Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

মুসলিম উম্মার বর্তমান দুরবস্থার প্রকৃত কারণ কলেমায়ে তওহীদ থেকে বিচ্যুতি


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

হোসাঈন মোহাম্মদ সেলিম:
এই দীনুল হকের ভিত্তি হচ্ছে তওহীদ অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এই কলেমাটি, এ নিয়ে কারো কোন দ্বিমত নেই। তওহীদ ব্যতীত কোনো ইসলামই হতে পারে না, তওহীদই ইসলামের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, মুসলিম বলে পরিচিত এই জনসংখ্যাটি তওহীদ সম্পর্কে যে ধারণা করে (আকীদা) তা ভুল। তাদের কাছে তওহীদ মানে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা এবং তাঁর ইবাদত বা উপাসনা করা। ‘তওহীদ’ এবং ‘ওয়াহদানিয়াহ্’ এই আরবী শব্দ দু’টি একই মূল থেকে উৎপন্ন হলেও এদের অর্থ এক নয়। ‘ওয়াহদানিয়াহ্’ বলতে বোঝায় মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ যে একজন তা বিশ্বাস করা (একত্ববাদ-Monotheism), পক্ষান্তরে ‘তওহীদ’ মানে ঐ এক আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মেনে নেওয়া, তাঁর ও কেবলমাত্র তাঁরই নিঃশর্ত আনুগত্য করা। আরবের যে মোশরেকদের মধ্যে আল্লাহর শেষ রসুল এসেছিলেন, সেই মোশরেকরাও আল্লাহর একত্বে, ওয়াহদানিয়াতে বিশ্বাস করত, কিন্তু তারা আল্লাহর হুকুম, বিধান মানতো না অর্থাৎ তারা আল্লাহর আনুগত্য করত না। তারা তাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সামষ্টিক জীবন নিজেদের মনগড়া নিয়ম-কানুন দিয়ে পরিচালনা করত। এই আইনকানুন ও জীবন ব্যবস্থার উৎস ও অধিপতি হিসাবে ছিল বায়তুল্লাহ, কা’বার কোরায়েশ পুরোহিতগণ। মূর্তিপূজারী হওয়া সত্ত্বেও তাদের এই ঈমান ছিল যে, এ বিশ্বজগতের স্রষ্টা আল্লাহ একজনই এবং তাদের এই ঈমান বর্তমানে যারা নিজেদেরকে মো’মেন মুসলিম বলে জানে এবং দাবি করে তাদের চেয়ে কোন অংশে দুর্বল ছিল না (সূরা যুখরুফ ৯, আনকাবুত ৬১, লোকমান ২৫)। কিন্তু যেহেতু তারা আল্লাহর প্রদত্ত হুকুম মানতো না, তাই তাদের ঐ ঈমান ছিল অর্থহীন, নিষ্ফল এবং স্বভাবতঃই আল্লাহর হুকুম না মানার পরিণতিতে তাদের সমাজ অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, নিরাপত্তাহীনতা, সংঘর্ষ ও রক্তপাতে পরিপূর্ণ ছিল, এ জন্য আরবের ঐ সময়টাকে আইয়্যামে জাহেলিয়াত বলা হয়। তাদের স্রষ্টা আল্লাহর হুকুমের প্রতি ফিরিয়ে আনার জন্যই তাদের মধ্যে রসুল প্রেরিত হয়েছিলেন। রসুলও সে কাজটিই করেছিলেন, ফলশ্রুতিতে অন্যায় অশান্তিতে নিমজ্জিত সেই সমাজটি নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, সুখ-সমৃদ্ধিতে পূর্ণ শান্তিময় (ইসলাম অর্থই শান্তি) একটি সমাজে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। সুতরাং আল্লাহর আনুগত্য না করাই ছিল তাদের কাফের মোশরেক হওয়ার প্রকৃত কারণ। বর্তমানের মুসলিমরা উপলব্ধি করতে পারছে না যে প্রাক-ইসলামিক যুগের আরবের কাঠ পাথরের মূর্তিগুলিই এখন গণতন্ত্র, সাম্যবাদ, এক নায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদির রূপ ধরে আবির্ভূত হয়েছে এবং মুসলিম জনসংখ্যাটি আল্লাহর পরিবর্তে এদের তথা এদের প্রবর্তক ও পুরোধা ‘পুরোহিতদের’ আনুগত্য করে যাচ্ছে। এই প্রতিটি তন্ত্র আলাদা আলাদা একেকটি দীন (জীবনব্যবস্থা), ঠিক যেমন দীনুল হক ‘ইসলাম’ও একটি জীবনব্যবস্থা। পার্থক্য হলো, এই মানবরচিত দীনগুলি মানবজীবনের বিশেষ কিছু অঙ্গনের, বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে, কিন্তু সঠিক সমাধান দিতে পারে না আর ইসলাম মানবজীবনের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় থেকে শুরু করে সামষ্টিক অঙ্গনের সকল বিষয়ে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা দিয়ে থাকে। বর্তমানের মুসলিম নামক জনসংখ্যাটি এই সকল মানবরচিত তন্ত্রের প্রতিমার আনুগত্য করে সেই পৌত্তলিক আরবদের মতই মোশরেক ও কাফেরে পরিণত হয়েছে। আল্লাহর রসুল এসে মোশরেক আরবদেরকে আল্লাহর তওহীদের ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি সেখানে আল্লাহর একত্ববাদ (ওয়াহদানিয়াত) প্রতিষ্ঠা করেন নি, কারণ আল্লাহর একত্ববাদের বিষয়ে সেই মোশরেকদের আগে থেকেই সুদৃঢ় ঈমান ছিল। তারা তাদের দেবদেবীর কোনটিকেই আল্লাহ মনে করত না, স্রষ্টা বা প্রভুও ভাবত না, তারা সেগুলির পূজা করত এই বিশ্বাসে যে সেগুলি তাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করবে এবং তাদের হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে (সুরা ইউনুস- ১৮, সুরা
যুমার- ৩)। সুতরাং মূর্তি পূজার নেপথ্যে তাদের প্রকৃত উপাস্য আল্লাহই ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে যে মতবাদগুলির আনুগত্য করা হচ্ছে এর মধ্যে কোথাও আল্লাহর স্থান নেই, এগুলি আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কেই সম্পূর্ণ নির্বিকার। ফলে বর্তমানের মো’মেন মুসলিম হবার দাবিদারগণ যে শেরক ও কুফরে লিপ্ত তা নিঃসন্দেহে ১৪০০ বছর আগের আরবদের শেরক ও কুফরের চেয়েও নিকৃষ্টতর।
এই যে আমি এ বিষয়কে কার্যতঃ শেরক ও কুফর বলছি, আমার এ কথার গুরুত্ব ও দায়িত্ব সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ সচেতন। তবে পাঠককে সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আগে এ বক্তব্যের পক্ষে যে যুক্তিগুলি পেশ করছি সেগুলি একটু গভীরভাবে ভেবে দেখার জন্য। যদি এ জনসংখ্যাটি সত্যিই মো’মেন, মুসলিম ইত্যাদি হয়ে থাকে তাহলে কোর’আনের অনেক আয়াত মিথ্যা হয়ে যায়, যা হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। আল্লাহ ওয়াদা করেছেন- তোমরা যদি মো’মেন হও তবে পৃথিবীর কর্তৃত্ব তোমাদের হাতে দেব যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দিয়েছিলাম (সূরা নূর ৫৫)। তাঁর ওয়াদা যে সত্য তার প্রমাণ নিরক্ষর, চরম দরিদ্র, সংখ্যায় মাত্র পাঁচ লাখের উম্মতে মোহাম্মদীর হাতে তিনি অর্দ্ধ-পৃথিবীর কর্তৃত্ব তুলে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো, আমরা নিজেদের মো’মেন বলে দাবি করি, তাহলে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৃথিবীর কর্তৃত্ব, আধিপত্য আমাদের হাতে নেই কেন? সেই সর্বশক্তিমান কি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে অসমর্থ (নাউযুবিল্লাহে মিন যালেক)? তিনি আরও বলেছেন, তিনি মো’মেনদের ওয়ালী (বাকারা ২৫৭)। ওয়ালী অর্থ- অভিভাবক, বন্ধু, রক্ষক ইত্যাদি। আল্লাহ যাদের ওয়ালী তারা কোনদিন শত্রুর কাছে পরাজিত হতে পারে? তারা কোনদিন পৃথিবীর সর্বত্র অন্য সমস্ত জাতির কাছে লাঞ্ছিত, অপমানিত হতে পারে? তাদের মা-বোনরা শত্রুদের দ্বারা ধর্ষিতা হতে পারে? অবশ্যই নয়। এর একমাত্র জবাব হচ্ছে- আমরা যতোই নামাজ পড়ি, রোযা রাখি, যতোই হাজার রকম ইবাদত করি, যতোই মুত্তাকী হই, আমরা মো’মেন নই, মুসলিম নই, উম্মতে মোহাম্মদী হবার তো প্রশ্নই ওঠে না।
এর কারণ এই জনসংখ্যাটি ইসলামের ভিত্তি থেকেই সরে গেছে। ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, এটাই ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত এ কলেমাই এই দীনের অপরিবর্তনীয় ভিত্তি যাতে কোন দিনই “ইলাহ” শব্দটি ছাড়া অন্য কোন শব্দই ব্যবহৃত হয় নি। আল্লাহই আমাদের একমাত্র উপাস্য, স্রষ্টা, পালনকর্তা তাতে কোন সন্দেহ নেই, তবে এগুলি স্বীকার করে নেওয়া এই দীনের ভিত্তি নয়, কলেমা নয়। বরং কলেমা হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে না মেনে কেউ মো’মেন হতে পারবে না।
কলেমায় ব্যবহৃত ‘ইলাহ’ শব্দের প্রকৃত অর্থ, ‘যাঁর হুকুম মানতে হবে’ (He who is to be obeyed)। শতাব্দীর পর শতাব্দীর কাল পরিক্রমায় যেভাবেই হোক এই শব্দটির অর্থ ‘হুকুম মানা বা আনুগত্য’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে হয়ে গেছে ‘উপাসনা, বন্দনা, ভক্তি বা পূজা করা (He who is to be worshiped)। যেভাবে ‘হেদায়াহ’ (সঠিক দিক নির্দেশনা) শব্দটি প্রায়োগিক অর্থে ‘তাকওয়া’য় রূপান্তরিত হয়েছে, আকীদা আর ঈমান অভিন্ন বিষয়ে পরিণত হয়েছে ঠিক সেভাবেই ইলাহ শব্দের অনুবাদ পৃথিবীর সর্বত্র মা’বুদ বা উপাস্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সারা দুনিয়ায় খ্রিষ্টানদের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাগুলিতে কলেমার অর্থই শেখানো হয় – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মানে আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। কোর’আনের ইংরেজী অনুবাদগুলিতেও কলেমার এই অর্থই করা হয় (There is none to be worshiped other than Allah)। এর ভেতরকার ভুল এবং অসঙ্গতিটি দিবালোকের মত পরিষ্কার। ‘উপাস্য’ কথাটির আরবী হচ্ছে ‘মা’বুদ’, তাই “আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই” এই বাক্যটিকে আরবী করলে দাঁড়ায় “লা মা’বুদ ইল্লাল্লাহ’, যা কখনও ইসলামের কলেমা হয় নি, আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত কোন নবীই এই কলেমা নিয়ে আসেন নি, কোন অমুসলিম এই কলেমা পড়ে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ (উপাস্য) নেই’ ঘোষণা দিয়ে মুসলিম হতে পারবে না। এই ভুলের পরিণাম যে কত সুদূর প্রসারী ও দুর্ভাগ্যজনক দেখুন! কলেমার ‘ইলাহ’ শব্দটির অর্থ ভুল বোঝার ভয়াবহ পরিণতি এই হয়েছে যে সম্পূর্ণ মুসলিম জনসংখ্যাটি এই দীনের ভিত্তি থেকেই বিচ্যুত হয়ে গেছে, ফলে তারা আর মো’মেন নেই। তারা শুধু যে ইসলামের সীমানা থেকে বহিঃর্গত হয়ে কাফের মোশরেক হয়ে গেছে তাই নয়, এই ভুলের আরও মারাত্মক এক পরিণতি হয়েছে। সেটা হলো ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ পাল্টে যাওয়ায় এই মুসলিম জনসংখ্যার কলেমা সংক্রান্ত ধারণাই (Conception, আকীদা) পাল্টে গেছে, যে মহাগুরুত্বপূর্ণ আকীদা ভুল হলে সকল ফকীহগণের সর্বসম্মত অভিমত হচ্ছে, সকল আমল অর্থহীন হয়ে যায়, এমনকি ঈমানেরও কোন মূল্য থাকে না। বর্তমানে এই জাতির আকীদায় আল্লাহর হুকুম মানার কোন গুরুত্ব নেই, তাঁর উপাসনাকেই যথেষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। কলেমার অর্থ সম্পর্কে এই ভুল আকীদা এই জনসংখ্যার আত্মায় এবং অবচেতন মনে গভীরভাবে প্রোথিত হয়ে গেছে। ফলে সারা দুনিয়াতে এমন কোন দল নেই, এমন কোন রাষ্ট্র নেই যারা তাদের সামষ্টিক, জাতীয় জীবনে আল্লাহর হুকুম মেনে চলছে, যা কিনা ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মানার চেয়ে বহুগুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য্য। জাতীয় জীবনে আল্লাহকে অমান্য করে তার বদলে উপাসনা, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি দিয়ে আসমান জমীন ভর্তি করে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু সেই পর্বত সমান উপাসনাও বিশ্বময় তাদের করুণ দুর্শশার প্রতি দয়াময় আল্লাহর কৃপাদৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে, বিজাতির হাতে তাদের অবর্ণনীয় নিপীড়ন, লাঞ্ছনা, পরাজয়, অপমান, নিগ্রহ বন্ধ তো হচ্ছেই না, বরং দিন দিন আরো বেড়ে চলছে।
‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ যে ‘আনুগত্য করা’, উপাসনা করা নয় তা কোর’আনের বহু আয়াত থেকে বোঝা যায়। সূরা ফাতাহ’র ১৭নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন, ‘যে আল্লাহ এবং তাঁর রসুলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ এখানে জান্নাতে যাওয়ার পূর্বশর্ত আল্লাহ দিলেন, যে আনুগত্য করে, বললেন না যে, ‘ইবাদত, উপাসনা করে।’ এখানে তিনি অন্য কোন আমলের কথাও বললেন না, না সালাহ কায়েম, না যাকাত প্রদান, না হজ্ব, না সওম, অন্যান্য ছোটখাটো আমলের তো কথাই নেই। তিনি জান্নাত প্রদানের ওয়াদা করলেন শুধুই তাঁর এবং তাঁর রসুলের আনুগত্যের বিনিময়ে। সূরা নেসার ৬৯নং আয়াতটি দেখুন, আল্লাহ বলছেন, ‘যে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের হুকুম মান্য করবে সে নবী, শহীদ, সিদ্দিক ও সালেহীনদের সঙ্গে (অর্থাৎ জান্নাতে) থাকবে।’ এখানেও ‘আনুগত্য করা’ ছাড়া আর কোন শর্ত আল্লাহ দেন নি। সুতরাং কলেমায় ব্যবহৃত ‘ইলাহ’ শব্দের অর্থ ‘উপাস্য’ হওয়া সম্ভব নয়, এর অর্থ অবশ্যই ‘যার আনুগত্য করা হয়, হুকুম পালন করা হয়’। আল্লাহর দাবি হচ্ছে, প্রথমে মানুষকে এই অঙ্গীকারে আবদ্ধ হতে হবে যে আল্লাহ যা হুকুম করবেন তাই সে মেনে নিবে এবং তাঁর আনুগত্য করবে। তারপর এই চুক্তি বাস্তবায়নকল্পেই সে আল্লাহর ইবাদত করতে বাধ্য, কারণ আল্লাহর হুকুম হচ্ছে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা। তাহলে বোঝা গেল, প্রথম কাজ আল্লাহর আনুগত্য মেনে নেওয়া, তারপরে তাঁর ইবাদত করা। সূরা আম্বিয়ার ২৫ নং আয়াতটি দেখুন, আল্লাহ বলছেন, “আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, সুতরাং তাঁর ইবাদত করো।” যদি ইবাদত করাই প্রথম ও প্রধান কাজ হতো তাহলে আয়াতটি হতো এমন যে, “আল্লাহ ছাড়া মা’বুদ (ইবাদত, বন্দনা পাওয়ার অধিকারী) কেউ নয়, সুতরাং তাঁরই আনুগত্য করো”, আরবীতে লা মা’বুদ ইল্লাল্লাহ, ফা আত্তাবিয়্যুহু। কিন্তু কোর’আনে এমনটা একবারও বলা হয় নি। সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ ‘ইলাহ’ এবং ‘মা’বুদ’ শব্দ দু’টি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছেন কারণ এদের অর্থও সম্পূর্ণ আলাদা।
মোটকথা, এই ১৫০ কোটির জনসংখ্যাটি, যারা নিজেদেরকে কেবল মুসলিমই নয়, একেবারে মো’মেন ও উম্মতে মোহাম্মদী বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, তারা এগুলির কোনটিই নয়, তারা কার্যত শেরক এবং কুফরে নিমজ্জিত। আল্লাহ বলছেন, ‘আল্লাহ যা নাযেল করেছেন সে অনুযায়ী যারা হুকুম (বিচার ফায়সালা) করে না তারা কাফের, জালেম, ফাসেক (সূরা মায়েদা ৪৪, ৪৫, ৪৭)। এই আয়াতগুলিতে ‘হুকুম’ শব্দটি দিয়ে কেবল আদালতের বিচারকার্য্যই বোঝায় না, ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক অর্থাৎ সামগ্রিক জীবন তাঁর নাযেল করা বিধান অর্থাৎ কোর’আন (এবং সুন্নাহ) মোতাবেক পরিচালনা করাকেও বোঝায়। মো’মেন মুসলিম হবার দাবিদারগণ এখন আর একটি সু-সংহত উম্মাহরূপে নেই, তারা ভৌগোলিকভাবে পঞ্চাশটিরও বেশি জাতিরাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে ইউরোপীয় খ্রিষ্টান, ইহুদি ও পৌত্তলিকদের দাসে পরিণত হয়েছে, তাই তারা তাদের সামষ্টিক কার্যাবলী আল্লাহর নাযেলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালা করে না। ফলশ্রুতিতে তারা ফাসেক (অবাধ্য), জালেম (অন্যায়কারী) এবং কাফেরে (প্রত্যাখ্যানকারী) পরিণত হয়েছে। আল্লাহ প্রদত্ত বিধানগুলিকে অপাংক্তেয় করে রেখে তারা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের আইন, কানুনগুলি নিজেদের দেশে প্রবর্তন করে তা দিয়ে সামষ্টিক কার্যাবলী পরিচালনা করছে।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছি যে তওহীদ ও দীন যে দুটি ভিন্ন বিষয় এবং এ দুটির তফাৎ কি। তওহীদ হচ্ছে ভিত্তি এবং দীন হচ্ছে এই ভিত্তির উপর নির্মিত অবকাঠামো, দালান। তওহীদ হচ্ছে, “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করা এবং প্রতিটি বিষয়ে তাঁর হুকুমের আনুগত্য করা। সংক্ষেপে জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর ও তাঁর রসুলের হুকুম মানা, প্রতিটি বিষয়ে যেখানেই তাঁর কোন বক্তব্য আছে তা বিনা প্রশ্নে, বিনা দ্বিধায় মেনে নেওয়া। যে বিষয়ে তাঁর অথবা তাঁর রসুলের কোন বক্তব্য নেই সে বিষয়ে, তা ব্যক্তিগত হোক বা সমষ্টিগত, আমরা স্বাধীনভাবে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি।”
আল্লাহর প্রতি লাখো কোটি শুকরিয়া যে তিনি আবার এই হারিয়ে যাওয়া তওহীদ ও সত্যদীনের প্রকৃত আকীদা যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ২০০৮ এর ২ ফেব্রুয়ারি আল্লাহ বিরাট এক মো’জেজার মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে, হেযবুত তওহীদ হচ্ছে আল্লাহর সেই মনোনীত দল যার মাধ্যমে সারা দুনিয়ার সকল অন্যায় অশান্তি নির্মূল হয়ে অনাবিল শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশা’আল্লাহ।
লেখক: এমাম, হেযবুত তওহীদ
ফেসবুক: https:/ww/w.facebook.com/emamht

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ