Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

বিষ-বাণী


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36
kazi-nazrul-islam_1436779885-259x300কাজী নজরুল ইসলাম

মাভৈঃ! মাভৈঃ!! ভয় নাই, ভয় নাই ওগো আমার বিষ-মুখ অগ্নি-নাগ-নাগিনীপুঞ্জ! দোলা দাও, দোলা দাও তোমাদের কুটিল ফণায় ফণায়। তোমাদের যুগ যুগ-সঞ্চিত কাল-বিষ আপন আপন সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে ফেল। তোমাদের বিভূতি-বরণ অঙ্গ কাঁচা বিষের গাঢ় সবুজ রাগে রেঙে উঠুক। বিষ সঞ্চয় কর, বিষ সঞ্চয় কর হে আমার তিক্ত-চিত ভূজগ তরুণ দল! তোমাদের ধরবে কে? মারবে কে? যে ধরতে আসবে, তার হাড়-মাংস খ’সে খ’সে পড়বে উগ্র বিষের দাহনে। কোন্ দুঃসাহসী বন্দী করবে তোমাদেরে? কারার লৌহদণ্ড দারুণ বিষ-দাহনে খ’সে গ’লে পড়বে। অত্যুগ্র নিশ্বাস-বহ্নিতে কারার কন্দরে-কন্দরে ধুধু ধুধু ক’রে আগুন আগুন জ্ব’লে উঠবে। তোমার তড়িৎ-জিহ্বার মুহূর্ত ইঙ্গিতে জল্লাদের হাতের খড়গ টুকরো টুকরো হয়ে যাবে, ফাঁসির রজ্জু ভস্ম হয়ে যাবে। বিষ সঞ্চয় কর, হে আমার হলাহল-পুরবাসী কূট নাগ-নাগিনী-কুল। এত বিষ এমন বিষ যা শুধু জ্যান্ত অবস্থাতেই অত্যাচারকে দগ্ধে মারবে না, মরবার পরও যে বিষ শাশ্বত সম-তেজা সম-উগ্র হয়ে থাকবে। নিদাঘ মধ্যাহ্নের তাপ-দগ্ধ রুদ্র-বৈশাখী ঝড়ে ঝড়ে চিতায়-ভস্মীভূত তোমাদের বিষ স্ফুলিঙ্গ উড়ে বেড়াবে দিগন্তের কোলে কোলে গৃহীর প্রাঙ্গণে প্রাঙ্গণে, বলদর্পীর মহলে-মহলে। মা ডুকরে কেঁদে উঠবে, আর জ্বালায় শিশু-পুত্র তার আর্তনাদ ক’রে ক’রে নীল হয়ে, শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়ে মাতৃক্রোড়ে মরতে থাকবে, যেমন কারবালার কচি শিশু আসগর “তৃষ্ণা তৃষ্ণা” ক’রে জহর-মাখা তীর খেয়ে মরেছিল!
তোমাদের গোরস্থানে তোমাদের শ্মাশানে বিষ-বায়ু দিনে ঘূর্ণিরূপে শিষ দিয়ে ঘুরে বেড়াবে, আর রাতে অনির্বাণ আলেয়া-শিখা হয়ে নেচে নেচে বেড়াবে।
মরেও তোমাদের বিষ যাবে না, প্রতি অস্থিকণায়, প্রতি মৃত্তিকা-পরমাণুতে তোমাদের উদ্গারিত কূট-হলাহল মিশ্রিত থাকবে। সে-অস্থি যার গায়ে বিঁধবে, সে-দগ্ধ মৃত্তিকা যার গায়ে ছোঁওয়া লাগবে সে তখনি বিষ-জর্জরিত, ভস্ম হয়ে যাবে। চাই এত জ্বালাময় হলাহল, এমনি মারীভয়-হানা মারীবিষ। তোমাদের দেহ হবে সহস্র বৃশ্চিক-যুক্ত কোটি হুল-বহুল। যে তোমাদের বাঁধতে আসবে, ঐ সহস্র বৃশ্চিক যুক্ত কোটি হুল এক সাথে তাকে উগ্র রোষে দংশন হানবে।
আমাদের কাছে প্রেম ভণ্ডামি, করুণা বিদ্রুপ, প্রণয় কশাঘাত, প্রীতি ভীরুতা।
আমাদের বিবাহের লাল চেলি দেশশত্র“র আঘাত-রক্ত-রাঙা উত্তরীয়, ফাঁসির রশি আমাদের প্রিয়ার ভুজবন্ধন।
শব দেখে আমাদের গৃহত্যাগ, রক্ত-ঝরা প্রাণ, ঝাঁজরা-করা বক্ষ নিয়ে রণাঙ্গনে আমাদের আরাম-শয়ন। বুকে প্রতিদ্বন্দ্বীর বেয়নেটের সঙ্গীন-ঘাত, সে যেন আমাদের মাতৃহারা পুত্রের অভিমান-মার। স্কন্ধে ঘাতকের ভীম খড়গাঘাত, সে যেন আমাদের প্রিয়ার কোল হ’তে দুষ্টু আদরিণী মেয়ের ঝাঁপিয়ে পড়া।
আমরা অবিনশ্বর। আমাদের একজন যায়, একশ’ জন আসে। আমাদের একবিন্দু রক্ত ভূতলে পড়লে একলক্ষ বিদ্রোহী নাগশিশু বসুমতী বিদীর্ণ ক’রে উঠে আসে। আমরা অদম্য। আমাদের একজন বাঁধা পড়লে একশ’ জন ছাড়া পায়, সহস্র ভুজগ ছুটে এসে তার স্থান পূর্ণ করে।
আমরা দেশ-শত্রু বিভীষণের মহাকালান্তক কাল। আমরা অকাট্য ব্রক্ষশাপ। পরীক্ষিতের মত, লক্ষিন্দরের মত দুর্ভেদ্য ছিদ্রহীন দুর্গের মধ্যে থাকলেও দেশ বিদ্রোহীকে আমরা তক্ষক হয়ে, সূত্ররূপী কালসাপ হয়ে দংশন করি।
আমাদের বিদ্রোহ যারা দেশ জয় করেছে তাদের উপর নয়, আমাদের বিদ্রোহ দেশদ্রোহীদের উপর।

সার্চ করুন

যুক্ত হোন আমাদের ফেসবুক পেজের সাথে...