Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

মহাভারতের কথা: ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী?


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

রাকীব আল হাসান:

TA51
আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশে শুধু মুসলিমই নয় বিরাট একটা জনসংখ্যা সনাতন ধর্মের অনুসারীও রয়েছেন। কাজেই এখানে তাদের উদ্দেশ্যে সনাতন ধর্মগ্রন্থ মহাভারত থেকে ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী, বলিদান বা কোরবানির মাহাত্ম কী, মানুষের প্রকৃত ধর্ম কী হওয়া উচিত ইত্যাদি প্রসঙ্গে অবতার শ্রীকৃষ্ণের (অনেকেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন) অমীয় বাণী থেকে কিছু কথা সহজবোধ্যভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরিণতি কী হবে সেটা জানতে চাইলে মহারানী দ্রৌপদীকে অবতার শ্রীকৃষ্ণ বলেন, যুদ্ধ তো সর্বদাই বিনাশ আনে, রণভূমিতে পীড়া আর দুঃখই জন্ম নেয়। তুমি কেমন করে ভেবে নিলে যে, তোমার জন্য সুখ থাকবে সেখানে? হ্যাঁ তোমার পঞ্চ স্বামী ব্যতীত মহারাজ শান্তনুর বংশের সমগ্র প্রদীপ নিভে যাবে, সমগ্র বংশের নাশ হয়ে যাবে এই যুদ্ধে। তখন মহারানী দ্রৌপদী জিজ্ঞাসা করেন, মহারাজ শান্তনুর সমগ্র বংশের নাশ হয়ে যাবে? আমাদের সন্তানেরা সংঘর্ষের সময় যাদের স্মরণ করে আমরা শক্তি পেয়েছি, যাদের জন্ম আমাদের নতুন রূপে জন্ম দিয়েছিল, তাদের মৃত্যু হয়ে যাবে? অর্থাৎ প্রতিদিন অদম্য উৎসাহে যে যুদ্ধের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি, সেকি নিজেদের সন্তানের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছি? তখন তার উত্তরে অবতার শ্রীকৃষ্ণ বলেন, মানুষ জীবনের প্রত্যেক ক্ষণে মৃত্যুর দিকেই পা বাড়ায়। বাস্তবে সে যা করে তাকি মৃত্যুর জন্যই করে না? বসন্তে বিকশিত প্রত্যেক পত্র কি হেমন্তে ঝরে যাওয়ার জন্যই বিকশিত হয় না? তাহলে তার বিকাশ লাভ, সূর্যকিরণ পান করা আর বায়ুতে আন্দোলিত হয়ে মধুর ধ্বনি উৎপন্ন করা- সবই কি ব্যর্থ? ঘুর্ণিঝড় যখন বৃক্ষকে আন্দোলিত করে তখন সেই বৃক্ষের প্রত্যেক পাতা সমস্ত শক্তি লাগিয়ে সেই বৃক্ষের সাথে লেগে থাকার প্রয়াস করে। আর যখন পিত বর্ণ ধারণ করে তখন শুকিয়ে ঝরে যায়। সৃষ্টিও এক বিশাল বৃক্ষ, আর প্রত্যেক মানুষ, প্রত্যেক পশু-পক্ষী এই বৃক্ষের উদ্গোমিত ও মোচনপ্রাপ্ত পত্র স্বরূপ। পত্র মোচন অনিবার্য। কিন্তু যতক্ষণ সে বৃক্ষে লেগে থাকে ততক্ষণ সংঘর্ষ ও শান্তি দুইয়ের আনন্দ নেওয়া আবশ্যক। (মহারানী দ্রৌপদী- আমি কোনো আনন্দ দেখতে পাচ্ছি না গোবিন্দ) কারণ তুমি মোহজালে আবদ্ধ। (মহারানী দ্রৌপদী- হ্যাঁ, আমি মোহজালে আবদ্ধ। এই যুদ্ধে আমাদের যদি বিজয় প্রাপ্তিও হয় তবুও আমার তো কোনো সুখ প্রাপ্তি হবে না।) সুখের জন্য যুদ্ধ করার কথা কখন বলেছি আমি? সম্মান প্রাপ্তি, প্রতিশোধ এসবের জন্য যুদ্ধ করার পরামর্শ কবে দিয়েছি আমি? এ যুদ্ধ তো সমাজের সুখের জন্য করতে হবে। অধর্মের নাশ করার জন্য আর ধর্মের স্থাপনা করার জন্য আমাদের এ যুদ্ধ করতেই হবে। (মহারানী দ্রৌপদী- এত বড় বলিদান আমাকেই কেন দিতে হবে গবিন্দ।) শোন শখি, মনুষ্য সমাজ কর্তৃক প্রস্তুত নীতি, আদর্শ ও ধর্ম এ তিন সমুদ্র তটে নির্মিত বালুকণার ভবনের ন্যায়। সময়ের ঝাপটাই নিরন্তর ভাঙতে থাকে, এর নিরন্তর নির্মাণ করতে হয়, অন্যথা নীতি, আদর্শ ও ধর্ম এ সমস্তই নাশ হয়ে যায়। কিছু মানুষকে ঈশ্বর এই শক্তি দেন যে ধর্মের পুনস্থাপনা করতে পারে। আর যার কাছে সে শক্তি থাকে সে নিজের সমস্ত বলিদান দিয়েও ধর্মের জন্য সংঘর্ষ করতে থাকে। সে ভগবান রামচন্দ্রই হোন আর ভগবান পরশুরামই হোন অথবা বিষ্ণুর বামন অবতার- ধর্মের পুনঃস্থাপন করার জন্য সংঘর্ষকারীরই পূজা করে এই সংসার। একটা কথা জেনে রাখ শখি। ধর্মের জন্য সংঘর্ষ করা কারো কর্তব্য নয়, এ এক সিদ্ধান্ত, এক সংকল্প মাত্র। তোমার জন্যও যুদ্ধ কোনো কর্তব্য নয়। সমাজের কারণে কৃত এক সংকল্প মাত্র। তুমি যখন ইচ্ছে এ সংকল্প পরিত্যাগ করতে পার। কদাপি তুমি পতি, পুত্র, পৌত্র, আদির সুখ পেয়েই যাবে। কিন্তু কটি কটি মানুষের ন্যায় সময়ের প্রবাহে তলিয়ে যাবে, তোমার জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে। তোমার কারণে কারোর কোনো লাভ প্রাপ্তি হবে না। ঈশ্বর তোমাকে যে বিশেষ শক্তি দান করেছেন সেই ঈশ্বরের বিশ্বাস ভঙ্গ হবে। সিদ্ধান্ত তুমি নাও সখি।
সংসারে যখন দুঃখ বৃদ্ধি পায়, সংসারে স্বল্প মানুষ সুখ অনুভব করে আর অধিকতর মানুষ দুঃখ অনুভব করে তখন সংসার রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এরূপ সময় সেই রোগের নিরাময় করতেই হয়। নিজে নিজেকে বলিদান দিয়েও অধর্মের বিনাশ করা অনিবার্য হয়ে পড়ে। এরূপ সময় না সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ আর না প্রেম গুরুত্বপূর্ণ। না তো স্বার্থ দেখতে হয় আর না সুখের আশা করতে হয়। এইরূপই সময় এখন আপনাদের সবার সামনে। সিদ্ধান্ত আপনাদের সবার। ফলের স্বাদ বৃক্ষের প্রাপ্তি হয় না, কদাচিৎ সেইরূপে এই বলিদান থেকে আপনাদের লাভ নাও হতে পারে। নিজের হৃদয়ে উকি দাও, এতটা করুণা কি রয়েছে ওখানে, এতটাই কি ধর্ম রয়েছে আত্মায় যে, সমগ্র সমাজের জন্য নিজের বলিদান নিশ্চিত করতে পার। এই বিষয়ে আপনারা সবাই চিন্তা করুন।
দান তাকেই বলে যাতে দানী হারায় আর যাচক প্রাপ্তিলাভ করে কিন্তু বলিদান (এই অর্থে ইসলাম ধর্মে বলিদানকেই কোরবানি বলে) সেটাই হয় যা দানী দেয় আর সমগ্র জগৎ প্রাপ্ত করে।
পাপ ও পুণ্যের দুই রূপ, মালার ন্যায় থাকে। যে প্রকার একটি মুক্তা তার পরের মুক্তাকে আকর্ষণ করে ঠিক সেইরূপ এক পুণ্য অপর পুণ্যের সৃষ্টি করে আর এক পাপ অবশ্যই অপর পাপ করায়। পাপ মানুষের অহংকারকে সুখ প্রদান করে। মানুষকে স্বয়ং দ্বিতীয় পাপ করা থেকে তখনই রক্ষা করা যায় যখন ঐ পাপ ভয়াবহ ফল দেয়। কিন্তু অহংকারে অন্ধ মানুষ সেই ফল দেখতেই পায় না। অধর্ম ও অপরাধের পরম্পরা নির্মিত করতেই থাকে। সমাজ কত বঞ্চনা, কত ছল, কত অপরাধ সহ্য করতে পারে, কত অপরাধকে ক্ষমা প্রদান করতে পারে এর নির্ণয় সমাজই করে থাকে। আর সমাজে যার কাছে দ- দেওয়ার শক্তি থাকে তাকে সেই নির্ণয় করতে হয়। (পঞ্চপা-বের এক পুত্র প্রতিবিন্দের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণের বাবা-মা সম্পর্কে) প্রথম বালকের মৃত্যুর পর মাতা দেবকী ও পিতা বাসুদেবের মুখে কখনো হাসি আসে নি। বাস্তবে এই বালকদের বলি প্রদান করা হয় নি পুত্র, অধর্মের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে ওরা বীরগতি (ইসলাম ধর্মে- ধর্মের জন্য জীবন উৎসর্গকে শাহাদাত বলে) প্রাপ্ত হয়েছে। বলিদান তো আমার মাতা আর পিতার সুখের হয়েছিল। (কিন্তু এত বড় বলিদান কেন, সূতকর্মের এমন প্রশ্নের উত্তরে) পুত্র সূতকর্ম, ধর্মের স্থাপনা করার প্রয়াসকারীর মর্যাদা কিরূপ হয় জান তুমি? পাপীদের পাপের মর্যাদাই তাদের বলিদানের মর্যাদা। অর্থাৎ পাপী ও পাপ সম্পূর্ণ বিনষ্ট না হয় ততদিন ধর্মপ্রিয় মানুষদের বলিদান কী প্রকারে পূর্ণ হতে পারে?

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ