি করে প্রথমে গুদামজাত করে পরে তা বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করা। কিন্তু মদীনায় খাদ্যশস্যের এতো চাহিদা যে, উসমান (রা.) এর মালের বহর গুদামে যাবার পূর্বেই মদীনার ব্যবসায়ীগণ সমবেত হয়ে প্রস্তাব দিলেন বহরের সমস্ত মাল তারা একসাথেই ক্রয় করবেন।
কী পরিমাণ লাভে তারা পণ্য কিনবেন জানতে চাইলে ব্যবসায়ীগণ প্রতি দশ টাকার মালে দু’টাকা লাভ দিতে চাইলেন। উসমান (রা.) বললেন, না এতো কম লাভে আমি মাল বিক্রি করব না। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে বাড়াতে প্রতি দশ টাকার মাল ১৫ টাকা লাভে কিনতে চাইলেন। উসমান (রা.) এবারও অবস্থার পরিবর্তন করলেন না। বললেন, তোমরা যদি প্রতি দশ টাকার মালে একশো টাকা লাভ দাও তাহলে আমি বিক্রি করতে রাজি আছি।

ব্যবসায়ীরা বললেন, এমন অযৌক্তিক লাভে কেউ আপনার মাল কিনবে না। উসমান (রা.) বললেন, এই পরিমাণ লাভে মাল ক্রয় করবার কোনো ক্রেতা আছে কি না তোমরা এখনই দেখতে পাবে। একথা বলে আমীরুল মু’মিনীনের কাছে এই বলে খবর পাঠালেন যে, সিরিয়া থেকে আজ আমদানি করা সমস্ত খাদ্যশস্য আমি মদীনার অভাবগ্রস্ত লোকদের মাঝে দান করে দিলাম। আপনি অনুগ্রহ করে সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা করুন। ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে বললেন, “দেখলে তো আমার এ সমস্ত পণ্য ১০ গুণ লাভে আল্লাহর কাছে বিক্রি করলাম। লাভের এই অঙ্ক অবশ্যই পরিশোধ করা হবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে আল্লাহর পক্ষ হতে।”

ঘটনা ২: একদিন এক নিঃস্ব লোক রসুলের (সা.) নিকট এসে কিছু সাহয্য চাইল। তখন রসুলের নিকট কিছুই ছিল না। তিনি লোকটাকে উসমানের (রা.) নিকট পঠালেন। দরিদ্র ব্যক্তিটি উসমানের (রা.) গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখে যে একদল পিঁপড়ে বেশ কিছু শস্য একটি স্তুপ থেকে গর্তে নিয়ে যাচ্ছে। উসমান (রা.) শস্যগুলো একত্রিত করে কিছু শস্য পিঁপড়ের গর্তের কাছে ছড়িয়ে বাকীগুলো আবার স্তুপে রেখে দিচ্ছিলেন। লোকটি ধারণা করলো যে, উসমান (রা.) বড় কৃপণ। সে মনে মনে ভাবলো যে, দরিদ্র হওয়া স্বত্ত্বেও সে নিজে পিঁপড়ের মুখ থেকে শস্য কেড়ে নিতো না। তাই কিছুই না চেয়ে লোকটি চলে গেল।
পরদিন লোকটি আবার রসুলের নিকট উপস্থিত হল এবং কিছু চাইল। সে রসুলকে জানাল যে, কৃপণ উসমানের (রা.) নিকট কিছুই আশা করা যায় না, তাই সে কিছুই চায় নি। রসুল (সা.) তাকে আবার উসমানের (রা.) নিকট পাঠালেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোকটি গেল এবং দেখতে পেল যে উসমান (রা.) তার গৃহকর্মীকে বাতির সলতে উঁচু করে দেওয়ার দায়ে ধমকাচ্ছে। কারণ তাতে অধিক তেল খরচ হয়। দরিদ্র লোকটি মনে মনে ভাবলো যে, তার বাড়িতে আলো আরও উজ্জ্বলভাবে জ্বলে এবং সে কখনও এরূপ তেলের হিসাব করে না। উসমানের (রা.) কৃপণতা সম্বন্ধে তার ধারণা আরো জোরদার হলো। কিছু না চেয়েই লোকটি আবার রসুলের নিকট ফিরে গেল। উসমানের (রা.) বিরুদ্ধে কৃপণতার অভিযোগ শুনে রসুল (সা.) মৃদু হাসলেন এবং লোকটিকে আবার বললেন উসমানের (রা.) কাছে ফিরে যেতে এবং কিছু চাইতে।
তৃতীয়বার লোকটি উসমানের (রা.) নিকট এসে দেখে যে উসমানের (রা.) বাড়িতে তুলা শুকাতে দেয়া হয়েছে। তুলা ঢেকে দেয়া হয়েছিল জাল দিয়ে। জালের নিচ হতে কিছু কিছু তুলা বাতাসে উড়িয়ে নিচ্ছিল, উসমান (রা.) সেই তুলাগুলোকে সংগ্রহ করে এনে আবার জালের নিচে রাখছিলেন! লোকটির মন অত্যন্ত বিরূপ হয়ে উঠলো। ভাবলো এমন কৃপণও কি কিছু দান করতে পারে? তবুও যেহেতু রসুল (সা.) তাকে তিনবার উসমান (রা.)-এর কাছে পাঠিয়েছেন, তাই সে গিয়ে কিছু চাইল।

উসমান (রা.) ভাবলেন লোকটিকে কি দেওয়া যায়, যে লোককে রসুল তার নিকট সাহায্যের জন্য পাঠিয়েছেন, তার চাইতে সাহায্য নেয়ার যোগ্য আর কে হতে পারে? তখন দেখা গেল বেশ দূরে একটি সরু রেখা। রেখাটিকে একটি উটের কাফেলা বলেই মনে হল। কিছুক্ষণ পর উসমান (রা.) বুঝতে পারলেন, যে কাফেলা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় গিয়েছিল সেটাই ফিরে আসছে। উসমান (রা.) তাকে লিখে দিলেন যে ঐ কাফেলার সবচেয়ে ভাল উটটি এবং যার ওপর সবচেয়ে বেশি দ্রব্যসম্ভার আছে সেটিই সে নিতে পারে। লোকটি প্রথম মনে করল যে উসমান (রা.) তামাশা করছেন। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পরও লোকটি তার দান সম্পর্কে নিঃন্দেহ হতে পারল না। সন্দিহানচিত্তে লোকটি গেল কাফেলার নিকট। সবচেয়ে ভালো এবং প্রথম উটটিই তার পছন্দ হল। সেটি সে নিতে চাইল। কাফেলার পরিচালক অনুমতি দিল। কিন্তু মরুভূমিতে চলাকালে পথম উটটিকে কাফেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া সহজ নয়। সবগুলো উটই প্রথমটিকে অনুসরণ করল। কাফেলার পরিচালক তখন লোকটিকে বললো যে, আস্তানায় ফিরে যাওয়ার পর উটটি দেয়া হবে। উসমানের (রা.) নিকট খবর দেওয়া হলো যে একটি উটকে কাফেলা থেকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি, তাই তখন তার নির্দেশ পালন করা হয়নি। খবর শুনে উসমান (রা.) বললেন, হয়ত আল্লাহর ইচ্ছা এই যে, কাফেলার সবগুলো উটই লোকটি পাবে। অতঃপর তিনি কাফেলার পরিচালককে নির্দেশ দিলেন যে, সবগুলো উটই যেন লোকটিকে দিয়ে দেয়া হয়। লোকটি তো বিস্ময়ে অবাক! এতো বড় কৃপণের কি করে এতো বড় দান করা সম্ভব হলো! হতবাক হয়ে সে তার পূর্ববর্তী তিন অভিজ্ঞাতা জানাল এবং দু’প্রকার ব্যবহারের তাৎপর্য কি জানতে চাইল।
উসমান (রা.) যে জওয়াব দিলেন তার সারমর্ম এই যে, আল্লাহ বিশ্বের সমস্ত সম্পদের মালিক, মানুষ হলো তত্ত্বাবধানকারী বা পাহারাদার। সে শুধুমাত্র আল্লাহর ইচ্ছানুসারে সম্পদ নিজের জন্য এবং সমাজের অপরাপর ব্যক্তির কল্যাণের জন্য ব্যয় করতে পারবে। মানুষের কাজ হল আল্লাহর সম্পদ নিজের মর্জিমত রক্ষণাবেক্ষণ করা। যদি কোনো ব্যক্তির তত্ত্বাবধানকালে কোনো সম্পদের এক কণামাত্র বিনষ্ট হয় তবে তার জন্য আল্লাহর আছে জওয়াবদিহি করতে হবে। সম্পদের অধিকার শুধু বিশেষ সুবিধা নয়, বরং একটি বিরাট দায়িত্ব।

পঙ্গু সাহাবীর শাহাদাতের আকুলতা
আমর ইবনে জামূহ (রা.) ছিলেন খোঁড়া। তার চারজন পুত্র ছিলেন। যারা অধিকাংশ সময়ই রসুলাল্লাহর (সা.) খেদমতে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করতেন। উহুদের যুদ্ধে আমার ইবনে জামূহ (রা.)-এর আগ্রহ সৃষ্টি হল, আমিও যাব। লোকেরা বলল, তুমি তো অচল মানুষ আর খোঁড়া হওয়ার কারণে চলাফেরায় কষ্ট হবে। তিনি বলেন, এটা কত বড় কষ্টের কথা, আমার ছেলেরা জান্নাতে যাবে আর আমি থেকে যাব। তাঁর স্ত্রীও তাকে উত্তেজিত করার জন্য বলেন, আমি দেখছি, আপনি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে এসেছেন। আমর (রা.) একথা শুনে অস্ত্র নিয়ে কেবলার দিকে মুখ করে এ দোয়া করেন- “হে আল্লাহ! আমাকে আর কখনো পরিবারের দিকে ফিরিয়ে এনো না।”

এরপর রসুলাল্লাহর (সা.) খেদমতে উপস্থিত হলে আপন লোকদের নিষেধ করা সত্ত্বেও নিজ আগ্রহের কথা প্রকাশ করে বলেন, আমি আশা করি আমি আমার খোঁড়া পা নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করব। রসুলাল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ্ তোমাকে অক্ষম করেছেন, তোমার জন্য যুদ্ধে যাওয়া ফরদ নয়। কাজেই তুমি না গেলে কী অসুবিধা? তিনি পুনরায় আগ্রহ প্রকাশ করলে তখন রসুলাল্লাহ (সা.) অনুমতি প্রদান করেন। আবু তালহা (রা.) বলেন, আমরকে যুদ্ধক্ষেত্রে দেখেছি, তিনি বীরত্বের সাথে বলেন, আল্লাহ্র কসম! আমি জান্নাতের প্রত্যাশী। তাঁর এক পুত্রও তাঁর পিছনে দৌড়ে গিয়ে পিতা পুত্র উভয়েই যুদ্ধ করতে করতে শাহাদতবরণ করেন।
তার স্ত্রী ছেলের এবং স্বামী লাশ উটের পিঠে করে মদীনায় দাফন করার জন্য নিয়ে যেতে চাইলে উট বসে পড়ে, অতি কষ্টে উটকে মারপিট করে মদীনায় আনার চেষ্টা করলে সে উহুদের দিকেই ফিরে রইল। তার স্ত্রীর কাছে রসুলাল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করেন – আমর কি আসার সময় কিছু বলেছিল? স্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, তিনি কেবলার দিকে মুখ করে ঘরে ফিরে না আসার দোয়া করেছিলেন।
রসুলাল্লাহ (সা.) বলেন, তার দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয়েছে বলেই উট এদিকে যাচ্ছে না।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...