Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36

বাঙলা সাহিত্যে মুসলমান


Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/htmain/public_html/wp-content/plugins/elementor-pro/modules/dynamic-tags/tags/post-featured-image.php on line 36
66কাজী নজরুল ইসলাম

আমাদের বাঙলার মুসলমান সমাজ যে বাঙ্লা ভাষাকে মাতৃভাষা বলিয়া স্বীকার করিয়া লইয়াছেন এবং অত্যল্পকাল মধ্যে আশাতীতভাবে উন্নতি দেখাইয়াছেন, ইহা সকলেই বলিবেন, এবং আমাদের পক্ষে ইহা কম শ্লাঘার বিষয় নহে। সাধারণ অসাধারণ প্রায় সকল বাঙালী মুসলমানই এখন বাঙ্লা পড়িতেছেন, বাঙ্লা শিখিবার চেষ্টা করিতেছেন, ইহা বড়ই আশা ও আনন্দের কথা। বাঙ্লা সাহিত্যে পাকা আসন দখল করিবার জন্য সকলেরই মনে যে একটা তীব্র বাসনা জাগিয়াছে, এবং ইহার জন্য আমাদের এই নূতন পথের পথিকগণ যে বেশ তোড়জোড় করিয়া লাগিয়াছেন, ইহা নিশ্চয়ই সাহিত্যে আমাদের জীবনের লক্ষণ। ইহারই মধ্যে আমাদের কয়েকজন তরুণ লেখকের লেখা দেখিয়া আমাদের খুবই আশা হইতেছে যে, ইঁহারা সাহিত্যে বহু উচ্চ আসন পাইবেন।
এখন আমাদের বাঙ্লা সাহিত্যে স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করিতে হইলে সর্ব-প্রথম আমাদের লেখার জড়তা দূর করিয়া তাহাতে ঝর্ণার মত ঢেউভরা চপলতা ও সহজ মুক্তি আনিতে হইবে। যে সাহিত্য জড়, যার প্রাণ নাই, সে নির্জীব-সাহিত্য দিয়া আমাদের কোন উপকার হইবে না, আর তাহা স্থায়ী সাহিত্যেও হইতে পারে না। বাঙ্লা সাহিত্যে রবিন্দ্রনাথ ছাড়া খুব কম লেখকেরই লেখায় মুক্তির জন্য উদ্দাম আকাঙক্ষা ফুটিতে দেখা যায়। হইবে কোথা হইতে? সাহিত্য হইতেছে প্রাণের অভিব্যক্তি, যাহার নিজের প্রাণ নাই, যে নিজে জড় হইয়া গিয়াছে, সে লেখার প্রাণ দিবে কোথা হইতে? যাহার নিজের বুকে রঙ-এর আলিপনা ফুটে না, সে চিত্রে রঙ ফুটাইবে কেমন করিয়া? আমাদের অধিকাংশই হইয়া গিয়াছি জড়, কেননা আমাদের জীবন ভয়ানক একঘেয়ে; তাহাতে না আছে কোন বৈচিত্র্য, না আছে কোন সৌন্দর্য। তা ছাড়া, ‘বোঝার উপর শাকের আঁটির’ মত আমরা নাকি আবার জন্ম হইতেই দার্শনিক, কাজেই বয়স কুড়ি পার না হইতেই আমরা গম্ভীর হইয়া পড়ি অস্বাভাবিক রকমের। আর, গম্ভীর হইলেই অম্নি নির্জীব অচেতন প্রাণীর মত হাত-পা গুটাইয়া বসিয়া থাকিতে হইবে। এই যে চলার আনন্দ হইতে বঞ্চিত থাকিয়া জড়-ভরতের মত বসিয়া থাকা, ইহাই আমাদের প্রাণশক্তিকে টুঁটি টিপিয়া মারিতেছে। সাহিত্যের মুক্তধারায় থাকিবে চলার আনন্দ, স্রোতের বেগ এবং ঢেউ-এর কল-গান ও চঞ্চলতা।
আমাদিগকে, বিশেষ করিয়া আমাদের তরুণ সম্প্রদায়কে এই দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখিতে হইবে। অনেক যুবকের লেখা দেখিয়া মনে হয়, ইহা যেন কোন এক জরাগ্রস্ত বুড়োর লেখা, তাহাতে না আছে প্রাণ, না আছে চিন্তা-শক্তি, না আছে ভাব,-শুধু আবর্জনা, কঙ্কাল আর জড়তা। ইহা বড়ই দুঃখের কথা। সাহিত্যকে এই প্রাণের সোনার কাঠি দিয়া জাগাইবার যে যাদু-শক্তি, ইহা লাভ করিতে হইলে আমাদের তরুণ সাহিত্যিক সম্প্রদায়কে সর্বপ্রথম শরীরের দিকে দৃষ্টি রাখিতে হইবে। শরীর নীরোগ হইলে মনে আপনি একটা বিমল আনন্দ উছলিয়া পড়িতে থাকে। দেখিবেন, যে-সাহিত্যিকের স্বাস্থ্য যত ভাল, যিনি যত বেশী প্রফুল্লচিত্ত, তাঁর লেখা তত বেশী স্বাস্থ্য-সম্পন্ন, তত বেশী কলমুখর। নবীন সাহিত্যিকগণ সর্বদা প্রফুল্লচিত্ত থাকিবার জন্য যদি এক-আধটু করিয়া সঙ্গীতের আলোচনা করেন, তাহা হইলে দিখেবেন তাঁহাদের লেখার মধ্যে এই সঙ্গীত, সুরের এই ঝঙ্কার উন্মুক্ত প্রফুল্লচিত্তের এই মোহন-বিকাশ ফুটিয়া উঠিয়া তাঁহাদের লেখার মধ্যে এক নূতন মাদকতা, অভিনব শক্তি দান করিতেছে। অধিকাংশ “পাঁয়ে মারা” পিলে-রোগাক্রান্ত সাহিত্যিকের লেখাই দেখিবেন অসুস্থ (morbid); ইহাই সাহিত্যের স্বচ্ছ ধারায় আবিলতা আনে। যাঁহার চিত্ত যত নিরাবিল, নির্মল, উন্মুক্ত, হাস্য-মুখর, তাঁহার লেখাও তত নূতন নূতন সম্পদে ভরা (rich)। ইউরোপের লোক যেমন স্বাস্থ্য-সম্পন্ন, খেলাধুলা, দৌড়, ধাপ, মারামারি, হাসি-খুসী যেমন তাহাদের নিত্যকার সঙ্গী, তাহাদের লেখার মধ্যেও ঠিক তাহাদের জীবনের ঐসব গুণ সুন্দরভাবে ফুটিয়া উঠিতেছে।
(চলবে..)

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ