এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী
ভূগোল, চামড়ার রং, ভাষা ইত্যাদির উপর ভিত্তি কোরে সৃষ্ট আলাদা জাতিসমূহ যে শেষ ইসলামের বিরুদ্ধে তার আরও কারণ আছে। শেষ নবী (দ:) সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত হোয়েছেন অর্থাৎ তার নবুয়ত সমস্ত পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। তার উম্মাহর ব্যর্থতার জন্য তার নবুয়ত সমস্ত মানব জাতিকে এর অন্তর্ভুক্ত কোরতে পারে নি, যদিও সেইটাই ছিলো উম্মতে মোহাম্মদীর উপর অর্পিত সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ দায়িত্ব। যেখানে সমস্ত মানব জাতিকেই বিশ্বনবীর (দ:) উম্মাহয় পরিণত করার জন্য তাকে পাঠানো হোয়েছে সেখানে স্থান, রং ভাষা ইত্যাদির উপর ভিত্তি কোরে মানব জাতিকে অর্থাৎ তাঁর উম্মাহকে বহু ভাগে বিচ্ছিন্ন কোরে দেয়ার অনুমতি থাকতে পারে না, কারণ তাহোলে উম্মাহকে বিভক্ত কোরে দেয়া হয়, তাঁর উম্মাহর মধ্যে যে কোন রকম বিভক্তি সৃষ্টিই কুফর। যেখানে এই শেষ জাতির-উম্মতে মোহাম্মদীর – ঐক্য অটুট রাখতে আল্লাহ কোর’আনে বহুবার তাগিদ দিয়েছেন; তাঁর রসুল (দ:) বহু ভাবে সতর্ক কোরেছেন। ঐক্য নষ্ট হবার সামান্যতম কারণ দেখলে যখন তাঁর পবিত্র চেহারা রাগে লাল হোয়ে যেতো সেখানে ঐ ঐক্য ধ্বংসকারী ব্যবস্থাকে আল্লাহ ও রসুল (দ:) কোনক্রমেই অনুমতি দিতে পারেন না, এটা সাধারণ জ্ঞান, সুতরাং এটা হারাম। এ ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে।
পৃথিবী নামের এই গ্রহটি মানব জাতির জন্য, বনি আদমের জন্য। এর বুকের উপর মনগড়া লাইন টেনে এই বনি আদমকে বহু ভাগে বিভক্ত কোরে চিরস্থায়ী সংঘর্ষের, দ্বন্দ্বের বন্দোবস্ত করার অনুমতি স্রষ্টা দেন নি। তিনি বোলেছেন সমস্ত মানব জাতি এক জাতি, একই আদম-হওয়ার সন্তান। স্রষ্টার সেই বাণী উপেক্ষা কোরে অহংকারী মানুষ যে ভৌগোলিক রাষ্ট্র (ঘধঃরড়হ ঝঃধঃব) স্থাপন করলো তার পরিণতি হোয়েছে সীমাহীন অন্যায়, ফাসাদ আর রক্তপাত। এ ছাড়া হোয়েছে পৃথিবীর জনসংখ্যাকে কৃত্রিম সীমান্তের মধ্যে আটকিয়ে রেখে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করা হোয়েছে। ফল হোয়েছে এই যে পৃথিবীর কোথাও ছোট ভৌগোলিক রাষ্ট্রে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে মানুষ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চরম দুর্দশাগ্রস্থ হোয়ে অনাহারে কু-শিক্ষায় অশিক্ষায় ধুকে মরছে। অন্যদিকে অল্প জনসংখ্যার রাষ্ট্র পৃথিবীর বিরাট এলাকা দখল কোরে সেটার প্রাকৃতিক সম্পদ রাজার হালে ভোগ কোরছে। বর্তমানে তুলনামূলক ভাবে অল্প জনসংখ্যার কিন্তু বিরাট ভূ-ভাগ অধিকারী এমন রাষ্ট্র আছে যেখানে যে প্রচুর খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন হয় তার একটা বিরাট অংশ জাহাজে কোরে নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিতে হয়। অন্যদিকে বহু ছোট অথচ অতিরিক্ত জনসংখ্যার রাষ্ট্র আছে যে রাষ্ট্রের মানুষ হাজার হাজারে না খেয়ে মরে যাচ্ছে। এর চেয়ে বড় অন্যায় এর চেয়ে বড় যুলুম আর কি
হতে পারে? ঐ ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলির মধ্যে মানুষকে আটকে রাখা হোয়েছে, অবরুদ্ধ কোরে রাখা হোয়েছে। কৃষি কাজ কোরে মানুষের জন্য খাদ্য ফলানোর জন্য এদের প্রতি জনের জন্য কয়েক কাঠা জমিও ভাগে পড়ে না, অন্যদিকে ঐ বড় বড় রাষ্ট্রগুলিতে প্রতি জনের ভাগে লক্ষ লক্ষ একর পড়ে এবং তারপরও লক্ষ লক্ষ বর্গমাইল অনাবাদি পড়ে থাকে চাষ করার মানুষের অভাবে। কৃষি ছাড়াও অর্থনীতির অন্যান্য দিক দিয়ে এই সমস্ত বিভাজন একই রকমের অন্যায় ও যুলুমের প্রত্যক্ষ কারণ। এক ভৌগোলিক রাষ্ট্র চূড়ান্ত ধনী, অন্যটি দারিদ্রের নিুতম পর্য্যায়ে নেমে পশু জীবন যাপন কোরছে। একটি তার বিরাট সম্পদ সীমান্তের ভেতর আটকে রাখছে, তাদের রাষ্ট্রের মানুষ বাদ দেন কুকুর-বেড়াল যে মানের জীবন যাপন করে তা ঐ দরিদ্র রাষ্ট্রের মানুষগুলি স্বপ্নেও দেখতে পারে না। এই মহা অন্যায়, মহা যুলুম বন্ধ কোরতেই আল্লাহ ভৌগোলিক, গায়ের রং, ভাষা ইত্যাদি মানুষে মানুষে যত রকমের প্রভেদ হোতে পারে সব কিছুকে নিষিদ্ধ কোরে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থার-দীনের নীতি হলো পৃথিবীর বুকে চামড়ার রং, ভাষা, গোত্র, গোষ্ঠী, কোন কিছুরই বিভেদ থাকবে না। কারণ সমস্ত পৃথিবীর মানুষ এক জাতি। দীনের এই নীতি স্বীকার কোরে নিলে মানুষ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে। কোথাও জনসংখ্যার অস্বাভাবিক চাপ, কোথাও, জনহীনতা থাকবে না। পৃথিবীর এক জায়গায় প্রাচুর্য্য, অন্য জায়গায় দারিদ্র্য থাকবে না। এক বালতি পানি মাটিতে ঢেলে দিলে যেমন পানি চারিদিকে ছড়িয়ে যেয়ে নিজের সমতলত্ব খুঁজে নেয়, সমান হোয়ে যায়, পানি কোথাও উঁচু কোথাও নিচু হোয়ে থাকে না, তেমনি জনসংখ্যা এবং সম্পদ পৃথিবীময় ছড়িয়ে যেয়ে সমান হোয়ে যাবে। অথচ মানুষ সীমান্তের বাঁধ দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক স্রোতকে আটকিয়ে এক জায়গায় অতিরিক্ত জনসংখ্যা অন্য জায়গায় জনশূন্যতা, এক জায়গায় সম্পদের প্রাচুর্য অন্য জায়গায় কঠিন দারিদ্র্যের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কোরে রেখেছে। এই চরম অন্যায়-ব্যবস্থা শেষ ইসলামে অস্বীকার করা হোয়েছে। কিন্তু মানুষের গড়া রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আইন-দণ্ডবিধি ইত্যাদির সঙ্গে এই শেরক ব্যবস্থাও পৃথিবীর ‘মোসলেম’ জাতি গ্রহণ কোরেছে এবং কোরেও নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত-টুপি-পাগড়ী-নফল এবাদত-তসবিহ ইত্যাদি হাজার রকমের কাজ কোরে নিজেদের মহা মোসলেম মনে কোরছে আর পর জীবনে জান্নাতের আশা কোরছে। তারা ভুলে গেছে যে নফল এবাদত না কোরলেও রহমানুর রহীম আল্লাহ জান্নাত দিতে পারেন। কিন্তু শেরক ও কুফরকে ক্ষমা না করা হোচ্ছে তার অঙ্গীকার এবং তিনি কখনও তার অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না, কোরবেন না।
কাজেই আজ সারা পৃথিবীকে ভৌগোলিকভাবে দুই শতাধিক ভাগে, গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মতবাদের ভিত্তিতে হাজার হাজার রাজনৈতিক দল গঠন কোরে, প্রতিটি ধর্মের মধ্যে থাকা হাজার হাজার দল, ফেরকা, মাজহাব ইত্যাদিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে দাজ্জাল অর্থাৎ ইহুদী খ্রীস্টান ‘সভ্যতা’ এই মানবজাতিকে খণ্ড বিখণ্ড কোরে রেখেছে। এই সকল বিভক্তি মিটিয়ে দিয়ে সমগ্র বনী আদমকে একটা জাতিতে পরিণত করার জন্যই মহান আল্লাহ আখেরী নবীকে পাঠিয়েছেন। আজ মহানবীর উম্মত হিসেবে হেযবুত তওহীদ মানবজাতিকে সেই আহ্বান কোরছে। আল্লাহ ২ ফেব্র“য়ারী ২০০৮ তারিখে একটি মহিমান্বিত মো’জেজা ঘোটিয়ে হেযবুত তওহীদকে তাঁর নিজের পরিচালিত আন্দোলন হিসাবে সত্যায়ন কোরেছেন, এর এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে সত্যায়ন কোরেছেন এবং মানবজাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যৎ জানিয়ে দিয়েছেন। সেটি হোল- অচীরেই আল্লাহর সত্যদীন এই হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে এনশা’আল্লাহ। সুতরাং আজ যে অশান্তিময় পরিবেশে আমরা বসবাস কোরছি তার সমাপ্তি ঘোটতে যাচ্ছে। এবার আল্লাহর রসুলের প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী আবার জেগে উঠবে, এই জাতির কালঘুম টুটবে। মানবজাতির সামনে আবার নতুন কোরে উদ্ভাসিত হবে নবসভ্যতার সূর্য্য। আল্লাহর রসুলের নাম ‘রহমাতাল্লেল আলামীন’ বাস্তবে স্বার্থকতা লাভ কোরবে। মানবজাতিতে কোন ভেদাভেদ থাকবে না, সবাই হবে ভাই ভাই, একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। বাবা আদম (আ:) ও মা হাওয়ার সকল সন্তান তাদের লক্ষ লক্ষ বছরের অনৈক্য হানাহানি ভুলে পরস্পরকে আলিঙ্গন কোরবে। সেই শান্তি প্রতিষ্ঠা কি এমনি এমনি হবে? কখনওই নয়। এর জন্য আল্লাহর রসুলের প্রকৃত উম্মাহকে তাদের চূড়ান্ত কোরবানী ও ত্যাগ স্বীকার কোরে সংগ্রাম কোরতে হবে, যেমনটা ত্যাগ স্বীকার কোরে গেছেন আল্লাহর রসুল ও তাঁর প্রকৃত উম্মাহ।
[সমস্ত পৃথিবীময় অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ ও রক্তপাত ইত্যাদি নির্মূল করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সনে এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী হেযবুত তওহীদ নামক আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠা করেন। আল্লাহ তাঁকে প্রকৃত ইসলামের যে জ্ঞান দান কোরেছেন তা তিনি যতটা সম্ভব হোয়েছে বই-পুস্তক লিখে, বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা কোরেছেন। এই নিবন্ধটি লেখকের বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য থেকে সম্পাদিত।]