সঙ্গীত সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন-ব্যবস্থা। একটি ভারসাম্যপূর্ণ দ্বীনে, একটি সভ্য সমাজে কখনোই সঙ্গীত বা সংস্কৃতির মত এমন চিত্তাকর্ষক ও হৃদয়াগ্রাহী বিষয় হারাম হতে পারে না। সমাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা যদি কোরআন ও রসুলের জীবনীকে মূলনীতি হিসেবে ধরি তাহলে প্রথমেই দেখতে হবে সেখানে এই বিষয়ে কি বলা আছে। কোরআনে সরাসরি কোথাও গান হারাম এমনটা বলা নেই। আর ইসলামের একটি মূলনীতি হচ্ছে আল্লাহ যেগুলো হারাম করেছেন  সেগুলো ব্যতীত সবই হালাল। তাহলে সরাসরি গানকে হারাম বলার কোন যৌক্তিকতা নেই।

এছাড়া আমরা রসুলের জীবনীতেও দেখবো, তিনি একজন সংগ্রামী, বিপ্লবী নেতা হওয়া সত্বেও সংস্কৃতিমনা ছিলেন। যখনই সময় পেতেন তিনি গান শুনতেন, সাহাবীদের উৎসাহ দিতেন গান শুনতে ও শুনাতে। তাহলে সঙ্গীতের মত চিত্তগ্রাহী একটি বিষয় কিভাবে আমাদের সমাজে হারাম বলে গৃহীত হচ্ছে? কারা এটাকে হারাাম করেছে?

সংস্কৃতির নামে যখন ব্যাপকভাবে অশ্লীলতার প্রসার ঘটল, মানবতাবিধ্বংসী কর্মকান্ড শুরু হল তখন আমাদের সমাজের ধর্মের ধ্বজাধারী আলেমরা সরাসরি গানকেই হারাম ঘোষণা দিলেন। কিন্তু অশ্লীলতা কি পরিহার হল? অথচ তারা বুঝলেন না, মাথা কাটার প্রতিষেধক কখনো মাথা কেটে ফেলা নয়। ইসলাম অশ্লীলতাকে হারাম করেছে, গানকে নয়। যে গানে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটে, অনৈক্যের প্রকাশ পায়, সমাজে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সেই গান হারাম।

কিন্তু, যে গান মানবতার কথা বলে, ঐক্য-সাম্যের কথা বলে, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলে সে গান শুধু হালালই নয়, এবাদত। এমনকি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য যে গান গাওয়া হবে তা জেহাদ হিসেবে পরিগণিত হবে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস ছিল সঙ্গীত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করে রেখেছিল যেসব গান, যে গানের বাণী ও সুরে ছিল সাহসের কথা, যুদ্ধ জয়ের সম্ভাবণা-মন্ত্র, সেসব গান কি করে হারাম হতে পারে?

সঙ্গীত, শিল্প, সংস্কৃতি-সাহিত্যমনা- এগুলো মানুষের সহজাত প্রতিভা। ইসলাম কখনোই মানুষের এমন সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশে বাধা দিতে পারেনা। ইসলাম নিয়ে বাড়াবাড়ির দরুন আজকের সমাজে গান হারামের মত এমন বহু বিকৃত ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে।

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ